বিজ্ঞাপন

কখনও ভাবিনি এত বড় গুরুদায়িত্ব নিতে হবে: শেখ হাসিনা

December 20, 2019 | 5:17 pm

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: পঁচাত্তরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পরবর্তী প্রেক্ষাপট উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘রাজনীতি আমার জন্য নতুন কিছু ছিল না। স্কুল থেকে রাজনীতি করতাম। দেয়াল টপকে মিছিলে যেতাম, আন্দোলনে যোগ দিতাম। কলেজ জীবনেও রাজনীতিতে যুক্ত ছিলাম। ছাত্রলীগকে গড়ে তোলার কাজ করেছি, কলেজে সহসভাপতি নির্বাচিত হয়েছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, সেখানেও প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছি। কিন্তু কখনো চিন্তাও করিনি, আওয়ামী লীগের মতো এত বড় একটি দলের নেতৃত্ব নিতে হবে বা এত বড় গুরুদায়িত্ব আমি নিতে পারব।

বিজ্ঞাপন

শেখ হাসিনা বলেন, ‘পঁচাত্তরে বাবা-মা সবাইকে হারিয়েছি। ছয়টি বছর দেশে আসতে পারিনি। রিফউজি ছিলাম দুই বোন। ১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগ আমার অবর্তমানে আমাকে সভাপতি নির্বাচতি করেছিল। আওয়ামী লীগের ওই সিদ্ধান্তে জনগণের সাড়া ছিল। সে কারণেই নেতাকর্মীদের আহ্বানে দেশে ফিরে এসেছিলাম।’

রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর) বিকেলে আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় কাউন্সিলের উদ্বোধনী অধিবেশনে শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্বও করেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

ভাষণের শুরুতে শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী ও প্রথম সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক এবং গণতন্ত্রের মানসপুত্র হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানান।

আওয়ামী লীগের ইতিহাস তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘জন্মলগ্ন থেকেই আওয়ামী লীগ মানুষের অধিকার নিয়ে সংগ্রাম করেছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় বসে গঠন করা কোনো দল নয়। একেবারে গ্রাম বাংলার সাধারণ মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম করার লক্ষ্য নিয়ে এই দল প্রতিষ্ঠিত। এ কারণে বাংলার মানুষের যতটুকু অর্জন, তা আওয়ামী লীগের জন্য। একমাত্র আওয়ামী লীগ যখন সরকারে এসেছে, কাজ করেছে, তখনই মানুষ কিছু পেয়েছে।’

বিজ্ঞাপন

শেখ হাসিনা বলেন, ‘সাধারণ জনগণ, যারা দারিদ্র্যের কষাঘাতে জর্জরিত ছিল, তাদের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য জাতির পিতা সংগ্রাম করেছেন। এই সংগ্রামের মাধ্যমে তিনি জাতিকে স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ করেছেন। কারণ এ দেশের মানুষ ছিল দারিদ্র্যসীমার নিচে। একবেলা খাবার পেত না। মাথাগোঁজার ঠাঁই ছিল না। রোগে চিকিৎসা পেত না। শিক্ষার ব্যবস্থা ছিল না। এ দেশের মানুষ শোষিত-বঞ্চিত ছিল। তারা সেই বঞ্চনার হাত থেকে কীভাবে মুক্ত হবে, সেটি ছিল জাতির পিতার লক্ষ্য। সেজন্যই তিনি দেশ স্বাধীন করে যান।’

বঙ্গবন্ধু ১৯৭২ সালে ব্রিটিশ সাংবাদিক ডেভিড ফ্রস্টকে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, তার জীবনের মূল লক্ষ্য দেশের মানুষকে সংগ্রামে উদ্বুদ্ধ করা, সংগ্রামের মাধ্যমে দেশকে স্বাধীন করে যাওয়া। এ তথ্য উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, এমন অবিচল লক্ষ্য ছিল বলেই বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের অবিসংবাদিত নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হন। তিনি বলতেন, নেতৃত্ব দিতে হলে সবচেয়ে বেশি যেটা প্রয়োজন, সেটা হলো আত্মত্যাগ। আপনারা বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে দেখবেন, বঙ্গবন্ধু আজীবন কষ্ট করেছেন, আজীবন সংগ্রাম করেছেন। বাংলার মানুষের জন্য, দুঃখী মানুষের জন্য ছিল তার লড়াই। তাদের মুখে হাসি ফোটানোর লক্ষ্য নিয়েই তিনি সংগ্রাম করে গেছেন।’

আওয়ামী লীগ সভাপতি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু বারবার কারাবরণ করেছেন। তার নামে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে, বিনা বিচারে বছরের পর বছর কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে। তার ওপর চূড়ান্ত নির্যাতন করা হয়েছে। কিন্তু কখনো তিনি দেশের মানুষের জন্য কল্যাণের যে পথ, সে পথ ছেড়ে যাননি। এই বাংলার জনগণের জন্য যেকোনো আত্মত্যাগ করতে তিনি সদা প্রস্তুত ছিলেন।

বিজ্ঞাপন

পাকিস্তান আমল থেকেই আওয়ামী লীগকে বারবার ধ্বংস করে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমরা সবসময় লক্ষ করেছি, আওয়ামী লীগের ওপর বারবার আঘাত এসেছে। আওয়ামী লীগকে সম্পূর্ণভাবে শেষ করে দেওয়ার অনেক প্রচেষ্টা বারবার হয়েছে। পাকিস্তান আমলে আইয়ুব খান, ইয়াহিয়া খান চেষ্টা করেছেন আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করে দিতে। পঁচাত্তরের পরও সে চেষ্টা অব্যাহত ছিল। খালেদা জিয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দেওয়ার ষড়যন্ত্র করেছে। কিন্তু এই আওয়ামী লীগ জাতির পিতার নীতি ও আদর্শে গড়া সংগঠন। সেই নীতি ও আদর্শ ছিল বলেই জাতির পিতার হাতে গড়া এই সংগঠনকে কেউ ধ্বংস করতে পারেনি।

শেখ হাসিনা বলেন, ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে ছোট ছোট ভাগে বিভক্ত করা হয়েছিল। অনেকবার ভাঙন এসেছে। আমরা আবার নতুনভাবে দলকে গড়ে তুলেছি। আমি দেশে ফেরার পর সারাদেশ ঘুরেছি, সারাদেশ ঘুরে সংগঠনকে দাঁড় করিয়েছি। সে কারণেই আজ আওয়ামী লীগ এই দেশে সবচেয়ে বড় সংগঠন ও সবচেয়ে শক্তিশালী সংগঠন। আর সেই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলেই কেবল জনগণ কিছু পায়, এটি প্রমাণিত সত্য।

সারাবাংলা/এনআর/টিআর/একে

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন