বিজ্ঞাপন

সেনাবাহিনীর পক্ষেই ‘সাফাই’ গাইলেন খোমেনি

January 17, 2020 | 5:03 pm

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

মিসাইল নিক্ষেপ করে ইউক্রেনের যাত্রীবাহী বিমান ভূপাতিত করার ঘটনায় ইরানের সেনাবাহিনী রেভ্যুলশনারি গার্ডসের পক্ষেই অবস্থান নিলেন দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খোমেনি। তিনি বলেছেন, এ ঘটনার মাধ্যমে রেভ্যুলশনারি গার্ডস দেশের ‘নিরাপত্তা রক্ষা’ করেছে। একইসঙ্গে তিনি সবাইকে ‘একতাবদ্ধ’ থাকারও আহ্বান জানিয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

যাত্রীবাহী ওই বিমানে মিসাইল হামলা চালানো নিয়ে দেশ-বিদেশে যখন নিন্দার ঝড় বয়ে যাচ্ছে, ঠিক তখনই এমন মন্তব্য করলেন খোমেনি। ইউক্রেনের ওই বিমানে যাত্রী ও ক্রু মিলিয়ে ১৭৬ জন ছিলেন। তাদের কেউই বিমানটি বিধ্বস্ত হওয়ার পর বেঁচে ছিলেন না।

আরও পড়ুন- ৮ বছর পর জুমার নামাজে ইমামতি করবেন খোমেনি

বিবিসির খবরে বলা হয়, শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি) জুমার নামাজের পর জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে খোমেনি এসব কথা বলেন। এদিন ইরানের তেহরানের মোসাল্লা মসজিদে জুমার নামাজে ইমামতিও করেন তিনি। এর আগে, ২০১২ সালে দেশটির ইসলামিক বিপ্লবের ৩৩তম বার্ষিকীতে সর্বশেষ জুমার নামাজে ইমামতি করেছিলেন আয়াতুল্লাহ খোমেনি। তার জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেওয়ার ঘটনাও বিরল।

বিজ্ঞাপন

ইউক্রেনের বিমান ভূপাতিত করার ঘটনায় দেশটির সরকারের বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ করেছেন নাগরিকরা। তারা সরকার শুধু নয়, সর্বোচ্চ নেতা খোমেনিরও পদত্যাগ দাবি করেন। তবে শুক্রবার জুমার নামাজে ইমামতি শেষে খোমেনি সেনাবাহিনীর পক্ষে কথা বলে সরকারের প্রতি সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করেন।

জুমার নামাজে ইমামতি করছেন খোমেনি

ভাষণে জাতিকে ‘ঐক্যবদ্ধ’ থাকার আহ্বান জানান আয়াতুল্লাহ আলী খোমেনি। যুক্তরাষ্ট্রের দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, শত্রুরা এ ঘটনাকে ব্যবহার করে জেনারেল কাসেম সোলাইমানিকে ড্রোন হামলায় হত্যার ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার পাঁয়তারা করছে।

ভাষণে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ‘ক্লাউডন’ ও ট্রাম্প প্রশাসনকে ‘শয়তানে’র সঙ্গে তুলনা করেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা। জেনারেল কাসেমিকে হত্যার ঘটনাকে ‘কাপুরুষোচিত’ আখ্যা দিয়ে ইরাকে ইরানের পাল্টা মিসাইল হামলাকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের গালে ‘চপোটাঘাতে’র সঙ্গেও তুলনা করেন। এ ঘটনায় ‘ঈশ্বর ইরানের পক্ষে’ আছেন বলে প্রতীয়মান হয় বলেও দাবি করেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইরানের অভিজাত কুদস বাহিনীকে সন্ত্রাসী সংগঠন অভিহিত করলেও খোমেনি একে ‘মানবিক মূল্যবোধ সমৃদ্ধ মানবতাবাদী সংগঠন’ বলে আখ্যা দেন। সোলাইমানির জানাজা ও দাফন এবং মার্কিন হামলায় ইরানি সেনাবাহিনীর সমুচিত জবাবকে ‘ইতিহাসের বাঁক’ বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

জাতির উদ্দেশে ভাষণ রাখছেন আয়াতুল্লাহ আলী খোমেনি, পেছনে ঝুলছে আয়াতুল্লাহ রুহুলুল্লাহ খোমেনির ছবি

ওয়াশিংটন ইনস্টিটিউটের গবেষক মেহেদি খালাজি বলেন, ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতার জুমার নামাজে ইমামতি করার ঘটনাটি প্রতীকি ও অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। সাধারণত ইরান কর্তৃপক্ষ যখন জাতির উদ্দেশে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কোনো বার্তা দিতে চায়, তখনই দেশটির ধর্মীয় নেতা জুমার নামাজে ইমামতি করেন।

গত ৮ জানুয়ারি ইরানের ইমাম খোমেনি বিমানবন্দর থেকে ইউক্রেনের উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া একটি বিমান বিধ্বস্ত হয়। এ ঘটনায় বিমানটিতে আরোহী ১৭৬ জনের সবাই মারা যান। ‘কারিগরি ত্রুটি’র কারণে বিমানটি বিধ্বস্ত হয়েছিল বলে শুরুতে জানায় ইরানি কর্তৃপক্ষ।

একদিন পর ১০ জানুয়ারি কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো দাবি করেন, ইরানের ভূমি থেকে ছুঁড়া একটি মিসাইলের আঘাতে ভূপাতিত হয় যাত্রীবাহী বিমানটি। তার বক্তব্যের সমর্থনে ভিডিও ফুটেজও প্রকাশ করা হয়।

বিজ্ঞাপন

পরদিন ১১ জানুয়ারি নিজেদের প্রাথমিক বক্তব্য থেকে সরে আসে ইরান কর্তৃপক্ষ। তারা জানায়, ইউক্রেনের যাত্রীবাহী বিমানটিকে মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র ভেবে ‘ভুল করে’ ইরানের রেভ্যুলশনারি গার্ডসের সেনারা মিসাইল হামলা চালিয়েছে। ইরানের সামরিক বাহিনীর তরফ থেকে জানানো হয়, যাত্রীবাহী বিমানে মিসাইল হামলা ইচ্ছাকৃত নয়। এটি মানবিক ভুল। যারা এজন্য দায়ী, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বিমান বিধ্বস্ত হওয়া নিয়ে শুরুতে ‘মিথ্যা তথ্য’ দেওয়ার কারণে সমালোচনার ঝড় ওঠে ইরানেও। রাজধানী তেহরানের বিভিন্ন স্থানে ইরানের নাগরিকরা বিক্ষোভ করেন। দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খোমেনির বিরুদ্ধেও স্লোগান দেন তারা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ইরান কর্তৃপক্ষের ব্যাপক সমালোচনা চলছে।

ইউক্রেনের এই বিধান বিধ্বস্তের আগে ইরাকে মার্কিন ঘাঁটিতে মিসাইল হামলা চালিয়েছিল ইরান। বাগদানে মার্কিন ড্রোন হামলায় ইরানের সিনিয়র জেনারেল কাশেমি সোলাইমানির মৃত্যুর ঘটনার জের ধরেই মার্কিন ঘাঁটিতে হামলা চালায় ইরান। এরপর থেকেই দুই ইরান-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক ফের উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে।

সারাবাংলা/টিআর

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন