বিজ্ঞাপন

নারী শিক্ষার্থীদের স্লোগানে কাঁপছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

November 6, 2019 | 12:14 am

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

হলের গেট ভেঙ্গে বের হয়ে আসা নারী শিক্ষার্থীদের স্লোগানে প্রকম্পিত হচ্ছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ক্যাম্পাস।

বিজ্ঞাপন

মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) রাত পৌনে দশটার দিকে উপাচার্যের অপসারণের দাবিতে চলমান আন্দোলনে হামলা ও বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণার প্রতিবাদে বেগম সুফিয়া কামাল হল ও প্রীতিলতা হলের গেটের তালা ভেঙে মিছিল বের করেন ছাত্রীরা। বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল থেকেও এ সময় ছাত্রীরা বের হয়। এসময় তাদের সঙ্গে যোগ দেন অন্যান্য সহপাঠীরাও।

এর আগে রাত আটটার কিছু পর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন চত্বর থেকে আরও একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা। পরে দুটি মিছিল একীভূত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অবস্থান নিয়ে ভিসি বিরোধী স্লোগান দিতে থাকেন। তখন হলের গেটের তালা ভেঙে বেরিয়ে মিছিলে যোগ দেন বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল, প্রীতিলতা হল, সুফিয়া কামাল হল, জাহানারা ইমাম হল ও ফয়জুন্নেছা হলের আবাসিক শিক্ষার্থীরাও।

এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত জাবি উপাচার্যের বাসভবনের সামনে শিক্ষার্থীদের অবস্থান কর্মসূচি চলছে।

বিজ্ঞাপন

এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে জাবি ছাত্রলীগের একজন নেতা সারাবাংলাকে জানিয়েছেন, শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মুখে তাদের বেশিরভাগ নেতা-কর্মীরাই ক্যাম্পাস ছেড়েছেন। দলীয় নির্দেশনা না থাকলেও মৌখিকভাবে কর্মীদেরকে ক্যাম্পাস ছাড়ার নির্দেশনা দিয়েছেন সংগঠনটির সিনিয়র নেতারা।

তিনি বলেন, প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয় ও হল বন্ধের যে নির্দেশনা দিয়েছে আমরা সেটি মেনে নিয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয় সিদ্ধান্তের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আমাদের বেশিরভাগ নেতাকর্মীরাই ক্যাম্পাস ছেড়েছে। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কোন প্রকার ভুল-বোঝাবুঝি হোক ছাত্রলীগ আর এমনটা চাইছেনা।

তবে আন্দোলনরত সাধারণ শিক্ষার্থীরা অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা এবং বিকেল সাড়ে পাঁচটার মধ্যে শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশনা মানবে না বলে আগেই জানিয়ে দিয়েছে। ফলে সাড়ে নয়টার পর উপাচার্যের বাসভবনের সামনে শতাধিক পুলিশ মোতায়েন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

বিজ্ঞাপন

নিরাপত্তার অংশ হিসেবে ক্যাম্পাসে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে বলে সারাবাংলাকে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান। তবে শিক্ষার্থী আন্দোলন প্রসঙ্গে অন্য মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।

এদিকে, জাবি উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলনকারীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. সোহেল রানাসহ চারজন শিক্ষক কার্যনির্বাহী পরিষদ থেকে পদত্যাগ করেছেন।

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তারা পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নেন বলে সংবাদমাধ্যমকে জানানো হয়।

পদত্যাগকারী অন্যান্য শিক্ষকরা হলেন, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মনোয়ার হোসেন তুহিন, সদস্য অধ্যাপক সাঈদ ফেরদৌস ও সদস্য অধ্যাপক মাহবুব কবির।

বিজ্ঞাপন

অধ্যাপক সোহেল রানা বলেন, আমরা মঙ্গলবার দুপুর আড়াইটায় জরুরি মিটিংয়ে বসেছিলাম। সেখানে শিক্ষক নেতারা আন্দোলনকারীদের তিরস্কার করেছে। শিক্ষক সমিতির এই কমিটি শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের স্বার্থ আদায়ে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। তাই আমরা দায়বদ্ধতা ও বিবেকের তাড়না থেকে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের অপসারণের দাবিতে তার বাসভবনের সামনে আন্দোলনকারীদের অবরোধের মাঝে হামলা চালায় শাখা ছাত্রলীগ। এ ঘটনায় শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও সাংবাদিকসহ প্রায় ৩৫ জন আহত হন।

এরপর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সিন্ডিকেটের জরুরি এক সভায় অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়। মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৫টার মধ্যে আবাসিক শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দেয় প্রশাসন।

আন্দোলনকারীদের সাথে সাধারণ শিক্ষার্থীরাও এই কর্মসূচিতে যোগ দেন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর প্রায় তিন মাস যাবত উপাচার্যের অপসারণ দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

সারাবাংলা/টিএস/এসবি

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন