বিজ্ঞাপন

এএসপি সেজে ধর্ষণের অভিযোগে ছাত্রলীগ নেতা গ্রেফতার

January 6, 2020 | 7:40 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) পরিচয়ে ফেসবুকের মাধ্যমে সম্পর্ক গড়ে বিয়ের নাটক সাজিয়ে এক নারীকে ধর্ষণের অভিযোগে চট্টগ্রামে এক ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে। ওই নারীর অভিযোগ, ভুয়া পরিচয় ও নাম-ঠিকানা ব্যবহার করে ওই ছাত্রলীগ নেতা বিয়ের নামে প্রতারণা করে তার কাছ থেকে প্রায় ২৩ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

সোমবার (৬ জানুয়ারি) সকালে ওই নারী চট্টগ্রাম নগরীর বাকলিয়া থানায় মামলা দায়ের করেন। এরপর দুপুর আড়াইটার দিকে নগরীর বলিরহাট এলাকা থেকে অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয় বলে সারাবাংলাকে জানিয়েছেন বাকলিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মুহাম্মদ মঈন উদ্দীন।

অভিযুক্ত আকিবুল ইসলাম আকিব (৩২) চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার হাইলধর ইউনিয়নের খাসখামা গ্রামের নুরুল আবছারের ছেলে। অভিযোগকারী নারীর বাড়িও একই উপজেলায়। আকিব চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বলে নিশ্চিত করেছেন একই কমিটির সভাপতি এস এম বোরহান উদ্দিন।

নারীর অভিযোগ, ২০১৯ সালের ৩ জুলাই স্বামীর সঙ্গে তার বিচ্ছেদ হয়। এরপর দুই মেয়ে নিয়ে তিনি আলাদা থাকতে শুরু করেন। এসময় ফেসবুকে ‘TAHSAN KHAN PIZON’ নামে একজনের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। সে নিজেকে এএসপি পরিচয় দেওয়ায় তিনি কথা বলতে উৎসাহী হন। পরিচয়ের এক পর্যায়ে তাহসান বিয়ের প্রস্তাব দেয় এবং তিনি রাজি হন। ওই বছরের ৭ আগস্ট তারা বিয়ে করেন। নিকাহনামায় তার নাম ‘তাহসান খান আকিব’ এবং বাবার নাম মো. আশরাফ খান, মাতা- মোছা. আসমা খানম উল্লেখ করা হয়। ঠিকানা লেখা হয়- নগরীর কোতোয়ালী থানার জামালখানে খান ম্যানশনে।

বিজ্ঞাপন

মামলার এজাহারে নারী উল্লেখ করেন, বিয়ের পর তারা একসঙ্গে স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে বিভিন্ন হোটেলে রাতযাপন করেন এবং শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হন। পরে বাকলিয়ার ডিটি রোডে ওই নারীর ভাড়া নেওয়া বাসায়ও তারা একইভাবে রাতযাপন করেন। কিন্তু নিজের বাসায় তুলে নিতে বললে তাহসান নানা টালবাহানা শুরু করে। এর মধ্যে সে গত বছরের ৫ সেপ্টেম্বর ওই নারীর কাছ থেকে পাঁচ লাখ টাকা ধার নেয়। ২৭ অক্টোবর এক লাখ ২৮ হাজার টাকা দিয়ে তাকে মোবাইল কিনে দেন ওই নারী। তিন লাখ টাকা দিয়ে নগরীর আগ্রাবাদে ইয়ামাহার শো-রুম থেকে একটি মোটর সাইকেল কিনে দেন। বিভিন্নসময় ডেবিট কার্ড দিয়ে সে তুলে নেয় প্রায় চার লাখ টাকা। এভাবে আরও বিভিন্নসময় নানা অজুহাতে আরও কমপক্ষে ১০ লাখ টাকা তাহসান তার কাছ থেকে নিয়েছে বলে অভিযোগ ওই নারীর।

এজাহারে আরও বলা হয়, বারবার টাকা চাইতে থাকলে তার সন্দেহ হয়। একদিন তাহসানের মোবাইল ফোন পরীক্ষা করে ওই নারী দেখেন, সে (তাহসান) বিভিন্ন নামে ফেসবুক আইডি খুলে আরও বিভিন্ন মেয়ের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করেছে। নিজেকে অবিবাহিত পরিচয় দিয়ে তাদের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তুলে সেটা ভিডিও করে আবার ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে টাকা দাবি করেছে। এরপর খোঁজ নিয়ে ওই নারী জানতে পারেন, তার নাম তাহসান নয়, আকিবুল ইসলাম আকিব। তার এএসপি পরিচয়ও ভুয়া। মিথ্যা নাম-ঠিকানা ব্যবহার করে সে বিয়ের নামে নাটক করে তার কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে ও একাধিকবার ধর্ষণ করেছে।

এরপর তাদের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি হয়। গত ২৫ ডিসেম্বর আকিব নারীর বাসায় গিয়ে মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে তাকে হুমকি দেয় বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

বাকলিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মুহাম্মদ মঈন উদ্দীন সারাবাংলাকে বলেন, ‘মিথ্যা পুলিশ অফিসার পরিচয় দেওয়া, মিথ্যা প্রলোভনে ধর্ষণ ও প্রতারণার মাধ্যমে টাকা আত্মসাতসহ বিভিন্ন অভিযোগে মামলা হয়েছে। এরপর আমরা অভিযুক্ত যুবককে গ্রেফতার করেছি।’

চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এস এম বোরহান উদ্দিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘আকিবুল ইসলাম আকিবের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের খবর আমরা পেয়েছি। তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’

সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন