বিজ্ঞাপন

লোক নাট্যদলের ‘সোনাই মাধব’ আজ

December 6, 2019 | 9:30 am

এন্টারটেইনমেন্ট করেসপন্ডেন্ট

প্রাচীনকাল থেকেই বাংলাদেশ লোকসাহিত্যের এক সমৃদ্ধ আধার। আর এই লোকসাহিত্যের অনন্য দৃষ্টান্ত ময়মনসিংহ গীতিকা। এর মাধ্যমে বিশ্ববাসী প্রথম জানতে পারে বাংলার লৌকিক জীবনের এক একটি অনন্য উপাখ্যান। শাশ্বত মানবিক চেতনার গৌরবগাঁথা পড়ে বিস্মিত হন সবাই। এমনই এক ময়মনসিংহগীতিকা অবলম্বনে বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী নাট্য সংগঠন ‘লোক নাট্যদল’ প্রযোজনা করেছে পদাবলী কীর্তন ও যাত্রার সমন্বয়ে তৈরী নাটক ‘সোনাই মাধব’।

বিজ্ঞাপন

১০ বছর বয়সে রূপসী সোনাই পিতৃহারা হয়ে মা-সহ মামা ভাটুক ঠাকুরের বাড়ি দীঘলহাটিতে আশ্রয় নেয়। দেখতে দেখতে সোনাই ১২ বছরে পা দেয়, চারদিকে তার রূপের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। প্রতি মাসেই বিয়ের প্রস্তাব আসতে থাকে। কিন্তু সবদিক পছন্দ না হওয়ায় মা ও মামা কোনো প্রস্তাবেই সম্মত হন না। একদিন মাধবের সঙ্গে নদীর তীরে সোনাইয়ের দৃষ্টি বিনিময় হয়। এরপর তাদের মধ্যে শুরু হয় পত্র বিনিময় ও প্রণয়।

কিন্তু বিধি বাম। দুর্জন বাঘরার মারফত সোনাইয়ের রূপ-গুণের খবর পেয়ে যায় দেওয়ান ভাবনা। সে ভাটুক ঠাকুরের কাছে সোনাইয়ের বিয়ের প্রস্তাব দেয়। সঙ্গে বায়ান্ন পুরা জমি ও অন্যান্য সম্পদ প্রদানের প্রলোভন। এই প্রলোভনে সোনাইয়ের মামা রাজি হয়ে যায়। দেওয়ান ভাবনা’র চরেরা জলের ঘাট থেকে সোনাইকে তুলে নিয়ে যায়। পথে মাধবের সঙ্গে সাক্ষাৎ ও যুদ্ধ হয়। মাধব দেওয়ান ভাবনার চর ও দাড়ি-মাঝিদের পরাজিত করে সোনাইকে উদ্ধার করে নিয়ে গিয়ে বিয়ে করে।

বিজ্ঞাপন

কিন্তু দেয়ান ভাবনা ক্ষিপ্ত হয়ে মাধবের পিতাকে ধরে নিয়ে যায়। পিতাকে মুক্ত করতে গেলে মাধবকে বন্দি করে দেওয়ান ভাবনা পিতাকে মুক্ত করে দেয় এবং বলে, সোনাইকে ফেরত দিলে সে মাধবকেও ছেড়ে দেবে। একমাত্র পুত্র মাধবকে মুক্ত করে বংশরক্ষার প্রয়োজনে শ্বশুরের কথায় সোনাই দেওয়ান ভাবনার কাছে চলে যেতে রাজি হয়।

সোনাইকে পেয়ে দেওয়ান ভাবনা মুক্তি দেয় মাধবকে। কিন্তু গভীর রাতে সোনাইয়ের সঙ্গে মিলনের আশায় দেওয়ান ভাবনা ‘বারবাংলা’র ঘরে এসে দেখে, সোনাই সঙ্গে আনা বিষের বড়ি খেয়ে খাটে নিষ্প্রাণ হয়ে পরে আছে। ফলে ‘দুর্জন দুষমন ভাবনার আশা না পুরিল। প্রাণ বন্ধুরে বাঁচাইতে সোনাই পরাণে মরিল’।

বিজ্ঞাপন

‘সোনাই মাধব’ নাটকের পরিকল্পনা, সংগীত পরিচালনা ও নির্দেশনায় নাট্যজন লিয়াকত আলী লাকী। তার অনুভূতি জানিয়ে বলেন, ‘পদাবলি কীর্তন আমাদের দেশের একটি প্রাচীন নাট্যকর্ম। সংগীতের মাধ্যমে অভিনয় শিল্পীরা পালার কাহিনীকে এগিয়ে নিয়ে যায়। চারদিকে উপবেশিত দর্শকদের মাঝখানে এই পালা মঞ্চস্থ হয়। কিন্তু এই পালায় আলাদা কোনো মঞ্চ প্রয়োজন হয় না। দর্শকরা মাটিতে উপবেশন করে এবং পালাও মাটিতেই অভিনীত হয়।’

“আমাদের ঐতিহ্যবাহী যাত্রা খানিকটা ভিন্ন ধরনের। সেখানে প্রবেশ-প্রস্থানের একটি পথ থাকে এবং মাঝখানে একটি চারকোণা মঞ্চ নির্মিত হয়। পদাবলি কীর্তনের মতো সংগীতের মাধ্যমে নয়, সংলাপের মাধ্যমে উচ্চকিত অভিনয়ে যাত্রা মঞ্চস্থ হয়ে থাকে। ময়মনসিংহ গীতিকা অবলম্বনে আমাদের প্রযোজনা ‘সোনাই মাধব’ পদাবলি কীর্তন ও যাত্রার সমন্বয়ে তৈরি। কিন্তু প্রবেশ-প্রস্থানের পথ ইম্প্রোভাইজ করা হয়েছে। পদাবলি কীর্তনের মতো সংগীতের মাধ্যমে কাহিনি বর্ণিত হলেও সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে নৃত্য। নব্বই দশকের গোড়ার দিকে নিরীক্ষাধর্মী এই পালাটি মঞ্চস্থ করা হয় এবং প্রদর্শিত হয় ৭৬টি রজনিতে। সেখানে মেয়েদের চরিত্রে ছেলেদের দিয়ে অভিনয় করানো হয়। এবারে নারীদের চরিত্রে নারীরাই অভিনয় করছে। আঙ্গিকগত কিছুটা পরিবর্তন আনা হয়েছে এই পদাবলী যাত্রায়,’— বলেন লাকী।

‘সোনাই মাধব’ নাটকের প্রদর্শনী আজ (শুক্রবার) সন্ধ্যা ৬টা ৩০মিনিটে, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/এএসজি/টিআর

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন