বিজ্ঞাপন

রাজশাহীতে ফরেনসিক ল্যাব, ‘ক্লুলেস’ মামলায় আসতে হবে না ঢাকায়

January 23, 2020 | 8:34 am

উজ্জল জিসান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: ‘ক্লুলেস’ বা সূত্র খুঁজে না পাওয়া এবং চাঞ্চল্যকর বিভিন্ন মামলার রহস্য উদঘাটন ও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ আলামত পরীক্ষার জন্য দেশের প্রায় সব অঞ্চলের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদেরই নির্ভর করতে হয় রাজধানীর ওপর। ঢাকায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ফরেনসিক ল্যাবেই তাদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হয় বিভিন্ন আলামত। তবে সেই ঝঞ্ঝাট থেকে এবার মুক্তি পেতে যাচ্ছে দেশের উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলো। রাজশাহীতে স্থাপিত সিআইডি’র ফরেনসিক ল্যাবেই এখন তারা এসব পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে পারবেন। পুলিশ কর্মকর্তাদের আর ছুটতে হবে না ঢাকায়।

বিজ্ঞাপন

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই ফরেনসিক ল্যাব স্থাপিত হওয়ায় কেবল মামলার আলামত ঢাকায় আনা-নেওয়ার ঝামেলা থেকেই পুলিশ সদস্যরা মুক্তি পাবেন না, বিভিন্ন ধরনের আলামত, বিশেষ করে জৈবিক আলামতগুলো নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থেকেও মুক্ত থাকতে পারবেন তারা।

সিআইডি সূত্রে জানা গেছে, এরই মধ্যে রাজশাহী পুলিশ লাইন্সে সিআইডি’র ফরেনসিক ল্যাবটি স্থাপনের যাবতীয় প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। রাজশাহী ও রংপুর রেঞ্জের ১৬টি জেলা, তথা গোটা উত্তরাঞ্চলের ১৬টি জেলা ও দুই মহানগরের সব থানা এই ল্যাবেই পাবেন সেবা। আর মামলা তদন্তে তাদের জন্য এই ল্যাবে থাকছে ৯ ধরনের সুবিধা। আগামী ৩ ফেব্রুয়ারি পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী ল্যাবটির উদ্বোধন করবেন। ঢাকা ও চট্টগ্রামের পর এটি দেশের তৃতীয় ফরেনসিক ল্যাব।

সিআইডি সূত্র জানায়, ক্লুলেস বিভিন্ন চাঞ্চল্যকর মামলার রহস্য উদঘাটন ও বিভিন্ন আলামত, ডিএনএ ও সাইবার টেস্টের মতো গুরুত্বপূর্ণ আলামত পরীক্ষার জন্য সিআইডির ফরেনসিক ল্যাব বর্তমানে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন অপরাধের ঘটনা রহস্য উদঘাটনে ঢাকার ফরেনসিক ল্যাবে যোগাযোগ করতে হয় সংশ্লিষ্টদের। এতে সময় বেশি প্রয়োজন হয়। পরীক্ষার রিপোর্ট দিতেও দেরি হয়। ফলে মামলার তদন্ত কাজ আটকে থাকে। এ জন্য বিভাগীয় পর্যায়ে ফরেনসিক ল্যাব বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এরই প্রেক্ষিতে রাজশাহী পুলিশ লাইন্সে একটি ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

সিআইডির ফরেনসিক শাখার ডিআইজি শেখ নাজমুল আলম সারাবাংলাকে বলেন, ‘ল্যাবটির যাত্রা শুরু হলে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের জেলাগুলোর সব পরীক্ষা সেখানেই করা সম্ভব হবে। তাদের ঢাকায় আসার প্রয়োজন হবে না। এতে সময় বাঁচবে, তদন্তের গতিও বাড়বে।’

সিআইডির ফরেনসিক বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, পরীক্ষাগারটিতে রাসায়নিক, ব্যালিস্টিকস, হস্তলিপি, ফিঙ্গারপ্রিন্ট, অনুবীক্ষণ, ফুট প্রিন্ট ও জালনোট শনাক্ত করার ব্যবস্থা রয়েছে। এর মধ্যে রাসায়নিক পরীক্ষাগারে ভিসেরা, নারকোটিক ও এসিড টেস্টসহ আরও কয়েকটি আইটেম পরীক্ষা করা যাবে।

এদিকে, ল্যাবের রাসায়নিক পরীক্ষাগারে সব ধরনের মাদকদ্রব্য, মৃত মানুষ ও পশু-পাখির ভিসেরা, কবর থেকে তোলা হাড়, চুল, মাটি ও সফট টিস্যু, বিষাক্ত বা চেতনাশক পদার্থের উপস্থিতি, রক্ত মিশ্রিত আলামতে রক্তের উপস্থিতি, এসিড মিশ্রিত আলামতে রক্তের উপস্থিতি, বিষ্ফোরক দ্রব্য, দাহ্য পদার্থ, জাল টাকা তৈরিতে ব্যবহৃত কেমিক্যাল, জিএসআরসহ বিভিন্ন আলামতের রাসায়নিক বিশ্লেষণ সম্ভব হবে।

বিজ্ঞাপন

ফিঙ্গারপ্রিন্ট শাখার বিভিন্ন সেবার মধ্যে রয়েছে ‘ক্রাইম সিন’ থেকে সংগৃহীত দৃশ্যমান ও অদৃশ্যমান আঙুলের ছাপের সঙ্গে সন্দেহভাজনদের আঙুলের ছাপের তুলনামূলক পরীক্ষার সুবিধা ও এ সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞ মত এবং সংগৃহীত ফিঙ্গারপ্রিন্ট লেটেস্ট প্রিন্ট এএফআইএস ডাটাবেজে সংরক্ষিত ফিঙ্গারপ্রিন্টের সঙ্গে তল্লাশি করে মিল বা অমিল খুঁজে বের করা।

ল্যাবের হস্তলিপি শাখায় বিচারাধীন দেওয়ানি ও ফৌজদারি মামলায় বিবাদমান দলিলের লেখা বা সই জাল, নম্বর ঘষামাজা করে বা রাসায়নিক পদার্থের ব্যবহার করে অবমোচন করা হলে তা পরীক্ষা করে মতামত দেওয়ার ব্যবস্থা থাকবে।

জালনোট ও মেকি মুদ্রা শাখার কাজ হচ্ছে দেশি-বিদেশি সব নোট ও কয়েন বা ধাতব মুদ্রার বিষয়ে ভিডিও স্পেট্রাল কম্পারেটরের মাধ্যমে নোটের দৃশ্য-অদৃশ্যমান বৈশিষ্টগুলো বিশ্লেষণের মাধ্যমে মাতমাত দেওয়ার সেবা।

ফটোগ্রাফি শাখার কাজ হচ্ছে অপরাধীদের ছবি গ্রহণ, সংরক্ষণ, ফরেনসিক বিভিন্ন শাখার আলামতের বর্ধিত ছবি সরবরাহ করা এবং বিতর্কিত ছকিবর সঙ্গে নমুনার মিল আছে কি না— তা বিশ্লেষণ করে মতামত দেওয়া।

বিজ্ঞাপন

অন্যদিকে ব্যালিস্টিক শাখার কাজ আগ্নেয়াস্ত্র সংশ্লিষ্ট কোনো অপরাধের ঘটনায় উদ্ধার হওয়া বা অপরাধে ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্র, কার্তুজ ও ফায়র্ড বুলেট বা এসবের কোনো অংশ বিশেষ পরীক্ষার পর বিশেষজ্ঞ মাতামত দেওয়া।

আর অনুবীক্ষণ শাখার কাজ গাড়ির ইঞ্জিন, চ্যাসিস নম্বর, আগ্নেয়াস্ত্রের নম্বর, ট্রেড মার্ক নির্মাতা দেশের নাম ও কোনো ধাতব বস্তুর ওপর থেকে মুছে ফেলা/বিকৃত করা, ক্রমিক নম্বর সংখ্যা বা যেকোনো চিহ্ন পরীক্ষা করে মতামত দেওয়া।

পদচিহ্ন শাখার কাজ পায়ের বা জুতার ছাপ পরীক্ষা করে অপরাধী বা ভুক্তভোগী শনাক্তকরণে বিশেষজ্ঞ মতামত দেওয়া।
এছাড়া ক্রামসিন ইউনিট অপরাধ সংঘটনের জায়গা পরিদর্শন করে বস্তুগত সাক্ষ্য সংগ্রহ, ডকুমেন্টেশন, সংরক্ষণ করে বস্তুগত সাক্ষ্য সংশ্লিষ্ট থানা বা তদন্তকারী কর্মকর্তাকে দেবে।

রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের সব মামলার আলামত ফরেনসিক পরীক্ষার মাধ্যমে এই ল্যাব থেকেই বিশেষজ্ঞ মতামত দেওয়া হবে। ফলে যাত্রাপথে বেশি সময় লাগার কারণে জৈবিক আলামতের মানের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা কমে যাবে। মতামত দিতে সময় কম লাগবে এবং পরীক্ষার গুণগত মানও বাড়বে বলে মনে করছে সিআইডির ফরেনসিক বিভাগ।

সারাবাংলা/ইউজে/টিআর

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন