বিজ্ঞাপন

নীতিমালা না মানায় এনটিটিএন’র সুফল থেকে বঞ্চিত গ্রাহকরা

January 20, 2020 | 5:32 pm

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: নীতিমালা না মানায় ন্যাশনওয়াইড টেলিকমিউনিকেশন ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্কের (এনটিটিএন) সুফল থেকে গ্রাহকরা বঞ্চিত হচ্ছেন। নতুন লাইসেন্স দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা বিবেচনা করতে হবে। না হলে বিদ্যমান এনটিটিএন লাইসেন্সপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে নতুন লাইসেন্সপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলোও ক্ষতির মুখে পড়বে। সবমিলিয়ে দেশে শক্তিশালী ট্রান্সমিশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। এক্ষেত্রে আরও কঠোর অবস্থানে যেতে হবে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন বিটিআরসিকে।

বিজ্ঞাপন

সোমবার (২০ জানুয়ারি) রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) নসরুল হামিদ মিলনায়তনে ‘টেলিযোগাযোগ সেবায় এনটিটিএন’র ভূমিকা ও চ্যালেঞ্জ: উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশন এই সভার আয়োজন করে।

আলোচনায় সভায় অ্যাসোসিয়েশন অব মোবাইল টেলিকম অপারেটরস অব বাংলাদেশের (অ্যামটব) মহাসচিব বিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অব.) এস এম ফরহাদ বলেন, বর্তমানে জিডিপির ৭ শতাংশ আসছে টেলিযোগাযোগ সেবা থেকে। থ্রিজিতে আমরা ৩৩ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছিলাম। সেই অর্থ এখনো আমরা তুলতে পারিনি। ফোরজিতে ১৩ থেকে ১৪ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ হয়েছে। আবার ফাইভজি ব্যবহৃত হবে করপোরেট ও ব্যবসার ক্ষেত্রে। এক্ষেত্রে বিনিয়োগ হবে ভিন্ন রকমের।

এস এম ফরহাদ বলেন, বিশ্বে বর্তমানে একজন গ্রাহক টেলিযোগাযোগ সেবায় ব্যবহার করছে ১২০০ টাকা। দেশে ১০০ টাকার সেবা দিতে সরকারকে রাজস্ব দিতে হচ্ছে ৫২ টাকা। বাকি অর্থ দিয়ে সব ব্যয় পরিশোধ করতে হয়। সেবার মান বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বিনিয়োগের পরিমাণও বাড়বে।

বিজ্ঞাপন

অ্যামটবের এই নেতা আরও বলেন, টেলিযোগাযোগ সেবার গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম এনটিটিএন। বিটিআরসিকে অনুরোধ করছি, সব স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে নিয়ে আলোচনা করে কিভাবে আরও গ্রাহকবান্ধব সেবা দেওয়া যায় এবং বিনিয়োগকারীদের অর্থও তুলে নেওয়ার ব্যবস্থা করা যায়, তা নিশ্চিত করতে হবে।

ফাইভার অ্যাট হোম’র চেয়ারম্যান মইনুল হক সিদ্দিকী বলেন, বর্তমান সরকারের ৪র্থ শিল্প বিপ্লবের লক্ষ্য নিয়ে আমরা ইউনিয়ন পর্যন্ত ফাইবার অপটিক্যাল নেটওয়ার্ক পৌঁছে দিয়েছি। বর্তমানে একেকজন গ্রাহক গড়ে ১ জিবিপিএস ব্যবহার করছে। আগামীতে গড় ব্যবহার দাঁড়াবে প্রায় ৩ জিবিপিএস। গ্রাহকদের ব্যয় আরও বাড়বে। তাই ব্যয়কে কিভাবে গ্রাহকদের সামর্থের মধ্যে রাখা যায়, তা নিয়ে এখনই কাজ করা দরকার। বর্তমানে এনটিটিএন প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে অপারেটররা মাত্র ৫ শতাংশ সার্ভিস নিয়ে থাকে। এই সার্ভিস দিয়ে গ্রাহকদের সেবার মান ঠিক রাখা কঠিন। আমাদের সক্ষমতা অনেক, কিন্তু টেলিকম অপারেটররা আমাদের কাছ থেকে সম্পূর্ণরূপে বিকল্পভাবে সার্ভিস নেওয়ায় গ্রাহকদের সেবার মান বাড়ছে না। সরকারি ও বেসরকারি সব এনটিটিএনদের রুলস ও রেগুলেশন মেনে চলতে হবে। সমন্বিতভাবে ট্রান্সমিশন পরিচালিত হলে সেবার দামও কমবে, আর মানও বাড়বে।

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, ডিজিটাল মাধ্যমে সব কাজকারবার হয় বলে নিয়ন্ত্রক কমিশন জবাবদিহিতা করে না। তার অন্যতম উদাহরণ আজকের অনুষ্ঠানে তাদের অনুপস্থিত থাকা। তারা যদি থাকতেন, তাহলে সবার বক্তব্য শুনে তাদের তৈরি করা গাইডলাইন সবাইকে মানতে বাধ্য করতে পারতেন।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ভবিষ্যতে বিদ্যুৎ ও পানির মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় সেবায় পরিণত হবে ইন্টারনেট। সেই অর্থে সেবাটা নিশ্চিত করতে প্রতিষ্ঠান ও আইন তৈরি করতে হবে। একইসঙ্গে নিশ্চিত করতে হবে শক্তিশালী ট্রান্সমিশন ব্যবস্থা।

আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনা করেন বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, সরকার চলতি বছর বা ২০২১-এর মধ্যে ফাইভজি চালু করতে যাচ্ছে। দেশের ১৬ কোটি মানুষের কাছে ইন্টারনেট সেবা পৌঁছে দিতে চায়। ফলে আগামীতে ডেটার ব্যবহার বাড়বে। দেশে ডেটা অর্থনীতির বিপ্লব ঘটতে যাচ্ছে। এর অন্যতম মাধ্যম ফাইবার অপটিক্যাল নেটওয়ার্ক।

তিনি আরও বলেন, সারাদেশে ইন্টারনেট ছড়িয়ে দিতে এবং টেলিযোগাযোগের অবকাঠামোগত কাজে শৃঙ্খলা আনতে এনটিটিএন (ন্যাশনওয়াইড টেলিকমিউনিকেশন ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক) লাইসেন্স দেওয়া শুরু করে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা (বিটিআরসি)। কমিশন এরই মধ্যে পাওয়ার গ্রিড অব বাংলাদেশ, বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানি লিমিটেড (বিটিসিএল), বাংলাদেশ রেলওয়ে, ফাইবার অ্যাট হোম এবং সামিট কমিউনিকেশন লিমিটেডকে এনটিটিএন লাইসেন্স দিয়েছে। কিন্তু এ ধারবাহিকতায় বাহন লিমিটেড নামক আরেকটি প্রতিষ্ঠান গত নভেম্বরে লাইসেন্স পেয়েছে। লাইসেন্স দেওয়ার আগে বাজার যাচাই-বাছাই করা উচিত ছিল। তা না করে লাইসেন্স দেওয়ায় পূর্বের লাইসেন্সপ্রাপ্ত এনটিটিএন প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে নতুন লাইসেন্সপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানটিও ক্ষতির মুখে পড়বে। এনটিটিএন সেবার মূল্য নির্ধারিত না থাকায় এনটিটিএন প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে মোবাইল ফোন অপারেটররা যেমন সেবা গ্রহণ করতে অনাগ্রহ দেখাবে, তেমনি এই প্রতিষ্ঠানগুলোও অনৈতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে সেবা খাতটিকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। এ খাতে আজ পর্যন্ত বিটিআরসির গাইডলাইনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন হয়নি।

আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন রবির ভাইস চেয়ারম্যান দিদারুল আলম, আণবিক শক্তি কমিশনের সাবেক পরিচালক ড. কামরুজ্জামান, পিজিসিবি’র পরিচালক প্রকৌশলী এম. আশরাফ হোসেন, ফাইবার অ্যাট হোম’র রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স ফারুক আব্বাসীসহ অন্যরা। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবু বকর ছিদ্দিক, প্রেজেন্টশন উপস্থাপনা করেন সংগঠনের যুগ্ম সম্পাদক অ্যাডভোকেট ইসরাত হাসান।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/ইএইচটি/টিআর

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন