বিজ্ঞাপন

দুই বাংলার মঞ্চে সময়’র ‘ভাগের মানুষ’

December 13, 2019 | 9:30 am

এন্টারটেনমেন্ট করেসপন্ডেট

‘উপমহাদেশের মানচিত্রে এক ঐতিহাসিক ঘটনা হলো ভারতবর্ষের বিভাজন। এ কেবলই মানচিত্রের বিভাজন নয়। এর সাথে জড়িয়ে আছে লক্ষ কোটি মানুষের ভাগ্য ভালবাসা সম্পদ সঞ্চয় ও প্রণয়ের নানা ঘটনা। উপমহাদেশ থেকে ইংরেজ যখন তার তাঁবু গুটিয়ে নিতে বাধ্য হলো, তখনই তাদের মধ্যে এক বড়ো সংশয় ছিলো যে, এ মানুষেরা যদি আগামীতে জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে মিলিতভাবে বেড়ে ওঠে তাহলে পৃথিবীর নানা সাম্রাজ্যের শক্তি হুমকির সম্মুখীন হবে। এ সংশয় থেকে শীর্ষস্থানীয় হিন্দু মুসলিম নেতাদের নিয়ে ভারত বিভাজনের চক্রান্ত করে ইংরেজ। সফল হয় তারা। সাম্প্রদায়িক শক্তির উপর ভিত্তি করে পৃথিবীর যে কোন জনগোষ্ঠীর এটাই প্রথম ও একমাত্র বিভাজন।

বিজ্ঞাপন

দেশ ভাগের পর দুই দেশের মধ্যে সংগঠিত ভাবেই শাসকগোষ্ঠী নির্মাণ করে এক কঠোর বৈরীভাব। দীর্ঘদিনের অসাম্প্রদায়িক ভাবনা নিয়ে লালিত জনগণ তখন খাঁচায় বন্দী পাখির মতো কেবল দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। এমন সময় এই উপমহাদেশের নানা পাগলা গারদে খবর পৌঁছে যে সেখানকার হিন্দু পাগল ও মুসলমান পাগলদের নিজ নিজ দেশে পাঠিয়ে দেয়া হবে। অথচ হিন্দুস্তান ও পাকিস্তান নামের দেশ দু’টি পাগলদের কাছে অপরিচিত। ঐ নামের দেশ অতীত ইতিহাসে বা ভূগোলে কোথাও চিহ্নিত নেই।

লাহোর পাগলা গারদের পাগলরা সবাই একজোট হয়ে দুই সরকারের এহেন সিদ্ধান্তকে প্রতিবাদ ও প্রতিহত করার সিদ্ধান্ত নেয়। অথচ পাগলের প্রতিবাদে কি যায় আসে? তারা কি বোঝে রাজনীতির? বর্ণভেদের মহত্ব (!) কি করে স্পর্শ করবে পাগলদের? রাজনীতিবিদরা সব মহত্ব, মানবতা, অসাম্প্রদায়িকতাকে হত্যা করে ধর্মের ভিত্তিতে দেশ জাতি ধর্ম ভালবাসা ভাগের খেলায় মেতেই ওঠে।

বিজ্ঞাপন

লাহোর পাগলা গারদে একদিন প্রত্যুষে শুরু হয় পাগল বিনিময়। দুই দেশের সৈন্যরা স্ব স্ব পতাকা হাতে দাঁড়ায় রাষ্ট্রের কানুন রক্ষা করতে। এরই মধ্যে ঘটে এক রক্তক্ষয়ী ঘটনা। পাগলদের মধ্য থেকে উচ্চারিত হয় এক লোমহর্ষক অসাম্প্রদায়িক কণ্ঠস্বর। রচিত হয় এক নিরব ইতিহাস যা লেখা হয় না কাগজে। কারণ ঐ যুদ্ধের মানুষেরা ছিল পাগল…

এই গল্পটি সা’দত হাসান মান্টোর- যিনি মূলত ছোট গল্পের কিংবদন্তীরূপেই বেঁচে আছেন উর্দূ সাহিত্যে। তার লেখা দেশভাগের গল্পগুলো এখনো তুমুল জনপ্রিয় এবং বিভিন্ন ভাষায় অনুদিত হয়েছে। মূলত আত্ম-জিজ্ঞাসা, দেশ, সমাজ, রাষ্ট্রব্যবস্থা ও প্রশাসনের খামখেয়ালি এসব তাকে তাড়িত করেছে যথাযথভাবে। তাই তার অধিকাংশ গল্প, নিছকই কোন আনন্দের জন্য নয় বরং তা যেন প্রচ্ছন্ন সত্য প্রতিবাদ। তেমনই একটি গল্প ‘টোবটেক সিং’কে ১৯৯৭ সাল থেকে নাট্যরূপে ‘ভাগের মানুষ’ নামে মঞ্চে উপস্থাপন করছে দেশের প্রতিষ্ঠিত নাট্যদল ‘সময়’।

১৯৭৭ সালের ৫ মে থেকে ১৯৯৭ সালের ৫ মে পর্যন্ত ‘সময়’ নাট্যদলের ২০ বছর। এ উপলক্ষে বছরব্যাপী কার্যক্রমের অংশ হিসেবে সেসময় তারা প্রযোজনা করেছিল তাদের ২৬ তম প্রযোজনা নাটক ‘ভাগের মানুষ’। সে বছরের ২৫ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় মহিলা সমিতি মঞ্চে নাটকটির উদ্বোধনী প্রদর্শনী হয়। নাটকটির রচনা করেছেন নাট্যকার মান্নান হীরা। নির্দেশনা দিয়েছেন নাট্যজন আলী যাকের।

বিজ্ঞাপন

‘ভাগের মানুষ’ প্রসঙ্গে নাট্যকার মান্নান হীরা জানালেন তার অনুভুতি, ‘নাট্য রচনার সকল উচ্চারণ, উচ্ছ্বাস, আবেগ, যুক্তিতর্ক সবটাই উঠে আসে অভিনয়ে। সে কারণে অভিনয়টাই মূল কথা। যার সাথে যুক্ত থাকে নির্দেশকের ভাবনা। অভিনয় না দেখে নাটক বা নাট্যকারের সুখ্যাতি বা দুর্নাম কোনটাই যেমন করা উচিত নয়, তেমনি নাট্যকারেরও নাট্য রচনার বাইরে বাড়তি যুক্তি তর্ক দিয়ে নিজের রচনাকে প্রতিষ্ঠিত করবার কোন অবকাশ নেই। ‘ভাগের মানুষ’ নাটকটি প্রখ্যাত কথা সাহিত্যিক সা’দত হাসান মান্টোর গল্প থেকে রচিত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগ এ গল্পের একটি খন্ডিত Improvisation Production করেছিলো। নাট্যকলার শিক্ষক ইস্রাফিল শাহীন-এর আমন্ত্রণে আমি টিএসসি’র কমনরুমে এর মহড়াও দেখি। ওটি দেখে আমার মধ্যে এ গল্প থেকে একটি পূর্ণাঙ্গ নাট্য রচনার সাধ জাগে।’

‘সময়’ এর পূর্বেও আমার ‘একাত্তরের ক্ষুদিরাম’ নাটকটি প্রথম মঞ্চায়ন করে। ওদের শ্রম, মেধা ও সৃজনশীলতা এবং সর্বোপরি নাট্যম্পৃহা আমাকে মুগ্ধ করে। আমি যখন জানতে পারলাম যে, ‘ভাগের মানুষ’ নাটকটির নির্দেশনার দায়িত্ব পালন করতে বিশিষ্ট অভিনেতা নির্দেশক আলী যাকের সদয় সম্মতি জানিয়েছেন, তখন আমি আমার রচনা নিয়ে আশ্বস্ত হই। কারণ এ কথা তো সত্য যে, নাটকের ভাগ্য অনেক জুড়ে নির্ভর করে নির্দেশকের উপর। আলী যাকের নানাভাবে আমাকে সহযোগিতা করে নাট্য রচনার উৎকর্ষতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করেছেন। আমি তার কাছে কৃতজ্ঞ।’

নাট্যজন আলী যাকের নির্দেশিত ‘ভাগের মানুষ’ নাটকটিতে আবহসংগীত ও মঞ্চ পরিকল্পনা করেছেন নির্দেশক নিজেই। আলোক পরিকল্পনায় ঠান্ডু রায়হান, পোষাক পরিকল্পনায় মানসুরা আক্তার লাভলী ও প্রযোজনা অধিকর্তা আমিনুল হক মন্টু। নাটকটির পোষ্টার ডিজাইন করেছেন বিশিষ্ট চিত্রশিল্পী রফিকুন্ নবী।

আগামী ১৫ ডিসেম্বর (রবিবার) নাটকটি মঞ্চস্থ হচ্ছে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে সন্ধ্যা ৬.৩০ টায়। এছাড়াও আগামী ১৯ ডিসেম্বর পশ্চিমবঙ্গের বহরামপুরের ঋতিকের আমন্ত্রণে নাটকটির প্রদর্শনী হবে রবীন্দ্রসদনে।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/এএসজি/

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন