বিজ্ঞাপন

একনজরে ফাস্ট ট্র্যাক প্রকল্পগুলোর অগ্রগতি

January 20, 2020 | 12:09 am

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: ২০০৯ সালে নবম জাতীয় সংসদে জয় পেয়ে ক্ষমতায় আসার পর থেকে আওয়ামী লীগ সরকার গত ১১ বছরে বেশ কয়েকটি মেগা প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এর মধ্যে ১০টি প্রকল্পকে বিশেষ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। পদ্মাসেতু, রূপপুরে পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র, ঢাকা মাস র‌্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট বা মেট্রোরেলের মতো এই ১০টি প্রকল্পকে বলা হচ্ছে ‘ফার্স্ট ট্র্যাক’ প্রকল্প। প্রকল্পগুলোর মধ্যে কেবল মহেশখালীতে এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পটির কাজ শেষ হয়েছে। এছাড়া পদ্মাসেতু ও মেট্রোরেলের মতো প্রকল্পগুলো এরই মধ্যে দৃশ্যমান হয়েছে। বাকি প্রকল্পগুলোও কমবেশি গতি নিয়ে এগিয়ে চলেছে।

বিজ্ঞাপন

রোববার (১৯ জানুয়ারি) তেজগাঁওয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ‘ফাস্ট ট্র্যাক প্রকল্প’ মনিটরিং কমিটির পঞ্চম সভায় ফাস্ট ট্র্যাক এসব প্রকল্পের অগ্রগতির চিত্র তুলে ধরা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সভায় সভাপতিত্ব করেন। সভায় উপস্থাপিত তথ্য থেকে ফাস্ট ট্র্যাক প্রকল্পগুলোর বর্তমান অগ্রগতি একনজরে তুলে ধরা হলো।

এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্প

ফাস্ট ট্র্যাক প্রকল্পগুলোর মধ্যে এখন পর্যন্ত একমাত্র তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পটির কাজই শেষ হয়েছে। এই প্রকল্পের আওতায় মহেশখালীতে দৈনিক ৫০০ এমএমসিএফ ক্ষমতাসম্পন্ন ফ্লোটিং স্টোরেজ অ্যান্ড রি-গ্যাসিফিকেশন ইউনিট (এফএসআরইউ) এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের কাজ বিল্ট ওন অপারেট অ্যান্ড ট্রান্সফার (বিওওট) ভিত্তিতে বাস্তবায়িত হয়েছে। ২০১৮ সালের ১৯ আগস্ট থেকে বাণিজ্যিভাবে গ্যাস সরবরাহ শুরু করেছে এই টার্মিনাল।

বিজ্ঞাপন

পদ্মাসেতু

দেশের দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তনের স্বপ্ন নিয়ে হাজির হওযা পদ্মাসেতু এখন দৃশ্যমান। এরই মধ্যে সেতুতে অর্ধেকেরও বেশি স্প্যান বসেছে, সেতুও দৃশ্যমান হয়েছে অর্ধেকের বেশি।

সভায় জানানো হয়, মূল সেতুর ৮৫ দশমিক ৫০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। সেতু নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় জাজিরা প্রান্তে অ্যাপ্রোচ রোডের কাজ ৯১ শতাংশ, মাওয়া প্রান্তে অ্যাপ্রোচ রোডের কাজ শতভাগ, সার্ভিস এরিয়া-২-এর কাজ শতভাগ, মূল সেতুর নির্মাণ কাজ ৮৫ দশমিক ৫০ শতাংশ ও নদীশাসনের কাজ ৬৬ শতাংশ শেষ হয়েছে। প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ৭৬ দশমিক ৫০ শতাংশ।

বিজ্ঞাপন

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র

দেশের সবচেয়ে বড় প্রকল্প এটি। প্রকল্পের খরচ ১ লাখ ১৩ হাজার ৯৩ কোটি টাকা। সভায় জানানো হয়, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের তিনটি প্যাকেজের প্রি-ইন্সপেকশন শেষ হয়েছে। প্রকল্পের ভৌত কাজকে ৩৪৪টি অঙ্গে বিভক্ত করে কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ২০১৬ সালে শুরু হওয়া এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হওয়ার লক্ষ্য ২০২৫ সালের মধ্যে। তবে প্রকল্পটির অগ্রগতি প্রায় ২০ শতাংশ।

মৈত্রী সুপার থার্মাল পাওয়ার প্রজেক্ট (রামপাল)

মৈত্রী সুপার থার্মাল পাওয়ার প্রজেক্ট নামে রামপালের তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র সরকারের আরেকটি ফাস্ট ট্র্যাক প্রকল্প। এই প্রকল্পের ভৌত অগ্রগতি ৪৬ দশমিক ৯ শতাংশ, আর্থিক অগ্রগতি ৪১ দশমিক ৭৫ শতাংশ।

বিজ্ঞাপন

মহেশখালিমাতারবাড়ি সমন্বিত অবকাঠামো উন্নয়ন কার্যক্রম

মহেশখালি-মাতারবাড়ি সমন্বিত অবকাঠামো উন্নয়ন কার্যক্রম (এমআইডিআই) প্রকল্পে বেজার উদ্যোগে গড়ে ওঠা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প নগরী (ফেনী অর্থনৈতিক অঞ্চল, মীরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চল, সীতাকুণ্ডু অর্থনৈতিক অঞ্চল), মহেশখালি-মাতারবাড়ি সমন্বিত অবকাঠামো উন্নয়ন কার্যক্রম ও সাবরাং ইকো ট্যুরিজম পার্ক এবং জাইকা ও সরকারের সমন্বিত প্রয়াসে মহেশখালি-মাতারবাড়ি সমন্বিত অবকাঠামো উন্নয়ন কার্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত।

বর্তমানে এখানে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রায় ২০টি প্রকল্পের কাজ চলমান। এর মধ্যে মাতারবাড়ি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ, বন্দর নির্মাণ, এলএনজি ও এলপিজি টার্মিনাল নির্মাণ অন্যতম।

মেট্রোরেল

রাজধানীবাসীর যানজটের ভোগান্তি দূর করতে সরকার অগ্রাধিকারভিত্তিতে বাস্তবায়ন করছে মেট্রোরেল নামে পরিচিত ঢাকা মাস র‌্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রকল্পটি। এরই মধ্যে প্রকল্পটি দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে। গত ১ জানুয়ারি মেট্রোরেলে বৈদ্যুতিক লাইন সঞ্চালন সিস্টেম ও রেল লাইন বসানোর কাজ উদ্বোধন হয়েছে। সভায় জানানো হয়, প্রকল্পটির সার্বিক অগ্রগতি ৪০ দশমিক ২ শতাংশ।

গ্যাস পাইপলাইন নির্মাণ

ফাস্ট ট্রাকভুক্ত গ্যাস পাইপলাইন নির্মাণ প্রকল্পের প্রাথমিক ও মালামাল সংগ্রহের কাজ এরই মধ্যে শতভাগ শেষ সম্পন্ন হয়েছে। প্রকল্পটির ভূমি অধিগ্রহণ ও ভূমি হুকুম দখলের কার্যক্রম গড়ে ৯০ দশমিক ৩৩ শতাংশ শেষ হয়েছে। এছাড়া আনোয়ারা-ফৌজদারহাট গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন প্রকল্পের পাইপলাইন নির্মাণ কাজ শতভাগ শেষ হয়েছে। অবশিষ্ট দুই প্রকল্পের পাইপলাইন নির্মাণ কাজ গড়ে ৯০ শতাংশ শেষ হয়েছে।

গভীর সমুদ্রবন্দর (সোনাদিয়া)

প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে এবং প্রাকৃতিক সম্পদ নষ্ট হতে পারে— এমন আশঙ্কা থেকে এই প্রকল্পটি বাতিল করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ করা হবে না জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওখানে প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হবে। অনেক প্রাকৃতিক সম্পদ আমরা হারাব।

পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ প্রকল্প

পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ প্রকল্পের ভৌত অগ্রগতি ৫৮ দশমিক ৮৪ শতাংশ, আর্থিক অগ্রগতি ৬২ দশমিক ৫৫ শতাংশ।

সভায় জানানো হয়, পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের জন্য এ প্রকল্পকে ১৯টি কম্পোনেন্টে ভাগ করা হয়েছে। এর মধ্যে সাতটি কম্পোনেন্ট সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে, ছয়টি কম্পোনেন্ট পিপিপি’র (পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ) মাধ্যমে ও ছয়টি কম্পোনেন্ট জি-টু-জি ভিত্তিতে বাস্তবায়ন করা হবে। এই প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণ, কিছু পূর্ত কাজ, জাহাজ নির্মাণ, অভ্যন্তরীণ রুটে ডেজিং এবং পুনর্বাসন ও প্রশিক্ষণ সংক্রান্ত কার্যক্রম সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বাস্তবায়ন করছে। এর মধ্যে ভূমি অধিগ্রহণ ৫৯ দশমিক ২৯ শতাংশ, পূর্ত কাজ ৯৬ দশকি ৪৮ শতাংশ, জাহাজ নির্মাণ ৮২ দশমিক ৪৯ শতাংশ, ডিটেইল মাস্টারপ্ল্যান ৪২ শতাংশ, অভ্যন্তরীণ রুটে ড্রেজিং শতভাগ ও প্রশিক্ষণ ৩৪ দশমিক ১৪ শতাংশ শেষ হয়েছে।

পদ্মাসেতু রেল সংযোগ

পদ্মাসেতু প্রকল্প হাতে নেওয়ার অনেক পরে এই সেতুতে রেল সংযোগ বসানোর প্রকল্প সংযোজন করা হয়। এই প্রকল্পের ভৌত অগ্রগতি ২১ দশমিক ৯৩ শতাংশ, আর্থিক অগ্রগতি ৩০ দশমিক ২২ শতাংশ। প্রকল্পটি চীন সরকারের অর্থায়নে জি-টু-জি পদ্ধতিতে বাস্তবায়িত হচ্ছে। আরডিপিপি অনুযায়ী, প্রকল্পের মোট ব্যয় ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা। এর মধ্যে জিওবি ১৮ হাজার ২১০ কোটি ১১ লাখ টাকা ও প্রকল্প সাহায্য ২১ হাজার ৩৬ কোটি ৬৯ লাখ টাকা।

চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ

চট্টগ্রামের দোহাজারী-রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু-মিয়ানমারের নিকটবর্তী ঘুমধুম পর্যন্ত সিংগেল লাইন ডুয়েল গেজ ট্র্যাক নির্মাণ প্রকল্পের ভৌত অগ্রগতি ৩৩ ভাগ, আর্থিক অগ্রগতি ২৩ দশমিক ৯৩ ভাগ।

সভায় ফাস্ট ট্র্যাক প্রকল্পগুলোর অগ্রগতির সার্বিক চিত্র মনোযোগ দিয়ে দেখেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই প্রকল্পগুলোর বাইরেও অনেক বড় প্রকল্প রয়েছে। সেগুলোকেও ফাস্ট ট্র্যাকভুক্ত করার জন্য মনিটরিং কমিটিকে নির্দেশনা দেন তিনি। পাশাপাশি টানা ক্ষমতায় থাকার কারণে প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের সুযোগ পাচ্ছেন— এ কারণে এই সরকারকেই বারবার নির্বাচিত করায় জনগণের প্রতিও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি।

সারাবাংলা/এনআর/টিআর

Tags: , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন