বিজ্ঞাপন

আমি বিশ্বাস করি এটাই নৃত্যের পরম্পরা: শর্মিলা বন্দোপাধ্যায়

December 23, 2019 | 9:30 am

আশীষ সেনগুপ্ত

মানব সমাজে যত রকমের শিল্পকর্ম আছে, তার মধ্যে নৃত্যকলা প্রাচীনতম এবং গুরুমুখী বিদ্যা। স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশের নৃত্যচর্চায় নতুন মাত্রা ও বিস্তার যুক্ত হয়েছে উপমহাদেশীয় নৃত্যধারার সঙ্গে এর যোগ ও সম্পর্ক নিবিড় হওয়ার সুবাদে।

বিজ্ঞাপন

ভারতে প্রশিক্ষণ ও উচ্চতর শিক্ষা লাভ করে অনেক শিক্ষার্থী আমাদের নৃত্যধারায় নতুন গতিধারা বয়ে এনেছেন। এমনই চারজন শিক্ষার্থী সুদেষ্ণা স্বয়ম্প্রভা, মারিয়া ফারিহ উপমা, মৌমিতা রায় জয়া ও হাসান ইশতিয়াক ইমরান। রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা সমাপনকারী এই চার নৃত্যশিল্পী নৃত্যশিল্পের চর্চায় সে ধারারই পরম্পরা বহন করে চলেছেন। মনিপুরী, ভরতনাট্যম ও কত্থক নৃত্যের দীক্ষাগুরুর কাছে যে শিক্ষা তারা গ্রহণ করেছে, সেই পরম্পরা বহনকারী শিল্পীদের পরিবেশনায় আয়োজন করা হয়েছে ধ্রুপদী নৃত্যের এক মনোমুগ্ধকর নৃত্যসন্ধ্যা।

‘পরম্পরা’ শিরোনামে এই নৃত্যসন্ধ্যার আয়োজক ঋদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সংগঠন ‘নৃত্য নন্দন’। যার প্রতিষ্ঠাতা- নৃত্যশিল্পী ও নৃত্য শিক্ষক শর্মিলা বন্দোপাধ্যায়। এই আয়োজনের স্বপ্নদ্রষ্টাও তিনি। তার স্বপ্নের কথা, জানালেন সারাবাংলা’কে-

‘এটা আসলে আমার অনেক দিনের ইচ্ছে। আসলে নাচটাকে এগিয়ে নেয়ার জন্য আমরা নৃত্যনন্দন থেকে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে যাচ্ছি। পাশাপাশি আগামী ২০২০ সালে ‘নৃত্যনন্দন’র ৩০ বছর পূর্তি। সেই উপলক্ষে এখন থেকেই আমরা বিভিন্ন আয়োজন শুরু করেছি। এটা নিয়ে সারা বছরব্যাপী কাজ করার পরিকল্পনা আমরা নিয়েছি। তারই প্রথম পদক্ষেপ ২৮ ডিসেম্বরের এই আয়োজন।’

বিজ্ঞাপন

‘পরম্পরা’য় কত্থক পরিবেশন করবেন মৌমিতা রায় জয়া ও হাসান ইশতিয়াক ইমরান

প্রসঙ্গ: শাস্ত্রীয় নৃত্য _

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশে মূলত আশির দশকের পর থেকে শাস্ত্রীয় নাচটা বিকশিত হয়েছে। আর সেই ধারাবাহিকতায় এই ছেলে-মেয়ে গুলো শিখে আসছে। সেই পরম্পরাটাকে ওরাও ধারন করে যাচ্ছে। তাই আমার মনে হল এরা যেহেতু পাশ করে আসলো, ওদের জন্য বড় একটা জায়গা করে দেয়া দরকার। ওদের পরিচিতি এবং ওরা যে শিখে এসছে সেটা সবার কাছে তুলে ধরা প্রয়োজন। সেই ভাবনা থেকেই এই আয়োজনের পরিকল্পনা।

এছাড়াও শাস্ত্রীয় নাচ নিয়ে আমাদের আরও কাজ করার ইচ্ছে আছে। বিশেষ করে গত ৩০ বছর ধরে আমরা যে কাজগুলো করেছি, আমাদের পুরানো যে নাচগুলো রয়েছে, সেগুলো আবার মঞ্চে উপস্থাপন করা। আমাদের অনেকগুলো প্রযোজনা রয়েছে। সেগুলো সেসময় অনেকে দেখেছে, কিন্তু এ সময়কার অনেকেরই দেখার সৌভাগ্য হয়নি। নাটকের ক্ষেত্রে একটা যেমন প্রযোজনা দীর্ঘদিন প্রদর্শিত হয়। কিন্তু নাচের ক্ষেত্রে সেটা হয়ে ওঠে না। তাই আমার সেগুলোকে আবার মঞ্চে মঞ্চায়িত করা। দর্শকদের কাছে আবার তুলে ধরা। আসলে নিজের কাজগুলো নিয়ে একটা অন্যরকম আনন্দানুভূতি থাকে। যদিও সময়ের সঙ্গে নাচের ধরণ পাল্টে যাচ্ছে, কিন্তু আমি আপ্রাণ চেষ্টা করি পুরানোকে না বদলে একইভাবে উপস্থাপন করা। আগের ভাবনা আর এখনকার ভাবনার মধ্যে পার্থক্যটুকু বোঝা যায়।

‘পরম্পরা’য় মনিপুরী নৃত্যে সুদেষ্ণা স্বয়ম্প্রভা ও ভরতনাট্যমে মারিয়া ফারিহ উপমা

বিজ্ঞাপন

নৃত্য সন্ধ্যার পাশাপাশি _

আমরা পরিকল্পনা করেছি যে, বাংলাদেশে শাস্ত্রীয় নাচকে যারা প্রতিষ্ঠিত করেছেন, ‘নৃত্যনন্দন’র পক্ষ থেকে তাঁদেরকে সম্মাননা জানানো। তাঁদেরকে সবাই হয়তো চেনেন জানেন, কিন্তু আমরা চাচ্ছি তাঁদের অবদানকে স্মরণীয় করে রাখতে। আমরা আরেকটা কাজ করতে চাচ্ছি, সেটা হল সবাই জানেন আমি ২০১৭ সালে ‘শিল্পকলা পদক’ পেয়েছিলাম। সেখানে সম্মাননা অর্থ বাবদ যে টাকাটা পেয়েছিলাম, সেটা আমি রেখে দিয়েছি নাচের কোন কাজে ব্যবহার করার জন্য। আর সেই স্বপ্ন পূরণের জন্য ‘নৃত্যনন্দন’র পক্ষ থেকে আমরা সর্বজন শ্রদ্ধেয় ‘গুরু বিপিন সিং’য়ের নামে একটি পদক প্রবর্তন করছি। আজকের বাংলাদেশে মণিপুরি নৃত্যের যে প্রসার এবং প্রাতিষ্ঠানিক রূপ, সেটা ‘গুরু বিপিন সিং’য়ের কল্যাণে। আমি তাঁর শিষ্যা ছিলাম। তাঁর কাছ থেকেই সরাসরি নাচ শিখেছি। তাই আমার নিজের প্রাপ্তিটা যদি আমার গুরুর নামেই দিতে পারি, সেটা আমার কাছে বিশাল এক পাওয়া। চেষ্টা করবো প্রতি বছরই নৃত্যশিল্পী অথবা নৃত্যশিল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত একজন গুণীকে এটা দেওয়ার।

নৃত্যশিল্পী ও নৃত্য শিক্ষক শর্মিলা বন্দোপাধ্যায়

আগামী ভাবনা _

আমার খুব ভালো লাগছে যে যারা নবীন, বিশেষ করে যারা পরম্পরায় ভারত থেকে নাচ শিখে এসেছে, তাদেরকে নিয়ে এই আয়োজনটা করতে পারছি। আমাদের পরবর্তী অনুষ্ঠানটা করবো আরেক প্রজন্ম, যারা শুধুমাত্র বাংলাদেশেই শাস্ত্রীয় নৃত্য শিখেছে, তাদের নিয়ে। এখানে আমরা যারা ভারত থেকে নাচ শিখে এসে নৃত্য শিক্ষক হিসাবে কাজ করছি, নাচ শেখাচ্ছি, শুধুমাত্র তাদের কাছেই নাচ শিখে শাস্ত্রীয় নৃত্যে নিজেকে তৈরি করছে, সেইসব প্রজন্মকে নিয়ে। আমি বিশ্বাস করি এটাই নৃত্যের পরম্পরা।

নৃত্যশিল্পী নির্বাচন _

সুদেষ্ণা, উপমা, ইমরান ও জয়া- চার জনই একটা ব্যাচ। আইসিসি স্কলারশিপ নিয়ে ওরা একসঙ্গে রবীন্দ্রভারতী থেকে পাশ করে এসেছে। আমি ভীষণ আশাবাদী এদের উপর। গত বছরই ওরা পাশ করে দেশে ফিরেছে। আর ফিরেই ওরা থেমে নেই। প্রচুর কাজ করছে, নাচ শেখাচ্ছে। আমি মনে করি এ অনুষ্ঠানটার মাধ্যমে ওরা নিজেদেরকে আরও এগিয়ে নিতে পারবে।

আগামী ২৮ ডিসেম্বর (শনিবার) সন্ধ্যা ৬টা ৪৫ মিনিটে, ছায়ানট মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হবে নৃত্যসন্ধ্যা ‘পরম্পরা’। পুরো আয়োজনটি দর্শনীর বিনিময়ে।

সারাবাংলা/এএসজি/এমও

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন