বিজ্ঞাপন

বুড়িগঙ্গায় বয়ে যায় জীবনের স্রোত

December 8, 2019 | 8:11 am

আরিফুল ইসলাম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: রাজধানী ঢাকার পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া নদী বুড়িগঙ্গাকে ঘিরে প্রতিদিনের জীবন-জীবিকা নির্বাহ করছেন জীবিকার টানে ছুটে আসা অনেকেই। সারাদিনের কাজকর্ম শেষে রাত হলে এই নদীর বুকে নিশ্চিন্তে ঘুম তাদের। পরিবার-পরিজন ছেড়ে ঢাকায় আসা কারও কারও কাছে বুড়িগঙ্গা হয়েছে জীবনের আশ্রয়। বুড়িগঙ্গার শান্ত স্রোতের মতো বয়ে যাচ্ছে তাদের জীবন-জীবিকার স্রোতও।

বিজ্ঞাপন

রাজধানীর পুরান ঢাকার বুড়িগঙ্গা সংলগ্ন সদরঘাট, ওয়াইজঘাট, বাদামতলীর ঘাট, শ্যামবাজার, তেলঘাটসহ বিভিন্ন জায়গায় সরেজমিন দেখা যায়, প্রায় কয়েক হাজার মানুষ জীবিকার তাগিদে দিনরাত থাকেন পানির স্পর্শে। এই বুড়িগঙ্গা তাদের জীবন-জীবিকা ও মাথা গোঁজার ঠাঁই। ভোরের আলো ফোটার আগেই জীবিকার তাগিদে নিম্ন আয়ের মানুষ ভিড় জমান নদীতীরে।

বুড়িগঙ্গা ঘিরে একেকজন একেকভাবে জীবিকা নির্বাহ করেন। তাদের কেউ নৌকার মাঝি, কেউ ভ্রাম্যমাণ দোকানি, কেউ পাইকারি মাছ-সবজি-ফল ব্যবসায়ী। লঞ্চের কুলিগিরিসহ হরেক-রকম কাজ করে থাকেন কেউ কেউ। তবে এখন আর আগের মতো তারা বুড়িগঙ্গায় নির্বিঘ্ন জীবন-যাপন করতে পারছেন না।

নিম্ন আয়ের এ সব মানুষের অভিযোগ, আগের মতো নিরাপদ নেই বুড়িগঙ্গা। রাতে তারা ঠিকমতো ঘুমুতে পারেন না। বাইরের অনেক মানুষ এসে উপদ্রব করেন। এছাড়াও রয়েছে উৎকট গন্ধ। মশা-মাছির উপদ্রব, পানি দূষণসহ নানা প্রতিকূলতা। এ সব কারণে এখানে থাকতে কষ্ট হয় তাদের।

বিজ্ঞাপন

তাদের অভিযোগ—সদরঘাট ও তার আশেপাশের অঞ্চলগুলো নদীর ময়লা পানিতে দূষিত হয়ে উঠেছে। সোয়ারীঘাটে নদীর অবস্থা সবচেয়ে খারাপ। এমন কোনো ময়লা-আবর্জনা নেই যে, এখানে খুঁজলে পাওয়া যাবে না। বর্ষাকালে যদিও একটু পরিষ্কার পানির দেখা মেলে কিন্তু শীতকালে বিকট দুর্গন্ধে নদীর পাশ দিয়ে সাধারণ মানুষের চলাচলও দুঃসহ হয়ে ওঠে। এভাবে চলতে দিলে বুড়িগঙ্গা কেবল তার অস্তিত্ব হারিয়ে উন্মুক্ত ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হবে।

ওয়াইজঘাটের মাঝি ফারুক সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমার বাবা এ ঘাটে নৌকা চালাতেন। এখন আমি চালাই। বাবা বৃদ্ধ হওয়ায় তিনি আর নৌকা বাইতে পারেন না। তাই সংসারের হাল আমাকে ধরতে হয়েছে। মাঝেমধ্যে চুনকুটিয়ায় বাবা-মায়ের সঙ্গে দেখা করতে বাড়ি যাই। বাকি সময় এই নদীতে সময় কাটে। অন্যদের মতো আমিও নৌকাতে রাতে ঘুমাই। নদীর স্রোতের মতো আমাদের ভাসমান জীবনও বয়ে যাচ্ছে।’

বুড়িগঙ্গার ভাসমান দোকানদার আফতাব আলী (৬০) জানান, প্রায় ৪০ বছর ধরে এই নদীর সংস্পর্শে রয়েছি। আগে ডিঙি নৌকা চালাতাম এখন আর পারি না। এ জন্য ছোট একটি নৌকা ভাড়া করে চা-বিস্কুট কেক, সিগারেটসহ নানা শুকনো খাবার বিক্রি করি। খরচ-খরচা বাদ দিয়ে ৩/৪ শ টাকা ইনকাম থাকে। তা দিয়ে কোনো রকমের খেয়ে বেঁচে আছি।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা শহরে থাকার কোনো জায়গা নেই ফল বিক্রেতা সাত্তার আলীর। সারাদিন কাজ শেষে রাত হলেই তিনি ঘুমান নদীর পাড়ে। সাত্তার আলী বলেন, ‘প্রতিদিন সকালে বিভিন্ন জেলা থেকে দেশি ফল আসে। সেখান থেকে কম টাকায় কিনে খুচরা বিক্রেতাদের কাছে বিক্রি করি। দিন শেষে ৪/৫ শ টাকার মতো পকেটে থাকে।’

সারাবাংলা/এআই/একে

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন