বিজ্ঞাপন

ময়মনসিংহে পলিথিনের বিকল্প হিসেবে বাড়ছে পাটের ব্যবহার

January 25, 2020 | 8:44 am

কাজী মোহাম্মদ মোস্তফা, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট

ময়মনসিংহ: দুই দশক আগেও দেশে চটের বা ছালার ব্যাগ ব্যবহার হতো বেশি। বাড়ির মুরুব্বিরা বাজারে গিয়ে পাটের ব্যাগে করে বাজার ও নিত্য পন্য কিনে আনতো। কিন্তু হঠাৎই সেই জায়গা দখল করে নেয় পলিথিন। সহজে বহনযোগ্য ও দাম কমের কারণে পলিথিন দ্রুত বাজারে সয়লাব হয়ে যায়। পরিবেশ বিপর্যয়ের কথা চিন্তা করে ২০০২ সালে পলিথিন বন্ধে আইন করে সরকার। কিন্তু বাস্তবে এখনো পলিথিন বাজার থেকে নিষিদ্ধ করা যায়নি।

বিজ্ঞাপন

সরকার নিষিদ্ধ করলেও ঢাকাসহ সারাদেশে দেদারসে বিক্রি হচ্ছে পলিথিন। বিভিন্ন জায়গায় অভিযানে চলেছে কিন্তু কোনো কাজ হয়নি তাতে। তবে ব্যতিক্রম ময়মনসিংহ শহর। সেখানে এখন ব্যবহার বাড়ছে পাটের ব্যাগের।

ময়মনসিংহ শহরের মেছুঁয়া বাজার এলাকায় ক্রেতাদের সাথে কথা হলে তারা জানায়, সরকার পলিথিন নিষিদ্ধ করায় এর ব্যবহার বন্ধ হয়েছে। তবে সে তুলনায় পাট বা চটের ব্যাগ পাওয়া যাচ্ছে কম। তবে বাজারে পাটের ব্যাগ সহজলভ্য হলে স্বাভাবিকভাবেই এর ব্যবহার বাড়বে বলে মনে করেন তারা।

এই বাজারের দোকানি অজয় সাহা বলেন, আগে অনেকে পলিথিনের ব্যাগ ব্যবহার করলেও এখন আর কেউ ব্যবহার করতে চান না। আর প্রশাসন থেকে মোবাইল কোর্ট এসে পলিথিন জব্দ-জরিমানা ও দোকান মালিককে হেনস্থা করায় কেউ এই নিষিদ্ধ পলিথিন বিক্রি করার সাহস পান না। তবে সরকার যদি চট বা পাতলা পাটের ব্যাগ তৈরি করে দাম হাতের নাগালের মধ্যে রাখতে পারে তাহলে এটিই জনপ্রিয় হবে।

বিজ্ঞাপন

এ বিষয়ে ময়মনসিংহ পরিবেশ রক্ষা আন্দোলন সভাপতি অ্যাডভোকেট শিব্বির আহমেদ লিটন বলেন, দেড় দশক ধরে নিষিদ্ধ পলিথিন বন্ধের আন্দোলন চলছে। আইন করে নিষিদ্ধ পলিথিন বা শপিং ব্যাগ বন্ধ হলেও বাস্তবে তা আসলে বন্ধ হয়নি। উল্টো এটি এখন পরিবেশ ধ্বংসের বড় কারণে পরিণত হয়েছে। এখন পলিথিনের বিকল্প হিসেবে পাটের বহুবিধ ব্যবহার হতে পারে। পলিথিনের বিকল্প হিসেবে পাটের প্রসার ঘটলেও সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে সরকারকে প্রণোদনা দিয়ে হলেও এগিয়ে আসতে হবে।

নাগরিক অধিকার আদায় সংগঠন ‘জন উদ্যোগ’ আহবায়ক অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম চুন্নু বলেন, পরিবেশ রক্ষায় পলিথিন ব্যাগ এখন উঠে গেছে, ময়মনসিংহ বিভাগ পলিথিন মুক্ত। এখন কোথাও পলিথিন ব্যাগ পাওয়া যাবে না। কিন্তু এর বিকল্প হিসেবে নাগরিকদের অবশ্যই বিকল্প সুবিধা দিতে হবে। দেশীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ও বিজ্ঞান সম্মত এ পাটের ব্যবহার সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে সঠিকভাবে ব্যবহার করলে এর সুনাম ফিরবে বলে মনে করেন এই নাগরিক নেতা।

বিজ্ঞাপন

ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন মেয়র মো. ইকরামুল হক টিটু বলেন, পরিবেশ বিপর্যয়কারী পলিথিন বন্ধ করে একটি সুন্দর সহায়ক বাসযোগ্য পরিবেশ করার জন্য সিটি করপোরেশন কাজ করে যাচ্ছে। সরকারের উচ্চ পর্যায়ে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। নতুন সিটি করপোরেশন হিসেবে বাজার মনিটরিংসহ বিভিন্নপদক্ষেপ গ্রহণে আমরাও কাজ করে যাচ্ছি।

জাতীয় ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সমিতি বাংলাদেশ (নাসিব) কেন্দ্রীয় সভাপতি মির্জা নূরুল গণী শোভন সিআইপি বলেন, পলিথিন একটি জাতীয় সমস্যা। সঠিকভাবে পলিথিন বন্ধ করে পাটের উপর জোর দেওয়া এবং দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে দেশের পাটপণ্য বিদেশে ছড়িয়ে দিতে হবে। একদিকে যেমন বৈদেশিক মুদ্রা আসবে তেমনি বিশ্বে আমাদের সুনামও বাড়বে।

ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনার খোন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান এনডিসি জানান, ২০০২ সালে এই নিষিদ্ধ পলিথিন বিক্রি বা ব্যবহার বন্ধে আইন হলেও এর প্রয়োগ তেমন ছিলনা। সম্প্রতি পলিথিনের ব্যবহার বন্ধে জনসচেতনতা বাড়ানো হয়েছে। এ পর্যন্ত চলমান বাজার অভিযানে প্রায় সাড়ে পাঁচশ মোবাইল কোর্ট পরিচালিত করে জরিমানা ও ১৪ টন নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করা হয়েছে।

তিনি বলেন, এরইমধ্যে নব্বই ভাগ পলিথিন মুক্ত হয়েছে ময়মনসিংহ বিভাগে। পাটজাত দ্রব্য ব্যবহারে যে আইন হয়েছে তারই আলোকে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তাছাড়া পলিথিন বন্ধের মূল উদ্দেশ্য হলো পাটের ব্যবহার বাড়িয়ে সোনালী আঁশ পাটকে আবার ফিরিয়ে নিয়ে আসা।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/জেএএম

Tags:

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন