বিজ্ঞাপন

অনিয়মের বাসা হ্যানয়ের ঢাকা মিশন

October 25, 2019 | 7:08 pm

এম এ কে জিলানী, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: ভিয়েতনামের হ্যানয়ে বাংলাদেশ দূতাবাসের ২০১৮-১৯ অর্থবছরের নিরীক্ষা প্রতিবেদনে দূতাবাসের বাজেটকে অনিয়ম বলে উল্লেখ করেছে বাংলাদেশ কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেলের (সিএজি) কার্যালয়। তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘দূতাবাস অসম বাজেট প্রণয়ন করেছে, যা অদক্ষতা এবং অব্যবস্থাপনার পরিচায়ক।’

বিজ্ঞাপন

হ্যানয়ের ঢাকা মিশনে কোটি টাকার আর্থিক অনিয়ম

সিএজি কার্যালয়ের করা নিরীক্ষা প্রতিবেদনসহ সংশ্লিষ্ট সব তথ্য-প্রমাণ সারাবাংলার হাতে রয়েছে। দূতাবাসের ওই নিরীক্ষা প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশনগুলোর জন্য আর্থিক ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত সরকারি গাইডলাইনে যে নির্দেশনা রয়েছে তা যথাযথভাবে অনুসরণ করা হয় না। সরকারি অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে ফিনানসিয়াল প্রপাইটিস কঠোরভাবে অনুসরণ করা হয় না এবং ফরেন সার্ভিস রুলস যথাযথভাবে প্রতিপালন করা হয় না। এছাড়া অর্থমন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বিভিন্ন সময়ে জারি করা আদেশগুলেঅ সঠিকভাবে অনুসরণ করা হয় না।

আরও দেখা গেছে, মাসিক রেভিনিউ রেজিস্টার, সংশ্লিষ্ট ক্যাশ বই, ভিসা রেজিস্টার, পাসপোর্ট রেজিস্টার, ট্রাভেল পারমিট রেজিস্টার, এটেসটেশন রেজিস্টার ও ড্রাইভিং লাইসেন্স রিনিওনাল রেজিস্টার থেকে অর্জিত আয়ের মাসভিত্তিক হিসাব সংরক্ষণ করা হয় না। টেলিফোন বিলের জন্য আলাদা রেজিস্টার সংরক্ষণ করা হয় না এবং নিয়ম অনুযায়ী তিন মাস পরপর মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন পাঠানো হয় না।

বিজ্ঞাপন

দূতাবাসের ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেট পর্যালোচনায় সিএজি কার্যলয়ের সংশ্লিষ্ট পরিদর্শক দল মন্তব্য করে বলেছে, ‘সুষম বাজেট প্রণয়ন দক্ষ ব্যবস্থাপনার পরিচায়ক। বাংলাদেশ দূতাবাস, হ্যানয়, ভিয়েতনামের ২০১৮-১৯ সময়ের হিসাব ২১ আগস্ট থেকে ৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অডিট করা হয়। অডিটকালে ক্যাশ একাউন্টস পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, ওই অর্থ বছরে মূল বাজেট বরাদ্দ ছিল ৪ কোটি ৮০ লাখ টাকা। সংশোধিত বাজেট বরাদ্দ ৫ কোটি ১৩ লাখ ৪৫ হাজার টাকা। খরচ হয়েছে ৩ কোটি ২৯ লাখ ৬ হাজার ৫৯১ টাকা। অব্যয়িত আছে ১ কোটি ৮৪ লাখ ৫৮ হাজার ৪০৯ টাকা। মোট বরাদ্দের ৬৪ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ খরচ হয়েছে এবং অব্যয়িত রয়েছে ৩৬ দশমিক ৯২ শতাংশ। কন্টিজেন্সি স্টাফ খাতে ৩ লাখ টাকার বাজেট বরাদ্দ হলেও কোনো টাকা খরচ হয়নি। অন্যান্য মেশিনারিজ অ্যান্ড ইকুইপমেন্টস, ফিটিংস অ্যান্ড ফিকশ্চার ও সফটওয়্যারসহ বিভিন্ন খাতেও কোনো অর্থ খরচ হয়নি। বৈদেশিক ভ্রমণ ভাতা, মোটরযান, কম্পিউটার খাতেরও একই অবস্থা। অর্থাৎ এসব খাতে সংশোধিত বরাদ্দে টাকা বাড়ালেও মূল বাজেটেরই টাকা খরচ হয়নি।’

হ্যানয়ে কোটার গাড়ি বিক্রয় ৪ সাবেক রাষ্ট্রদূতের, সংকটে দূতাবাস

বিজ্ঞাপন

সিএজি কার্যলয়ের সংশ্লিষ্ট পরিদর্শক দল আরও বলেছে, ‘বাজেট পর্যালোচনায় দেখা গেছে যে প্রায় সব খাতেই প্রচুর অর্থ অব্যয়িত আছে। বরাদ্দ করা বাজেটের অব্যয়িত অর্থ থাকা অদূরদর্শীতার পরিচায়ক। সরকারের ঘাটতি বাজেটের কারণে ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে হয় বিধায় অব্যয়িত ১ কোটি ৮৪ লাখ ৫৮ হাজার ৪০৯ টাকা যথাযথ খাতে বরাদ্দ দিলে সরকারের আর্থিক সাশ্রয় হতো এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানও উপকৃত হতো।’

সিএজি কার্যলয়ের সংশ্লিষ্ট পরিদর্শক দলের এমন মন্তব্যের জবাবে হ্যানয়ের বাংলাদেশ দূতাবাস বলেছে, ‘‘প্রধানমন্ত্রী এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশিত ‘অর্থনৈতিক কূটনীতি’-কে বেগবান করার জন্য (২০১৮-১৯ অর্থ বছর) এর নির্দেশে বাংলাদেশ দূতাবাস হ্যানয় বিভিন্ন কার্যক্রম করার যে পরিকল্পনা করেছে, সেই প্রেক্ষিতে বাজেটে অধিক বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। একই অর্থ বছর ২ জন কর্মকর্তার শূন্য পদের বিপরীতে এবং একজন কর্মকর্তার শূন্য পদের বিপরীতে মিশনে যোগদানের কথা, সেই জন্যও এই বাজেট প্রয়োজন। আদার মেসিনারিজ অ্যান্ড ইকুইপমেন্টস, ফিটিং অ্যান্ড ফিকশ্চার ও সফটওয়্যার খাতে অতিরিক্ত বরাদ্দ চাওয়া হয়নি এবং কন্টিজেন্সি স্টাফ না থাকায় সেখান থেকে কোনো অর্থ খরচ করা হয়নি।’

তাছাড়া সেপ্টেম্বর, ২০১৮ থেকে এই মিশনে কোনো এইচওসি না থাকায় সংশোধিত বাজেটে বরাদ্দ করা অর্থ প্রয়োজনমত খরচ করা যায়নি। এতে সরকারি অর্থের সাশ্রয় হয়েছে। সরকারি অর্থের কোনো অনিয়ম হয়নি। বাজেটের পুরো কখনোই মিশনের ব্যাংক একাউন্টে থাকে না। নির্ধারিত মাসিক ইমপ্রেষ্ট আকারে আসে, সুতরাং এ সংক্রান্ত মন্তব্য সঠিক না।’

বিজ্ঞাপন

ফিরতি বার্তায় সিএনজি কার্যলয়ের সংশ্লিষ্ট পরিদর্শক দল দূতাবাসের দেওয়া জবাব লিখিতভাবে প্রত্যাখ্যান করে বলেছে, ‘জবাব গ্রহণযোগ্য নয়। অসম বাজেট প্রণয়ন অদক্ষতা ও অব্যবস্থাপনার পরিচায়ক। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণে সুষম বাজেট প্রণয়ন ও কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করে দূতাবাস অডিটকে অবহিত করা আবশ্যক।’

এই বিষয়ে মন্তব্য জানার জন্য পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক এবং ভিয়েতনামে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সামিনা নাজের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

সিএজি কার্যালয়ের করা নিরীক্ষা প্রতিবেদনে ভিয়েতনামে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস সম্পর্কে আরও বলা হয়েছে যে ২০১৮ সালের জুলাই থেকে ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত সময়ের আর্থিক নিরীক্ষায় কোটি টাকারও বেশি আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। রাষ্ট্রদূতের বাড়িভাড়া, চিকিৎসা ব্যয়, ভ্রমণ খরচসহ মোট ৩১টি খাতে এই আর্থিক অনিয়ম পাওয়া গেছে।

সারাবাংলা/জেআইএল/এমআই

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন