বিজ্ঞাপন

ফেসবুকে সমানে সমান আ.লীগ-বিএনপির মেয়র প্রার্থীরা

January 21, 2020 | 10:58 pm

এমদাদুল হক তুহিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: নির্বাচনি হাওয়া এখন রাজধানী ঢাকার বুকে। নির্বাচনের মাত্র ১০ দিন বাকি থাকায় প্রত্যেক প্রার্থীই যতটাসম্ভব নির্বাচনি এলাকায় চালিয়ে যাচ্ছেন জনসংযোগ, প্রচারণা। মিছিল, পথসভা, মাইকিংয়ে সরগরম হয়ে উঠছে অলিগলি। এমন প্রচার-প্রচারণার পাশাপাশি ঢাকার দুই সিটিতে মেয়র প্রার্থীরা সরব ভার্চুয়াল ওয়ার্ল্ডেও। বিশেষ করে তরুণ ভোটারদের কাছে পৌঁছাতে ফেসবুককে তারা বেছে নিয়েছেন নিজেদের বক্তব্য প্রচারের মাধ্যম হিসেবে। নিজ নিজ পেজ থেকে তারা তুলে ধরছেন প্রতি মুহূর্তের আপডেট, জনসংযোগের সময়গুলো লাইভও করছেন ফেসবুকে।

বিজ্ঞাপন

ফেসবুক ঘেঁটে দেখা যায়, দুই সিটিতে শীর্ষ দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি’র চার মেয়র প্রার্থী ‘অফলাইন’ প্রচারণায় যতটা ব্যস্ত, অনলাইন প্রচারণাকেও তারা কম গুরুত্ব দিচ্ছেন না। ভোটারদের কাছে নিজেদের পরিকল্পনা আর প্রতিশ্রুতি তুলে ধরতে অন্যতম মাধ্যম মনে করছেন ফেসবুককে। সেখানে তাদের বিভিন্ন পোস্টে কর্মী-সমর্থকরাও উৎসাহ জুগিয়ে যাচ্ছেন লাইক-কমেন্ট দিয়ে। ভোটাররাও পোস্টের বক্তব্য নিয়ে রাখছেন মতামত।

ঢাকা উত্তরে আওয়ামী লীগের আতিকুল ইসলাম ও বিএনপির তাবিথ আউয়াল এবং ঢাকা দক্ষিণে আওয়ামী লীগের শেখ ফজলে নূর তাপস ও বিএনপির ইশরাক হোসেন— চার জনই নিজস্ব ফেসবুক পেজের মাধ্যমে তুলে ধরছেন নিজেদের। এর মধ্যে তাপস, তাবিথ ও ইশরাকের পেজগুলো ভেরিফায়েড হলেও আতিকুলের পেজটি ভেরিফায়েড নয়।

মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) সন্ধ্যার তথ্য অনুযায়ী, ঢাকা উত্তরে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আতিকুল ইসলামের ফেসবুক পেজে লাইক রয়েছে ছয় লাখ ১৬ হাজারের বেশি, পেজটির ফলোয়ার ছয় লাখ ৩৩ হাজার ৯০০। উত্তরে বিএনপি প্রার্থী তাবিথের ভেরিফায়েড পেজটিতে লাইক-ফলোয়ার দু’টিই অবশ্য সাত লাখের বেশি।

বিজ্ঞাপন

এদিকে, দক্ষিণে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপসের ফেসবুক পেজে লাইক রয়েছে দুই লাখ পাঁচ হাজারের কিছু বেশি, ফলোয়ার রয়েছেন দুই লাখ ১৪ হাজার ৮০০। তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির ইশরাকের পেজে লাইক-ফলোয়ার অবশ্য অনেক বেশি, যথাক্রমে চার লাখ ৪৭ হাজার ও পাঁচ লাখ ১২ হাজার।

এই চার মেয়র প্রার্থীই নিজ নিজ পেজে নিজেদের প্রচার-প্রচারণার তথ্য তুলে ধরছেন, পোস্ট করছেন ছবি। সুযোগ বুঝে জনসংযোগের মুহূর্তগুলো লাইভও করছেন তারা। তবে এ ক্ষেত্রে তাপস কিছুটা পিছিয়ে আছেন অন্যদের তুলনায়।

বিজ্ঞাপন

সোমবার (২০ জানুয়ারি) দুপুরে ফেসবুক ঘেঁটে দেখা যায়, আতিকুল ইসলামের ৬ ঘণ্টা আগের একটি পিন পোস্টে লাইক পড়েছে প্রায় এক হাজার, কমেন্ট প্রায় ৩০০। পোস্টটি শেয়ার করেছেন ৮৪ জন। এদিন দুপুরে খিলক্ষেত এলাকায় আতিকুল ইসলাম প্রচারণায় অংশ নেন। প্রতিদিনের মতো এ প্রচারণাও ফেসবুক থেকে লাইভ করা হয়। মাত্র ১৯ মিনিটে ওই লাইভ ভিডিওতে সাড়ে তিনশ’র মতো লাইক পড়ে। কমেন্ট ছিল ১৯, শেয়ার করেন ১০ জন। আর ওই ভিডিও দেখেছেন আড়াই হাজারের মতো ফেসবুকার। এর আগের অন্য একটি লাইভ শেষ হওয়ার পর ঘণ্টাখানেক সময় পার না হতেই তার ভিউ ছাড়িয়ে যায় সাড়ে ৪ হাজার। ওই লাইভ ভিডিওতে লাইক পড়ে ছয়শর বেশি, কমেন্ট ৫১টি, শেয়ার করেন ৩১ জন। আর ওই সময়ের প্রায় ২৪ ঘণ্টা আগে দারুস সালাম রোডের প্রচারণার লাইভ ভিডিওটির ভিউ ছিল ১৩ হাজারের মতো। ওই পোস্টে লাইক ছিল প্রায় দুই হাজার, কমেন্ট ছিল ৪০৫টি, শেয়ার করেন ৮৩ জন।

একই সময়ে উত্তরে বিএনপির প্রার্থী তাবিথ আউয়ালের পেজে দুই দিন আগের পিন পোস্টটিতে লাইক দেখা যায় প্রায় ১৮ হাজার। সেখানে কমেন্টের সংখ্যা হাজারের বেশি, শেয়ার ছিল ছয় হাজারের মতো। এছাড়া দুই ঘণ্টা আগে মিরপুরের একটি পথসভা থেকে দেওয়া লাইভ ভিডিওতে লাইক পড়েছে সাড়ে ৩ হাজারের বেশি, কমেন্ট ১৭১টি, শেয়ার প্রায় ৫০০। ভিডিওটি ততক্ষেণেই প্রায় ২৯ হাজার মানুষ দেখেছেন। আর পাঁচ ঘণ্টা আগে মিরপুরের ৬ নম্বর সেকশন থেকে দেওয়া লাইভ ভিডিওতে লাইক ছিল সাড়ে ৪ হাজারের বেশি, কমেন্ট ৩২৭টি। ভিডিওটি শেয়ার করেন ৬৬১ জন, ভিউ ছিল ৪২ হাজারের বেশি।

বিজ্ঞাপন

এদিকে, সোমবার সন্ধ্যায় ঢাকা দক্ষিণে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপসের ফেসবুক পেজে ঢুকে দেখা যায়, তার পিন পোস্টটি ৬ জানুয়ারি পোস্ট করা একটি ছবি। তাতে লাইক ছিল ১২ হাজারের মতো, কমেন্ট ছিল ৫৪১টি, শেয়ার ৫৮৭। ওই দিন দুপুর পৌনে ৩টার দিকে তাপসের একটি ভিডিও পোস্ট করা হয় পেজে। সন্ধ্যা পর্যন্ত তাতে লাইক ছিল ৮৩০টি, কমেন্ট ৬৮টি, শেয়ার ছিল ৮২। দুপুর ১২টার দিকের আরেক পোস্টে লাইক ছিল দেড় হাজারের বেশি, কমেন্ট ১২৩টি। পোস্টটি শেয়ার হয় ১৪৩ বার। তবে তাপসের ফেসবুক পেজ থেকে তার প্রচারণার খুব একটা লাইভ দিতে দেখা যায়নি।

বিপরীতে, একই সময়ে দক্ষিণে বিএনপির প্রার্থী ইশরাক হোসেনের ফেসবুক পেজের পিন পোস্টে লাইক দেখা যায় দেড় হাজারের বেশি, কমেন্ট ৩৩৪টি, শেয়ার এক হাজার। ওই দিন বিকেলে তার এক লাইভ ভিডিওতে আধা ঘণ্টার মধ্যেই লাইক পড়ে আড়াই হাজার, কমেন্ট ১২৩টি, শেয়ার ১২০। আধা ঘণ্টাতেই প্রায় ৯ হাজার ভিউ ছিল ভিডিওটির। এছাড়া প্রায় ঘণ্টাখানেক আগের একটি ভিডিওতে লাইক ছিল দুই হাজারের বেশি, কমেন্ট ছিল ১১৮টি। প্রায় সাত হাজার ভিউয়ের ভিডিওটির শেয়ার ছিল ১০৫টি।

ফেসবুক পেজ থেকে দেখা যায়, উত্তরের আতিকুল ইসলাম সুস্থ, সচল ও আধুনিক ঢাকা গড়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। নিজের ফেসবুক পেজে প্রচার-প্রচারণার প্রতি মুহূর্তের আপডেট তুলে ধরছেন। চা বিক্রি, ক্রিকেট খেলা, স্বভাবসুলভ প্রচারণার সময় হোটেলে ঢুকে সবার সঙ্গে একইসঙ্গে খাওয়ার মতো কর্মকাণ্ডে তিনি এরই মধ্যে চমক ছড়িয়েছেন। সেগুলো মুহূর্তে ভাইরালও হয়েছে অনলাইনে। এসব ঘটনাকে কেউ কেউ নেতিবাচক বা ‘স্টান্টবাজি’ মনে করলেও তার ঘনিষ্ঠজনরা বলছেন, আতিকুল ইসলামের ক্ষেত্রে এসব ঘটনা খুবই স্বভাবসুলভ।

ফেসবুকে অনিমেষ রহমান লিখেছেন, ‘সহজ-সরল আতিক ভাই, নৌকা মার্কায় ভোট চাই!’ কানিজ আকলিমা সুলতানা লিখেছেন, ‘আতিকুল ইসলাম একজন অসাধারণ ব্যবস্থাপক এবং সজ্জন মানুষ। সিটি করপোরেশনের কাজ সফল করার জন্য তার মতো মানুষই দরকার।’

আতিকুল ইসলামের চা বিক্রি প্রসঙ্গে ব্যাঙ্গ করে তরুণ কবি আখতারুজ্জামান আজাদ লিখেছেন, ‘গরিব বলিয়া আসে না টিভি, আমার কোনো নাম নাই; আতিকের চা আটশ টাকা, আমার চায়ের দাম নাই! সারাদিন কত বেচিয়াছি চা ফকিরাপুলের সরণি; আমার খোমাটা এতই খারাপ, ভাইরাল কেন করোনি?’

আর আতিকের চা বিক্রির ছবি আপলোড দিয়ে অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট অনিমেষ রহমান লিখেছেন, ‘আসেন, এবার সবাই এক কাপ চা খান আর ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন মেয়র নির্বাচনে আতিক ভাইকে নৌকায় ভোট দেওয়ার প্রস্তুতি নিই।’

উত্তরে বিএনপির প্রার্থী তাবিথ আউয়াল নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। সর্বশেষ এক ভিডিও পোস্টে তিনি জানিয়েছেন, নগরবাসীর সমস্যার কথা শুনতে এসছেন তিনি। নাগরিকদের নিজ নিজ এলাকার সমস্যার কথা জানানোর আহ্বান জানিয়েছেন ওই পোস্টে। বলেছেন, নির্বাচিত হলে সেসব সমস্যার সমাধান করবেন।

ওই পোস্টে একাধিক নাগরিক তাদের বিভিন্ন সমস্যার কথা তুলে ধরেছেন। সেখানে মিলন খান নামের একজন লিখেছেন, ‘আমাদের নগরীর প্রথম দিকের সমস্যা হলো বায়ু দূষণ, যানজট। গত ১৩ মাসে মাত্র ৯ দিন নিঃশ্বাস নেওয়ার মতো বা দূষণমুক্ত ছিল ঢাকার বাতাস। আর যানজটের কারণে প্রতিবছর ২০ হাজার থেকে ৫০ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে, সঙ্গে ৫ মিলিয়ন ঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। এর মূল্য টাকার অঙ্কে নির্ধারণ করা সম্ভব নয়। ঢাকা নগরীর প্রতিটি বাড়ির ছাদে গাছ লাগানো বাধ্যতামূলক করা উচিত এবং প্রতিটি সক্ষম নাগরিককে প্রতিবছর কিছু পরিমাণ গাছ লাগাতে বাধ্যবাধকতা আরোপ করতে হবে।’

সাদিকুর রহমান লিখেছেন, ‘জনগণের প্রকৃত চাওয়া গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরে পাওয়া। বাসযোগ্য ঢাকা গড়া, যানজটের দুর্ভোগ থেকে মুক্তি দেওয়া, নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। বছর বছর খোঁড়াখুঁড়ির থেকে বাঁচতে দেওয়া। ছেলে মেয়ে স্কুল-কলেজ শেষে বাসায় ফিরতে পারে, তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।’

কাইয়ুম খান নামের একজন লিখেছেন, ‘ভাই আমি একজন ছোট কর্মী। একটা কথা বলতে মনে চায়, বলেই ফেলি, আগে আপনাদের ঢাকার নেতাদের ঠিক হতে বলেন। আমাদের মাকে জেলে রেখে কিসের নির্বাচন। যে নির্বাচনে টাকা খরচ ছাড়া আমরা আর কিছুই পাব না। ও আর একটা জিনিস পাব, সেটা হলো কতগুল মামলা। আমার মনে হয় কেন্দ্রীয় নেতারা সরকারের কাছ থেকে টাকা নিয়ে অন্য কাজে ব্যস্ত সময় পার করছে। মাকে জেল থেকে বের করার কথা ভুলেই গেছে।’

ওই পোস্টে লিমা আক্তার নামে একজন বিএনপির সমর্থক লিখেছেন, ‘আমি ঢাকার একজন নাগরিক হিসেবে এ দু’জন (তাবিথ ও ইশরাক) মানুষকে মেয়র হিসেবে দেখতে চাই। সবার কাছে রিকোয়েস্ট, ৩০ তারিখ (১ ফেব্রুয়ারি) সারাদিন, ধানের শীষে ভোট দিন। যদি ভোট ডাকাতি না হয়, ইনশাআল্লাহ আমরাই জিতব, মাকে মুক্ত করে আনব।’

দক্ষিণে আওয়ামী লীগের প্রার্থী তাপসকে শুভ কামনা জানিয়ে আকবর হোসেন নামে একজন লিখেছেন, ‘আনিসুল হকের চেয়ে আপনাকে অনেক বেশি এগিয়ে যেতে হবে, আপনি পারবেন।’ ইশা নবী নামের একজন লিখেছেন, ‘জনগণের ওপর আস্থা হারিয়ে বিএনপি এখন পাগলপ্রায়। জয় বাংলা, জিতবে আবারও নৌকা।’

ইউসুফ ভূঁইয়া নামে আরেকজন লিখেছেন, ‘স্যার, আপনার সাথে সাঈদ খোকন আর হাজী সেলিমের ছেলেরা থাকলে ভালো হইত। আমি বঙ্গবন্ধুর একজন সৈনিক হিসেবে কথাটা বললাম।’ নূর জাহান মনি লিখেছেন, ‘একজন পরিচ্ছন্ন, সৎ, ভদ্র, শিক্ষিত, মানবিক, অঙ্গীকার পূরণে শতভাগ আন্তরিক ব্যক্তি হিসেবে আমাদের মূল্যবান ভোট শেখ ফজলে নূর তাপস ভাইয়ের শতভাগ প্রাপ্য।’

দক্ষিণে বিএনপির প্রার্থী ইশরাক হোসেনের ফেসবুক পেজে মামুন নামের একজন লিখেছেন, ‘মনে হয় বাংলার মানুষ নতুন এক আর্দশবান নেতাকে পেতে যাচ্ছে। ইশরাক ভাই এগিয়ে চলো, তরুণ প্রজন্ম তোমার সাথে।‘

দেলোয়ার হোসেন লিখেছেন, ‘যারা মনে করছে বিএনপি শেষ। তারা হয়তো জানে না বিএনপি মানেই বাংলাদেশ। জানি অন্য নির্বাচনের মতো এটাও হবে। তবে দেখে অনেক ভালো লাগছে। ইশরাককে দিয়েই সম্ভব আগামীর আন্দোলন। দোয়া ও ভালবাসা অবিরাম, প্রিয় দল ও দলের লোকদের প্রতি।’

কর্মী বা সমর্থকরা নির্বাচনি প্রচারণায় অংশ নিলেও সাধারণ মানুষরা এখনো অনেকটা মুখে কুলুপ এঁটে আছেন। নির্বাচন নিয়ে ভার্চুয়াল ওয়ার্ল্ডে ভোটারদের তেমন কোনো সাড়া-শব্দ নেই।

সারাবাংলা/ইএইচটি/টিআর

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন