বিজ্ঞাপন

রোহিঙ্গায় আস্থা ফেরাতে চীনের প্রস্তাবে পাত্তা দিচ্ছে না মিয়ানমার

December 25, 2019 | 10:59 pm

এমএকে জিলানী, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর আস্থা ফেরাতে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারকে এখন পর্যন্ত কমবেশি এক ডজন প্রস্তাব দিয়েছে চীন, যেন টেকসই প্রত্যাবাসন নিশ্চিত হয়। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশ চীনের এসব প্রস্তাবে ইতিবাচক সাড়া দিলেও মিয়ানমার কোনো পাত্তাই দিচ্ছে না। নতুন বছরের শুরুতে বেইজিংয়ের মধ্যস্ততায় ত্রিপাক্ষিক ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠক অনুষ্ঠানের সম্ভাবনা রয়েছে। আসন্ন বৈঠককে সামনে রেখে প্রত্যাবাসন ইস্যুতে চীন আরও কয়েকটি নতুন প্রস্তাব দিবে বলে কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে।

বিজ্ঞাপন

ঢাকায় চীন মিশনের উপপ্রধান ও মিনিস্টার কাউন্সিলর ইয়ান হুয়ালঙ মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) সারাবাংলাকে বলেন, ‘রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে চীন চেষ্টা করে যাচ্ছে। আরও একটি ক্রিপক্ষীয় বৈঠক খুব শিগগিরই অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকটির জন্য আমরা উভয় পক্ষের সঙ্গে অব্যাহত যোগাযোগ রক্ষা করছি।’

ইয়ান হুয়ালঙ আরও বলেন, ‘টেকসই প্রত্যাবাসন নিশ্চিতে চীন বেশকিছু নতুন প্রস্তাব দিতে চায়। এই প্রস্তাবগুলো নিয়ে আসন্ন বৈঠকে আলোচনা করা হবে।’

আরও পড়ুন- রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে এবার ত্রিপক্ষীয় উদ্যোগ, যুক্ত হচ্ছে চীন

বিজ্ঞাপন

কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, প্রত্যাবাসন বাস্তবায়নে এখন পর্যন্ত চীনের পক্ষ থেকে কমবেশি একডজন প্রস্তাব করা হয়েছে, যেগুলোর বিষয়ে ঢাকা ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছে। তবে এসব প্রস্তাবে কোনো পাত্তাই দেয়নি নেপিডো। কীভাবে টেকসই প্রত্যাবাসন বাস্তবায়ন করা যায় এবং এই সংকট কাটাতে কীভাবে রোহিঙ্গাদের আস্থা অর্জন করা যায়, মূলত এই প্রক্রিয়া ঠিক করতেই চীনের এসব প্রস্তাবনা।

এসব প্রস্তাবের মধ্যে চীন বলছে, যেসব রোহিঙ্গা পরিবার কক্সবাজারের শিবিরে অবস্থান করছেন, তাদের পরিবারের একজন করে মিয়ানমারের রাখাইনে নিয়ে যাওয়া হোক। রাখাইনে গিয়ে রোহিঙ্গা পরিবারের প্রতিনিধিরা যদি নিরাপত্তাসহ সার্বিকভাবে ইতিবাচক পরিবেশের উপস্থিতি দেখতে পায়, তবে তারা তাদের পরিবারকে সেই বার্তা দেবে। তখন কক্সবাজারের শিবিরগুলোতে অবস্থান করা রোহিঙ্গা পরিবারগুলো আস্থা ফিরে পাবে এবং তারা মিয়ানমারে ফিরে যাবে। চীনের এমন কমবেশি একডজন ইতিবাচক প্রস্তাবে এখন পর্যন্ত কোনো সাড়া দেয়নি মিয়ানমার।

এদিকে, আসন্ন ত্রিপক্ষীয় বৈঠক বিষয়ে ঢাকায় নিযুক্ত চীনের দূত পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাক্ষাৎ করার কথা রয়েছে। এর আগে চীনের দূতকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বার্তা পাঠিয়েছেন, চুক্তি অনুযায়ী প্রত্যাবাসন ইস্যুতে ঢাকা ইতিবাচক মনোভাব বজায় রাখলেও নেপিডো বারবারই মিথ্যা তথ্য ও নেতিবাচক মনোভাব দেখিয়ে যাচ্ছে, এর কারণ কী?

বিজ্ঞাপন

ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং গত ১১ ও ১২ ডিসেম্বর কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবির পরির্দশন করেন। ওই সময় গণমাধ্যমকর্মীদের চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং বলেন, ‘দ্বিপাক্ষিকভাবেই এই সংকটের সমাধান করতে হবে। তা না করতে পারলে সমস্যা আরও বাড়বে।’

রাষ্ট্রদূত লি জিমিং আরও বলেন, ‘মিয়ানমারের ওপর চীনের প্রভাব নিয়ে বেশিরভাগ মানুসের মধ্যে ভুল ধারণা রয়েছে। অনেকেই বলে থাকেন, চীন মিয়ানমারকে চাপ দিলেই সমস্যার সমাধান হয়। অনেকে বলে থাকেন, মিয়ানমারকে চীন যা বলবে, মিয়ানমার তাই করবে। এই ক্ষেত্রে চীনকে অনেক বেশি কৃতিত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু সবাইকে মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশের মতোই মিয়ানমারও একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র। যেখানে চীন দুই দেশের বন্ধুরাষ্ট্র হিসেবে উভয়কে পরামর্শ ও উভয়ের মধ্যে সমন্বয়কের দায়িত্ব নিয়ে সহায়তা করতে পারে। আর এসব পরামর্শ বা সমন্বয় গ্রহণ করা পুরোটাই মিয়ানমারের নিজের ওপর নির্ভর করে। তবে বন্ধুত্বের জায়গা থেকে চীন সবসময়েই এই সংকট সমাধানে কাজ করে যাবে।’

রোহিঙ্গা সংকট সমাধান নিয়ে কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, এই সংকট সমাধানে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার উভয়েই চীনের ওপর আস্থা রেখেছে। গত ২২ আগস্ট দ্বিতীয়বারের মতো রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন উদ্যোগ ব্যর্থ হয়। এরপর গত ২৩ সেপ্টেম্বর (সোমবার) নিউইয়র্কে বাংলাদেশ, চীন ও মিয়ানমারের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের মধ্যে একটি ত্রিপাক্ষিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় চীনকে যুক্ত করে ত্রিপাক্ষিক উদ্যোগের যাত্রা শুরু হয়। এখন পর্যন্ত ত্রিপাক্ষিক ওয়ার্কিং গ্রুপের একাধিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। আগামী ত্রিপাক্ষিক বৈঠকটিও চীনের উদ্যোগেই হচ্ছে।

এর আগে, জাতিসংঘসহ যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং কানাডার সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিরা এরই মধ্যে জানিয়েছে,  প্রত্যাবাসনের জন্য কোনো অনুকূল পরিবেশ তৈরি করেনি মিয়ানমার। রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে দেশটির সরকার আন্তরিক নয়।

বিজ্ঞাপন

২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রাখাইনে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর নির্যাতন শুরু হলে প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে প্রায় ৭ লাখেরও বেশি মানুষ। সব মিলিয়ে বাংলাদেশের একাধিক শিবিরে মিয়ানমারের নাগরিক ১২ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে।

জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন এই ঘটনাকে জাতিগত নিধনযজ্ঞের ‘পাঠ্যপুস্তকীয় উদাহরণ’ বলে আখ্যা দিয়েছে। রাখাইন সহিংসতাকে জাতিগত নিধন আখ্যা দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও। তুমুল সমালোচনা করছে যুক্তরাজ্য, কানাডা, কুয়েত, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ পুরো বিশ্ব।

সারাবাংলা/জেআইএল/টিআর

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন