বিজ্ঞাপন

নুরের মামলায় প্রধান আসামি সনজিত-সাদ্দাম

December 24, 2019 | 4:51 pm

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) ভিপি নুরুল হক নুরসহ তার সমর্থকদের ওপর হামলার ঘটনায় শাহবাগ থানায় ৩৭ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছেন ভিপি নুর। ঢাবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাসকে এক নম্বর ও সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসাইনকে দুই নম্বর আসামি করা হয়েছে মামলায়।

বিজ্ঞাপন

মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) বিকেলে ডাকসুর সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেন শাহবাগ থানায় ভিপি নুরের পক্ষে মামলাটি দায়ের করেন।

আরও পড়ুন- উসকানি দিয়ে সেফজোনে থাকার চেষ্টা ছাত্রলীগের, নির্বিকার প্রশাসন

শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাসান মামলা দায়েরের তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ৩৭ জনের নাম উল্লেখ করে নুর মামলা দায়ের করেছেন। মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, হামলায় নেতৃত্ব দিয়েছেন সনজিত চন্দ্র দাস ও সাদ্দাম হোসাইন।

বিজ্ঞাপন

নুরের পক্ষে মামলা দায়ের করা আখতার হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, নুর নিজে বাদী হয়ে এই মামলা দায়ের করেছেন। তবে তিনি অসুস্থ থাকায় আমি তার পক্ষ হয়ে মামলার অভিযোগ পত্রটি থানায় জমা দিয়েছি।

আরও পড়ুন- ঢাবিতে হামলার শুরু করে ‘মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ’, শেষ করে ‘ছাত্রলীগ’

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে,সময় আনুমানিক দুপুর ১২টায়, আমি, আমার সংগঠনের সদস্যরা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আমার কক্ষে অবস্থান করি। হঠাৎ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের নেতাকর্মীরা আমার কক্ষে প্রবেশ করে অতর্কিতভাবে লাঠি-সোটা নিয়ে হামলা করে চলে যায়। তারা যেন আবারও হামলা করতে না পারে, তাই ডাকসু কর্মচারীদের সহায়তায় ডাকসুর মূল ফটকে তালা লাগিয়ে দেওয়া হয় । কিন্তু এর কিছুক্ষণ পরই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস এবং সাধারণ সম্পাদক ও ডাকসু’র এজিএস সাদ্দাম হোসেনের নেতৃত্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ডাকসু কর্মচারীদের সরিয়ে মূল ফটকের তালা খুলে আমার কক্ষে প্রবেশ করে আমাকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে দ্বিতীয় দফা হামলা চালায়। তারা আমার কক্ষের বাতি নিভিয়ে দিয়ে দেশীয় অস্ত্র-সস্ত্র সহকারে হত্যার উদ্দেশ্যে আমার ওপর ও ছাত্র অধিকার পরিষদের কর্মীদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়।

বিজ্ঞাপন

হামলায় আমার ডান হাত ও ডান পাঁজর মারাত্মকভাবে জখম হয়। আমাকে বাঁচাতে গিয়ে ছাত্র অধিকার পরিষদের নিম্নোক্ত নেতাকর্মীরা গুরুতর আহত হয়— (১) ফারুক হাসান, যুগ্ম-আহ্বায়ক, ছাত্র অধিকার পরিষদ (২) মুহাম্মদ রাশেদ খান, যুগ্ম-আহ্বায়ক (৩) এপিএম সুহেল,যুগ্ম-আহবায়ক(৪) হাসান আল মামুন, আহ্বায়ক (৫) আমিনুর ইসলাম (৬) তুহিন ফারাবী (৭) মেহদী হাসান(৮) নাজমুল হাসান (৯) আয়াতুল্লাহ বেহেশতী (১০) রবিউল হোসেন (১২) মশিউর রহমান, যুগ্ম-আহ্বায়ক (১৩) সাইফুল ইসলাম, (১৪) আবু হানিফ, যুগ্ম-আহ্বায়ক, (১৫) আরিফুর রহমান সহ ৩০ জন। এদের মধ্যে গুরুতর আহত হয়ে ফারাবী ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে আছেন। অন্যান্যরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সহ ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এই অতর্কিত হামলায় প্রকাশ্যে নেতৃত্ব দেন সনজিত চন্দ্র দাস ও সাদ্দাম হোসাইন।

মামলার আসামি যারা

আসামীরা হলেন— (১) সনজিত চন্দ্র দাস, সভাপতি, ঢাবি ছাত্রলীগ, (২) সাদ্দাম হোসেন, সাধারণ সম্পাদক, ঢাবি ছাত্রলীগ, (৩) আমিনুল ইসলাম বুলবুল, সভাপতি, মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ, (৪) আল মামুন, সাধারণ সম্পাদক, মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ, (৫) সনেট মাহমুদ, সভাপতি, মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ, ঢাবি, (৬) ইয়াসির আরাফাত তুর্য, সাধারণ সম্পাদক, মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ, ঢাবি, (৭) মারিয়াম জাহান খান, ভিপি, সূর্যসেন হল সংসদ, (৮) শেখ মুহাম্মদ তানিন, সাংগঠনিক সম্পাদক, ঢাবি ছাত্রলীগ, (৯) আব্দুর আলীম খান, ভিপি, এ এফ রহমান হল সংসদ, (১০) আবু ইউনুস, এজিএস, বিজয় একাত্তর হল সংসদ, (১১) রাকিবুল হাসান ঐতিহ্য, সদস্য, ডাকসু, (১২) মাহমুদুর হাসান, সদস্য, ডাকসু, (১৩) সাদ বিন কাদের চৌধুরী, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক, ডাকসু, (১৪) রবিউল হােসেন রানা, সহ-সভাপতি, ঢাবি ছাত্রলীগ, (১৫) নিয়ামত উল্লাহ তপন, শিক্ষাবিষয়ক উপ-সম্পাদক, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ, (১৬) হাসিবুল হাসান শান্ত, জিএস, জিয়া হল সংসদ, (১৭) সিফাতুজ্জামান খান, ক্রীড়া সম্পাদক, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ, (১৮) মিজানুর রহমান মিজান, জিএস, মহসীন হল সংসদ, (১৯) ফেরদৌস আলম, সাংগঠনিক সম্পাদক, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ, (২০) আব্দুর রহিম সরকার, জিএস, এ.এফ রহমান হল সংসদ, (২১) তানজিল ইমরান তালাশ, সাহিত্য সম্পাদক, এএফ রহমান হল সংসদ, (২২) মাহমুদুল হাসান বাবু, তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক, ঢাবি ছাত্রলীগ, (২৩) সিরাজুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক, জিয়া হল ছাত্রলীগ, (২৪) মামুন বিন সাত্ত্বার, সাংগঠনিক সম্পাদক, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ, (২৫) ইবনুল হাসান উজ্জ্বল ও (২৬) খাজা খায়ের সুজন, উপ-স্কুল বিষয়ক সম্পাদক, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।

আসামির তালিকায় আরও আছেন— (২৭) খান মিলন হােসেন নীরব, এস এম হল ছাত্রলীগ, (২৮) ইমরান আহমেদ, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক, কবি জসীমউদ্দিন হল ছাত্রলীগ, (২৯) হৃদয় হাসান সাহাগ, গণশিক্ষা সম্পাদক, ঢাবি ছাত্রলীগ, (৩০) উজ্জ্বল, চারুকলা ছাত্রলীগ, (৩১) আরিফুল ইসলাম, (৩২) ফাতিমা রিপা, ছাত্রী বিষয়ক সম্পাদক, মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ, (৩৩) আমিনুল ইসলাম, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক, মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ (জামাল গ্রুপ), (৩৪) আইনুল ইসলাম মাহবুব, যুগ্ন-সাধারণ সম্পাদক, মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ, (৩৫) মেহেদী হাসান নিবিড়, (৩৬) মেহেদী হাসান শান্ত, জিএস,বঙ্গবন্ধু হল সংসদ ও (৩৭) জীবন রায়, সহসভাপতি, ঢাবি ছাত্রলীগ।

বিজ্ঞাপন

ছাত্রলীগের  অজ্ঞাতনামা আরও ৪০ থেকে ৫০ জন নেতাকর্মী এই হামলায় প্রত্যক্ষভাবে অংশ নেয় বলেও মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে।

একই ঘটনায় পুলিশও বাদী হয়ে শাহবাগ থানায় একটি মামলা দায়ের করেছে। মামলার অভিযুক্ত আসামিরা হলেন মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের আমিনুল ইসলাম বুলবুল, আল মামুন, এ এস এম সনেট, ইয়াসির আরাফাত তুর্য, ইমরান সরকার, ইয়াদ আল রিয়াদ, মাহবুব হাসান নিলয়, তৌহিদুল ইসলাম মাহিম। মামলায় আরও অজ্ঞাত ৩০ থেকে ৩৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) আল মামুন ও ইয়াসির আরাফাত তুর্যকে আটক করে পুলিশ। আজ পুলিশ বাদী হয়ে মামলা দায়েরের পর ওই মামলায় তাদের গ্রেফতার দেখানো হয়। রিমান্ড মঞ্জুর হওয়ার আরেক আসামি মেহেদী হাসান শান্তকে গ্রেফতার করা হয় মঙ্গলবার দুপুরে। তাদের আদালতে উপস্থাপন করা হলে আদালত তাদের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।

রোববার (২২ ডিসেম্বর) দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাকসু ভবনে ডাকসু ভিপি নুরসহ তার অনুসারীদের ওপর হামলা চালানো হয়। ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের অভিযোগ, মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাদের ওপর হামলা চালিয়েছেন। এতে ভিপি নুরসহ তার অনুসারী বেশ কয়েকজন আহত হন। এ ঘটনায় আহত ২৪ জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়া হয়। এর মধ্যে ছয় জনকে ভর্তি রেখে চিকিৎসা দেওয়া হয়। রোববার রাতে তুহিন ফারাবিকে লাইফ সাপোর্টেও নেওয়া হয়। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ভিপি নুরসহ বাকি পাঁচ জনের শারীরিক অবস্থা এখন শঙ্কামুক্ত

এদিকে, ভিপি নুরসহ অন্যদের ওপর হামলার বিচার চেয়ে রোববার সন্ধ্যায় ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেয় প্রগতিশীল ছাত্রজোট। পরে সোমবার সারাদেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিক্ষোভের ঘোষণা দেয় ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ। এ হামলার ঘটনায় বিভিন্ন মহল থেকেও ওঠে নিন্দার ঝড়। বিজ্ঞপ্তি দিয়ে প্রতিবাদ জানায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। নিন্দা জানান সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনও। হামলায় জড়িত কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না বলে জানান কাদের। এ ঘটনার তদন্তের দাবিও জানান কামাল। পরে সোমবার কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আবু মো. দেলোয়ার হোসেনকে ছয় সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে ঢাবি প্রশাসন।

সারাবাংলা/এসএইচ/জেডএফ

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন