বিজ্ঞাপন

করোনা ভাইরাস: সতর্ক বাংলাদেশ, বিমানবন্দরে থার্মাল স্ক্যানার

January 20, 2020 | 11:02 pm

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: সম্প্রতি নতুন এক প্রাণঘাতী ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে চীনে। বিশেষজ্ঞরা এই ভাইরাসের নাম দিয়েছেন ‘2019-nCoV-Corona (২০১৯-এনসিওভি-করোনা)’। এরই মধ্যে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সিঙ্গাপুরে তিনজন এবং থাইল্যান্ডে দুজনের মৃত্যু হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

এই ভাইরাসটি যেন বাংলাদেশে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে বিমানবন্দরে নেওয়া হচ্ছে বিশেষ সতর্কতা। এরই মধ্যে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে চীন ভ্রমণ শেষে আসা দেশি-বিদেশি নাগরিকদের ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। রোগ শনাক্তে চালু করা হয়েছে থার্মাল স্ক্যানার।

সোমবার (২০ জানুয়ারি) সারাবাংলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মিরজাদী সাবরিনা ফ্লোরা।

ডা. মিরজাদী সাবরিনা ফ্লোরা বলেন, ‘করোনা ভাইরাস যাতে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে না পারে সেদিকে আমরা সতর্ক থাকছি। যদি কোনোভাবে বাংলাদেশে এই রোগ ঢুকেও পড়ে তাতে শুরুতেই যেনো আমরা রোগ শনাক্ত করতে পারি সে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এছাড়া রোগটি যাতে বাংলাদেশে ছড়াতে না পারে সেদিকেও লক্ষ্য রয়েছে আমাদের।’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘যতটুকু জেনেছি, এটি এনিমেল সোর্স থেকেই আসছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। একজন মানুষ থেকে আরেকজন মানুষের শরীরে এখনও এই রোগ ছড়াচ্ছে না। সেটা হলে আসলে আমাদের চিন্তার কারণ অনেক বেড়ে যেত। তবে কোন এনিমেল এই ভাইরাস ছড়াচ্ছে চীন এখনো নিশ্চিত করতে পারেনি। আরেকটি বিষয় হচ্ছে, বেশিরভাগ কেসই মাইল্ড, এখনো গুরুতর কিছু হয়নি। তবুও আমরা কঠোর নজরদারি করে যাচ্ছি। আমাদের ফ্লাইট যায় গুয়াংজুতে। আর তার পাশের শহরেই কিন্তু এই ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে।’

ডা. ফ্লোরা বলেন, ‘এরই মধ্যে আমরা সব বন্দরকে সতর্ক করেছি। তবে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরকে প্রাধান্য দিয়ে আমরা আলাদা ব্যবস্থা নিয়েছি। কারণ চীন থেকে সরাসরি তিনটি ফ্লাইট বাংলাদেশে বেশি চলাচল করে। এর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশের ইউএস বাংলার একটি ফ্লাইট ও চায়নার দুটি ফ্লাইট। অন্যান্য স্থান থেকেও আসে। তবে এই তিনটা মূলত সরাসরি চীন থেকেই আসে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বিমানবন্দরে থাকা চিকিৎসক, স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ ও সিভিল এভিয়েশনের কর্মকর্তাদের নিয়ে আমরা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছি। কীভাবে কী করা যায় তা নিয়েও আমরা একটি মিটিং করেছি। সেখানে কী কী করতে হবে তা নিয়েও পরামর্শ দিয়েছি।’

বিজ্ঞাপন

বিমানবন্দরে বাড়তি সতর্কতা নেওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘মূলত আমাদের থার্মাল স্ক্যানারটা চালু থাকবে। বাইরে থেকে আসা কারও যদি জ্বর থাকে তবে তা থার্মাল স্ক্যানারেই ধরা পড়বে। কারণ এই করোনা ভাইরাসের মূল উপসর্গই হচ্ছে জ্বর। জ্বরের সঙ্গে অন্যান্য উপসর্গ থাকতে পারে।’

‘দ্বিতীয়ত, আমরা ফ্লাইটের মধ্যেই স্ক্রিনিং একটি ফরম দেবো। কারও কোনো রোগ থাকলে সেখানে তা পূরণ করবে যাতে পরবর্তীতে কোনো প্রয়োজনে আমরা সেই তথ্য পেতে পারি। কারও জ্বর ছিল বা ছিল না সেটিও আমরা দেখতে পারব। এছাড়াও আমরা আরেকটি হেলথ কার্ড দিচ্ছি মেসেজসহ; যাতে বাসায় যাওয়ার পর ১৪ দিনের মধ্যে কারও জ্বর এলে তিনি যেন হটলাইনে যোগাযোগ করতে পারেন।’- বলেন ডা. মিরজাদী সাবরিনা ফ্লোরা।

আইইডিসিআরের এই পরিচালক বলেন, ‘আমাদের বিভিন্ন হাসপাতালে এই ধরণের রোগীদের কিভাবে চিকিৎসা দেওয়া যায় তা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নিয়েছি। র‍্যাপিড রেসপন্স টিমকেও প্রস্তুত রাখছি। এই মুহূর্তে আসলে আমাদের করণীয় হচ্ছে, পুরো বিষয়টিকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা।’

এ বিষয়ে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক উইং কমান্ডার তৌহিদ উল আহসান সারাবাংলাকে বলেন, ‘করোনা ভাইরাস যাতে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে না পারে সেদিকে আমরা সতর্ক থাকছি। এরই মধ্যে থার্মাল স্ক্যানারের মাধ্যমে আমরা যাত্রীদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করছি। পাশাপাশি বিশেষ মেডিক্যাল ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে।’

বিজ্ঞাপন

এদিকে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, মার্স-করোনা ভাইরাসের মতো এ ভাইরাসের আক্রমণে আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরের জ্বর অনুভূত হয়। জ্বরের তীব্রতা বাড়লে শ্বাসকষ্ট হয়। এরপর নিউমোনিয়া হয় বা হতে পারে। রোগটি ছোঁয়াচে তবে নতুন এই চীনা ভাইরাস পশু-পাখি নাকি সামুদ্রিক মাছ থেকে আসছে সেটি এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

বিশেষজ্ঞদের মতে, যেহেতু রোগটি সংক্রমিত হয়, তাই সবারই সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। বিশেষ করে, হাঁচি-কাশির সময় রুমাল-টিস্যু-গামছা দিয়ে নাক-মুখ ঢেকে নেওিয়া। হাঁচি-কাশিরত ব্যক্তি থেকে নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করা। প্রয়োজনে মাস্ক ব্যবহার করা। বারবার দুই হাত সাবান-পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলা। সবধরনের ফলমূল ভালো করে ধুয়ে খাওয়া।

উল্লেখ্য, এর আগে ২০০২-০৩ এর দিকে চীন থেকে উদ্ভূত সার্স ভাইরাসের প্রকোপে বিশ্বজুড়ে সাতশর বেশি মানুষ মারা যায়। সে সময় ২৬টি দেশের প্রায় ৮ হাজার লোক প্রাণঘাতী এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন।

সারাবাংলা/এসবি/পিটিএম

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন