বিজ্ঞাপন

যে ১১ দফায় ধর্মঘট ক্রিকেটারদের

October 21, 2019 | 5:03 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

দেশের ক্রিকেটে সার্বিক উন্নয়নের জন্য সোমবার (২১ অক্টোবর) মিরপুর জাতীয় ক্রিকেট একাডেমির মাঠে ১১ দফা দাবি জানিয়ে গেলেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের প্রায় ১২০ জন সদস্য। যেখানে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, এনামুল হক বিজয়, এনামুল হক জুনিয়র ও নাইম হাসানের মতো তারকা ক্রিকেটাররা। এই দাবি না মেনে নেওয়া পর্যন্ত আজ থেকে কোনো ধরণের ক্রিকেটে তারা অংশ নেবেন না।

বিজ্ঞাপন

পড়ুন: আনুষ্ঠানিকভাবে দাবি আসলে সিদ্ধান্ত নেবে বোর্ড: সিইও

পড়ুন: সংবাদ সম্মেলন করে পারিশ্রমিকসহ নানা সুবিধা দাবি সাকিব-তামিমদের

আরও পড়ুন: ১১ দফা দাবিতে ধর্মঘটে ক্রিকেটাররা, অনিশ্চিত ভারত সফর

বিজ্ঞাপন

তবে এই আন্দোলন থেকে বাইরে রাখা হয়েছে অনূর্ধ্ব-১৯ দলের ক্রিকেটারদের। সামনে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ থাকায় আপাতত তাদের বাইরে রাখা হয়েছে। শুধু অনূর্ধ্ব-১৯ দলই নয়, অন্যান্য বয়সভিত্তিক দলগুলোকেও এই আন্দোলনের আওতায় আপাতত আনা হয়নি।

আসুন সাকিবদের দেওয়া ১১ দফা দাবিগুলো একবার দেখে নেই
১. আমাদের প্লেয়ারদের উন্নয়নের যে অ্যাসোসিয়েশন আছে (ক্রিকেটার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-কোয়াব) আমরা কখনও দেখিনি ওনারা আমাদের পক্ষে কথা বলেছেন। অতএব কোয়াবের প্রেসিডেন্ট, সেক্রেটারি যারা আছেন তাদের অনতিবিলম্বে পদত্যাগ করতে হবে। আমাদের প্রেসিডেন্ট, সেক্রেটারি কে হবেন সেটা আমরা প্লেয়াররা নির্বাচনের মাধ্যমে ঠিক করব।

২. বিগত বেশ কয়েকবছর ধরে আপনারা জানেন ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের অবস্থাটা কি। যেভাবে প্রিমিয়ার লিগ হচ্ছে তাতে সব প্লেয়ারই অসন্তোষ প্রকাশ করছে। পারিশ্রমিকের একটা মানদন্ড বেধে দেওয়া হচ্ছে এবং অনেক সীমাবদ্ধতা এখানে আছে। আমরা যেভাবে আগে প্রিমিয়ার লিগ খেলতাম এবং প্লেয়াররা যেভাবে ক্লাব অফিসিয়ালদের সাথে ডিল করত সেট এখন আর নেই। আমাদের দাবি হচ্ছে আগে যেভাবে প্রিমিয়ার লিগটা চলত সেভাবে যেন আমরা পাই।

বিজ্ঞাপন

৩. আমাদের তৃতীয় দাবি বিপিএল নিয়ে। আপনারা জানেন এবারের বিপিএল অন্য নিয়মে হচ্ছে। কিন্তু আমাদের যেটা মূল দাবি সেটা হলো বিপিএল যেন আগের নিয়মে চলে আসে এবং আমাদের স্থানীয় প্লেয়ারদের ন্যায্য মূল্যটা যেন বিদেশি প্লেয়ারদের সাথে থাকে। আমরা দেখি যে বিপিএলে বিদেশি প্লেয়াররা আসে এবং তাদের অনেক পারিশ্রমিক দেওয়া হয়। কিন্তু স্থানীয়রা সেটা পায় না। বিসিবিকে সেই নিশ্চয়তা দিতে হবে। আপনারা যদি খেয়াল করে দেখন বিশ্বের অন্যান্য ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগগুলোতে যে প্লেয়ার থাকে তারা নিলামেই নিশ্চিত করে যে কোন গ্রেডে থাকবে। আমাদের মনে হয় আমাদেরও সেই সম্মানটা দেওয়া উচিত।

৪. আমাদের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে প্লেয়ারদের বেতন ১ লাখ টাকা হওয়া উচিত। আমরা এই দাবিটা অবশ্যই জানাচ্ছি। আমাদের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটের প্লেয়ারদের বেতন অনেক কম। সেটা নুন্যতম ৫০ ভাগ বাড়াতে হবে। অনুশীলন সুবিধা বাড়াতে হবে। জিম, ইনডোর, মাঠ সব কিছুর সুবিধা বাড়াতে হবে। ১২ মাস কোচ, ফিজিও, ট্রেনার নিয়োগ দিতে হবে। আমরা চাই এটা আসছে মৌসুমের আগেই নিশ্চিত করতে হবে। আমরা চাই না প্রতিটি অনুশীলনই ঢাকাতে হোক। ঢাকার বাইরে বরিশাল তাদের হোম ভেন্যুতে, খুলনা তাদের হোম ভেন্যুতে অনুশীলন করবে তাইলেই ক্রিকেটের প্রসার বৃদ্ধি পাবে।

৫. আমরা প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে যে বল দিয়ে খেলি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সেই বল দিয়ে খেলা হয় না। ফলে আমাদের নতুন করে বলের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে হয়। এই জিনিসটা যেন আমাদের না করতে হয়।

ডেইলি অ্যালাওন্স বাবদ আমাদের ১৫শ টাকা দেওয়া হয়। আমার মনে হয় না এটা আমাদের জন্য পর্যাপ্ত। যে ফিটনেস লেভেল বিসিব প্লেয়ারদের থেকে দাবি করে মনে হয় না সেটা ১৫শ টাকায় সম্ভব। স্বাভাবিক ভাবেই তাদের স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খেতে হবে এবং ভালো হোটেলে থাকতে হবে। সেটা বিবেচনা করে যে টাকা দিলে ভালো হয় বিসিবি সেটা যেন করে।

বিজ্ঞাপন

ভ্রমন: এটা বড় একটি ইস্যু। ভ্রমন বাবদ যে টাকা দেওয়া হয় সেটা পর্যাপ্ত না। আমাদের ২৫শ টাকা দেওয়া হচ্ছে এক বিভাগ থেকে আরেক বিভাগে ভ্রমন বাবদ। আপনারা বলতে পারেন ২৫শ টাকায় বাস ছাড়া অন্য কোনো ভাবে সে পৌঁছাতে পারে? অতএব বিসিবি থেকে যেন বিমান ভাড়া দেওয়া হয় সেই নিশ্চয়তা দিতে হবে।

হোটেলে জিম এবং সুইমিং পুল অবশ্যই থাকতে হবে। কারণ চার দিনের ম্যাচ শেষে প্রতিটি প্লেয়ারের অনেক কষ্ট হয়। তো এখানে অবশ্যই রিকভারির জায়গা থাকতে হবে। টু স্টার বা থ্রি স্টার হোটেলে প্লেয়ারদের থাকা সম্ভব নয়।

বাস: আপনারা দেখেন আমরা কি বাসে চলাফেরা করি। এটা প্লেয়ারদের জন্য একবারেই আরামদায়ক নয়। এতএব একটা এসি বাস অবশ্যই যেন থাকে।

৬. জাতীয় দলের চুক্তিবদ্ধ প্লেয়ারদের সংখ্যা বাড়াতে হবে। বিশ্বব্যাপি যদি আপনারা চিন্তা করেন আমাদের মনে হয় আমাদের চুক্তিভুক্ত প্লেয়ারদের সংখ্যা কম। আমাদের মনে হয় চুক্তিভুক্ত প্লেয়ারদের সংখ্যা ৩০ জন করা উচিত এবং করতে হবে। শুধু তাই নয়, আমাদের বেতন বাড়াতে হবে, তিন বছর যাবত আমাদের বেতন বাড়নো হয় না। অতএব বেতনও বাড়াতে হবে।

৭. আমাদের গ্রাউন্ডস ম্যান, কোচ মাস শেষে অনেক কম টাকা বেতন পান। বিদেশি প্লেয়াররা যে বেতন পান সে তুলনায় আমাদের স্থানীয়দের বেতন খুব। আমাদের আম্পায়ার, ফিজিও ও ট্রেনারদেরও একই অবস্থা। অতএব তাদের বেতনও বাড়ানো উচিত।

৮. ঘরোয়া ক্রিকেটে আমরা দুই ধরনের লঙ্গার ভার্সন খেলি বিসিএল ও এনসিএল। কিন্তু ওয়ানডেতে আমরা একটা মাত্র ভার্সন খেলি। এই সংখ্যাটি আরও বাড়ানো উচিত। টি-টোয়েন্টিতে আমরা বিপিএল নামক মাত্র একটি টি-টোয়েন্টি লিগ খেলি। আমার মনে হয় বিপিএলে আরও ভালো করতে অন্তত আরও একটি টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট খেলা উচিত। জাতীয় লিগে আমরা আগে একটি ওয়ানডে খেলতাম। যা এখন আমরা পাই না। সেটা বাড়ানো হোক।

৯. ঘরোয়া ক্রিকেটের জন্য একটি নির্ধারিত ক্যালেন্ডার থাকতে হবে। এটা হলে আমরা আগে থেকে প্রস্তুতি নিতে পারি।

১০. প্রিমিয়ার লিগে যে বকেয়া আছে, সেটা যেন ক্লিয়ার করা হয়। প্রতিবছর যে সময়টা দেওয়া থাকে তার মধ্যে যেন ক্লিয়ার করা হয়।

১১. ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে একটি নিয়ম করে দেওয়া হয়েছে যে দুই জনের বেশি খেলতে পারব না। যদি জাতীয় দলের বাইরে ফ্রি থাকি এবং আমাদের যদি ছেড়ে দেওয়া হয় তাহলে আমরা কয়েকটি ম্যাচ বেশি খেলতে পারব।

সারাবাংলা/এমআরএফ/এমআরপি

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন