বিজ্ঞাপন

তুরস্কে অস্ত্র যায় যেসব দেশ থেকে

October 23, 2019 | 6:21 pm

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

সামরিক খাতের তথ্য নিয়ে গবেষণা করে এমন একটি বিশ্বখ্যাত প্রতিষ্ঠান ‘গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার’-এর মতে, তুরস্ক বিশ্বের নবম সামরিক শক্তিধর রাষ্ট্র। জার্মানি, ইতালি, কানাডা, ইরান, সৌদি আরবের মত দেশগুলো এমন সামরিক শক্তিমত্তার তালিকায় তুরস্কের পেছনে অবস্থান করছে। ইউরোপ ও এশিয়া মহাদেশের সংযোগ স্থাপনকারী রাষ্ট্রটি সম্প্রতি মধ্যপ্রাচ্যে সামরিক সংঘাতে জড়িয়েছে। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার সঙ্গে দেশটির সম্পর্কের বিভিন্ন নাটকীয় মোড় ভাবিয়ে তুলেছে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও সামরিক বিশেষজ্ঞদের।

বিজ্ঞাপন

সম্প্রতি তুরস্ক আন্তর্জাতিক সীমা লঙ্ঘন করে প্রতিবেশী রাষ্ট্র সিরিয়ায় সেনা অভিযান চালিয়েছে। কুর্দি অধ্যুষিত সিরিয়ার উত্তরাঞ্চল থেকে বিদ্রোহীদের তাড়িয়ে সেখানে একটি নিরাপদ এলাকা প্রতিষ্ঠা করা তাদের উদ্দেশ্য বলে জানায় দেশটি। তবে তুরস্কের এমন সেনা অভিযানের প্রতিবাদ জানিয়েছে মধ্যপ্রাচ্যে প্রভাব বিস্তারকারী প্রায় প্রতিটি রাষ্ট্র। সিরিয়ায় সেনা অভিযানের পরপর দেশটির দীর্ঘদিনের মিত্র কয়েকটি রাষ্ট্র তুরস্ককে চাপে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

উত্তর আটলান্টিক নিরাপত্তা জোট- ন্যাটো’র অন্যতম সদস্য তুরস্ক। দেশটি সবময়ই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের দেশগুলো থেকে অস্ত্র কিনে থাকে। তবে সম্প্রতি তুরস্ক রাশিয়ার কাছ থেকে ভারী অস্ত্র কেনা শুরু করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কড়া নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও রাশিয়ার অত্যাধুনিক মিসাইল প্রতিরক্ষা সিস্টেম ও বিমান-বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র এস-৪০০ কেনার জন্য চুক্তি করেছে তুরস্ক।

ইতিমধ্যে রাশিয়ার এসব অস্ত্রের কয়েকটি চালান পৌঁছেছে তুরস্কে। এ অস্ত্র ক্রয়ের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের আরও অবনতি হয় দেশটির। ন্যাটোর সদস্য হওয়া সত্ত্বেও এই জোটের অন্যতম প্রতিপক্ষ রাষ্ট্র রাশিয়ার কাছ থেকে অস্ত্র কেনার ব্যাপারটিকে ভালো চোখে দেখেনি অন্য সদস্যরাও। এমন পরিস্থিতির কারণে যখন ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে টালমাটাল সম্পর্ক বিরাজ করছে, ঠিক তখনই যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ায় সেনা অভিযানের প্রতিবাদে দেশটিতে অস্ত্র রফতানি নিষিদ্ধ করেছে কয়েকটি রাষ্ট্র।

বিজ্ঞাপন

যে দেশগুলো তুরস্কে অস্ত্র রফতানি নিষিদ্ধ করেছে

ইউরোপের নয়টি দেশ তুরস্কে অস্ত্র রফতানি নিষিদ্ধ করেছে। চেক রিপাবলিক, ফিনল্যান্ড, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, নেদারল্যান্ডস, স্পেন, সুইডেন, যুক্তরাজ্য। এবং ন্যাটোর অন্যতম সদস্য কানাডা। তবে এরমধ্যে কয়েকটি দেশ তুরস্কে শুধুমাত্র অস্ত্র বিক্রির নতুন চুক্তি করা নিষিদ্ধ করেছে।

যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তার দেশের এমন অবস্থানের ব্যাপারে বলেন, ‘ব্রিটেন তুরস্কে নতুন করে আর অস্ত্র বিক্রি করবে না তবে যেসব চুক্তি আগে  হয়েছে সেগুলো কার্যকর করা হবে।’ জার্মানি ও স্পেন জানায়, আগে সম্পাদিত কোনও চুক্তি তাদের এ নিষেধাজ্ঞার আওতায় আসবে না। এ নিষেধাজ্ঞা নতুন চুক্তির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে।

তুরস্কে অস্ত্র রফতানি করে যারা

১৯৯১ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত তুরস্ক ভারী সামরিক অস্ত্রের পঞ্চম বৃহত্তম আমদানিকারক দেশ। ঐতিহাসিকভাবে তুরস্ক ন্যাটো ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সামরিক নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখে চলে। ২০১৪ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত তুরস্ক তাদের মোট আমদানিকৃত অস্ত্রের ৬০ শতাংশ আমদানি করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে। ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে ফ্রান্স, স্পেন ও যুক্তরাজ্য তুরস্কের প্রধান অস্ত্র যোগানদাতা।

বিজ্ঞাপন

তুরস্কের সেনাবাহিনী আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হওয়া শুরু করে ১৯৮০ থেকে ১৯৯০ সালের মধ্যে। সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রিত তুর্কি সরকার তখন যুক্তরাষ্ট্র থেকে রেকর্ড পরিমাণ অস্ত্র ক্রয় করে। তখন দেশটি ফাইটার জেট, মিসাইল, হেলিকপ্টার, ট্যাঙ্ক, যুদ্ধজাহাজসহ বিভিন্ন আধুনিক অস্ত্র ক্রয় করে যা এখনও তুরস্কের সেনাবাহিনী ব্যবহার করছে।

তবে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এমন ঐতিহাসিক সুসম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও সম্প্রতি দেশটি রাশিয়া থেকে অস্ত্র কেনা শুরু করেছে। রাশিয়া থেকে অত্যাধুনিক মিসাইল প্রতিরক্ষা সিস্টেম ও বিমান বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র এস-৪০০ কেনার জন্য ২.৫ বিলিয়ন ডলারের বিশাল এক চুক্তি করেছে তুরস্ক। এ চুক্তির কড়া বিরোধিতা করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটোর অন্যান্য সদস্যরা। এ চুক্তির মাধ্যমেই বুঝা যায় তুরস্ক এখন দীর্ঘদিনের মিত্রদের ছেড়ে প্রতিপক্ষ পরাশক্তির দিকে ঝুঁকছে।

ন্যাটো সঙ্গে বৈরী সম্পর্কের একটি দেশ থেকে প্রতিরক্ষা সিস্টেম ও ক্ষেপণাস্ত্র ক্রয় করায় ন্যাটোর আক্রমণ প্রতিরোধ ও তাদের আক্রমণে নতুন সক্ষমতা অর্জন করবে তুরস্ক। কারণ ন্যাটোভুক্ত দেশ থেকে যেসব অস্ত্র কেনা হয় সেগুলো আবার ঐ জোটে থাকা দেশগুলোর বিপক্ষে সম্পূর্ণভাবে ব্যবহার করা যায় না। ন্যাটোভুক্ত এসব দেশ থেকে কেনা প্রতিরক্ষা সিস্টেম ঐ দেশগুলোর বহু ক্ষেপণাস্ত্র ও যুদ্ধবিমানকে শনাক্ত করতে পারেনা। যেমন যুক্তরাষ্ট্র থেকে এফ-৩৫এস স্টিলথ যুদ্ধবিমান কিনতে চেয়েছিলো তুরস্ক। তবে যুক্তরাষ্ট্র তুরস্কে এ যুদ্ধবিমানটি বিক্রি করেনি।  এই যুদ্ধবিমানকে শনাক্ত করার মত শক্তিশালী রাডার সিস্টেমও বিক্রি করা হয়নি তুরস্কে।

তুরস্কের নিজস্ব অস্ত্র শিল্প

পরিমাণের দিক থেকে তুরস্ক অন্যতম একটি অস্ত্র রফতানিকারক দেশ। তবে দেশটি নিজেদের সামরিক শক্তি বাড়াতে আমদানিকৃত অস্ত্রের ওপরই নির্ভর করে। আমদানি নির্ভরতা কমাতে তুরস্ক গত এক দশকে তাদের নিজস্ব অস্ত্র শিল্প সমৃদ্ধ করার কাজ করছে। সম্প্রতি তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী একটি টেলিভিশন চ্যানেলে বলেন, তুরস্ক তার ৭০ শতাংশ প্রয়োজনীয় অস্ত্রশস্ত্র নিজেরাই উৎপাদন করতে পারছে। তুরস্ক অস্ত্র রফতানিও বৃদ্ধি করেছে।

বিজ্ঞাপন

তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, তুরস্ক যেসব অস্ত্র তৈরি করছে তা তা দেশটিকে নিরাপদ রাখতে যথেষ্ট নয়। তুরস্কের সেনাবাহিনী তাদের নিজেদের উৎপাদিত অস্ত্র কতটুকু ব্যবহার করে তা নিশ্চিত নয়।

তবে স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইন্সটিটিউট (এসআইপিআরআই) এর দেওয়া এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, দেশটি উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অস্ত্র রফতানি বাড়িয়েছে। ২০১৪ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত দেশটির অস্ত্র রফতানির পরিমাণ ১৭০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৮ সালে তুরস্ক পৃথিবীর ১৪তম বৃহত্তম অস্ত্র রফতানিকারক দেশ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছে। তুরস্কের অস্ত্রের প্রধান ক্রেতা দেশগুলো হলো সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, তুর্কমেনিস্তান।

– বিবিসি অবলম্বনে।

সারাবাংলা/আইই

Tags: , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন