বিজ্ঞাপন

কেমন আছে ভিয়েতনাম যুদ্ধবালিকা ‘নেপাম গার্ল’?

January 17, 2020 | 5:23 pm

বিচিত্রা ডেস্ক

ভিয়েতনাম যুদ্ধের নৃশংসতার প্রতীক হয়ে আছে ‘নেপাম গার্ল’ ছবিটি। পুলিৎজার পুরস্কারপ্রাপ্ত এই আলোকচিত্রটি ক্যামেরাবন্দি করেছিলেন ফটোগ্রাফার নিক ওট। অনেকে হয়ত জানেন না এই ছবির পেছনের গল্প। এখন কেমন আছে সেই ‘নেপাম গার্ল’?

বিজ্ঞাপন

যুদ্ধে পুড়ে খাক ভিয়েতনাম

পুঁজিবাদ ও কমিউনিজমের প্রক্সি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে দক্ষিণ ও উত্তর ভিয়েতনাম। দক্ষিণ ভিয়েতনামের হয়ে লড়েছিল যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা কয়েকটি দেশ। এদিকে উত্তর ভিয়েতনামকে সহায়তা দেয় চীনসহ কমিউনিস্ট রাষ্ট্রগুলো।

ছবির ঘটনাটি ১৯৭২ সালের ৮ জুনের। এর আগের দিন উত্তরের নর্থ ভিয়েতনামিজ আর্মি (এনভিএ) দখল করে নেয় দক্ষিণ ভিয়েতনামের ট্র্যাং ব্যাং এলাকা। তাদের মুখোমুখি দাঁড়ায় দক্ষিণের আর্মি অব দ্য রিপাবলিকান অব ভিয়েতনাম (এআরভিএন) ও ভিয়েতনামিজ এয়ার ফোর্স (ভিএএফের)।

বিজ্ঞাপন

এই যুদ্ধে এনভিএ ট্র্যাং ব্যাং এর বেসামরিক লোকদের মানব ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে। যাতে ভিএএফের বিমান হামলা এড়িয়ে চলা যায়। তবে খুব দ্রুতই দুপক্ষের সংঘর্ষ মারাত্মক আকার ধারণ করে।

কে এই বিবস্ত্র শিশু? কেন তার আর্ত-চিৎকার?

বিজ্ঞাপন

ভিয়েতনাম যুদ্ধে এনভিএ ও এআরভিএন সেনারা মন্দিরগুলোতে সংঘর্ষ এড়িয়ে চলত। ‘নেপাম গার্ল’ নামে পরিচিতি পাওয়া শিশুটির নাম ফ্যান থি কিম ফুপ (৯)। সে ও তার কাজিনরা আশ্রয় নিয়েছিল বৌদ্ধ মন্দিরে। মন্দির এলাকায় দুপক্ষ যুদ্ধে লিপ্ত হলে সেখানে আশ্রয়ে  থাকা লোকেরা পালিয়ে যাওয়ার কথা ভাবতে থাকেন। তারা ছুটেন খোলা আকাশের নিচে।

এক পর্যায়ে মার্কিন কমান্ডারের নির্দেশে ওই এলাকায় বিমান থেকে নেপাম বোমা ছুড়ে ভিয়েতনামিজ এয়ার ফোর্স। বিমানের পাইলট ২ হাজার ফুট উচ্চতায় ঘণ্টায় ৫ শ মাইল বেগে উড়ছিলেন। আর পুড়িয়ে ধ্বংস করছিলেন বিস্তীর্ণ বসতি।

বিমান হামলায় কিম ফুপের স্বজনরা মারা যান। কিম দগ্ধ হন মারাত্মকভাবে, তার কাপড় পুড়ে যায়। আগুন থেকে বাঁচতে কিম পরনের কাপড় খুলে পালাতে থাকেন। চিৎকার করতে থাকেন, পুড়ে যাচ্ছি, পুড়ে যাচ্ছি বলে। নিক ওট নামের এক ভিয়েতনামি ফটোগ্রাফার তখনই ঐতিহাসিক ছবিটি তুলেন। যেটি পরে পুলিৎজার পুরস্কার জিতে নেয়।

বিজ্ঞাপন

এরপর কী ঘটেছিল কিম ফুপের জীবনে?

ফটোগ্রাফার নিক ওট শুধু ছবি তুলেই দায়িত্বপালন করেননি। তিনি কিম ফুপকে সেবাকেন্দ্রে পৌঁছে জীবন বাঁচাতে সাহায্য করেছিলেন। সায়গন এর বারসকি হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয় কিমকে। আগুনে তার শরীরের ৫০ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল।

ভিয়েতনাম যুদ্ধে কমিউন্সিটপন্থিদের বিজয় ও ১৯৭৬ সালে উত্তর ও দক্ষিণ ভিয়েতনামের একত্রীকরণ হয়। এরপর সরকারের আনুকূল্যে কিম ফুপকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ইউরোপে পাঠানো হয়। পরবর্তীতে তিনি মেডিসিন বিষয়ে পড়তে যান কিউবায়। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন তার পরিচয় হয় স্বদেশী বু হায় তোনের। তারা পরবর্তীতে বিয়ে করেন।

কিম কানাডায় রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করলে দেশটির সরকার তা মঞ্জুর করে। ১৯৯৭ সালে তাকে নাগরিকত্ব দেওয়া হয়। কিম ফুপ এখন অন্টারিওতে বসবাস করছেন। তার এক সন্তান রয়েছে। শিশুদের জন্য দাতব্য কাজে নিজেকে উৎসর্গ করেছেন এই যুদ্ধবালিকা । ১৯৯৪ সালে তাকে ইউনেস্কোর গুডউইল অ্যাম্বাসেডর হিসেবে নিযুক্ত করা হয়।

সে বিভীষিকাময় দিনটি নিয়ে কিমের জবানবন্দি

বিভিন্ন সভা সেমিনারে কিম ফুপ সেই নারকীয় ঘটনা নিয়ে খোলামেলা কথা বলেছেন। কিম জানান, ওই দিনটির কথা তার স্পষ্টভাবে মনে পড়ে। বিকট শব্দে বিমান উড়ে যাচ্ছিল। বোমা সব কিছু জ্বালিয়ে দেয়। তার কাপড় পুড়ে যায়, হাত পুড়ে যায়। নয় বছর বয়সে যুদ্ধের শিকার হয়ে তিনি ভাবছিলেন তাকে এখন মানুষ কীভাবে দেখবে!

কিম আরও জানান ফটোগ্রাফাররা তার বিবস্ত্র ছবি তুলছে তাও তিনি মেনে নিতে পারছিলেন না। তার পুড়ে যাওয়া ত্বক নিয়ে তিনি ভাবতেন। নিজেকে প্রশ্ন করতেন কেনইবা তার সঙ্গেই এমন হলো? কখনো ভেবেছিলেন আত্মহত্যার কথাও।

তবে সেসব গ্লানি ও আত্মউপলব্ধির দিন কিম পেছনে ফেলেছেন। তিনি ১৯৮২ খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করেন। জীবনকে ভিন্নভাবে ভাবতে শিখেছেন এখন। পাইলট, কমান্ডারসহ যারা তারর ক্ষতি করেছে তিনি তাদের ক্ষমা করেছেন এবং তাদের জন্য প্রার্থনা করেন।

সিবিসি নিউজ থেকে অনূদিত।

সারাবাংলা/এনএইচ

Tags: , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন