বিজ্ঞাপন

রাতের কর্ম চঞ্চল কারওয়ান বাজারে ভর করেছে নিস্তব্ধতা

November 21, 2019 | 4:57 am

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: রাজধানী ঢাকার অন্যতম পাইকারি বাজার কারওয়ান বাজার। শহরবাসী যখন ঘুমিয়ে পড়ে এই বাজারে তখন শুরু হয় ব্যস্ততা। ট্রাক-পিকআপ-ভ্যান, কুলি-মজুর ব্যবসায়ীদের ভিড়ে রাতেরবেলা এই বাজারে তিলধারণের জায়গা থাকে না। শুরু হয় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা কাচামাল (সবজি, ফল, মসলাসহ একাধিক নিত্যপণ্য) আড়তে তোলা এবং একই সময়ে ঢাকার বিভিন্ন বাজারের ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করা। পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের ধর্মঘট থাকার কারণে বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) রাতে কারওয়ান বাজারে পাওয়া গেল ভিন্ন চিত্র। যেন রাতের কর্ম চঞ্চল কারওয়ান বাজারে ভর করেছে নিস্তব্ধতা।

বিজ্ঞাপন

কারওয়ান বাজারে বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) রাতে সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, নিত্যদিনের মতো পণ্যবাহী ট্রাক-পিকআপ-ভ্যানের কোনো তাড়া নেই, ক্রেতা-বিক্রেতাও তেমন চোখে পড়েনি। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পণ্য নিয়ে আসা গাড়ির ভিড়ে প্রতিদিন রাতে পাইকারি এই বাজারকে কেন্দ্র করে সড়কে যে যানজট দেখা যায় বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) রাতে সে জায়গায় হাতে গোনা কয়েকটি ট্রাক থেকে পণ্য খালাস করতে দেখা গেছে। পাশেই ভ্যান চালকরা অলস সময় কাটাচ্ছে। ধর্মঘটের কারণে পণ্যবাহী গাড়ি না আসায় মন খারাপ হয়েছে কারওয়ান বাজারের খুপরি চা দোকানিদেরও। কেননা ধর্মঘট যেমন প্রভাব ফেলেছে পণ্যের দাম বাড়তে ঠিক তেমনি খুপরি চা দোকানির খদ্দেরও কমেছে।

শ্রমিক কাসুর (৫৫ বছর) বিগত ৩০ বছরধরে এই কারওয়ান বাজারের পাইকারি আড়তে শ্রমিকেরা কাজ করছেন। বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) রাতে তিনি জানান, এই বাজারে দিনাজপুর, রংপুর, মেহেরপুর, যশোর, কুষ্টিয়া, পাবনাসহ দেশের সকল প্রান্ত থেকে পণ্যবাহী গাড়ি আসে। কাসুর মূলত পাবনা, যশোর এবং কুষ্টিয়া থেকে যে গাড়িগুলো পণ্য নিয়ে আসে সেগুলোর মাল খালাসের কাজ করেন।

বিজ্ঞাপন

শ্রমিক কাসুর বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) রাত ১ টার দিকে সারাবাংলাকে বলেন, ‘অন্য দিন এমন সময়ে অর্ধেক কাজ শেষ হয়ে যায়। কিন্তু আজকে পরিবহন ধর্মঘট থাকায় এখন পর্যন্ত কোনো কাজ না পেয়ে বসে অপেক্ষা করছি, যদি আসে। আমার এইখানে প্রতিদিন পাবনার ১২ টি গাড়ি এবং কুষ্টিয়ার ৪টি গাড়ি সবজি নিয়ে আসে। আজকে এখন পর্যন্ত একটিও আসেনি।’

আরেক শ্রমিক শরিফুল বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) রাতে সারাবাংলাকে বলেন, ‘অন্যান্য দিন এই সময়ে যে পরিমাণ গাড়ি আসে তাতে কি কি মাল আসছে সেটা মোটামুটি ধারণা পাওয়া যায়। আজকে এখন পর্যন্ত একটি টমেটো এবং মরিচের গাড়ি আসছে। তাই বোঝা যাচ্ছে না আরো গাড়ি আসবে নাকি আসবে না।’

চাঁদপুরের বাসিন্দা ইসমাইল কারওয়ান বাজারে পাইকারি সবজি বিক্রির কাজ করেন। ইসমাইল মূলত উত্তরবঙ্গ থেকে আসা সবজি কিনে তা ঢাকার বিক্রেতাদের কাছে পাইকারি দরে বিক্রি করেন। বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) রাতে দেখা গেল যে তিনি শুধু করলা নিয়ে খদ্দেরের অপেক্ষা করছেন।

বিজ্ঞাপন

ইসমাইল সারাবাংলাকে বলেন, ‘ধর্মঘটের কারণে সবজির গাড়ি আসছে না। এর মধ্যে পাবনা থেকে এক ট্রাক করলা আসছে। তাই শুধু করলা বিক্রি করছি, অন্য সবজির গাড়ি এখনো আসেনি।’

তিনি আরো বলেন, ‘পরিবহন ধর্মঘটের কারণে সবজির ট্রাক আসতে পারছে না। আবার দুই-একটা যে ট্রাক আসছে সেগুলোর পরিবহন খরচ কমপক্ষে ৫ হাজার টাকা বেশি পড়েছে। এতে সবজির দামও বেড়ে গেছে। গত বুধবার করলা এক পাল্লা বিক্রি করেছি ৩০০ টাকা দরে। আজকে বিক্রি করছি ৩৫০ টাকা দরে।’

আরেক ব্যবসায়ী বলেন, ‘হঠাৎ করে পরিবহন ধর্মঘট ডাকায় সবজি ব্যবসায়ীরা বিপাকে পড়েছে। এই ঘর্মঘটের খবর আগে থেকে জানা থাকলে বিকল্প উপায়ে পণ্য পরিবহন করা যেত অথবা সবজি জমি থেকে দেরিতে তোলা যেত। এখন ধঘর্মঘটের কারণে তা ঢাকায় আনা যাচ্ছে না। ফলে যে সবজিগুলা ঢাকায় আনার কথা ছিল তার বেশিরভাগই নষ্ট হয়ে যাবে। কেননা সবজি সহজে মজুদ রাখা যায় না, এতে পচন ধরে।’

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/জেআইএল/জেএইচ

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন