বিজ্ঞাপন

সারাবাংলার সম্পাদকীয় প্রতিষ্ঠান

December 5, 2019 | 11:35 pm

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা

সারাবাংলা ডটনেট তৃতীয় বর্ষে পড়লো আজ। এর মধ্যেই এই অনলাইন পোর্টালটি বাংলাদেশের গণমাধ্যম জগতে শুদ্ধ সাংবাদিকতার প্রতীক হয়ে উঠেছে। এই স্বল্প সময়ে সারাবাংলার সংবাদে পাঠকরা যে ভরসা রেখেছেন, সেজন্য আমরা কৃতজ্ঞ। এই পোর্টালের খবর আর অন্যান্য বিষয়গুলো নির্বিঘ্নে পড়তে পারছেন কারিগরি উৎকর্ষতার কারণে, আস্থা রাখছেন বস্তুনিষ্ঠতার বদৌলতে। দ্বি-বর্ষপূর্তির এই আনন্দের খবরের সঙ্গে আরও একটি অর্জন আমরা পাঠকদের জানাতে চাই, আমাদের দৈনিক সারাবাংলা সরকারের মিডিয়া তালিকভুক্ত হয়েছে। সারাবাংলার উদ্যোক্তা, সাংবাদিক ও সব স্তরের কর্মী এবং গাজী গ্রুপের সকল স্তরের কর্মীদের আমি অভিবাদন জানাই, আমাদের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি বিজ্ঞাপনদাতাদের প্রতি, যারা আমাদের অনুপ্রাণিত করে চলেছেন ভালো সাংবাদিকতার পথে চলার জন্য।

বিজ্ঞাপন

১৯৭১-এ আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের মৌলিক আদর্শ ছিল উদার, অসাম্প্রদায়িক ও মানবিক বাংলাদেশ গড়ব আমরা। বীর মুক্তিযোদ্ধা গাজী গোলাম দস্তগীর, বীর প্রতীকের এই প্রতিষ্ঠান সেই লক্ষ্যে নির্ভীক ও আপসহীন সাংবাদিকতা করছে। কোনো গণমাধ্যম শক্তি আহরণ করে তার পাঠকবর্গের কাছ থেকে। আর এই পাঠকদের কাছ থেকেই আমরা পেয়ে চলেছি প্রেরণা। তারাই আমাদের চালিকাশক্তি। অনলাইন কোনো নির্দিষ্ট সময়ে প্রকাশিত হয় না। প্রতিদিন, প্রতিমুহূর্তে লাখ লাখ লাখ পাঠক সারাবাংলা পড়ছেন।

একটি গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানের জন্য দু’বছর খুব বেশি সময় নয়। কিন্তু এই সময়টায় বাংলাদেশ, এই অঞ্চল এবং সারাবিশ্ব ঘটনাবহুল সময় পার করেছে। শুরু থেকে সারাবাংলার প্রচেষ্টা ছিল প্রতিটি ঘটনার তথ্য ন্যায্যতার সঙ্গে পরিবেশন করা, নির্মোহ বিশ্লেষণ করা। সম্পাদকীয় প্রতিষ্ঠানের জায়গা থেকে আমি বলতে পারি, আমাদের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য, নিয়ম, সীমাবদ্ধতা ও সম্ভাবনা সম্পর্কে অবগত হয়েই আমরা সারাবাংলায় সাংবাদিকতা চর্চা করছি।

আধুনিক সমাজে রাষ্ট্র ও সমাজের মধ্যে সক্রিয় প্রতিষ্ঠানগুলোর অন্যতম হলো গণমাধ্যম। তথ্য-যুক্তির বিন্যাসে সমাজের পক্ষে দাঁড়িয়ে মানুষের হয়ে রাষ্ট্রের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনই গণমাধ্যমের প্রাথমিক কাজ। অনলাইন মানেই এখন সাত দিন চব্বিশ ঘণ্টা নিউজ। অনলাইন এখন সব ধরনের গণমাধ্যমের অগ্রণী স্বর হিসেবে সমাজ আর রাষ্ট্রের যোগসূত্রের কাজ করে। গণমাধ্যমের কাজ সমাজের নানা সম্ভাবনা আর প্রত্যাশা রাষ্ট্রের কাছে তুলে ধরা। সরকার-পরিপন্থি কোনো দায়িত্ব পালন তার কাজ না হলেও সময়বিশেষে কঠিন প্রশ্নও তুলে ধরতে হয় রাষ্ট্রের কাছে, সরকারের কাছে। আবার সরকারি পরিকল্পনা, কর্মকাণ্ডের বয়ানও সর্বজনের কাছে নিয়ে যাওয়া এই গণমাধ্যমের দায়। এই গেটকিপারের কাজটা দক্ষতার সঙ্গে করার সক্ষমতাই একটি গণমাধ্যমের কাছে আশা করে মানুষ।

বিজ্ঞাপন

সমাজকে পরিবর্তনে অনেক বড় ভূমিকা রাখে গণমাধ্যম। কিন্তু আজকের যুগে সমাজকে অনেক বেশি প্রভাবিত করছে রাজনীতি। তাই রাজনীতির সঙ্গে, ক্ষমতার সঙ্গে একটা দ্বন্দ্ব সবসময়ই থাকে। এই পরিস্থিতির সঙ্গে চলতে গণমাধ্যমকর্মীরা অভ্যস্ত। কারণ তারা মনে করে, তাদের ভরসার জায়গাটি মানুষ, যাদের জন্য তারা কাজটি করেন।

নিজেকে অন্যভাবে দেখছে এই নতুন ডিজিটাল সমাজ। দীর্ঘমেয়াদি ঘটনার পরম্পরা আর সম্পর্কের নিরিখে উপলব্ধিতে আসার চেয়ে দৃষ্টি-আকর্ষক ঘটনা বিচ্ছিন্নভাবে মানুষকে টানছে যোগাযোগ মাধ্যমের পর্দার সামনে। অর্থাৎ খবর হয়ে উঠছে দৃশ্যমান। তাই আজ সরকার পরিচালনা, শাসনপদ্ধতিও হয়ে উঠতে চাইছে দৃশ্যমান ঘটনার অংশ।

জনজীবনে সংকট বা অনিশ্চয়তা থেকেই মানুষ তার পরিপূরক খোঁজে কল্পজগতে। সমাজ বা ব্যক্তিজীবনে অক্ষমতা আর দুর্বলতা ঢেকে দিতে পারে খবর আর ছবি। আর সেজন্যই গণমাধ্যম দুনিয়ার বড় খেলোয়াড় অনলাইন। এখানেই জনতাকে খুঁজতে হচ্ছে তার প্রিয় তথ্যকর্মীকে, যিনি সবার আগে তথ্য যোগাতে অদম্য, সফল বা আগ্রাসী। রাষ্ট্র ও সমাজের সম্পর্কের মাঝেই এই আগ্রাসী তথ্য-জনপ্রতিনিধির উত্থান।

বিজ্ঞাপন

সামাজিক মাধ্যমের ব্যাপক প্রসারের যুগে সাংবাদিকতা এখন এক চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ শুধু দ্রুততার সঙ্গে নির্ভুল তথ্য পাঠকের দরবারের হাজির করা নয়, বাণিজ্যিকভাবেও বড় চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হচ্ছে। এই দু’য়ের টানপোড়েন, সমাজের নানা অসঙ্গতি, নানা শক্তির সঙ্গে লড়াই করে জনহিত বা পাবলিক গুড-কে সামনে রেখে গণমাধ্যমকে পথ চলতে হয়।

নব্বইয়ের দশকে অর্থনৈতিক ময়দান থেকে রাষ্ট্রের পিছু হটার সঙ্গে সঙ্গে রাজনৈতিক শ্রেণিও বাজারের মালিকের বশ্যতা মেনে নেয়। বাজারভিত্তিক বিপণন ব্যবস্থাপকদের উত্থান একতরফাভাবে বদলে দিতে থাকে গণমাধ্যমের চরিত্র। নিয়ন্ত্রিত অর্থনীতির পথে পেরিয়ে উন্মুক্ত বাজারনির্ভর অর্থনীতির যুগে গণমাধ্যমকে মনে রাখতে হচ্ছে পাঠক, দর্শক আর শ্রোতা তার কাছে এখন কনজ্যুমার। মুনাফা-রাজনীতি-প্রচার— এই তিন আদর্শ চর্চার সময়ে আমরা সাংবাদিকতার আদর্শ চর্চা করছি সারাবাংলায়।

ফ্রিডম অব মিডিয়া বা গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, ফ্রিডম অব এক্সপ্রেশনস বা মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, ফ্রিডম অব থট অ্যান্ড কনসায়েন্স বা চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা— এই তিন বিষয়কে প্রাধান্য দিয়ে বিষয়বস্তু নির্বাচনে, সেই বিষয়বস্তু উপস্থাপনায় ও প্রযুক্তি ব্যবহারে স্বাধীনভাবে কাজ করার প্রতিজ্ঞায় গড়ে উঠেছে সারাবাংলার সম্পাদকীয় প্রতিষ্ঠান।

লেখক: এডিটর ইন চিফ, সারাবাংলা জিটিভি

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/টিআর

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন