বিজ্ঞাপন

এসএসসির প্রবেশপত্র নেওয়া হলো না আবীরের

January 27, 2020 | 5:01 pm

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: আর কয়েক পা এগুলেই ওয়ারী উচ্চ বিদ্যালয়। আবীর হোসেন (১৬) স্কুলে যাচ্ছিল প্রবেশপত্র তুলতে। আসছে ৩ ফেব্রুয়ারি এসএসসি পরীক্ষায় বসার কথা ছিল তার। কিন্তু মুহূর্তেই যেন শেষ হয়ে গেল সব। ওয়াসার গাড়ি চাপায় মৃত্যু হয় আবীরের।

বিজ্ঞাপন

সোমবার (২৭ জানুয়ারি) সকাল ১১টার দিকে ওয়ারী স্ট্রিট রোডে ওয়াসার পাম্পের সামনের সড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার পরপরই ওয়ারী উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তাদের সহপাঠী হত্যার বিচার দাবিতে যাত্রাবাড়ী-গুলিস্তান সড়ক অবরোধ করে। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের ঘণ্টা খানেক পরে পুলিশ সরিয়ে দেয়।

মোহাম্মদ হানিফের চার সন্তানের মধ্যে আবীর সবার ছোট। পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, আবীরের বড় ভাই ৮ বছর আগে গুলিস্তান পার্কের ভেতরের পুকুরে গোসল করতে নেমে ডুবে মারা যায়। ১১ মাস আগে গত হন হানিফের স্ত্রী। রাজধানীর কাপ্তান বাজার এলাকায় তাদের বাসা। নবাবপুরে মোহাম্মদ হানিফ ইলেকট্রনিক্স সামগ্রীর ব্যবসা করেন।

বিজ্ঞাপন

দুর্ঘটনাস্থলে উপস্থিত আবীরের বাবা বলেন, ‘আমার আর কিছুই থাকল না। এখন আমি কী নিয়ে বাঁচমু। আমার তো সব শেষ হয়ে গেল। সকালে ছেলেকে বাসায় রেখে আমি দোকানে গেলাম। কিছুক্ষণ পরেই ফোন আসলো— ছেলে আমার গাড়ির নিচে পড়ছে। এত অনিরাপদ কেন রাস্তাঘাট! গলি দিয়ে যাচ্ছিল আমার ছেলে। সেখানেও মরণ ফাঁদ তৈরি করা হয়েছে। আমি ছেলে হত্যার বিচার চাই।’

ওয়ারী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল কুদ্দুস সারাবাংলাকে বলেন, আগামী ৩ ফেব্রুয়ারি এসএসসি পরীক্ষা শুরু হবে। আজ শিক্ষার্থীদের ডাকা হয়েছিল তাদের প্রবেশপত্র দেওয়ার জন্য। অনেকেই এসেছে, আবার কেউ আসছিল। আবীর হোসেনও আসছিল। হঠাৎ শুনতে পাই স্কুলের অদূরে রাস্তায় একজন ছাত্রকে চাপা দিয়েছে ওয়াসার গাড়ি। কেউ কেউ এসে বলছিল, আমাদের স্কুলের শিক্ষার্থী। পরে গিয়ে দেখি সে আমার শিক্ষার্থী। আবীর এবার ব্যবসায় বিভাগ থেকে এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিল।

আব্দুল কুদ্দুস আরও বলেন, এমন মৃত্যু যেন কারো না হয়। আমরা সবার কাছে আবেদন জানাবো, স্কুলের সামনের সড়ক যেন সব সময় নিরাপদ থাকে। পুলিশ চালককে আটক করেছে, গাড়ি জব্দ করেছে। আমি এর উপযুক্ত বিচার দাবি করছি।

বিজ্ঞাপন

আবীরের সহপাঠী ইসমাইল সারাবাংলাকে বলেন, আজকে স্কুলে সবাই আসছিল। আবীর বাসা থেকে বের হয়ে জয়কালী মন্দিরের পেছনের রাস্তা দিয়ে হেঁটে হেঁটে আসছিল। ওয়াসার গাড়িটি পাম্প থেকে পানি নিয়ে পেছন দিকে টার্ন করছিল। এ সময় আবীর চাপা পড়ে। পেছনের চাকায় মাথা পিষ্ট হলে ঘটনাস্থলেই আবীরের মৃত্যু হয়।

আরেক সহপাঠী আশিকুর রহমান নয়ন বলেন, মূল সড়ক দিয়ে হাঁটা চলার অবস্থা নেই। এখন বাসা, স্কুল ও বাজারের গলি দিয়েও চলা যায় না। ওই সব সড়কে গাড়ি কেন ঢুকতে দেয় ট্রাফিক পুলিশ! এসব বন্ধ করতে হবে। নইলে আজ আবীর পিষ্ট হয়েছে, কাল অন্য কেউ হবে। এভাবে চলতে পারে না।

ওয়ারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজিজুর রহমান বলেন, শিক্ষার্থীকে চাপা দেওয়ার পর গাড়ি নিয়ে চালক পালানোর চেষ্টা করেন। পরে তাকে গুলিস্তান এলাকা থেকে আটক করা হয়। পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা দিলেই চালকের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ওয়ারী জোনের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (এডিসি) নুরুল আমিন বলেন, ওয়াসার গাড়ি চাপায় এসএসসি পরীক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করেছিল। বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী পুলিশ সদস্যদের গায়ে হাত তোলে। পরে আমরা তাদের সরিয়ে দিয়েছি। এ ঘটনায় মামলা হবে। আদালতে বিচার হবে। রাস্তা অবরোধ করে মানুষকে ভোগান্তি দেওয়া কারো উচিত নয়।

সারাবাংলা/ইউজে/জেডএফ

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন