বিজ্ঞাপন

একবছরে শিশু ধর্ষণ বেড়ে আড়াই গুণ

January 7, 2020 | 5:45 pm

সিনিয়র করেস্পন্ডেন্ট

ঢাকা: গতবছর ৯০২ জন শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। ২০১৮ সালে যার সংখ্যা ছিল ৩৫৬। শুধু ধর্ষণই নয়, ২০১৯ সালে যৌন নির্যাতনের শিকার শিশুর সংখাও বেড়েছে আগের বছরের তুলনায়। গত বছর যেখানে ৯৩ শিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছে সেখানে ২০১৮ সালে এই সংখ্যা ছিল ৭৭। এভাবে শিশু নির্যাতন বেড়ে যাওয়ায় বিভিন্ন মহল থেকে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য তুলে ধরে বেসরকারি সংগঠন মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন। আটটি জাতীয় সংবাদপত্রকে উৎস ধরে এই তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে বলেও জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে। সংবাদ সম্মেলনে তথ্য উপস্থাপন করেন এমজিএফের চাইল্ড প্রোটেকশন কোঅর্ডিনেটর রাফিজা শাহীন।

তিনি বলেন, ২০১৯ সালে ১৩ থেকে ১৮ বছর বয়সী শিশুরা সবচেয়ে বেশি ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতনের শিকার হয়। তাদের সংখ্যা মোট শিশু ধর্ষণের শতকরা ৪৮ ভাগ। শিশু ধর্ষণের হারে দ্বিতীয় পর্যায়ে আছে ৭ থেকে ১২ বছরের শিশু যারা শতকরা ৩৯ ভাগ। শিশুদের বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে, চকলেট বা খাবারের লোভ দেখিয়ে, ভয় দেখিয়ে, মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে ও ঘরে একা পেয়ে ধর্ষণ করা হয়েছে।

প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে দেখা গেছে সবচেয়ে বেশি শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে ঢাকা জেলায়। এরপর আছে নারায়ণগঞ্জ ও তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে যৌথভাবে ময়মনসিংহ ও কুমিল্লা।

বিজ্ঞাপন

‘শিশু পরিস্থিতি ২০১৯, সংবাদপত্রের পাতা থেকে’ শীর্ষক এই সংবাদ সম্মেলনে এক বছরে শিশু ধর্ষণ ছাড়াও শিশু নির্যাতনের তথ্য তুলে ধরা হয়। উপস্থাপিত তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালে হত্যাচেষ্টার শিকার হয়েছে ৩২৯ শিশু। এদের মধ্যে মারা গেছে ২৬৬ জন এবং আহত হয়েছে ৬৩ জন। ২০১৮ সালে এই মোট হত্যাচেষ্টার শিকার হয়েছিল ২৭৬ শিশু। এদের মধ্যে ২২৭ জন মারা যায় এবং আহত হয় ৪৯ জন। হত্যাচেষ্টার কারণ হিসেবে পারিবারিক কলহ, সম্পদের জন্য কলহ, প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান, ভালোবাসা সংক্রান্ত সমস্যা, দ্বন্দ, ঝগড়া, মেয়ে হয়ে জন্মানোর কারণে, রাগের মাথায়, প্রতিবাদ করার জন্য, মানসিক চাপ ও ধর্ষণচেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার কথা বলা হয়েছে।

শিশু নির্যাতন, ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টা ছাড়াও বছরজুড়ে অপহরণ, নির্যাতন ও আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে। গতবছর ৮৩ শিশু অপহরণের শিকার হয়, যাদের মধ্যে ১২ জন নিহত ও ৭১ জন আহত হয়েছে। শিশু অপহরণকারীর মধ্যে রয়েছে বাবা, বাবার বন্ধু, মায়ের প্রেমিক, প্রতিবেশী, আত্মিয়-স্বজন, রাজনৈতিক নেতা, শিক্ষক, প্রেমিক, ভাড়াটিয়া ও দুর্বৃত্তকারী। আর অপহরণের কারণ হিসেবে উঠে এসেছে টাকা, প্রেম, বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান, প্রতিশোধ ও পাচারের জন্য। তবে ২০১৮ সালের তুলনায় গত বছর এই সংখ্যা কিছুটা হ্রাস পেয়েছে বলে জানানো হয়।

২০১৯ সালে নির্যাতনের শিকার হয়েছে ১৫৯ শিশু, যাদের মধ্যে মারা গেছে ১২ জন এবং আহত হয়েছে ১৪৭ জন। প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান, স্কুলে না যাওয়া, চোর সন্দেহে, চুরি করায়, উত্যাক্ত করা, দুষ্টুমি করা, খেলাধুলা করা, পড়াশোনা না করা, ক্লাসে কথা বলা, ক্লাসে দেরী করে উপস্থিতি, না বলে ফল খাওয়া, না বলে স্কুল থেকে বাসায় চলে আসা, চেয়রাম্যানের গাড়িতে হাত দেওয়া, উত্যক্ত করায় প্রতিবাদ এবং ধার করে খাবার কেনার জন্য বিভিন্ন বয়সী শিশুকে নির্যাতন করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

এছাড়াও ৫ শিশু কর্মক্ষেত্রে নির্যাতনের শিকার হয়। ৩ মেয়ে শিশু গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করার সময় নির্যাতিত হয় যাদের মধ্যে মারা যায় ২ জন।

হত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন ছাড়াও গতবছর ৬৫ শিশু নানা কারণে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে। এদের মধ্যে আহত হয়েছে ৯ জন ও মারা গেছে ৫৬ জন। শিশুদের আত্মহত্যার প্রধান কারণ হিসেবে উঠে এসেছে পরীক্ষায় ফেল, পরিবারের উপর রাগ, প্রেম সংক্রান্ত, উত্যক্ত হয়ে, ধর্ষণ ও ধর্ষণচেষ্টার শিকার হয়ে, বাল্যবিয়ে ও হতাশা। আরও কিছু কারণের মধ্যে রয়েছে জামা কিনে না দেওয়া, চেয়ে টাকা না পাওয়া, পড়াশোনা সংক্রান্ত, মোটরসাইকেল চেয়ে না পাওয়া, ব্যক্তিগত ছবি প্রকাশ ও ব্ল্যাকমেই। ২০১৮ সালের তুলনায় এই সংখ্যা কমেছে। সেবছর ১৫২ শিশু আত্মহত্যা করে।

২০১৯ সালে বিভিন্ন দুর্ঘটনা ও নির্যাতনে দেশে ৯৮৬ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা ৫৫৩ ও পানিতে ডুবে মারা গেছে ২৫২ জন শিশু। এছাড়া ধর্ষণ, ধর্ষণচেষ্টা, হত্যা, অপহরণ, নিখোঁজ ও নির্যাতনের শিকার হয়ে মারা গেছে আরও ৩৬১ শিশু।

শিশু ধর্ষণ

বিজ্ঞাপন

সংবাদ সম্মেলনে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন সংসদ  সদস্য অ্যারোমা দত্ত ও শ্রম মন্ত্রণালয়ের উপসচিব রুহুল আমিন।

শাহীন আনাম বলেন, সরকারী নানা পদক্ষেপ স্বত্বেও একটা শিশুবান্ধব পরিবেশ তৈরি করতে ব্যর্থ হয়েছি আমরা। ফলে আমাদের শিশুরা একটি চরম অনিরাপদ অবস্থায় রয়েছে। বিশেষ করে অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল অবস্থায় থাকা শিশুরা, পথশিশুরা ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতিতে রয়েছে। তাদের যেমন নিরাপদ বাসস্থানের অভাব রয়েছে তেমনি টাকার জন্য কাজ করতে বাধ্য হচ্ছে যেখানে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে তারা।

তিনি বলেন, আমাদের দেশের সামাজিক নিরাপত্তা খাতে ব্যায়ের একটা বড় অংশ শিশুদের সামাজিক নিরাপত্তার জন্য ব্যয় হওয়ার কথা কিন্তু সেটা শিশুদের জন্য ব্যয় হচ্ছে কিনা তা নিশ্চিত করা হচ্ছে না। শিশুদের রক্ষা করার জন্য আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নয়নের পাশাপাশি স্থানীয় সরকার প্রতিনিধি ও সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের উদ্যোগে পাড়ায় পাড়ায় শিশু সুরক্ষা কেন্দ্র তৈরি করতে হবে।

সাংসদ অ্যারোমা দত্ত বলেন, ‘শিশুরা সবার আদরের কিন্তু সেই শিশুদের উপর হঠাৎ করে সহিংসতা বেড়ে যাওয়ায় আমরা সবাই উদ্বিগ্ন। আমি ভাবতেই পারি না মানুষ কীভাবে একটা শিশুকে ধর্ষণ করে, হত্যা করে ও নির্যাতন করে। অথচ এই শিশুদের ঘরে ও বাইরে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব আমাদের সবার।’

শ্রম মন্ত্রণালয়ের উপসচিব রুহুল আমিন বলেন, আগের তুলনায় সামাজিক নিরাপত্তা কমে গেছে অনেকটাই। আইন প্রয়োগের পাশাপাশি সবাইকে মিলে একসঙ্গে শিশুর নিরাপদ জীবন নিশ্চিতের জন্য কাজ করতে হবে।

একটা শিশুর নিরাপদ ও সুন্দর জীবন নিশ্চিত করার দায়িত্ব প্রতিটি মন্ত্রণালয়ের। শ্রম মন্ত্রণালয় ২০২৫ সালের মধ্যে শিশু শ্রম বন্ধে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করছে। এক্ষেত্রে সরকারি সংস্থার পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থার সহযোগিতায় কাজ করা হচ্ছে।

 

সারাবাংলা/আরএফ/

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন