বিজ্ঞাপন

স্টপেজ ‘ভুল’ করাতেই ধর্ষণের শিকার ঢাবি শিক্ষার্থী

January 6, 2020 | 11:54 pm

উজ্জল জিসান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস ‘ক্ষণিকা’তে চড়েছিলেন ওই শিক্ষার্থী। নামার কথা ছিল কুর্মিটোলা গলফ ক্লাব পার হয়ে ফুট ওভারব্রিজের কাছের বাস স্টপেজে। এলাকাটি তেমন পরিচিত না হওয়ায় নেমেছিলেন কয়েকশ মিটার আগের কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের গেটের সঙ্গের বাস স্টপেজে। বাস থেকে নেমেই নিজের ‘ভুল’ বুঝতে পারেন তিনি। পরে গন্তব্যে যাওয়ার জন্য ফুটপাত ধরেই এগুতে থাকেন। আর কয়েক মিটার গেলেই উঠতে পারতেন ফুট ওভারব্রিজে। কিন্তু গলফ ক্লাবের গেটও পার হতে পারেননি। তার আগেই পেছন থেকে কেউ তার মুখে গামছা পেঁচিয়ে ধরে নিয়ে যায় রাস্তার পাশের ঝোঁপের আড়ালে। আর পরের তিন ঘণ্টা তার ওপর চলে অমানুষিক নির্যাতন। দফায় দফায় ধর্ষণের শিকার হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই শিক্ষার্থী।

বিজ্ঞাপন

রোববার (৫ জানুয়ারি) ভর সন্ধ্যায় রাজধানীর কুর্মিটোলা এলাকায় ধর্ষণের শিকার হন ওই শিক্ষার্থী। তার সঙ্গে যারা কথা বলেছেন, তারা জানিয়েছেন, একজন ধর্ষকের উপস্থিতিই তিনি খেয়াল করতে পেরেছেন, যিনি চার বার তাকে ধর্ষণ করেছেন। তবে তাতেই ক্ষান্ত হননি, শারীরিকভাবেও চরম নির্যাতন করেছেন ওই নিপীড়ক।

আরও পড়ুন- ‘চারদফা ধর্ষণের শিকার মেয়েটি, টিপে ধরা হয়েছিল গলা’

সোমবার (৬ জানুয়ারি) দুপুর ১২টায় কুর্মিটোলার ওই স্থানে গিয়ে ধর্ষণের আলামত দেখতে পাওয়া যায়। দেখা যায়, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের গেট থেকে গলফ ক্লাবের গেট পর্যন্ত বিমানবন্দর সড়কের বাম পাশে বিশাল বড় এলাকাজুড়ে রয়েছে ঝোপঝাড়। এর মধ্যে রয়েছে বড় বড় জবা ফুলের গাছ, সামুদ্রিক ঝাউগাছ, ছোট বড় অনেকগুলো বড়ই গাছ, বেশকিছু লতা-গুল্ম আর কয়েকটি সেগুন গাছ।

বিজ্ঞাপন

যে জায়গাটিতে ওই শিক্ষার্থীকে ধর্ষণ করা হয়েছে, তার দু’দিকেই রয়েছে সড়ক। বাইরে মহাখালী-উত্তরা সড়ক, আর ভেতরে গলফ ক্লাব থেকে বের হওয়ার জন্য সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরীণ সড়ক। মাঝখানে সেনা এলাকার সীমানা প্রাচীর। ধর্ষণের স্থান থেকে প্রাচীরের ওপারে গলফ মাঠ এবং দর্শক গ্যালারি। ঝোপঝাড়ের পাশেই রয়েছে বসার জন্য বেশ কয়েকটি সিমেন্টের বেঞ্চ। তবে সেখানে কোনো ছাউনি নেই।

ঘটনাস্থলে উপস্থিত গুলশান বিভাগের উপকমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী সাংবাদিকদের বলেন, সর্বশক্তি দিয়ে ধর্ষককে শনাক্ত ও গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। প্রযুক্তিগত সহায়তা ছাড়াও ম্যানুয়াল পদ্ধতিতেও কাজ করছে পুলিশ। আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে, থানায় মামলা হয়েছে, সিসিটিভির ফুটেজ সংগ্রহের কাজ চলছে।

আরও পড়ুন- ‘পুরুষ এতটা পশু হলো কীভাবে?’

বিজ্ঞাপন

ওই শিক্ষার্থীর কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে পুলিশ বলছে, তার বাস থেকে নামার কথা ছিল গলফ ক্লাবের পূর্ব পাশের বাস স্টপেজে। সেখানে একটি ফুট ওভারব্রিজ আছে। সেটি দিয়ে রাস্তা পেরিয়ে শেওড়া এলাকায় বান্ধবীর বাসায় যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তিনি ‘ভুল’ করে নেমে পড়েন কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সামনের বাস স্টপেজে। সে ‘ভুলের মাশুল’ তাকে দিতে হয়েছে পাশবিক নির্যাতনের শিকার হয়ে।

ধর্ষণের শিকার ওই ঢাবি শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, তাকে মুখে গামছা পেচিয়ে ঝোপের আড়ালে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর দফায় দফায় ধর্ষণ ও নির্যাতনে সংজ্ঞা হারান তিনি। রাত ১০টার দিকে সম্বিত ফিরে পেলে সহপাঠীদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে সমর্থ হন তিনি। পরে তাদের সহায়তায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি হন।

এদিকে, ঢামেক হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে ভর্তির পর পুলিশ ধর্ষণের বিষয়টি জানতে পারলেও আলামত সংগ্রহে দেরি করা হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। সোমবার (৬ জানুয়ারি) বিকেল ৪টার দিকে ঢাবি শিক্ষার্থীরা ধর্ষককে গ্রেফতার ও তার ফাঁসির দাবিতে কুর্মিটোলা এলাকায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। ওই সময় শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে বলেন, ধর্ষণের ঘটনা জানার পরও পুলিশ গড়িমসি করেছে। ঘটনা মধ্যরাতে জানাজানি হলেও সিআইডির ক্রাইম সিন ঘটনাস্থলে এসেছে ১২ ঘণ্টা অতিবাহিত হওয়ার পর। থানা পুলিশ, ডিবি পুলিশ ও র‌্যাবের কর্মকর্তারাও সোমবার দুপুরের আগে ঘটনাস্থলে আসেননি বলে অভিযোগ করেন শিক্ষার্থীরা।

আরও পড়ুন- ঢাবি শিক্ষার্থী ধর্ষণের ঘটনায় আলামত সংগ্রহে র‌্যাব ও ডিবি

বিজ্ঞাপন

শিক্ষার্থীদের এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন আলামত সংগ্রহে আসা সিআইডি’র ক্রাইম সিন দলের পরিদর্শক আমিনুল ইসলাম। তিনি বলেন, ঘটনা জানার পরপরই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশে আমরা ঘটনাস্থলে এসেছি। সড়কে যানজট থাকায় পৌঁছাতে কিছুটা দেরি হয়েছে। তবে আমাদের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের গাফিলতি নেই।

তিনি আরও বলেন, আমরা আলামত সংগ্রহ করেছি। অনেক কিছুই আলামত পেয়েছি আমরা। মেয়েটির সঙ্গে কথা বলে জেনেছি, সংগৃহীত আলামতের মধ্যে গ্যাস লাইটার ছাড়া বাকি সবকিছুই (জুতা, অন্তর্বাস, টুপি, স্যানিটারি প্যাড, নোটখাতা, বই, চাবিসহ রিং, প্যান্ট, ইনহেলার ও ঘড়ি) তার। এসব আলামত পরীক্ষার জন্য ফরেনসিকে পাঠানো হবে।

কুর্মিটোলা এলাকায় বিমানবন্দর সড়ক অবরোধের সময় শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেন। এসমসয় তারা ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ধর্ষককে গ্রেফতারের আল্টিমেটাম দেন। শুধু তাই নয়, সড়কের পাশে ঝোপঝাড় পরিষ্কার করে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা করার দাবিও জানান তারা। তা না হলে ফের সড়কে আন্দোলন শুরু হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন শিক্ষার্থীরা।

আরও পড়ুন- ঝোপের মধ্যেই ধর্ষণ, ছড়ানো ছিলো শিক্ষার্থীর বই-ঘড়ি-ইনহেলার

ঢাবি মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী আমজাদ হোসেন বলেন, এটি একটি ভিভিআইপি এলাকা। এখানে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা থাকার কথা। অথচ সেখানেই ঘটল সবচেয়ে ন্যাক্কারজনক ঘটনাটি।

এদিকে, ধর্ষণের শিকার মেয়েটির শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল হলেও তিনি প্রচণ্ড ট্রমাটাইজড বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। এরই মধ্যে তার চিকিৎসায় মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে।

আরও পড়ুন-

ধর্ষণের প্রতিবাদে উত্তাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

‘ঢাবি শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের আলামত পাওয়া গেছে’

কুর্মিটোলায় ঢাবি শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ, যান চলাচল বন্ধ

ঢাবির ওই শিক্ষার্থীর চিকিৎসায় ৭ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড

ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনায় শাহবাগ থানায় ঢাবি প্রশাসনের অভিযোগ

ধর্ষণের প্রতিবাদে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মানববন্ধন করবে ছাত্রলীগ

সারাবাংলা/ইউজে/টিআর

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন