বিজ্ঞাপন

ঢাকার জঞ্জাল চায় না বেরাইদবাসী

January 18, 2020 | 10:16 am

সাদ্দাম হোসাইন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: রাজধানীর নতুন বাজার এলাকা থেকে ১০০ ফিট সড়ক ধরে পূর্ব দিকে এগুতেই প্রশান্তির স্নিগ্ধ বাতাস গায়ে লাগছে। খুব একটা বাড়িঘর এখনও গড়ে ওঠেনি। তাই শহরের এই পাশটা এখনো গ্রামের মতোই সুনসান। দালানকোঠার ঠাসবুননে হাঁফিয়ে ওঠা শহরের পাশে যেন একটু স্বস্তির জায়গা।

বিজ্ঞাপন

কিন্তু মূল রাস্তা থেকে ভেতরের দিকে যেতে যেতে বাতাসের সাঁই সাঁই শব্দের সঙ্গে রাজমিস্ত্রীদের ঠুক ঠাক আর টুং টাং শব্দ যেন গ্রামের সেই সুনসান নিরবতার বিচ্ছেদ ঘটাচ্ছে ক্ষণে ক্ষণে। কিছুদুর পর পর আকাশ পানে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকা বহুতল ভবনগুলো কঙ্কালসার এখনও। বসবাস শুরু হয়নি।

তবে ভবনগুলোর ভবিষ্যৎ বলছে, যেভাবে রাজধানীর মতোই একেকটা ভবন একে অন্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতা নিয়ে বেয়ে উঠছে তাতে শহরের জঞ্জালতা ছাড়িয়ে যাবে এখানেও। আবার পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া বালু নদীও শুকিয়ে প্রবাহ ধারা সংকীর্ণ হয়ে পড়েছে। এসব দৃশ্য কার্যত ভীষণ ভাবনায় ফেলেছে বেরাইদের সচেতন নাগরিকদের।

বিজ্ঞাপন

বেরাইদের বাসিন্দারা বলছেন, বছর তিনেক আগেও যে ইউনিয়নে অল্প কিছু ইট-সিমেন্টের ঘর ছিল সিটি করপোরেশনের অন্তর্ভূক্ত হওয়ার পর সেই ইউনিয়নে এখন বহুতল ভবন গড়ে ওঠার হিড়িক পড়েছে। আর এমন অপরিকল্পিতভাবে যদি ভবন গড়ে উঠতে থাকে তাহলে অচিরেই গ্রামের আবহ হারাবে এ বেরাইদ। এমন আশঙ্কা বাসিন্দাদের।

এরইমধ্যে সিটি করপোরেশন নির্বাচনের হাওয়া বইতে শুরু করেছে বেরাইদজুড়ে। প্রার্থীরাও ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ছুটছেন নানা প্রতিশ্রুতি নিয়ে। কেউ বলছেন শহরের আদলে গড়ে উঠলেও লক্ষ্য থাকবে গ্রামীণ আবহ ধরে রাখা। আবার কেউ বা বলছেন, গুলশান-বনানীর মতো গড়ে তুলবেন এই গ্রামকে। তবে বাসিন্দারা বলছেন, সবুজ আর জনস্রোত ছাড়া গুলশান-বনানীর মতো শহর চান না তারা।

বেরাইদের মোড়ল পাড়ার বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, গত দশবছরে এলাকায় উল্লেখযোগ্য কোনো উন্নয়নের ছোঁয়া লাগে নি। পরে যখন ইউনিয়ন থেকে সিটি করপোরেশনে যুক্ত হল তখন সবাই ভেবেছিল এবার বুঝি উন্নয়ন হবে। কিন্তু গত তিন বছরে তার কোনো লক্ষণও দেখিনি। তাই আমাদের প্রত্যাশা যিনিই মেয়র হবেন তিনি যেন সবার আগে অবহেলিত এ অঞ্চলের দিকে নজর দেন।

বিজ্ঞাপন

এ অঞ্চলের কেমন উন্নয়ন চান এমন প্রশ্নে রফিকুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, উন্নয়ন বলতে আমরা শহরের জঞ্জালতা চাই না। আমরা চাই মুক্ত আলো বাতাসের মাঝে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার পরিবর্তন। চলাচলের উপযোগি সড়ক আর নাগরিক সুবিধা হিসেবে গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানির নিশ্চয়তা। সেই সঙ্গে যানজটের যে ভোগান্তি শহরজুড়ে সেটি যেনো আমাদের এ গ্রামকে গ্রাস করতে না পারে সেটিও নিশ্চিত করতে হবে।

ভূঁইয়া পাড়ার বাসিন্দা আব্দুস সোবহান সারাবাংলাকে বলেন, গত তিন বছরে যে পরিমাণ পরিবর্তন হয়েছে এখানে, তাতে যদি এমন পরিবর্তনের লাগাম টেনে না ধরা হয় তবে অচিরেই এই এলাকাও ঢাকার মত ঘিঞ্জিতে পরিণত হবে। এরইমধ্যে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সমস্যা প্রকট হয়েছে। বায়ূ দূষণও চরম আকার ধারণ করেছে। গত তিনবছর ধরে ১০০ ফিট রাস্তা হয়েছে। কিন্তু এখনও কাজ শেষ হয়নি। উল্টো রাস্তা সংস্কারের কাজে বসবাসের অযোগ্য হতে শুরু করেছে এ এলাকা।

বাসিন্দাদের ভাবনা নিয়ে কথা হয় ডিএনসিসির মেয়র পদে হ্যাভিওয়েট দুই প্রার্থী মো. আতিকুল ইসলাম ও তাবিথ আওয়ালের সঙ্গে। আওয়ামী লীগ থেকে মনোনীত মেয়র প্রার্থী আতিকুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, যেহেতু নতুন যুক্ত হওয়া এলাকাগুলোকে পরিকল্পনা অনুযায়ী সাজানোর সুযোগ আছে সেহেতু আমার পরিকল্পনা হচ্ছে ওই এলাকাগুলোকে একটি বাসযোগ্য শহর হিসেবে গুলশান-বনানীর মতো গড়ে তুলবো। আর বিএনপি থেকে মনোনীতে মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল বলছেন, ঢাকার মত নয়। সম্পূর্ণ গ্রামীণ আবহে গড়ে তুলবেন নতুন এই গ্রামকে।

বিজ্ঞাপন

তাবিথ আউয়াল বলেন, এখানে যেসব সমস্যা বিদ্যমান সেগুলো আমরা চিহ্নিত করেছি। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, খেলার মাঠ, পার্ক এবং পয়োঃনিষ্কাশনের ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করবো। তবে কোনোভাবেই যেনো শহরের মত জঞ্জাল ভর না করে সেটি নিশ্চিত করাই আমার মূল লক্ষ্য।

সারাবাংলা/এসএইচ/জেএএম

Tags:

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন