বিজ্ঞাপন

‘ব্যক্তিগত দায় থেকেই শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণ করি’

December 13, 2019 | 9:57 pm

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: মুক্তিযুদ্ধ যখন শুরু হয় তখন আমার কিশোর বয়স। যুদ্ধে যেতে পারিনি তবে মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা করেছি। এই রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে যেদিন বুদ্ধিজীবীদের ক্ষত বিক্ষত  লাশ পাওয়া যায় সেদিন শোকার্ত মানুষের ভিড়ে আমিও ছিলাম। এরপর থেকে প্রতি বছর ডিসেম্বরের ১৩ তারিখ বিকেলবেলা এখানে আসি। শহীদদের আত্মার শান্তির জন্য দোয়া করি। মনে মনে তাদের কৃতজ্ঞতা জানায়। ব্যক্তিগত দায় থেকেই জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণ করি , শ্রদ্ধা জানায়।

বিজ্ঞাপন

শুক্রবার (১৩ ডিসেম্বর) শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের আগের দিন রায়ের বাজার স্মৃতিসৌধে দাঁড়িয়ে সারাবাংলার এই প্রতিবেদককে  নিজের এমন অনুভূতির কথা  জানাচ্ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক সিরাজ উদ্দিন। তার সঙ্গে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া নাতনী।

ষাটোর্ধ্ব এই প্রৌঢ় বলেন, সেদিন বুদ্ধিজীবীরা ,মুক্তিযোদ্ধারা  ছিলেন বলেই পরাধীন দেশ স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখতে পেরেছিল। এই সত্য শত্রুরা জানতো, তাই আত্মসমর্পণের আগে চূড়ান্ত প্রতিশোধ নিয়েছে। এখন আমরাও যদি জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের সম্মান না দেই, তাহলে নিজেদের অকৃতজ্ঞ মনে হবে। সেই দায় থেকেই প্রত্যেক বছর এখানে এসে তাদেরকে ধন্যবাদ দিয়ে যাই।

এই শিক্ষকের বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া নাতনি তানিয়া বরকত জানান, দাদার সঙ্গে ছোটবেলা থেকেই এখনে আসি।  তার কাছ থেকেই এখানে বসে শোনেন বাঙালির মুক্তিযুদ্ধের গল্প। বুদ্ধিজীবীরা স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বেঁচে থাকলে দেশ কেমন হতে পারতো সেইসব স্বপ্নের গল্প দাদা শোনান তাকে!

বিজ্ঞাপন

তানিয়া বলেন, আমি পড়ুয়া মানুষ, তবে বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে খুব বেশি পড়া হয়নি। কোন কারণে তাদের নিয়ে  বইও লেখা হয়েছে কম। তবে দাদার কাছ থেকে গল্প শুনে শুনে সেই সময়টাকে অনুভব করার চেষ্টা করি। তাদের লড়াইকে বুঝতে পারি।

বুদ্ধিজীবী দিবসের আগের দিন রায়ের বাজার বধ্যভূমি সংলগ্ন স্মৃতিসৌধে এদের মতো আরো অনেকেই এসেছিলেন। স্মৃতিসৌধে ঘুরে ঘুরে  দিনভর জানার চেষ্টা করেছেন বধ্যভূমি ও বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের করুণ ইতিহাস।

স্মৃতিসৌধের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা নিরাপত্তা কর্মকর্তা রাশেদ বলেন, বছরের অন্যান্য দিন মানুষের এত ভিড় হয় না। আজকে আশেপাশের বিদ্যালয়গুলো থেকে শিক্ষার্থীরা এসেছে। অনেক টেলিভিশন চ্যানেলে এসে গানের দৃশ্য ধারণ করেছে, সাক্ষাৎকার নিচ্ছে। ফলে ভিড় বেশি। নতুন প্রজন্মের জন্য আমরা সারাদিন মাইকে বুদ্ধিজীবী দিবসের ইতিহাস প্রচার করেছি।

বিজ্ঞাপন

১৯৭১ সালে বাঙালি জাতিকে মেধাহীন করার চক্রান্ত হয়েছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই ইতিহাস আমাদের তরুণ প্রজন্মকে জানতে হবে। তা না হলে তারা কখনও দেশ গড়ার লড়াইয়ে নিজেদের সর্বোচ্চটা দিতে পারবে না। আমরা আজ সারাদিন তাদেরকে সেই ইতিহাস জানানোর চেষ্টা করেছি।

তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের অন্তিম প্রহরে হারানো  বীর সন্তানদেরকে যে বাঙালি জাতি এখনো ভুলে যায়নি সিরাজ উদ্দিনসহ এই রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে আসা মানুষের ঢল  যেন তারই  প্রমাণ।

সারাবাংলা/জেডএফ/টিএস

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন