বিজ্ঞাপন

‘নামের আগে পদ-পদবি আমাকে বিব্রত করে’

January 8, 2020 | 6:17 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া বলেছেন, আমি কখনও নেতা হতে চাইনি, আমি রাজনীতি করেছিলাম অনুরাগের বিষয় হিসেবে। আমি কখনও পদ-পদবি চাইনি। কিন্তু দল আমাকে যখন দায়িত্ব দিয়েছে, আমি প্রতিটি কাজ নিষ্ঠার সাথে করেছি। নামের আগে বিশেষণ, পদ-পদবি আমাকে বিব্রত করে।

বিজ্ঞাপন

আওয়ামী লীগের নতুন কমিটিতে দফতর সম্পাদকের পদ পাওয়ার পর চট্টগ্রামে গণসংবর্ধনায় বিপ্লব বড়ুয়া এসব কথা বলেন। বুধবার (৮ জানুয়ারি) দুপুরে চট্টগ্রামের পুরাতন রেলস্টেশন চত্বরে এই গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠিত হয়। এসময় আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের হাজারও নেতাকর্মীর সমাবেশ ঘটে।

সংবর্ধনার জবাবে বিপ্লব বড়ুয়া বলেন, ‘মানুষের জীবনে বিশেষ কিছু মুহূর্ত থাকে, যখন ভাষা হারিয়ে যায়। আমি আজ আপনাদের যে ভালোবাসা পেয়েছি, যে সম্মান পেয়েছি, আমি বাকরুদ্ধ, আমি অভিভূত। আমি জানি, আপনাদের এই ভালোবাসা, সম্মান, শ্রদ্ধা, উদ্দীপনা, সব আয়োজন আমাদের প্রাণপ্রিয় জননেত্রী শেখ হাসিনার জন্য। আমৃত্যু যাতে আপনাদের ভালোবাসার প্রতিদান দিয়ে যেতে পারি।’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘আমি আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক হতে পারি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী হতে পারি। কিন্তু আমি চট্টগ্রামের সন্তান। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত যেন আমি আমার শেকড়কে ভুলে না যাই। আপনাদের এই ভালোবাসা যাতে ভুলে না যায়, সেই কামনা করি। আমার কর্ম, সততা, সকল প্রচেষ্টা দিয়ে চট্টগ্রামের মুখ যেন আমি সবসময় উজ্জ্বল রাখতে পারি, সেই কামনা করছি।’

দফতর সম্পাদক করায় দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বিপ্লব বড়ুয়া বলেন, ‘শেখ হাসিনা শুধু আমার রাজনৈতিক নেতা নন। তিনি আমার ব্যক্তিগত শিক্ষক এবং রাজনৈতিক অভিভাবক। আমি কৃতজ্ঞতা জানাই, জাতির পিতার সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রতি। তিনি আমার মতো একজন সাধারণ মানুষকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক করেছেন।’

‘রাজনীতিতে পদ-পদবি বড় বিষয় নয়। রাজনীতিতে সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে, মানুষের আস্থা-ভালোবাসা অর্জন করা। আওয়ামী লীগের জাতীয় নেতৃত্বে আমার মতো একজন নগণ্য মানুষকেই শুধু নয়, বীর চট্টলার আটজন নেতাকে রেখেছেন শেখ হাসিনা। আমাদের নেত্রী শুধু রাষ্ট্র পরিচালনায় নয়, সরকার পরিচালনায় নয়, দল পরিচালনায়ও চট্টগ্রামকে সম্মানিত করেছেন।’- বলেন বিপ্লব বড়ুয়া।

বিজ্ঞাপন

পেশাগত জীবনের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে পাস করে আমি সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে নিয়েছিলাম। ২০০১ সালে আমি বাংলাদেশ টেলিভিশনের বার্তা বিভাগের প্রযোজক ছিলাম। বেগম খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসে ছাত্রলীগ করার কারণে আমাকে চাকরিচ্যুত করেন। আমি ক্ষোভে-ঘৃণায় লন্ডনে চলে যাই এবং সেখানে আইন বিভাগে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করি।’

তিনি আরও বলেন, ‘লন্ডনে আমার বন্ধুবান্ধবরা সবাই বাড়ি-গাড়ির মালিক হয়েছেন। আমি যখন রাজনীতি করার জন্য লন্ডন থেকে দেশে ফিরে আসছিলাম, বন্ধু-বান্ধবরা আমাকে বাধা দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, আমি ভুল করছি। আজ আমি আমার বন্ধুদের বলতে চাই, আমি সেদিন ভুল করিনি।’

মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণের কথা উল্লেখ করে বিপ্লব বড়ুয়া বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বলেছেন- মানুষ হিসেবে ভুলত্রুটি থাকতে পারে। আমি অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা করব। আমাদের রাজনৈতিক জীবনেও ভুলত্রুটি থাকতে পারে। সেই ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে আমরা আগামী দিনে নিজেদের পরিচালনা করব। আমরা নেত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী চলব।’

বিজ্ঞাপন

সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের বিষয়ে সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ষড়যন্ত্র দেশে রয়েছে, দেশের বাইরেও রয়েছে। আমরা যারা নেত্রীকে ভালোবাসি, আওয়ামী লীগ করি, আমাদের সবধরনের ষড়যন্ত্র সম্পর্কে সতর্ক থাকতে হবে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের রাষ্ট্রের প্রতি, জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতা আছে। আমি আহ্বান জানাব, আপনারা আপনাদের রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত জীবন শৃঙ্খলার সাথে পরিচালনা করবেন।’

১৩ জানুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য চট্টগ্রাম-৮ আসনের উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোছলেম উদ্দিন আহমেদকে জেতাতে নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান বিপ্লব বড়ুয়া।

তিনি বলেন, ‘মোছলেম উদ্দিন আহমেদ যখন কচি-কাঁচার মেলার সংগঠক ছিলেন, তখন আমি এই সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। তিনি ছাত্রলীগ করেছেন, যুবলীগ করেছেন, আওয়ামী লীগ করছেন। জীবনে কোনোদিন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং জননেত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া আর কাউকে নেতা মানেননি। নেত্রী অনেক আশা করে মোছলেম ভাইকে নির্বাচন করার জন্য পাঠিয়েছেন।’

নেতাকর্মী ও ভোটারদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘মোছলেম ভাই শুধু আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেননি, চট্টগ্রামের মানুষের অধিকারের জন্যও রাজনীতি করেছেন। আপনারা নেত্রীকে নিরাশ করবেন না, মোছলেম ভাইকে আশাহত করবেন না। আপনারা সকলে ঐক্যবদ্ধ থেকে মোছলেম ভাইকে জয়ী করবেন।’

চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে এবং নগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হাসান মাহমুদ হাসনীর সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এম এ সালাম ও সাধারণ সম্পাদক শেখ আতাউর রহমান এবং দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদত মফিজুর রহমান প্রমুখ।

সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন