বিজ্ঞাপন

প্রচারের ৮ম দিনে বিধি লঙ্ঘনের হিড়িক

January 17, 2020 | 10:32 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: ভোট গ্রহণের দিনক্ষণ ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের প্রধান চার মেয়র প্রার্থীর প্রচার-প্রচারণায় নেতাকর্মী, সমর্থকদের উপস্থিতি ক্রমশই বাড়ছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘনের হিড়িক। প্রচারের অষ্টম দিন শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি) নৌকা ও ধানের শীষ প্রার্থীদের আচরণবিধি লঙ্ঘন ছিল চোখে পড়ার মতো।

বিজ্ঞাপন

এদিন সকালে রাজধানীর কদমতলী থানার ৬১ নং ওয়ার্ডের দনিয়া বর্ণমালা স্কুলের সামনে থেকে প্রচার শুরু করেন ঢাকা দক্ষিণে ধানের শীর্ষের মেয়র প্রার্থী ইশরাক হোসেন, মোহম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে ঢাকা উত্তরে ধানের শীষের মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল, বাউনিয়া এলাকা থেকে ঢাকা উত্তরে নৌকার মেয়র প্রার্থী আতিকুল ইসলাম এবং বংশাল এলাকা থেকে ঢাকা দক্ষিণে নৌকার মেয়র প্রার্থী ফজলে নূর তাপস গণসংযোগ শুরু করেন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, দুই সিটির প্রধান চার মেয়র প্রার্থী নির্দিষ্ট স্পটে পৌঁছার আগেই সেখানে হাজার হাজার নেতাকর্মী-সমর্থক হাজির হন। ফলে মুহূর্তের মধ্যেই মূল সড়কসহ আশপাশের লেনগুলোতে পথচারী ও যানচলাচলে বিঘ্ন ঘটে। মেয়র প্রার্থী স্পটে পৌঁছানোর পর সাধারণ পথচারী ও যানবাহন চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। অথচ নির্বাচনি আচরণবিধিতে স্পষ্ট বলা হয়েছে, প্রচার-প্রচারণা বা গণসংযোগের সময় কোনো অবস্থাতেই পথ বন্ধ করা যাবে না। সাধারণ মানুষ ও যানচলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা যাবে না।

বিজ্ঞাপন

শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি) সকাল ১১ টার দিকে রাজধানীর কদমতলী থানার ৬১নং ওয়ার্ডের দনিয়া বর্ণমালা স্কুলের সামনে থেকে ইশরাক যখন অষ্টম দিনের প্রচার শুরু করেন। তখন সেখানে জনসভার মতো অবস্থা সৃষ্টি হয়। সাময়িক সময়ের জন্য যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে।

এ সময় জনতার উদ্দেশে দেওয়া বক্তব্যে ইশরাক বলেন, ‘নির্বাচিত হলে প্রথমেই এলাকার জলাবদ্ধতা দূর করব। ঢাকা ওয়াসাকে সঙ্গে নিয়ে এলাকা আধুনিক ড্রেনেজ সিস্টেমের আওতায় নিয়ে আসব। ডেঙ্গুর বিষয়ে পুরো ঢাকার ওপর আমাদের একটা কার্যক্রম রয়েছে। এই এলাকা সেই একই কার্যক্রমের আওতায় আনব। আমরা যথা সময়ে, যথা পরিমাণে, যথাযোগ্য মানের ওষুধ প্রয়োগ করে এডিস মশার প্রজনন নিয়ন্ত্রণ করব।’

বিজ্ঞাপন

সকাল ১০টার দিকে মোহাম্মপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে অষ্টম দিনের গণসংযোগ শুরু করেন তাবিথ আউয়াল। এ সময় বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মীর উপস্থিতির কারণে গণসংযোগ গণজমায়েতে রূপ নেয়। ফলে কিছু সময়ের জন্য যানচলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। সাধারণ পথচারী চলাচলও বিঘ্নিত হয়।

ভোটারদের কাছে এলাকার নানা সমস্যার কথা শুনে তা সমাধানেরও আশ্বাস দেন তাবিথ আউয়াল। এ সময় তিনি বলেন, ‘ঢাকা শহর বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। রাস্তা ঘাট, ড্রেনেজ, স্যুয়ারেজসহ নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে নগরবাসী। নির্বাচিত হলে আমরা সকল নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করে আধুনিক ঢাকা গড়ে তুলব।’

ঢাকা উত্তরে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আতিকুল ইসলাম অষ্টম দিনের প্রচার শুরু করেন শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি) দুপুর ১২ টার দিকে। রাজধানীর বাউনিয়া এলাকায় প্রচারণা শুরুর সময় পুরো রাস্তাটাই প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। সাপ্তাহিক ‍ছুটির দিন হওয়ার পরও স্থানীয় নেতাকর্মী সমর্থক, মেয়র প্রার্থীর গাড়ি বহর এবং মিডিয়ার গাড়ির কারণে কিছু সময়ের জন্য হলেও সড়কে যান চলাচল বন্ধ থাকে। ছাদখোলা গাড়িতে দাঁড়িয়ে হ্যান্ড মাইকে বক্তব্য দেন আতিকুল।

বিজ্ঞাপন

এ সময় তিনি বলেন, ‘নির্বাচিত হলে আগামী ছয় মাসের মধ্যে বাউনিয়া এলাকায় প্রশস্ত সড়ক নির্মাণের কাজ শুরু করব। যেখানে ২০ ফিট রাস্তা আছে সেটিকে অন্তত ৬০ ফিট করা হবে। আমি দায়িত্ব নিলে আগামী ছয় মাসের মধ্যে সুয়ারেজ লাইন হবে, সড়কে বাতি থাকবে।’ অর্থাৎ প্রতিশ্রুতির ফুলঝুড়ি নিয়ে হাজির হন মেয়র প্রার্থী আতিকুল ইসলাম— যা নির্বাচনি আচরণবিধির লঙ্ঘন।

শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি) রাজধানীর বংশাল থানার ফুলবাড়ীয়া এলাকায় নির্বাচনী গণসংযোগ করেন ঢাকা দক্ষিণে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী ফজলে নূর তাপস। প্রতিদিনের মতো এদিনও তার গণসংযোগে নেতাকর্মী সমর্থকদের ঢল নামে। স্থানীয় আওয়ামী লীগের বিভিন্ন ইউনিট, কাউন্সিলর প্রার্থীর কর্মীসমর্থক, আওয়ামী লীগের অঙ্গ-সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাকর্মীরা যোগ দেন তাপসের গণংযোগে। এতে করে বংশাল-ফুলবাড়ি এলাকায় স্বাভাবিক যানচলাচল ব্যহত হয়।

গণসংযোগকালে বেশ কিছু ব্যাপারে প্রতিশ্রুতিও দেন আওয়ামী লীগের এই মেয়র প্রার্থী। এ সময় তিনি বলেন, ‘আমিই একমাত্র মেয়র প্রার্থী যিনি ঐতিহ্যবাহী ঢাকাকে নিয়ে চিন্তা করে সুনির্দিষ্ট উন্নয়নের রূপরেখা দিয়েছি। আমরা মৌলিক যে পাঁচটি উন্নয়নের রূপরেখা দিয়েছি, তার পুরোটাই হলো আমাদের ঐতিহ্যবাহী ঢাকাকে নিয়ে। আমরা ঢাকাকে ভালোবাসি, ঢাকা আমাদের গর্বের। আমাদের গর্বকে পুনরুদ্ধার করতে চাই। সংস্কৃতি, ঐতিহ্য পুনর্জীবিত করব এবং উন্নত ঢাকা গড়ে তুলব।’

এ সময় তিনি আরও বলেন, ‘আচরণবিধি লঙ্ঘনের অবকাশ নেই। নেতাকর্মী এবং জনগণের মাঝে একটি উৎসবমুখর পরিবেশ আছে। সাধারণ মানুষের মধ্যে উৎসব বিরাজ করছে, চারিদিকে নির্বাচনের আমেজ রয়েছে।’

কিন্তু সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বড় দুই দলের চার মেয়র প্রার্থী নানাভাবে প্রতিদিনই আচরণবিধি লঙ্ঘন করছেন। বিশেষ করে তাদের ব্যাপক শো-ডাউনের কারণে ভোগান্তিতে পড়ছে সাধারণ মানুষ। এ সব বিষয় দেখেও না দেখার ভান করছে নির্বাচন কমিশন। ক্ষেত্র বিশেষ প্রার্থীদের পক্ষে সাফাই গাইছেন নির্বাচন কমিশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা।

প্রার্থীদের নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘনের ব্যাপারে জানতে চাইলে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের রিটার্নিং কর্মকর্তা আবুল কাশেম বলেন, ‘প্রার্থীরা সেলিব্রেটি। তারা যদি রাস্তায় একলা হেঁটে যান, তাতেই লোকজন জমা হতে থাকে। সাধারণত তারা ইচ্ছা করে আচরণবিধি লঙ্ঘন করেন না। সে কারণে এ সব ব্যাপারে আমাদের কিছু করার থাকে না। তবে কেউ যদি ইচ্ছা করে রাস্তা-ঘাট বন্ধ করে প্রচার চালায়, তাহলে আমরা তার বিরুদ্ধে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।’

সারাবাংলা/এজেড/একে

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন