বিজ্ঞাপন

কাজের পরিবেশ চান পররাষ্ট্রের ক্যাডাররা

November 19, 2019 | 11:36 am

এমএকে জিলানী, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: বাংলাদেশ ফরেন সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন দাবি করছে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কোনো পদায়ন নীতিমালা নেই। যে কারণে মন্ত্রণালয় থেকে মিশনে পদায়ন বা বদলির ক্ষেত্রে পক্ষপাত এবং ভেতর ও বাইরে থেকে অযাচিত হস্তক্ষেপ হচ্ছে। পদায়নের ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয়ের অনেক সিদ্ধান্ত সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে চুক্তিভিক্তিক নিয়োগের প্রবণতা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে।

বিজ্ঞাপন

অ্যাসোসিয়েশন আরও বলছে, মিশনগুলোতে অযৌক্তিভাবে বিভিন্ন উইং চালুর পরিকল্পনায় আন্তঃক্যাডার ভারসাম্য বিঘ্নিত হচ্ছে। এছাড়া কর্মকর্তাদের আবাসন অনিশ্চয়তা, নিয়ম অনুযায়ী সার্বক্ষণিক সরকারি গাড়ি না পাওয়া, গৃহঋণ সুবিধা থেকে বঞ্চিত, জনবল ঘাটতিসহ একাধিক কারণ কর্মকর্তাদের কর্মদ্দীপনায় উৎসাহের পরিবর্তে বৈষম্যমূলক পরিবেশ বিরাজ করছে। এ জন্য কর্মকর্তাদের কাজের উপযুক্ত পরিবেশ দরকার।

এ সব বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘মন্ত্রণালয়ে সংস্কার হচ্ছে। এগুলো আমি শুরু করেছি; কিন্তু বেশ কষ্টসাধ্য।’

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে গত ১৬ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ ফরেন সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাহী কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এবং মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক (আন্তর্জাতিক সংগঠন) মোহাম্মদ খোরশেদ আলম খাস্তগীর স্বাক্ষরিত ওই বৈঠকের কার্যবিবরণী সারাবাংলা হাতে পেয়েছে।

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশের ৪০ মিশনে পোস্টিং চায় পুলিশ

অ্যাসোসিয়েশনের ওই বৈঠকে মন্ত্রণালয়ে সুষ্ঠু কাজের পরিবেশ নিশ্চিতে কর্মকর্তারা মোট ১৩টি সিদ্ধান্ত নেন। যার মধ্যে রাষ্ট্রদূত পদায়নের ক্ষেত্রে নীতিমালা অনুসরণ করা বা পক্ষপাত ও ভেতরে এবং বাইরে থেকে অযাচিত হস্তক্ষেপ বন্ধ করাসহ ৭টি বিষয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে উপস্থাপনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। বাকি বিষয়গুলো নিয়ে মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী এবং প্রতিমন্ত্রীর কাছে উপস্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কর্মকর্তারা।

‘আন্তঃক্যাডার ভারসাম্য বিঘ্নিত হচ্ছে’, উল্লেখ করে বৈঠকে বলা হয়, ‘পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে প্রবাসীদের উপস্থিতি এবং সেসব দেশে বাংলাদেশের পণ্যের বাজার সম্প্রসারণ বিবেচনায় সরকারের কর্মবণ্টন অনুযায়ী, কয়েকটি মিশনে কূটনৈতিক উইংয়ের পাশাপাশি শ্রম ও বাণিজ্য উইং যোগ করা হয়। সাম্প্রতিক সময়ে সরকারি কর্মবণ্টন অনুসরণ না করে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় সরকারের কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে মিশনগুলোতে অযৌক্তিভাবে বিভিন্ন উইং স্থাপনের পরিকল্পনা করছে। যেমন: মিশনগুলোতে পাসপোর্ট ও ভিসা ইস্যুসহ কন্স্যুলার সংক্রান্ত বিষয়াদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন হওয়ার পরও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ সম্প্রতি ১৮টি মিশনে পাসপোর্ট ও ভিসা উইং স্থাপনের পরিকল্পনা করছে। তারপর থেকে বাংলাদেশ পুলিশ ৪০টি মিশনে কাউন্সেলরের (পুলিশ সুপার) পদ খোলার পরিকল্পনা করছে; যা সম্পূর্ণ রীতি বিরুদ্ধ। এতে মিশনে সেবার মান বাড়ছে না। কিন্তু কোটি কোটি টাকা খরচ হচ্ছে।’

বিজ্ঞাপন

যেসব রাষ্ট্রদূত বহুদিন বিদেশে, তাদের বদলি করছি: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

কর্মকর্তাদের একাধিক দাবি-দাওয়াসহ ওই বৈঠকে বলা হয়, ‘রাষ্ট্রদূত পদায়নের ক্ষেত্রে নীতিমালা অনুসরণ করা হচ্ছে না। কোনো কোনো রাষ্ট্রদূত ১০ থেকে ১২ বছর বিভিন্ন মিশনে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। এতে পররাষ্ট্র সার্ভিসের মধ্যম শ্রেণির কর্মকর্তা যারা রাষ্ট্রদূত হবার যোগ্যতা অর্জন করেছেন তারা বঞ্চিত হচ্ছেন। এই অবস্থা নিরসনে যারা বর্তমানে আট বছরের অধিক সময় ধরে রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োজিত আছেন তাদের অবিলম্বে দেশে ফিরিয়ে আনা প্রয়োজন। রাষ্ট্রদূতদের একটা নির্দিষ্ট সময় পর (৬ বছর) সদর দফতরে ফিরিয়ে আনা গেলে সব অফিসার রাষ্ট্রদূত বা হাইকমিশনার হওয়ার ক্ষেত্রে সমান সুযোগ পাবেন। এতে মন্ত্রণালয়ের কাজে গতিশীলতা আসবে।’

‘অপেশাদার কূটনৈতিক চুক্তিভিক্তিক নিয়োগ’, সম্পর্কে বৈঠকে বলা হয়, ‘সম্প্রতি মন্ত্রণালয়ের সদর দফতর ও মিশনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে চুক্তিভিক্তিক নিয়োগের প্রবণতা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে। চুক্তিভিক্তিক নিয়োগের ফলে একদিকে পররাষ্ট্র ক্যাডারের কর্মকর্তাদের পদায়নের ক্ষেত্র সংকুচিত হচ্ছে; যা তাদের কর্মদ্দীপনা ধরে রাখার ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে না। অন্যদিকে পররাষ্ট্র ক্যাডারের কর্মকর্তাদের পদায়নের ক্ষেত্রে সমান সুযোগের অধিকার থেকে বঞ্চিত করে বৈষম্যমূলক পরিবেশ সৃষ্টি করছে। তাই যারা ১০ বছরের অধিক সময় এক নাগাড়ে রাষ্ট্রদূত পদে কর্মরত থাকার পর চুক্তিভিক্তিক নিয়োগ পেয়েছেন তাদের চুক্তিভিক্তিক নিয়োগ অবিলম্বে বাতিল করতে হবে। এছাড়া অপেশাদার কূটনৈতিক চুক্তিভিক্তিক নিয়োগ ১০ থেকে ১৫ শতাংশের বেশি না করার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে।’

রাষ্ট্রদূত নিয়োগে অযাচিত হস্তক্ষেপের দাবি ঠিক না

বিজ্ঞাপন

বৈঠকে আরও বলা হয়, ‘মিশনের বিভিন্ন সমস্যার কার্যকর সমাধানের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা দিতে এবং মিশনের কার্যকলাপের সার্বিক কর্মদক্ষতার সমন্বয় ও উন্নয়ন নিশ্চিত করতে মিশনগুলোতে সরকারের যেসব মন্ত্রণালয় বা দফতরের প্রতিনিধি রয়েছে তাদের উপস্থিতিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রী বছরে দুইবার সমন্বয় সভা করবেন। এছাড়া বছরে যতবার প্রয়োজন ততবার পররাষ্ট্র সচিব বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নেতৃত্বে অন্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিদের নিয়ে সমন্বয় সভা করতে হবে।’

পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক সারাবাংলাকে বলেন, ‘এসব বিষয়ে আমার কোনো মন্তব্য নেই’।

তবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘নবীন কূটনীতিকদের দক্ষতা বাড়াতে এবং প্রশাসনে সুশাসন নিশ্চিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংস্কার হচ্ছে। এই সংস্কার ধাপে ধাপে বাস্তবায়ন হবে। দেশের বাইরে যে সকল রাষ্ট্রদূত দীর্ঘদিন বা ১৪/১৫ বছর ধরে আছেন, প্রথম ধাপে তাদের স্টেশন বদলি করা হচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘অনেকদিন যারা বিদেশে আছেন তারা দেশ ভুলে গেছেন। আমি চাই, তারা দেশে ফিরে কন্ট্রিবিউট করুক। এটাই আমার প্রিন্সিপাল। আমি চাই যে, যাদের তিনবছর প্লাস হয়ে গেছে দে শুড বি চেঞ্জ। এগুলো আমি শুরু করেছি; কিন্তু বেশ কষ্টসাধ্য।’

সারাবাংলা/জেআইএল/পিটিএম

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন