বিজ্ঞাপন

নরসিংদীতে নবজাতক চুরির ঘটনায় মেরী স্টোপস দায়ী নয়: পুলিশ

November 21, 2019 | 9:20 pm

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: নরসিংদীর মেরী স্টোপস ম্যাটারনিটি ক্লিনিক থেকে চুরি হওয়ার ছয় দিন পর এক নবজাতককে উদ্ধার করেছে পুলিশ। তবে চুরির এই ঘটনায় ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ দায়ী নয় বলে জানিয়েছেন নরসিংদী সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দুজ্জামান।

বিজ্ঞাপন

গত ১৩ নভেম্বর মেরী স্টোপস ক্লিনিক থেকে ওই শিশুটি চুরি হয়। পরে মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) রাতে নরসিংদী রেলওয়ে স্টেশনের সামনে থেকে নবজাতক শিশুটি উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় ইয়াসমিন আক্তার (২৬) নামের এক নারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

নরসিংদী সদর মডেল থানার ওসি সৈয়দুজ্জামান বলেন, গত ১০ নভেম্বর মেরী স্টোপস ম্যাটারনিটি ক্লিনিকে কন্যাসন্তানের জন্ম দেন জেলার শিবপুর উপজেলার কুমরাদি গ্রামের রাজমিস্ত্রী শাহ আলম মিয়ার স্ত্রী সখিনা বেগম। ১৩ নভেম্বর সন্ধ্যায় সখিনা বেগম খাবার খেয়ে হাত ধোয়ার জন্য বাথরুমে যান। এসময় সখিনা বেগমের খালাতো বোন পরিচয় দিয়ে বোরখা পরিহিত এক নারী নবজাতককে নিয়ে যান। বেডে এসে সখিনা বেগম নবজাতককে দেখতে না পেলে পাশের বেডের রোগীরা জানান, তার খালাত বোন বাচ্চাকে নিয়ে গেছেন। এসময় অনেক খোঁজাখুঁজি করেও ওই নারীকে পাননি সখিনা বেগম।

পুলিশ জানায়, এ ঘটনায় নবজাতকের নানী রহিমা বেগম বাদী হয়ে ১৫ নভেম্বর নরসিংদী মডেল থানায় অজ্ঞাতনামা নারীকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। পরে ১৯ নভেম্বর সকালে এক নারী ফোন করেন সখিনা বেগমকে। তিনি জানান, তার কাছে নবজাতক রয়েছে। সখিনা বেগমকে একা গিয়ে নবজাতক নিয়ে আসতে বলেন ওই নারী। পরে সখিনা বেগম বিষয়টি পুলিশকে জানালে মোবাইল ট্র্যাকিং প্রযুক্তির সাহায্যে পুলিশ অভিযান চালিয়ে নরসিংদী রেলওয়ে স্টেশন এলাকা থেকে নবজাতককে উদ্ধার করে এবং ওই নারীকে গ্রেফতার করে।

বিজ্ঞাপন

ওসি সৈয়দুজ্জামান বলেন, এই চুরির ঘটনায় মেরী স্টোপস ম্যাটারনিটি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও আমরা কথা বলেছি। তাদের এতে কোনো দায় নেই। তবে এমন ঘটনা যেন ভবিষ্যতে এড়িয়ে চলা যায়, সেজন্য আমরা তাদের কিছু পরামর্শ দিয়েছি।

এদিকে, মেরী স্টোপস ক্লিনিকের কর্মকর্তা (প্রেস, কমিউনিকেশন ও রিপোর্ট রাইটিং) নাহিদ আখতার সারাবাংলাকে বলেন, বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে নরসিংদী মেরী স্টোপস ক্লিনিক থেকে তিন দিনের নবজাতক চুরির অভিযোগ সংক্রান্ত একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। আমরা বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধান করেছি। ১০ নভেম্বর সকাল সাড়ে ৭টায় সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে কন্যাসন্তান জন্ম দেন সখিনা বেগম। মা ও শিশু উভয়েই সুস্থ থাকায় ক্লিনিকের নিয়ম অনুয়ায়ী তাদের ১৩ নভেম্বর হাসপাতাল ত্যাগ করার কথা ছিল। এ সময় হাসপাতালের বিল বাবদ ১৩ হাজার টাকা দেওয়ার কথা থাকলেও তারা তা দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। তবে ওয়েভার পলিসি অনুযায়ী তাদের বিল আরও কমানো হয় এবং তারা সেটা দিতে রাজি হন।

মেরী স্টোপসের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ক্লিনিকে সখিনা বেগমের অভিভাবক হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন সখিনা বেগমের মা। ঘটনার দিন তিনি বাড়ি চলে যান। সেদিনই দুপুরে তার চাচাতো বোন ক্লিনিকে আসেন রোগীর অ্যাটেন্ডেন্ট হিসেবে। সখিনা বেগমকে সেই চাচাতো বোন বাথরুমে আনা নেওয়া করানো, নবজাতককে বুকের দুধ খাওয়ানোহ অন্যান্য কাজে সাহায্যকারী হিসাবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। বিকেল সোয়া ৩টার দিকে ওয়ার্ডে দায়িত্বরত ডাক্তার বা নার্স কাউকে কিছু না জানিয়ে সব জিনিস গুছিয়ে তারা দোতলা থেকে নিচতলায় নেমে আসেন।

বিজ্ঞাপন

নাহিদ আখতার বলেন, তারা নিচে নেমে যাওয়ার ১০ মিনিট পরে সখিনা বেগমের চাচাত বোন এসে জানান, নবজাতকটির জ্বর হয়েছে এবং চিকিৎসক তাকে সরকারি হাসপাতালে নিতে বলেছেন। এর কিছুক্ষণ পরে জানা যায়, শিশুটিকে বাইরে নিয়ে যাওয়া বিষয়ে হাসপাতালে কোনো কর্তব্যরত চিকিৎসক কোনো নির্দেশনা দেননি। সেসময় আশপাশে অনেক খুঁজেও ওই নারী ও নবজাতককে পাওয়া যায়নি। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে সখিনা বেগমের মা ও ভাবী ক্লিনিকে আসেন এবং ওয়েভার পলিসি অনুযায়ী টাকা জমা দিয়ে তারা ছাড়পত্র নিয়ে ক্লিনিক থেকে চলে যান।

চুরির অভিযোগ বিষয়ে নাহিদ আখতার বলেন, ক্লিনিকের ছাড়পত্র নিয়ে যাওয়ার অনেকক্ষণ পরে রোগী ও তার আত্মীয়স্বজনরা এসে নবজাতক চুরির অভিযোগ করেন। বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানানো হলে তারা আসেন এবং তদন্ত করেন। ক্লিনিকের পক্ষ থেকে তাদের সব ধরনের সহযোগিতা করা হয়। এসময় অভিযোগকারীরা জানান, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে তাদের কোনো অভিযোগ নেই।

এ ঘটনায় আটক ইয়াসমিন আক্তারকে জিজ্ঞাসাবাদ করে প্রকৃত ঘটনা উদ্ধারের চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন ওসি সৈয়দুজ্জামান।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/এসবি/টিআর

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন