বিজ্ঞাপন

সড়কে ঝরছে হাজারো প্রাণ, ধোপে টিকছে না মামলা

January 12, 2020 | 8:20 pm

আব্দুল জাব্বার খান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: সড়ক-মহাসড়কে প্রতিনিয়ত ঝরছে প্রাণ। আহত হয়ে দুর্বিসহ জীবনযাপন করছেন শত শত মানুষ। সড়কে মৃত্যুর মিছিল যেন দিন দিন বেড়েই চলেছে। কিন্তু প্রতিনিয়ত সড়ক দুর্ঘটনা বাড়লেও এসব ঘটনায় মামলা দায়েরের সংখ্যা খুবই কম। যাত্রীকল্যাণ সমিতির সাম্প্রতিক হিসাব বলছে, ৮০ শতাংশ সড়ক দুর্ঘটনায় কোনো মামলা হয় না। বাকি ২০ শতাংশে মামলা হলেও শতকরা ৯৯ ভাগ আসামি খালাস পেয়ে যান।

বিজ্ঞাপন

যাত্রী কল্যাণ সমিতির তথ্য মতে, ২০১৯ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় ৭ হাজার ৮৫৫ জন মারা গেছেন। এছাড়া আহত হয়েছেন ১৩ হাজার ৩৩০ জন। গেল বছর সড়ক, রেল ও নৌপথে ৬ হাজার ২০১টি দুর্ঘটনায় মোট ৮ হাজার ৫৪৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছেন ২৪ জন সেনা সদস্য, ৫৩ জন পুলিশ ও র‌্যাব সদস্য, তিন জন বিজিবি সদস্য, একজন ফায়ার সার্ভিসকর্মী, একজন নৌবাহিনীর সদস্য, আট জন বীর মুক্তিযোদ্ধা, ছয় জন সাংবাদিক, ৫৮২ জন নারী, ৪৪৭টি শিশু, ৪৭৪ জন শিক্ষার্থী, ৮১ জন শিক্ষক, ৬৯১ জন চালক, ৩৫৭ জন পরিবহন শ্রমিক, ৯ জন প্রকৌশলী, পাঁচ জন আইনজীবী, ১১৫ জন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী ও ২৫ জন চিকিৎসক।

দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় গড়ে প্রতিদিন ২২ জন ব্যক্তির মৃত্যু হচ্ছে। এভাবে আহত বা পঙ্গুতের সংখ্যা বাড়তে থাকলে আগামীতে দেশের জন্য এটি একটি বোঝা হয়ে দাঁড়াবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। ‘দিনদিন সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা বাড়লেও মামলার সংখ্যা কম কেন?’— জানতে চাইলে নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) আন্দোলনের চেয়ারম্যান চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন সারাবাংলাকে বলেন, ‘সড়ক পরিবহনের আগের আইন অনেক দুর্বল থাকায় ভুক্তভোগীরা মামলা দায়ের করত না। কেননা আগের আইনে সাজার পরিমাণ ছিল মাত্র তিন বছর। তাছাড়া আসামি জামিন নিয়ে মামলা নিষ্পত্তিতে দীর্ঘাসূত্রিতা তৈরি করত। তবে নতুন আইনে সাজার পরিমাণ বেশি ও জামিন অযোগ্য। কাজেই আইনটির যথাযথ কার্যকর শুরু হলে আশা করছি মামলার পরিমাণ বাড়বে। ভুক্তভোগীরা বিচার পেলে অবশ্যই তারা আদালতে আসবেন।’

হক’স বে অটোমোবাইলস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল হক সারাবাংলাকে বলেন, ‘গুলি করে মানুষ মারলে যদি হত্যাকাণ্ড হয়, তাহলে গাড়ি দিয়া মানুষ মারলে সেটাও হত্যাকাণ্ড। যাত্রীরা চালক ও মালিকের কাছে জিম্মি থাকতে পারে না। এ ক্ষেত্রে আইনের শাসনের কোনো বিকল্প নেই।’

বিজ্ঞাপন

আদালত ক্ষতিপূরণ দেওয়া নির্দেশ দিলেও সরকার তা বাস্তবায়ন না করায় ক্ষতিপূরণও আদায় হচ্ছে না বলেও জানান আবদুল হক। বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে সড়কের এই বিশৃঙ্খলা দূর করত হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘নতুন আইন কার্যকর এবং তা বাস্তবায়ন হলে আশা করা যায়, চালকেরা সচেতন হবে। এতে দুর্ঘটনার সংখ্যাও কমে আসবে।’

যাত্রীকল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী এ বিষয়ে সারাবাংলাকে বলেন, ‘সড়ক দুর্ঘটনায় জাতি সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। প্রতিনিয়ত সড়কে যে হারে মানুষ মারা যাচ্ছে এবং আহত বা পঙ্গু হচ্ছে, তাতে দেশ জাতীয়ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অধিকাংশ সড়ক দুর্ঘটনায় মামলা হয় না। কিছু মামলা হলেও আইনি দুর্বলতায় বেশিরভাগ আসামি খালাস পেয়ে যায়। এ থেকে উত্তরণের জন্য সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।’ সরকারের সদিচ্ছা থাকলে মামলা হবে, দ্রুত রায় হবে এবং ক্ষতিগ্রস্তরাও ক্ষতিপূরণ পাবে বলে মনে করেন মোজাম্মেল হক।

ড্রাইভারস ট্রেনিং সেন্টারের চেয়ারম্যান নূরনবী শিমু সারাবাংলাকে বলেন, ‘সড়ক দুর্ঘটনায় মামলা হলেও তা নিষ্পত্তিতে দীর্ঘ সময় লাগায় মামলার প্রতি বাদীর আগ্রহ থাকে না।’ এছাড়া ক্ষতিপূরণ আদায় না হওয়াও একটি কারণ বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

এদিকে সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে যাত্রীকল্যাণ সমিতির বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৯ সালের সড়ক দুর্ঘটনা ২০১৮ সালের প্রায় সমান। তবে এ বছর প্রাণহানি সংখ্যা ৮ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ বেশি। ২০১৯ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় ৭ হাজার ৮৫৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া আহত হয়েছেন ১৩ হাজার ৩৩০ জন। এবছর সড়ক, রেল, নৌ-পথে ৬ হাজার২০১টি দুর্ঘটনায় মোট  ৮ হাজার ৫৪৩ জনের মৃত্যু হয়েছে । এর মধ্যে ৩২ দশমিক ৩৮ শতাংশ জাতীয় মহাসড়কে, ৩৭ দশমিক ৫১ শতাংশ আঞ্চলিক মহাসড়কে, ২১ দশমিক ৩ শতাংশ ফিডার রোডে দুর্ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। তবে মোটরসাইকেলে হেলমেট বাধ্যতামূলক করা, তিন আরোহী পরিবহন নিষিদ্ধ ও চলাচলে কঠোর নজরধারীর কারণে দুর্ঘটনার হার ৪ দশমিক ২৬ শতাংশ কমেছে। জাতীয় মহাসড়ক থেকে অটোরিক্সা উচ্ছেদে শূন্য দশমিক ২৬ শতাংশ অটোরিক্সা দুর্ঘটনা কমেছে বিগত বছর থেকে।

উল্লেখ্য, সড়কে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে সর্বোচ্চ আদালতের আদেশেও এখনো ক্ষতিপূরণ পাননি তিতুমীর কালেজের ছাত্র রাজীব হাসানের পরিবার। কয়েক দফা নির্দেশনা দিয়ে পা হারানো রাসেলের জন্য গ্রীনলাইন পরিবহন থেকে সামান্য কিছু ক্ষতিপূরণ আদায় করেছেন হাইকোর্ট।

সারাবাংলা/এজেডকে/জেডএফ/পিটিএম

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন