বিজ্ঞাপন

রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে হ্যানয় মিশনের ভূমিকা চায় ঢাকা

December 6, 2019 | 7:59 am

এমএকে জিলানী, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: চলমান রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে সব প্রক্রিয়াই সমানতালে চালিয়ে যেতে চায় বাংলাদেশ। এসব প্রক্রিয়ার অন্যতম আসিয়ানভুক্ত (দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ১০ রাষ্ট্র নিয়ে গঠিত রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংস্থা) দেশগুলোর মাধ্যমে মিয়ানমারকে চাপে রাখা। আগামী বছরের শুরু থেকে ভিয়েতনাম আসিয়ানের চেয়ারম্যানশিপের দায়িত্ব পালন করবে। কূটনীতিকরা বলছেন, এই সংকট মেটাতে আসিয়ানকে আরও সক্রিয় করতে এই সময়ে বাংলাদেশের ভিয়েতনাম মিশনকে উদ্যোগী ভূমিকা নিতে হবে।

বিজ্ঞাপন

কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, চলমান ডিসেম্বরেই থাইল্যান্ডের আসিয়ান চেয়ারম্যানশিপ শেষ হতে যাচ্ছে। নতুন বছরের প্রথম দিন (আগামী ১ জানুয়ারি, ২০২০) থেকে আসিয়ানের চেয়ারম্যান হতে যাচ্ছে ভিয়েতনাম। এই দেশটি রোহিঙ্গা ইস্যুতে থাইল্যান্ডের মতো সরব হতেও পারে, আবার মিয়ানমার ও তার বন্ধুরাষ্ট্রগুলোর চাপে এ বিষয়টির ওপর থেকে গুরুত্ব সরিয়েও নিতে পারে।

সূত্র বলছে, মিয়ানমার ও ভিয়েতনামের সম্পর্ক ঐতিহাসিকভাবেই ভালো। এই দু’টি দেশ কখনোই পরস্পরের সঙ্গে যুদ্ধ বা সংঘর্ষে জড়ায়নি, দু’টি দেশই বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী প্রধান দেশ এবং সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দুই দেশের বাণিজ্যিক, সামরিক প্রশিক্ষণ ও অন্যান্য ক্ষেত্রে সহযোগিতা বেড়েছে। এ কারণে অদূর ভবিষ্যতে ভিয়েতনামের চেয়ারম্যানশিপ চলার সময় আসিয়ানের সভায় রোহিঙ্গা ইস্যুটি গুরুত্ব হারানোর আশঙ্কাও অমূলক নয়।

কূটনৈতিক সূত্রগুলো আরও বলছে, হ্যানয়ে বাংলাদেশ দূতাবাস রয়েছে, যাকে ভিয়েতনামের সঙ্গে অত্যন্ত ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে হবে, যেন রোহিঙ্গা ইস্যুটি গুরুত্ব না হারায়। হ্যানয়ের এই দূতাবাস থেকে ভিয়েতনাম ও লাওস— আসিয়ানভুক্ত এই দুই দেশের সঙ্গে কূটনৈতিক যোগাযোগ রাখতে হয়। অথচ বর্তমানে হ্যানয়ে বাংলাদেশের দূতাবাসে পর্যাপ্ত জনবল নেই।

বিজ্ঞাপন

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, কোনোভাবেই হ্যানয়ে বাংলাদেশ দূতাবাসে কোনো কর্মকর্তাকে পাঠানো সম্ভব হচ্ছে না। ফলে বহুদিন ধরে এই দূতাবাসে রাষ্ট্রদূত ছাড়া আর কোনো কর্মকর্তা নেই। একদিকে লোকবলের অভাব, অন্যদিকে বিভিন্ন অনিয়ম ও অভিযোগে এই দূতাবাসের কার্যক্রম স্থবির ও অকার্যকর হয়ে পড়েছে। যেহেতু ২০২০ সালে ভিয়েতনাম হতে যাচ্ছে আসিয়ানের চেয়ারম্যান এবং দেশটি দু’টি শীর্ষ সম্মেলনসহ বছরব্যাপী বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সম্মেলন আয়োজন করতে যাচ্ছে, এই সময়ে এ দেশে বাংলাদেশের আরও যোগ্য ও কর্মক্ষম নেতৃত্ব ও কর্মকর্তার প্রয়োজন রয়েছে।

এর আগে, থাইল্যান্ড আসিয়ানের চেয়ারম্যানশিপের দায়িত্ব পাওয়ার পর রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে এবং রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে ব্যাংককের সহযোগিতা চেয়েছিল ঢাকা। রোহিঙ্গাদের মধ্যে আস্থা প্রতিষ্ঠা করতে ঢাকার আহ্বানে সাড়া দিয়ে ব্যাংকক কার্যকর পদক্ষেপও নেয়। পাশাপাশি ব্যাংককে বাংলাদেশ দূতাবাস চলমান পুরো বছরজুড়ে স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখেছে। থাইল্যান্ডের সংবাদপত্রে বাংলাদেশের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদের সাক্ষাৎকারসহ রোহিঙ্গা বিষয়ে বিভিন্ন কলাম, আর্টিকেল ইত্যাদি ছাপানোর বিষয়েও ভূমিকা রেখেছে। আসিয়ানভুক্ত প্রতিটি দেশেই বাংলাদেশ দূতাবাসগুলোকে এমন কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (দ্বিপক্ষীয়) মাসুদ বিন মোমেন জানান, রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে ঢাকা সব প্রক্রিয়াই সমানতালে চালিয়ে যেতে চাবে। কেননা এটি একটি জটিল সমস্যা।

বিজ্ঞাপন

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন এ বিষয়ে বলেন, ‘মিয়ানমার সরকার ও তাদের নাগরিক রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মধ্যে যে অবিশ্বাসের সম্পর্ক বিরাজ করছে, সেখানে আসিয়ানের সদস্যরা আস্থার সম্পর্ক গড়তে ভূমিকা রাখতে পারে। মিয়ানমার রাখাইনে কী কী করেছে, তা যদি আসিয়ান সদস্যরা পরিদর্শন করে এবং তারা যদি রোহিঙ্গা প্রতিনিধিদের সঙ্গে তাদের অভিজ্ঞতা বিনিময় করে, তবে এই সংকটের একটি ভালো সমাধান আশা করা যায়।’

সূত্রগুলো জানাচ্ছে, আসিয়ান অঞ্চলে মুসলিম ধর্মাবলম্বীরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ। তবে দেশের সংখ্যা অনুযায়ী মাত্র তিনটি মুসলিমপ্রধান দেশ আসিয়ানের সদস্য। আসিয়ানের অভ্যন্তরে ১০টি দেশের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে গভীরতার তারতম্য ওই দেশেগুলোর জনগণের ধর্ম, সংস্কৃতি, ভাষা, রাজনৈতিক ইতিহাস ও দ্বিপাক্ষিক স্বার্থ দ্বারা প্রভাবিত। এই ১০টি দেশের মধ্যে মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও ব্রুনেই মুসলিমপ্রধান দেশ হিসেবে পরস্পরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখে। শুধু তাই নয়, এই দেশগুলো, বিশেষ করে মালয়েশিয়া রোহিঙ্গা ইস্যুতে আসিয়ানসহ যেকোনো আন্তর্জাতিক ফোরামে বলিষ্ঠ বক্তব্য দিয়ে থাকে।

আসিয়ানের অন্য সাতটি দেশের মধ্যে কেবল ফিলিপাইন ক্যাথলিক খ্রিস্টান প্রধান দেশ। বাকি ছয়টি দেশই বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী অধ্যুষিত। এর মধ্যে চারটি দেশ— থাইল্যান্ড, মিয়ানমার, কম্বোডিয়া ও লাওসের জনগণ বৌদ্ধ ধর্মের কট্টর রূপ থেরাভেদ বৌদ্ধ দর্শন (Teraveda Buddhism) অনুসরণ করে। বাকি দু’টি দেশ সিঙ্গাপুর ও ভিয়েতনাম কিছুটা উদারনীতির মহাযান দর্শন (Mahayana Buddhism) এবং ওইসব দেশের আঞ্চলিক সংস্কৃতির প্রভাব অনুসরণ করে থাকে।

উল্লেখ করা যেতে পারে, বাংলাদেশসহ অন্যান্য দক্ষিণ এশীয় দেশ, যেমন— নেপাল ও ভুটানেও মহাযান বৌদ্ধ ধর্ম অনুসরণ করা হয়। এই অঞ্চলের কেবল শ্রীলঙ্কার বৌদ্ধরাই থেরাভেদ দর্শনে বিশ্বাসী। একই থেরাভেদ দর্শনে বিশ্বাসী হওয়ার কারণে আসিয়ানের দেশগুলোর মধ্যে মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া ও লাওসের জনগণের মধ্যে নৈকট্য ও বিশেষ বোঝাপড়া রয়েছে। তা সত্ত্বেও রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে মিয়ানমারকে সহযোগিতা করেছে থাইল্যান্ড।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/জেআইএল/টিআর

Tags: , , , , , , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন