বিজ্ঞাপন

উত্তর-দক্ষিণে নৌকার মাঝি হচ্ছেন কারা

December 27, 2019 | 4:51 pm

নৃপেন রায়, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: শীতের হিমেল আমেজে উত্তাপ ছড়াচ্ছে আসন্ন ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচন। দুই সিটির ভোটকে ঘিরে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির প্রার্থীরা ভোটের মাঠে সরব হয়ে উঠেছেন। আগামী ৩০ জানুয়ারির এই নির্বাচন ঘিরে মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে দৌঁড়ঝাঁপ শুরু হয়েছে। মেয়র পদে দুই দলের হেভিওয়েট প্রার্থীরা এরইমধ্যে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা উত্তর সিটিতে আতিকুল ইসলাম ফের নৌকার মনোনয়ন পেতে যাচ্ছেন বলে দলীয় ঘরানায় জোর গুঞ্জন উঠেছে। তবে দক্ষিণে মনোনয়ন দৌড়ে বর্তমান মেয়র সাঈদ খোকন ও ঢাকা-১০ আসনের সরকার দলীয় সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপসসহ আরও দুইজন প্রভাবশালী নেতা আছেন। এতে নানামুখী জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়েছে।

এদিকে দুই সিটির নির্বাচন ঘিরে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরে জমে উঠেছে রাজনীতি। দক্ষিণে মেয়র পদে ঢাকা-১০ আসনের সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস এবং ঢাকা-৭ আসনের সংসদ সদস্য হাজী মোহাম্মদ সেলিম দলীয় মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করায় এ রাজনীতি জমে ওঠে। তাপসের পক্ষে দলের একটি গ্রুপ অবস্থানও নিয়েছে।

অন্যদিকে ঢাকা উত্তরে মেয়র প্রার্থী হিসেবে আতিকুল ইসলাম মোটামুটি চূড়ান্ত হলেও গতকাল দিনভর আলোচনায় ছিল আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক ও ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রমের নামও গুঞ্জন ছিল। কিন্তু তাদের দুজনের মধ্যে কেউ এখন পর্যন্ত মনোয়নপত্র সংগ্রহ করেননি। দলের শীর্ষ মহলের সবুজ সংকেত পেলে তারাও মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করতে পারেন।

বিজ্ঞাপন

শনিবার (২৮ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় গণভবনে স্থানীয় সরকার নির্বাচন মনোনয়ন বোর্ডের সভায় দুই সিটি মেয়র পদে মনোনয়ন ভাগ্য নিশ্চিত করবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।

নির্বাচনের সময় যতই ঘনিয়ে আসছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ থেকে মেয়র পদে কারা মনোনয়ন পাচ্ছেন তা নিয়ে জল্পনা-কল্পনার ডালপালাও ভারী হয়ে উঠছে। উত্তরে মেয়র পদে বর্তমান নগরপিতা আতিকুল ইসলামেই ভরসা রাখার ইঙ্গিত মিললেও দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকন রয়েছেন শঙ্কায়।

দক্ষিণে মেয়র পদে দলের প্রভাবশালী সংসদ সদস্য এবং যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাগ্নে প্রয়াত শেখ ফজলুল হক মনির ছেলে ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপসের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ নিয়েও সৃষ্টি হয়েছে কৌতূহল।

বিজ্ঞাপন

এদিকে, মনোনয়ন ফরম সংগ্রহের শেষদিন শুক্রবার দক্ষিণে মেয়র পদে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির নতুন আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট নজিবুল্লাহ হিরু। তার পক্ষে রাজনৈতিক কার্যালয়ে মনোনয়ন ফরম তোলেন ব্যক্তিগত সহকারী অ্যাডভোকেট ওমর ফারুক।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের দুইজন সদস্য জানান, এবার জয়ের ধারা বজায় রাখার লক্ষ্যেই মেয়র পদে দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়া হবে। কার কোন ব্যর্থতা বা আবেগের জায়গা থেকে কাউকে মনোনয়ন দেওয়া হবে না। দুই সিটি সার্বিক ভোট পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রত্যেক প্রার্থী সম্পর্কে চুলচেরা বিশ্লেষণ করে আমাদের দলীয় নেত্রী মনোনয়ন বোর্ডের সভাপতি শেখ হাসিনা প্রার্থীর নাম চূড়ান্ত করবেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের প্রার্থী মনোনয়ন দেবে স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ড। মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষেত্রে চেষ্টা করা হবে, যোগ্য লোক খুঁজে বের করা। সে ক্ষেত্রে সততা, জনপ্রিয়তা, আন্তরিকতা, সব মিলিয়ে ভোটের হিসাব-নিকাশে যাকে ইলেকশনে বৈতরণী পার হতে সহজ হবে এ ধরনের ত্যাগী, পুরনো কমিটমেন্ট আছে। যাদের নিয়ে বিতর্ক নেই, সমালোচনা নেই ও পরিচ্ছন্ন; এদের ভেতরে থেকেই প্রার্থী দেওয়া হবে।’

দলের একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে, ফজলে নূর তাপস দলের নীতি-নির্ধারক মহলের সবুজ সংকেত পেয়েই মনোনয়ন সংগ্রহ করেছেন। এদিকে তাপসের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করাতে বর্তমান মেয়র সাঈদ খোকনের কপালে চিন্তার ভাঁজ দেখা দিয়েছে। গতকাল রাতে গণভবনে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যান। মেয়র খোকন গণভবন থেকে বাসায় ফিরে গেলে ক্ষমতাসীন দলটির প্রভাবশালী কয়েকজন নেতা ও মন্ত্রীও তাকে ফোন করেন এবং নেত্রীর কী সিগন্যাল সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করেন।

বিজ্ঞাপন

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মেয়র সাঈদ খোকনের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরেননি।

এদিকে শুক্রবার ধানমন্ডিতে দলীয় সভাপতির কার্যালয়ে সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ঢাকা সিটি নির্বাচনে প্রার্থী নির্ধারণে ক্লিন ইমেজকে গুরুত্ব দিচ্ছে বলে জানান তিনি।

ওবায়দুল কাদের বলেন, যারা বিতর্কের ঊর্ধ্বে রয়েছে, যাদের কোনো অপকর্মের রেকর্ড নেই তাদের আমরা প্রার্থী হিসেবে বাছাই করব।

শনিবার সন্ধ্যা ৬টায় গণভবনে স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সভা হবে। সেখানেই প্রার্থী ঠিক করা হবে। গত দুই দিনে মেয়র পদে দক্ষিণে সাঈদ খোকন, ফজলে নূর তাপস, হাজী সেলিম এবং উত্তরে আতিকুল ইসলামসহ আওয়ামী লীগে মোট ১৬ জন দলীয় মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন।

এ ছাড়াও কাউন্সিলর পদে দল সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী নির্বাচনে দুই সিটিতে ১২৯টি ওয়ার্ডের বিপরীতে বৃহস্পতিবার ফরম বিক্রির শেষ সময় পর্যন্ত ৯০৫টি আবেদন ফরম বিক্রি করেছে আওয়ামী লীগ। আগামীকাল শনিবার গণভবনে আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সভায় মেয়র প্রার্থী চূড়ান্ত করবে আওয়ামী লীগ।

২০১৫ সালে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ এনে ভোট শুরুর কয়েক ঘণ্টার মধ্যে তা বর্জনের ঘোষণা দেয় বিএনপি। ঢাকা উত্তরের মেয়র আনিসুল হকের মৃত্যুর পর চলতি বছর ২৮ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত উপনির্বাচনেও অংশ নেয়নি বিএনপি। নির্বাচন কমিশনের তফসিল অনুযায়ী ৩১ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার শেষদিন। ২ জানুয়ারি যাচাই-বাছাই এবং প্রত্যাহারের শেষ সময় ৯ জানুয়ারি। ১০ জানুয়ারি প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ এবং ওইদিন থেকেই শুরু হবে আনুষ্ঠানিক প্রচার। আগামী ৩০ জানুয়ারি ইভিএম’এ ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।

সারাবাংলা/এনআর/ একে/জেডএফ

Tags: , , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন