বিজ্ঞাপন

পেঁয়াজনামা: সুখবর মিলছে না আগামী ৩ মাসেও!

December 6, 2019 | 12:11 pm

রমেন দাশ গুপ্ত, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: গত অর্থবছরে আমদানি ও দেশীয় উৎপাদন মিলে দেশের বাজারে প্রতিদিন পেঁয়াজের সরবরাহ ছিল ৭ হাজার মেট্রিক টনেরও বেশি। গত সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে ভারত পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দিলে সরবরাহ মারাত্মকভাবে কমে যায়। একপর্যায়ে এই সরবরাহ ৫০০ মেট্রিক টনের মধ্যে চলে আসে। পেঁয়াজের দাম কেজিতে ২০০ থেকে ২৫০ টাকায় গিয়ে পৌঁছে। দাম বেড়ে যাওয়ায় পেঁয়াজের চাহিদাও নেমে আসে অর্ধেকে। আমদানি নির্ভর সরবরাহ কিছুটা বাড়ায় এবং চাহিদা কমে যাওয়ায়  চলতি সপ্তাহে পেঁয়াজের পাইকারি দাম কেজিতে কিছুটা কমে ১৫০ থেকে ২০০ টাকার মধ্যে উঠানামা করছে।

বিজ্ঞাপন

ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, পেঁয়াজের বাজার স্থিতিশীল রাখতে চাইলে অর্থাৎ পাইকারিতে ১০০ টাকার নিচে বিক্রি নিশ্চিত করতে চাইলে দৈনিক ৩ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজের সরবরাহ প্রয়োজন। প্রতিদিন যদি অন্তত এক থেকে দেড় হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ বাজারে ঢোকে, তাহলেও ১০০ থেকে ১২০ টাকার মধ্যে পেঁয়াজ বিক্রি করা যাবে। আর স্বাভাবিক সময়ের মতো ৩০ থেকে ৩৫ টাকার মধ্যে পেঁয়াজ বিক্রি করতে হলে ভারত ছাড়া গতি নেই। মিশর-তুরস্ক কিংবা আরব আমিরাত থেকে জাহাজে করে পেঁয়াজ এনে ৩০ থেকে ৩৫ টাকায় বিক্রির সুযোগ নেই। ভারত থেকে সীমান্ত দিয়ে সড়কপথে যতদিন পর্যন্ত কম খরচে পেঁয়াজ আমদানি করা যাবে না, ততদিন দাম আগের অবস্থায় ফিরবে না।

পেঁয়াজের চাহিদা ও সরবরাহের এই হিসাব দিয়ে ব্যবসায়ীরা আশা করছেন, আগামী ফেব্রুয়ারিতে ভারতের মহারাষ্ট্রে উৎপাদিত নতুন পেঁয়াজ উঠবে। তখন ভারত রফতানির নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে পারে। ব্যবসায়ীদের এমন আশা যদি আলোর মুখ দেখে, তাহলে আরও অন্তত তিন মাস পেঁয়াজের বাজার নিয়ে কোনো সুখবর পাচ্ছে না ক্রেতারা।

বিজ্ঞাপন

চট্টগ্রাম নগরীর খাতুনগঞ্জের হামিদউল্লাহ মার্কেটের পেঁয়াজের আড়তদার মেসার্স বাচা মিয়া ট্রেডার্সের মালিক মোহাম্মদ ইদ্রিস সারাবাংলাকে বলেন, ‘বাজার যদি স্থিতিশীল রাখতে হয় অর্থাৎ সহনীয় দাম রাখতে হয়, তাহলে দৈনিক ৩ হাজার টন পেয়াঁজ আসতে হবে। আর এখন যে পরিস্থিতি, সেটা ধরে রাখতে হলে দৈনিক এক হাজার টন পেঁয়াজ লাগবে। কিন্তু প্রতিদিন তো এক হাজার টন পেঁয়াজ বাজারে আসছে না। সাত থেকে আটশ টন করে বাজারে আসছে। আবার জাহাজে একদিন পেঁয়াজ আসে, চার দিন পর আসে আরেক জাহাজ। চারশ টন, পাঁচশ টন করে একদিন পেঁয়াজ ঢুকল, এরপর তিন দিন দেখা নেই— এভাবে বাজার স্বাভাবিক হবে না।‘

’বাজারে সেপ্টেম্বরের আগের মতো, অর্থাৎ ৩০-৩৫ টাকায় কেজিপ্রতি পেঁয়াজ বিক্রি করতে হলে দৈনিক ৭ হাজার টনের ওপর সরবরাহ লাগবে। এটাই হচ্ছে মূল কথা। এবার প্রশাসন এসে অভিযান চালাক, কারাদণ্ড দিক, কিন্তু বাজার স্বাভাবিক করতে পারবে না,’— বলেন এই ব্যবসায়ী।

দেশে বছরে পেঁয়াজের চাহিদা আছে প্রায় ২৪ লাখ মেট্রিক টন। অর্থাৎ মাসে ২ লাখ টন, দিনে যা প্রায় ৭ হাজার মেট্রিক টন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব বলছে, ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে দেশে উৎপাদিত ও আমদানি করা পেঁয়াজ মিলিয়ে প্রতিদিন বাজারে সরবরাহ ছিল ৭ হাজার ৮৯০ মেট্রিক টন। এর মধ্যে প্রায় সাড়ে তিন হাজার টন আমদানি করা পেঁয়াজ। কিন্তু গত ২৯ সেপ্টেম্বর ভারত পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দিলে দেশের বাজারে চরম ঘাটতি দেখা দেয়।

বিজ্ঞাপন

চাহিদার তুলনায় পেঁয়াজের আমদানি সামান্য

বাংলাদেশে আমদানি করা পেঁয়াজের সিংহভাগই আসে ভারত থেকে বিভিন্ন স্থলসীমান্ত দিয়ে। এর বাইরে টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে আসে মিয়ানমারের পেঁয়াজ, তবে পরিমাণে খুবই কম। চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে বিভিন্ন দেশ থেকে জাহাজের মাধ্যমে আসা পেঁয়াজের পরিমাণও খুবই নগণ্য বলে জানিয়েছেন আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীরা। চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে কৃষিজাত পণ্য আমদানির জন্য অনুমতি নিতে হয় বন্দরের উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্র থেকে।

উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্র, টেকনাফ স্থলবন্দরের কর্মকর্তা এবং আড়তদারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২৯ সেপ্টেম্বর ভারত রফতানি বন্ধের পর থেকে গত ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত দেশে পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে ৬৮ হাজার মেট্রিক টন। এর মধ্যে টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে প্রায় ৪৩ হাজার টন, চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ১২ হাজার টন পেঁয়াজ এসেছে। বাকি ১৩ হাজার টন পেঁয়াজের মধ্যে কিছু বিমানে এবং কিছু ভারত থেকে পুরনো এলসির পণ্য এসেছে। অথচ আমদানি স্বাভাবিক থাকলে এই দুই মাসে দেশের বাজারে পেঁয়াজ আসত কমপক্ষে ২ লাখ মেট্রিক টন।

বিজ্ঞাপন

সামুদ্রিক বন্দর উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ১ অক্টোবর থেকে ৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে ১২ হাজার ১৭৩ মেট্রিক টন। এর মধ্যে মিশর থেকে ৫৬২৫ টন, চীন থেকে ৩৫৪৫ টন, মায়ানমার থেকে ১২২৮ টন, তুরস্ক থেকে ১০৬৬ টন, সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে ১৬৮ টন এবং পাকিস্তান থেকে ৫১৪ মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে এবং দেশের বাজারে পৌঁছেছে। সর্বশেষ বুধবার (৪ ডিসেম্বর) চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ ছাড় হয়েছে ৩৮৩ মেট্রিক টন। এর মধ্যে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে এসেছে ১১৪ মেট্রিক টন এবং মিশর থেকে এসেছে ২৬৯ মেট্রিক টন।

ঘোষণা দিয়েও পেঁয়াজ আমদানি করেনি শিল্প গ্রুপগুলো

পেঁয়াজের সংকটের সময়ে দেশের বিভিন্ন শিল্প গ্রুপসহ দায়িত্বশীল পর্যায় যেভাবে পেঁয়াজ আমদানির কথা বলা হয়েছিল এবং হচ্ছে, বাস্তবে তার প্রতিফলন দেখা যায়নি। শিল্প গ্রুপগুলো খুবই কম পরিমাণে পেঁয়াজ এনেছে। অথচ মিশর, চীন, পাকিস্তান, বেলজিয়াম, নেদারল্যান্ডস, সংযুক্ত আরব আমিরাত, উজবেকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও তুরস্ক থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতিপত্র নিয়ে রেখেছে বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান।

সামুদ্রিক বন্দর উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের চট্টগ্রামের উপপরিচালক মো. আসাদুজ্জামান বুলবুল সারাবাংলাকে বলেন, ’২৯ সেপ্টেম্বরের পর থেকে ৩ নভেম্বর পর্যন্ত পেঁয়াজ আমদানির অনুমতিপত্র ইস্যু হয়েছে ১ লাখ ১ হাজার ৫২৬ মেট্রিক টনের। কিন্তু পেঁয়াজ এসেছে ১৩৩টি ছাড়পত্রের বিনিময়ে মাত্র ১২ হাজার ১৭৩ মেট্রিক টন। অনুমতিপত্র অনুযায়ী যদি সব পেঁয়াজ ঢুকত, তাহলে বাজারে সরবরাহ ঠিক থাকত।’

সংশ্লিষ্টদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এস আলম গ্রুপ ৫৫ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানির ঘোষণা দিয়ে অনুমতিপত্র নিলেও সেই পেঁয়াজ এখনো আসেনি। সিটি গ্রুপের পেঁয়াজও আসেনি। শুধু বিএসএম সিন্ডিকেট নামে একটি ব্যবসায়ী গ্রুপ ৮০০ টন পেঁয়াজ আনার অনুমতিপত্র নিয়ে ৫৮০ টন এনেছে। মেঘনা গ্রুপ কামাল ট্রেডিংয়ের মাধ্যমে তুরস্ক থেকে ৭৮০ মেট্রিক টন পেঁয়াজ এনেছে। ওয়াসিফ ট্রেডিং নামে একটি প্রতিষ্ঠানও ৫০০ টনের মতো পেঁয়াজ এনেছে।

আসাদুজ্জামান বুলবুল সারাবাংলাকে বলেন, ‘এস আলম গ্রুপ ও সিটি গ্রুপের কোনো পেঁয়াজ চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ছাড় হয়নি। সম্ভবত সেগুলো জাহাজে আছে। জাহাজে পণ্য তোলার পর পৌঁছাতে সাধারণত একমাস সময় লাগে। মেঘনা গ্রুপ ও বিএমএস সিন্ডিকেট কিছু পেঁয়াজ এনেছে।’

তিনি জানান, চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানির পরিমাণ মূলত গত ২৬ নভেম্বর থেকে কিছুটা বেড়েছে। এর আগ পর্যন্ত চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ তেমন আসেনি। ২৬ নভেম্বর ৬৯৬ মেট্রিক টন, ২৭ নভেম্বর ছুটির দিন, ২৮ নভেম্বর ১২৩৯ মেট্রিক টন, ২৯ নভেম্বর সাপ্তাহিক বন্ধ, ৩০ নভেম্বর ৫২০ মেট্রিক টন, ১ ডিসেম্বর ৮৬৪ মেট্রিক টন, ২ ডিসেম্বর ৪৬৪ মেট্রিক টন এবং ৩ ডিসেম্বর ৭১৩ মেট্রিক টন পেঁয়াজ চট্টগ্রাম বন্দরে খালাস হয়েছে।

পেঁয়াজের আড়তদার মোহাম্মদ ইদ্রিস সারাবাংলাকে বলেন, ‘ভারত থেকে যেকোনো সময় পেঁয়াজ আসতে শুরু করবে— এই আশঙ্কাতেই অনুমতিপত্র নিয়েও পেঁয়াজ আমদানি করছে না কেউ। অথচ তারা বড় বড় ঘোষণা দিয়েছিল। সেজন্য ছোট ছোট আমদানিকারকরা নিরুৎসাহিত হয়েছেন। তারা আমাদনি বন্ধ করে দিয়েছেন। আমদানি যদি না করে, তাহলে ঘোষণা দেওয়ার দরকার কী ছিল? মাঝখান থেকে বাজার আরও অস্থিতিশীল হয়ে গেছে।’

মিয়ানমারের পেঁয়াজে ‘কিছুটা’ রক্ষা

এদিকে, গত দুই মাসে মিয়ানমার থেকে টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে রেকর্ড পরিমাণ প্রায় ৪৩ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ দেশে এসেছে। ব্যবসায়ীরা বলেছেন, মিয়ানমার থেকে যদি গত দুই মাসে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ পেঁয়াজ না আসত, তাহলে দেশের বাজারে কেজিপ্রতি দাম ৫০০ টাকা হতো!

টেকনাফ স্থলবন্দরের শুল্ক কর্মকর্তা মো. আবছার উদ্দিন সারাবাংলাকে জানান, মিয়ানমার থেকে অক্টোবর মাসে ২০ হাজার ৮৪৩ মেট্রিক টন ২৭ কেজি, নভেম্বর মাসে ২১ হাজার ৫৬০ মেট্রিক টন ৪৫২ কেজি, ডিসেম্বর মাসের প্রথম তিন দিনে ২ হাজার ২৯৭ টন ৪৮১ কেজি পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে। সেপ্টেম্বর মাসে পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে ৩ হাজার ৫৭৩ মেট্রিক টন ১৪১ কেজি।

এর আগে, ২০১৩-২০১৪ অর্থবছরের দেশে পেঁয়াজের সংকট হয়েছিল। সে বছরের পুরো সময়ে মিয়ানমার থেকে পেঁয়াজ আমদানি হয়েছিল ১১ হাজার ৯৬৭ মেট্রিক টন ৯৮ কেজি। এরপর ২০১৪-২০১৫ থেকে ২০১৮-২০১৯ অর্থবছর পর্যন্ত গত চার বছরে টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে মিয়ানমার থেকে কোনো পেঁয়াজ আমদানি হয়নি বলে জানিয়েছেন শুল্ক কর্মকর্তা আবছার উদ্দিন।

খাতুনগঞ্জের পেঁয়াজ পরিস্থিতি

দেশের অন্যতম বৃহৎ পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের আড়তদারেরা জানান, খাতুনগঞ্জে এখন প্রতিদিন ৪৫০ থেকে ৫০০ মেট্রিক টন আমদানি করা পেঁয়াজ ঢুকছে। এর মধ্যে মিয়ানমার থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ কম। তুরস্ক-মিশর-পাকিস্তান ও চীনের পেঁয়াজ বেশি। মিয়ানমারের পেঁয়াজ বেশি যাচ্ছে ঢাকার বাজারে।

বুধবার (৪ ডিসেম্বর) খাতুনগঞ্জে পাইকারি বাজারে মিয়ানমারের পেঁয়াজ মানভেদে প্রতিকেজি ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা, চীনের হলুদ রঙের বড় পেঁয়াজ ৬০ থেকে ৭০ টাকা, একই দেশের লাল রঙের পেঁয়াজ ৮০ থেকে ৯৫ টাকা, পাকিস্তান ও মিশরের পেঁয়াজ ১১০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

খুচরা দোকানগুলোতে গিয়ে দেখা গেছে, বুধবার বিকেলে নগরীর টেরিবাজারের মেসার্স এস বি স্টোরে চীনের পেঁয়াজ প্রতিকেজি ১৫০ টাকা ও মিয়ানমারের পেঁয়াজ ১৮০ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। নগরীর আন্দরকিল্লায় সারাহ সুপার শপে তুরস্কের পেঁয়াজ প্রতিকেজি ১০০ টাকা, পাকিস্তানের পেঁয়াজ ১৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। নগরীর মোমিন রোডের হক স্টোরে মিয়ানমারের পেঁয়াজ প্রতিকেজি ১৯০ ও ২০০ টাকা, মিশরের পেঁয়াজ ৯০ টাকা, ভারতের পেঁয়াজ ২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একই এলাকায় মেসার্স শরীফ স্টোরে তুরস্কের পেঁয়াজ প্রতিকেজি ১০০ টাকা, মিয়ানমারের পেঁয়াজ ১৮০ টাকা ও ২০০ টাকা এবং ভারতের পেঁয়াজ ২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

খাতুনগঞ্জের হামিদউল্লাহ মার্কেটের আড়তদার মেসার্স সোনালী ট্রেডিংয়ের মালিক মো. আবসার উদ্দিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘সিলেট সীমান্ত দিয়ে ভারতের কিছু পেঁয়াজ ঢুকছে। এর মধ্যে কিছু পেঁয়াজ খাতুনগঞ্জে আসছে। ভারত ও মিয়ানমারের পেঁয়াজের চাহিদা চট্টগ্রামে বেশি। এজন্য দামও বেশি। বাকি যেসব দেশ থেকে পেঁয়াজ আসছে, সেগুলোর চাহিদা খুব বেশি নেই। বিশেষ করে চীনের পেঁয়াজের চাহিদা তো নেই বললেই চলে। সেজন্য দামও কম। প্রতিদিন খাতুনগঞ্জে ১৮০ থেকে ২০০ গাড়ি পেঁয়াজ ঢুকতে হবে। আবার সেই পেঁয়াজের অধিকাংশ হতে হবে ভারতের। তাহলে দাম কমতে পারে। কিন্তু এখন তো পেঁয়াজের গাড়ি ঢুকছে মাত্র ২০ থেকে ৩০ গাড়ি, তাও মিশর-তুরস্কের পেঁয়াজ।’

দেশি পেঁয়াজেও সুখবর নেই

এ অবস্থায় দেশের কয়েকটি জেলায় আড়তে আসতে শুরু করেছে দেশে উৎপাদিত পেঁয়াজ। তবে আড়তদারেরা বলছেন, সংকটের মধ্যে বাড়তি দামে বিক্রির আশায় পুষ্ট হওয়ার আগেই পেঁয়াজ তুলে বাজারে আনছেন চাষিরা। এসব পেঁয়াজ নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা বেশি।

পাবনার বেড়া মার্কেটের আড়তদার ওমর আলী ফকির সারাবাংলাকে বলেন, ‘একেবারে ভেজা পেঁয়াজ ঈশ্বরদী আর ঢালার চর থেকে তুলে আড়তে এনেছে। প্রতিমণ ছয় হাজার টাকা করে দাম নিচ্ছে। একেবারে কাঁচা পেঁয়াজ। এগুলো তো পচে যাবে দ্রুত। আর একমাস ক্ষেতে রাখলে পেঁয়াজগুলো পরিপূর্ণ হতো। কিন্তু ভারত থেকে আমদানি শুরু হলে দাম পাবে না— এমন আশঙ্কায় চাষিরা এখনই পেঁয়াজ তুলে ফেলছেন।’

চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের আড়তদার মোহাম্মদ ইদ্রিস সারাবাংলাকে বলেন, ‘ডিসেম্বরের শেষ দিকে দেশীয় পেঁয়াজ বাজারে আসতে শুরু করবে। তখন পেঁয়াজের দর কিছুটা পড়বে। ভারত থেকে এ মুহূর্তে পেঁয়াজ আমদানির কোনো সম্ভাবনা নেই। কারণ তারা নিজেরাই পেঁয়াজ আমদানি করছে। ফেব্রুয়ারির শেষদিকে ভারতের মহারাষ্ট্রের নাশিকের পেঁয়াজ উঠতে পারে। তখন তাদের রফতানির নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া ছাড়া গতি থাকবে না। কারণ, রফতানি করতে না পারলে লাখ লাখ টন পেঁয়াজ পচে যাবে। ভারত থেকে যদি আমদানি স্বাভাবিক হয়, দামও কমে ৩০ থেকে ৩৫ টাকায় চলে আসবে। বিমানে-জাহাজে পেঁয়াজ এনে ৩০-৩৫ টাকায় পেঁয়াজ বিক্রি করা যাবে না। কারণ, বিমানে-জাহাজে আমদানিতেই খরচ পড়ছে কেজিতে ১০০ টাকার ওপরে। কেউ তো আর লস দিয়ে বিক্রি করবে না।’

সারাবাংলা/আরডি/টিআর

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন