বিজ্ঞাপন

মানুষের উন্নয়নের বড় স্বপ্ন দেখতেন স্যার আবেদ

January 17, 2020 | 3:43 am

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: ঢাকায় কয়েক বছর আগের এক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ব্যক্তিগত জায়গা থেকে উদ্ধার অভিযানে অংশ নেন স্যার ফজলে হাসান আবেদ। তার দারুণ বুদ্ধিমত্তা ও ভলান্টিয়ারদের সহযোগিতায় আগুনের বিস্তার অল্পতেই থামানো সম্ভব হয়। পুরো ঘটনাটির স্মৃতিচারণা করে গণস্বাক্ষরতা অভিযানের পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী বলেছেন, মানুষের জন্য এতটা যত্ন নিয়ে আর কাউকে লড়তে দেখেননি তিনি।

বিজ্ঞাপন

বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মোজাফফর আহমেদ মিলনায়তনে জ্ঞানতাপস আব্দুর রাজ্জাক ফাউন্ডেশন আয়োজিত ‘শিক্ষায় স্যার আবেদ: তার চিন্তা, আদর্শ ও কৃতি’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এই শিক্ষাবিদ বলেন, অনেক বড় স্বপ্ন দেখতেন আবেদ। গোটা দেশকে আধুনিক কায়দায় ঢেলে সাজানোর জন্য পরিকল্পনা করতেন। তার এই সব পরিকল্পনায় ছিল শিক্ষার সব স্তরে নতুন ধারার প্রবর্তন, গণস্বাস্থ্য সহ বাংলাদেশের আর্থসামাজিক অবস্থার সুনিশ্চিত উন্নয়ন।

রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, প্রাথমিক শিক্ষায় শহরের স্কুলের সঙ্গে গ্রামের স্কুলের পার্থক্য তিনি গবেষণালব্ধ জ্ঞানের মাধুমে কর্তৃপক্ষকে দেখিয়েছেন। তার প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় গণসাক্ষরতা অভিযান দীর্ঘদিন গবেষণা পরিচালনা করে আসছেন। আমাদের প্রতিটি গবেষণাপত্রের ভূমিকা তিনি নিজে লিখে দিয়েছেন। এসব লেখায় শিক্ষার ভবিষ্যৎ নিয়ে তার প্রজ্ঞার প্রমাণ পাওয়া যায়।

বিজ্ঞাপন

তিনি আরও বলেন, ১৯৯৩ সালে তিনি গ্রামে গিয়ে কিশোরীদের কথা শুনে ফিরে এসে ব্র্যাকের কিশোর-কিশোরী প্রোগ্রাম চালু করেছিলেন। এমনকি মৃত্যুশয্যাতেই তিনি শিক্ষার উন্নয়নের কথা বলেছিলেন। নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা যদি তার জীবনাদর্শ ধারণ করে লক্ষ লক্ষ আবেদ তৈরি হয়, তবেই আমাদের সফলতা।

অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী বলেন, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাকালে ধারাবাহিক যোগাযোগের কারণে ফজলে হাসান আবেদের শিক্ষার সঙ্গে পরিচিত হতে পেরেছিলাম। যে কোনো বিষয়ে তিনি বিশ্বের সবচেয়ে বিজ্ঞ ও পণ্ডিত মানুষদের পরামর্শ নিতেন। এটি তার একটি অনন্য গুণ। যার ফলে প্রতিষ্ঠার চার বছরের মধ্যে ব্র্যাকের স্কুল অব পাবলিক হেলথ বিষয়টি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক গণস্বাস্থ্যে বিশ্বের অন্যতম সেরা প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়।

বিজ্ঞাপন

তিনি জানান, বাংলাদেশে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ই প্রথম নন মেডিকেল ব্যকগ্রাউন্ড থেকে আসা শিক্ষার্থীদের পাবলিক হেলথ পড়বার সুযোগ করে দেয়। যেটি এখন প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয় অনুসরণ করছে।

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. রেহমান সোবহান বলেন, আবেদ একজন কাজের মানুষ ছিলেন। তিনি যা করতে চেয়েছিলেন, তা করেছেন। আবেদ মানুষের চিন্তাকে পাঠ্যবই দিয়ে পরিবর্তন করে দেননি, বরং তাদেরকে শুভ আচরণে অভ্যস্ত করে তুলেছেন। তাদের কল্পনার জগৎকে সম্প্রসারণ করেছেন। বড়ো স্বপ্ন বাস্তবায়ন করে দেখিয়েছেন। শিক্ষা ছাড়াও ক্ষুদ্রঋণ, নারীর ক্ষমতায়নেও তিনি অসামান্য অবদান রেখেছেন। নারীদেরকে তিনি সবসময় গুরুত্বপূর্ণ মনে করতেন।

বিজ্ঞাপন

ব্র্যাক গভর্নিং বডির চেয়ারপার্সন হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, উন্নয়ন আমাদের কাছে বহুল পরিচিত একটি শব্দ। কিন্তু উন্নয়ন চিন্তার কেন্দ্রবিন্দুতে মানুষকে ভাবা হয় কম। ফজলে হাসান আবেদ এই চিন্তায় পরিবর্তন এনেছেন। তার উন্নয়ন পরিকল্পনার কেন্দ্রে ছিল মানুষ। এ কারণেই তিনি বেশি সফল হন।

ড. আহরার আহমেদ বলেন, আমাদের সমাজে যেখানে অন্যকে হেয় করে নিজের ক্ষমতা জাহির করা হয়, সেখানে আবেদ ভাই মানুষের কথা শুনতেন, তাদের মনোযোগ দিতেন। এ কারণে যেকোন মানুষ তাকে আপন ভেবে সন্তুষ্ট চিত্তে কথা বলতে পারতেন।

ফজলে হাসান আবেদের এই সহচর আরও বলেন, স্যার ফজলে হাসান আবেদ সারাজীবনের চিন্তা ও বহুমুখী কার্যক্রমের মাধ্যমে  শুধু বাংলাদেশের নয়, বিশ্বের উন্নয়নেও ভূমিকা রেখেছেন।

প্রসঙ্গত ‘শিক্ষায় স্যার আবেদ : তার চিন্তা, আদর্শ ও কৃতি’ শীর্ষক এই অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে গবেষণা প্রতিষ্ঠান জ্ঞানতাপস আবদুর রাজ্জাক ফাউন্ডেশন। ফজলে হাসান আবেদ আমৃত্যু এই ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

ড. রেহমান সোবহানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে আরও বক্তব্য রাখেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপ-উপাচার্য সালেহউদ্দীন আহমেদ ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক মনজুর আহমেদ।

সারাবাংলা/টিএস/ইএইচটি

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন