বিজ্ঞাপন

দ্য লাস্ট প্যারাডাইজ অন আর্থ।। ৬ষ্ঠ পর্ব: জিম্বারান বিচে একদিন

November 16, 2019 | 10:30 am

প্ল্যান্টেশন থেকে চলে এলাম বিচে। বিচের নাম ‘জিম্বারান’। বালির বিখ্যাত বিচ। সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত তখন নামি নামি করছে। পেটের ভেতর আমাদের ছুঁচোও নাচতে শুরু করে দিয়েছে। গাইড একটি নামি রেস্টুরেন্টে গাড়ি রাখলেন। এখানে বলে রাখি, যেসব রেস্টুরেন্ট ট্যুর গাইড এবং গাড়ি চালকদের খাবার ব্যবস্থা রাখে ট্যুর গাইডরা সাধারণত সেসব রেস্টুরেন্টে পর্যটকদের নিয়ে যায়।

বিজ্ঞাপন

রেস্টুরেন্টের ভেতরে ঢোকার মুখে বিশাল একুরিয়ামে মাছের জলকেলি দেখলাম। যাই হোক, কিছু টাটকা ও কিছু ফ্রোজেন ফিস অর্ডার করে আমরা সমুদ্রের দিকে গেলাম।

বিচের আশেপাশে ভালো মানের রেস্টুরেন্টগুলোতে মাছের সঙ্গে ভাত, সবজি, শাক, ডেজার্ট, ওয়েলকাম ড্রিংক ও পানি থাকে। এছাড়া মঞ্চে সরাসরি সঙ্গীত ও নৃত্য পরিবেশনা উপভোগ করা যায়। (তবে কেউ চাইলে তাদেরকে টিপস দিতে পারে। আমরা দেইনি। আমাদের সন্তানদের সঙ্গে ছবি তুলে নির্বিকারভাবে চলে এসেছি! এই না হলে বাঙালি!)

বিজ্ঞাপন

সুতরাং বিলের ব্যাপারে অতটা ভয়ের কিছু আসলে নেই।

বিচের আশেপাশের রেস্টুরেন্টগুলো মূল রাস্তার পাশেই। আর রেস্টুরেন্টগুলোর পেছনে সৈকত। অর্থাৎ রেস্টুরেন্টের ভিতর দিয়ে সৈকতে যেতে হয়। বিচের বালি আমাদের কক্সবাজারের মতো। পা ডেবে যায়। তবে বালির রংটা কেমন যেন একটু লালচে। আমরা মাছ নির্বাচনের উত্তেজনায় এতোক্ষণ সমুদ্রের ডাক শুনতে পাইনি। রেস্টুরেন্ট পাড় হয়ে যত সমুদ্রের কাছাকাছি যাচ্ছি রাতের সৈকত ততই ঝাকঁজমকপূর্ণ লাগছিল।

এক সারিতে অসংখ্য রেস্টুরেন্ট। অসংখ্য ঝকঝকে বাতি। ঝকমকে আলো! কাপল টেবিলগুলোকে সমুদ্রের কাছাকাছি ফেলা হয়েছে। সিনেমায় যেমনটা থাকে ঠিক তেমনই সুন্দর সেগুলোর সাজসজ্জা। সাদা শার্টিন কাপড়ে মোড়ানো এসব টেবিল দেখলে রোমান্টিক হতে ইচ্ছে করে। কিন্তু ক্যান্ডেল লাইটের আবছায়া আলোতে খেতে গিয়ে যদি গলায় কাঁটা আটকে যায় তাহলে রোমান্টিকতার বারোটা বেজে যাবে। তাই মনকে বোঝালাম! মন, মনরে! রোমান্টিক হয়ে তোর কাজ নেই!

বিজ্ঞাপন

কাপল টেবল, রাতের সৈকতে সমুদ্রের গর্জন
কাপল টেবলে গিয়ে গিটারের সুরে গান গাইছেন গায়কদল। সেই সঙ্গে সমুদ্রের মুর্হুমুর্হু গর্জন। ভীষণ কোলাহলপূর্ণ এক পরিবেশ। সমুদ্রের বিশালতার কাছে নিজেকে সমর্পনের সুযোগ নেই এখানে। বালির সমুদ্রের সাথে আজ আমাদের প্রথম সাক্ষাৎ বলে হয়তো কোলাহলপূর্ণ পরিবেশও আমাদের খারাপ লাগছিল না। আমাদের ছেলেরা দৌড়ে চলে গেল বালির পাহাড় বানাতে। মেয়েরা গেল সাগরের কাছাকাছি ঢেউ গুনতে। বাঁধা দিলাম না। খাবার আসতে ৩০ মিনিট সময় তো লাগবেই। আমিও মেয়েদের পিছুপিছু চলে গেলাম সমুদ্রের কাছে।

বিয়ের আগে পরিবারের সঙ্গে একবার কক্সবাজার গিয়েছিলাম। সেখানে দেখেছি, ছাতার নিচে শুয়ে যুগলরা কেমন উদাস চোখে সমুদ্রের দিকে চেয়ে থাকে। মনে হয় বুঝি কত দুঃখী তারা। সেই তখনই ভেবেছি আমি কখনও আমার স্বামীর সঙ্গে উদাস হয়ে সমুদ্র দেখবো না। রোদ ছাতার নিচে বসে উচ্ছল তরুণীর মতো গল্প করবো, না হয় হাত ধরে পায়ের গোড়ালি পরিমাণ পানিতে পা ভিজিয়ে তীর ধরে হেঁটে যাবো আর বকবক করবো।

মহাদেব সাহা তার কোন এক কবিতায় বলেছিলেন ‘চোখের জলই আমার মনে হয় সমুদ্র’! আমারও তাই মনে হয়। আজ যখন এই রাতের আঁধারে একা একা বালি সমু্দ্রের কাছে এসে দাঁড়ালাম মনটা কেমন উদাস হয়ে গেল।

বিজ্ঞাপন

সমুদ্র-ঢেউ-গর্জন কিংবা উচ্ছাস ব্যাপারটাই হয়তো এমন! প্রচণ্ড দুখে যেমন মানুষের কান্না পায় তেমনি প্রচণ্ড সুখেও। সেরকম প্রচণ্ড সুখ কিংবা প্রচণ্ড দুখী এক ধরনের অনুভূতি সমুদ্রের কাছে গেলে মনকে গ্রাস করে ফেলে। প্রচণ্ড আক্রোশে যখন এক একটি ঢেউ গর্জন করতে করতে তীরের দিকে ধেয়ে আসে সব হারানোর ভয় মনকে তীব্রভাবে আচ্ছন্ন করে। আবার একই সমুদ্রের ঢেউ যখন বালিতে এসে হোঁচট খেয়ে পরাজিত সৈনিকের মতো ফিরে যায় তখনও কেমন যেন শূন্য শূন্য লাগে। সমুদ্রের বাঁধ ভাঙা উচ্ছাস হৃদয়কে যতটা ছোঁয় তার চেয়ে বেশি ছোঁয় শূন্যতা। এজন্যই বুঝি বুকের ভেতর গভীর এক শূন্যতা নিয়ে সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে থাকে মানুষ।

দ্য লাস্ট প্যারাডাইজ অন আর্থ।। ৫ম পর্ব: সাতরিয়া সুইং দেখা

মনের ভেতর কষ্ট থাকুক আর না থাকুক সমুদ্রের ডাকে কেন যে মন উদাসী হয় বুঝি না। এরকম এক উদাসী মন নিয়ে রাতের সমুদ্র ও সৈকতের একটি ভিডিও করলাম। সমুদ্রের বুকে চাঁদের ভেসে থাকার দৃশ্য ছবিতে অনেক দেখেছি। কিন্তু বাস্তবে কখনও দেখা হয়নি। আজও দেখা হলো না। সমুদ্রের জলে চাঁদের চ্যাপ্টা বিচ্ছুরিত চেহারা দেখার স্বপ্ন অধরাই রয়ে গেল।

আমার উদাসী ভাব ভাঙলো বন্ধু রচনার ডাকে। খাবার চলে এসেছে ততক্ষণে। খাবার দেখে আর দেরি সইল না। ঝুড়িতে রাইসকুকারে রান্না করা ঝরঝরে ভাত, কলমি শাক ভাজা, লবস্টার, স্কুইড, ডুরি ফিস দিয়ে রাতের ডিনার শেষ হলো। চেটেপুটে খেলাম আমরা। মাছের কাঁটাও বাদ পড়লো না।

সারাবাংলা/টিসি

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন