বিজ্ঞাপন

ঘূর্ণিঝড় বুলবুল মোকাবিলায় জেলায় জেলায় প্রস্তুতি

November 8, 2019 | 8:24 pm

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট

মোংলা, কক্সবাজার, ভোলা, নোয়াখালী, বরিশাল, সাতক্ষীরা  প্রতিনিধি: বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় বুলবুল’র প্রভাবে উত্তাল সমুদ্র। শুক্রবার (৮ নভেম্বর) মোংলা সমুদ্রবন্দর এলাকায় ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর।

বিজ্ঞাপন

ঘূর্ণিঝড় বুলবুল’র কারণে অভ্যন্তরীণ নৌপথে সকল নৌ-চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ- বিআইডব্লিউটিএ।

শুক্রবার বুলবুল’র প্রভাব দেখা গেছে দেশের উপকূল অঞ্চলে। বুলবুল মোকাবেলায় ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে জেলা প্রশাসন। উপকূলীয় অঞ্চলে ঘুর্ণিঝড় বুলবুল’র প্রভাব ও ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলায় প্রশাসনের প্রস্তুতির খবর পাঠিয়েছেন সারাবাংলা’র জেলা প্রতিনিধিরা।

মোংলা

বিজ্ঞাপন

ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া বিরাজ করছে মোংলায়। শুক্রবার সকাল থেকে সারাদিন বৃষ্টি হচ্ছে। এদিন মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষর উদ্যোগে ৩টি, উপজেলা প্রশাসন ১টি ও পৌরসভায় আরও ১টি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে।

ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন রয়েছে। বাতাসের গতিবেগ তেমন না বাড়লেও সাগর রয়েছে উত্তাল। সাগর পারে রাসমেলা উপলক্ষে পশুর নদী দিয়ে দর্শনার্থীদের না যাওয়ার জন্য পরামর্শ দিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। এছাড়া পশুর নদীতে সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারসমূহকে নিরাপদে সরে আসার জন্য নির্দেশনা দিয়েছে বন বিভাগ।

মোংলা বন্দরের হারবার মাস্টার কমান্ডার শেখ ফকর উদ্দিন জানান, ঘূর্ণিঝড় বুলবুল’র প্রভাবে মোংলা সমুদ্রবন্দরে খোলা হয়েছে তিনটি কন্ট্রোল রুম। বন্দরে এই মুহূর্তে মেশিনারিজ, কিংকার, সার, জিপসাম, পাথর, সিরামিক ও কয়লা বোঝাইসহ দেশি-বিদেশি মোট ১৪ টি বাণিজ্যিক জাহাজ অবস্থান করছে। এসব জাহাজের পণ্য খালাসে সতর্কতা জারি করা হবে বলেও জানান তিনি।

বিজ্ঞাপন

মোংলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ রাহাত মান্নান জানান, প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের কারণে উপজেলার সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি বাতিল করেছি। দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতি পোষাতে স্কাউট, স্বেচ্ছাসেবীসহ প্রশাসন প্রস্তুত রয়েছে। এছাড়াও ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় উপজেলার ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি’র (সিপিপি) ৬৬টি ইউনিটের ৯৯০ জন স্বেচ্ছাসেবককে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

কক্সবাজার

ঘূর্ণিঝড় বুলবুল মোকাবেলায় জরুরী প্রস্তুতি সভা করেছে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন। শুক্রবার বিকেলে কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির এ সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামাল হোসেন। এসময় সংশ্লিষ্ট পদস্থ সরকারি কর্মকর্তা ও এনজিও সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

সভায় জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামাল হোসেন জানান, সদরসহ জেলার আটটি উপজেলায় ৫৩৮টি আশ্রয় কেন্দ্র ও ৯৭ টি মেডিকেল টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এছাড়া রেডক্রিসেন্ট সিপিডির ৬ হাজার ৪৫০ জন স্বেচ্ছাসেবী প্রস্তুত রয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

তিনি জানান, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন জাহাজ চলাচল বন্ধ থাকায় সেন্টমার্টিনে আটকা পড়া ১২শ পর্যটকের থাকা-খাওয়া এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে।

ভোলা

শুক্রবার ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের প্রভাবে ভোলায় গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। কোনো কোনো এলাকায় ভারী বর্ষণও হয়েছে। নদী এবং সাগর উত্তাল হয়ে উঠেছে। উত্তাল সাগরে টিকতে না পেরে অনেক জেলে চলে এসেছেন তীরে।

ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়েছে ভোলা জেলা প্রশাসন। ঝড় মোকাবেলায় জেলায় আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। গঠন করা হয়েছ মেডিকেল টিম। এছাড়াও জেলা সদরসহ সাত উপজেলায় ৮টি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। বাতিল করা হয়েছে সকল সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি। মানুষকে সতর্ক করতে উপকূলে চলছে রেড ক্রিসেন্ট ও সিপিপির প্রচারণা।

শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি বিষয়ক এক জরুরী সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাসুদ আলম ছিদ্দিক জানান, ঘূর্ণিঝড় বুলবুল মোকাবেলায় সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্যে জেলা পর্যায়ে একটি ও সাত উপজেলায় সাতটি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। ঝড় মোকাবেলায় জেলার ৬৬৮টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। গঠন করা হয়েছ ৯২ টি মেডিকেল টিম। এছাড়াও জেলা সদরসহ সাত উপজেলায় ৮টি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে।

তিনি জানান, সিপিপি, রেড ক্রিসেন্ট ও স্কাউটসসহ মোট ১৩ হাজার স্বেচ্ছাসেবী প্রস্তুত রাখা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের কাছে শুকনো খাবার, প্রয়োজনীয় চাল, টিন ও নগদ টাকাসহ পর্যাপ্ত ত্রাণ সামগ্রী রয়েছে। ইতিমধ্যে উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের মাধ্যমে বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।

ভোলা সিপিপির উপ-পরিচালক মো. সাহাবুদ্দিন জানান, ঝড়ের বিষয়ে মানুষকে জানাতে সিপিপি ও রেডক্রিসেন্ট কর্মীরা প্রচার-প্রচারণা শুরু করে দিয়েছেন। সিপিপির ১০ হাজার ২০০ স্বেচ্ছাসেবী প্রস্তুত রয়েছেন।

নোয়াখালী

নোয়াখালী জেলায় ঘূর্ণিঝড় বুলবুল মোকাবেলায় উপকূলীয় উপজেলাগুলোতে খোলা হয়েছে কন্ট্রোল রুম। এছাড়া মেডিকেল টিম গঠন ও আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। শুক্রবার বিকেল থেকে উপকূলীয় এলাকাবাসীকে সতর্ক থাকার জন্য ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির স্বেচ্ছাসেবকগন সতর্কীকরণমূলক প্রচারণা চালাচ্ছেন। এদিন  জেলা প্রশাসনের ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির উদ্যোগে জরুরি সভায় এসব তথ্য জানানো হয়।

সভায় জানানো হয়, উপকূলীয় উপজেলা হাতিয়া, সুবর্ণচর ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে। জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ইসরাত সাদমীন-এর সভাপতিত্বে এ সভায় সরকারি বিভিন্ন দফতরের প্রতিনিধিগন উপস্থিত ছিলেন।

তিনি জানান, ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির আওতায় ৪১৬ ইউনিটের ৬ হাজার ২৪০ জন স্বেচ্ছাসেবককে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। নিম্নাঞ্চলের প্লবিত এলাকাগুলোর লোকজনদের সরিয়ে আনতে উপকূলীয় ৩ উপজেলায় ৩৪৫ টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

তিনি আরও জানান, ইতিমধ্যে ১১ টি মেডিকেল টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে। উপকূলীয় প্রতি উপজেলায় ২০০ প্যাকেট করে শুকনো খাবার পাঠানো হয়েছে। এছাড়াও পর্যাপ্ত শুকনো খাবার ও ৩০০ মেট্রিক টন চাল এবং নগদ ৫ লক্ষ টাকা জরুরী অবস্থা মোকাবেলার জন্য মজুদ রাখা হয়েছে।

এদিকে ঘূর্ণিঝড় বুলবুল-এর প্রভাবে সকাল থেকে জেলার আকাশ মেঘাচ্ছন্ন ও থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে এবং গুড়িগুড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। বিকেল থেকে বাতাসের সঙ্গে বৃষ্টির পরিমাণ বেড়েই চলেছে।

বরিশাল

ঘূর্ণিঝড় বুলবুল’র প্রভাবে বরিশালেও মেঘাচ্ছন্ন আকাশের পাশাপাশি গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি শুরু হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় সরকারি ও বেসরকারি দফতরের কর্মকর্তা এবং উন্নয়ন সংগঠনের প্রতিনিধিদের নিয়ে শুক্রবার (০৮ নভেম্বর) জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে এক জরুরী সভা করেছে বরিশালে জেলা দুর্যোগ ও ব্যবস্থাপনা কমিটি।

সভায় জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমান জানান, বরিশাল জেলায় ২৩২টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রয়েছে। এছাড়া জেলায় একটি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলায় সিপিপি, রেডিক্রিসেন্টসহ বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের স্বেচ্ছাসেবকরা মাঠে রয়েছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, ফায়ার সার্ভিস ও রোভার স্কাউটের সদস্যরাও প্রস্তুত রয়েছেন।

তিনি জানান, ঘূর্ণিঝড়ের সতর্কবার্তা দেখে সবাইকে নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করবো। শুকনো খাবারসহ প্রয়োজনীয় ত্রাণসামগ্রী মজুদ রয়েছে। ত্রাণসামগ্রী হিসেবে মজুদ রাখা হয়েছে ২০০ মেট্রিক টন চাল।

সাতক্ষীরা

ঘূর্ণিঝড় বুলবুল’র প্রভাবে সাতক্ষীরায় গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি শুরু হয়েছে। শুক্রবার (৮ নভেম্বর) সকালে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকলেও দুপুরের পর থেকে অনবরত বৃষ্টি শুরু হয়।

সাতক্ষীরার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. বদিউজ্জামান (সার্বিক) জানান, ঘূর্ণিঝড় বুলবুল মোকাবেলায় জেলার ১৩৭টি আশ্রয় কেন্দ্র ইতিমধ্যে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। উপকূলীয় উপজেলা শ্যামনগর, আশাশুনি ও কালিগঞ্জ এলাকায় মাইকিং করে সকলকে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকার জন্য জানানো হয়েছে।

তিনি জানান, উপকূলীয় এলাকার জেলে-বাওয়ালীদের পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নদীতে মাছ ধরা থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে।

সারাবাংলা/আইই

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন