বিজ্ঞাপন

সরকারিখাতে থাকলে লাভ হয় না কেন, রোগটি কোথায়: প্রধানমন্ত্রী

January 9, 2020 | 3:11 pm

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সরকারিভাবে কোনো শিল্প প্রতিষ্ঠান চালাতে গেলেই সেটা আর কখনো আলোর মুখ দেখে না বা লাভবান হয় না কেন, রোগটা কোথায়? সেটাই ধরা যায় না। কিন্তু বেসরকারি খাতে থাকলে পরে এটা অন্তত লাভের মুখ দেখতে পারে।

বিজ্ঞাপন

বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় বস্ত্র দিবস ২০১৯ উদযাপন ও বহুমুখী বস্ত্র মেলার উদ্বোধনি অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেন। প্রধান অতিথি হিসাবে প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের পর আজ থেকে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে তিনদিন ব্যাপী বহুমুখী বস্ত্র মেলা শুরু হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার গঠন করার পর থেকেই আমরা এদেশের মানুষের সার্বিক উন্নয়নে ব্যাপক কর্মসূচি নিই। আমি দেখেছি, আমাদের দেশের মানুষের অবস্থা। বিদেশ থেকে পুরনো কাপড় চেয়ে এনে আমাদের দেশের মানুষকে পরতে দেওয়া হতো। অধিকাংশ মানুষের ঘরবাড়ি ছিল না। চিকিৎসার সুযোগ ছিল না। ক্ষুধায় অন্ন পেত না। এরকম একটা অবস্থা ছিল। সেই দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করা এবং দেশকে উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তোলা এটিই আমাদের লক্ষ্য। সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা আমাদের যাত্রা শুরু করেছি এবং আজকে বাংলাদেশ অনেক দূর এগিয়েছে।’

‘প্রথমবার যখন সরকারে আসি মাত্র পাঁচবছর হাতে সময় ছিল। তখন অনেকগুলো কাজ করে দেশকে এগিয়ে নিয়েছিলাম। এরপর মাঝখানে ৭ বছর আসতে পারেনি। ২০০৮ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে ২০০৯ যখন সরকার গঠন করি তখন থেকে আবার যাত্রা শুরু। গত ১০ বছরে কি পরিমাণ এগিয়েছে তা আপনারা নিজেরাই উপলব্ধি করতে পারেন।’

বিজ্ঞাপন

টানা তৃতীয় মেয়াদে পরিচালনার ফলে দেশের অগ্রযাত্রায় জিডিপি, রফতানি আয় মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি, মূল্যস্ফীতি হ্রাস বিভিন্ন সূচকগুলো তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

আরও পড়ুন:  বস্ত্রে ব্যবসা বাড়ানো ও দরকষাকষিতে উদ্যোগ নিন: প্রধানমন্ত্রী

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘আমরা সরকার গঠন করার পর থেকেই বেসরকারি খাতকে গুরুত্ব দিয়ে উন্মুক্ত করে দিচ্ছি। বিদ্যুৎ উৎপাদন থেকে সব খাতেই উন্মুক্ত করে দেই যার সুফলটা দেশবাসী পাচ্ছে। ফলে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ ৫ গুণ বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়েছি। আজকে তা ৫ গুণ বৃদ্ধি পেয়ে ৭০ দশমিক ৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৯ গুণ বৃদ্ধি করে প্রায় ৩৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রিজার্ভ রয়েছে।’

নিজস্ব অর্থায়নে ৯০ শতাংশ বাজেট বৃদ্ধির সক্ষমতা অর্জনের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী এক্ষেত্রে বস্ত্রখাত সংশ্লিষ্টদের সাধুবাদ জানান।

তিনি বলেন, ‘জিডিপিতে বস্ত্রখাতের অবদান প্রায় ১৩ শতাংশ এবং সব থেকে বড় কথা ব্যাপক হারে আমাদের মেয়েদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। যা আমাদের দেশের উন্নয়নে অবদান রেখে যাচ্ছে। আমরা সবসময় চেষ্টা করে যাচ্ছি, প্রত্যেকটি খাত যেন উন্নত হয়। শুধু বিদেশে রফতানি না আমাদের দেশের মানুষের ক্রয়-ক্ষমতা যেন বৃদ্ধি পায়। নিজস্ব বাজারও যেন একটি তৈরি করতে পারি, সেই সঙ্গে সঙ্গে আমাদের আশেপাশে যত দেশগুলো আছে তাদের সঙ্গে একটি যোগাযোগ করে বাজার সম্প্রসারণ করে অর্থনীতিকে আরও স্বাবলম্বী করতে পারি, সেই প্রচেষ্টাও আমরা চালাচ্ছি।’

তৈরি পোশাক খাতে সরকারের দেওয়া বিভিন্ন ধরনের প্রণোদনা দেয়ার কথাও তুলে ধরে রফতানিমুখী শিল্পগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে শিল্প পুলিশ প্রতিষ্ঠা করে নিরাপদ কারখানা গড়ে তোলার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

বিজ্ঞাপন

আওয়ামী লীগ সরকারের মেয়াদে তৈরি পোশাক শিল্পর শ্রমিকদের বেতনভাতা বৃদ্ধি করার প্রসঙ্গ তুলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পৃথিবীর কোন দেশ কখনো এতো টাকা একসাথে মজুরি বৃদ্ধি করেছি কি না বা করতে পারে কি না? এটি আমার জানা নেই। আমরা সকলেরই বেতন-ভাতা বাড়িয়েছি। শুধু পোশাক শিল্প বলে না। আমাদের সরকারি অফিসার্স থেকে সকলের বেতনভাতা বাড়িয়েছি।’

টেক্সটাইল খাতের উন্নয়নের সরকারের নেওয়া বিভিন্ন উদ্যোগের কারণে একদিকে কারিগরি শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে অন্যদিকে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হচ্ছে বলেও দাবি করেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘আমরা চাই, আমাদের দেশটি এগিয়ে যাক। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। তাঁতশিল্প, এটি আমাদের দীর্ঘদিনের একটা ঐতিহ্য। একসময় আমাদের দেশে যে মসলিন ছিল তার একটা সুনাম ছিল। ধীরে ধীরে সেটা অনেকটা হারিয়ে যেতে বসেছে। কিন্তু এরইমধ্যে আমরা এ মসলিনের ওপর গবেষণা শুরু করেছি। যেন আবার এটাকে ফিরিয়ে আনা যায়।’

আমাদের সরকার আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ব্যাপক কর্মসূচিও হাতে নিয়েছি। যখন প্রথমবার সরকারে আসি, তখন আমরা তাদেরকে ঋণ সুবিধা দিতে শুরু করি। তাছাড়া সুতা ও রং আমদানির ক্ষেত্রে আমাদের তাঁতিদের যে সমস্ত উপকরণ প্রয়োজন হয় তার ওপর থেকে শুল্কমুক্ত সুবিধা দিচ্ছি। আমাদের রেশম একসময় বিশ্বব্যাপী তার একটা সুনাম ছিল। কাজেই রেশম যাতে আবার চালু হতে পারে তার ব্যবস্থা নিয়েছি। আমাদের একটা বিশেষ প্রকল্প আছে, আমার বাড়ি আমার খামার। এখানে মেয়েদের বিশেষ করে প্রত্যেকটি পরিবার যেন কিছু কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা পায়, সেটা আমরা করেছি। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, এ রেশম সুতা তৈরি, এটিও তাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত করে দিয়েছি।

এরইমধ্যে রাজশাহীতে কারখানায় প্রায় ১৯টা পাওয়ার লুমও চালু করা হয়েছে। আমাদের এ সিল্কটা একসময় খুবই নামকড়া ছিল। সেটা যেন হারিয়ে না যায়, সেদিকে বিশেষ দৃষ্টি দিয়েছি বলে জানান শেখ হাসিনা।

এ ক্ষেত্রে বেসরকারি শিল্প উদ্যোক্তাদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি বলব যে, বেসরকারি খাততে এগিয়ে আসা উচিত। কারণ সরকারিভাবে কোনো শিল্প প্রতিষ্ঠান চালাতে গেলেই সেটি কখনো আর আলোর মুখ দেখে না বা মানে লাভবান হয় না। আমি জানি না, কেন কী রোগটা কোথায়? সেটাই ধরা যায় না। বেসরকারি খাতে থাকলে পরে আমি মনে করে এটা অন্তত লাভের মুখ দেখতে পারে। সেজন্য সব খাতেই যদি বেসরকারি খাত আরও এগিয়ে আসে আমি তাদেরকে সব রকমের সহযোগিতা দেব।

বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী বীরপ্রতীক, এমপির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মুন্নুজান সুফিয়ান, বস্ত ও পাট মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মির্জা আজম এবং বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সচিব লোকমান হোসেন মিয়া।

সারাবাংলা/এনআর/একে

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন