বিজ্ঞাপন

ইশতেহারে দুর্নীতিমুক্ত ও বিশ্বমানের সিটি গড়ার অঙ্গীকার ইশরাকের

January 28, 2020 | 11:56 am

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: বৈষম্য ও বিভেদ দূর করে রাজধানী ঢাকাকে দুর্নীতিমুক্ত ও বিশ্বমানের মহানগর হিসেবে গড়ে তোলার অঙ্গীকার করে নির্বাচনি ইশতেহার ঘোষণা করেছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী ইশরাক হোসেন। মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) সকাল ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবে তিনি এ নির্বাচনি ইশতেহার উপস্থাপন করেন।

বিজ্ঞাপন

ইশতেহারে রাজধানীর নানা সমস্যা সমাধানের পাশাপাশি নাগরিক সেবার বিষয়টিও গুরুত্ব পেয়েছে। একই সঙ্গে হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার কথাও বলেছেন ইশরাক হোসেন।

তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি আদর্শ নগর হচ্ছে সেটিই, যেখানে চাইবার আগেই নাগরিকের দরজায় সেবা হাজির হবে। অথচ আজ বিশ্বের দূষিত শহরের তালিকায় প্রথমে উঠে এসেছে ঢাকা। উন্নয়নের কথা বলা হলেও তার কিছু হচ্ছে না। নানা সমস্যায় এখন জর্জরিত এই শহর। তবে সমস্যার উল্টো পিঠেই থাকে সমাধান। সততা নিয়ে খুঁজলেই তা পাওয়া যায়।’

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনকে নান্দনিকভাবে সাজাতে ইশরাক হোসেন তার ইশতেহারে প্রায় ১৫ দফা প্রতিশ্রুতি তুলে ধরেন। সেগুলো হলো—

বিজ্ঞাপন

নাগরিক সেবা:

ঐতিহ্য এবং আধুনিকতার সম্মিলনে সবার জন্য বাসযোগ্য একটি বিশ্বমানের মহানগর হিসেবে ঢাকাকে গড়ে তোলার অঙ্গীকার করেন ইশরাক হোসেন। তিনি বলেন, `গণশুনানির মাধ্যমে নগরবাসীর সাথে আলোচনা সাপেক্ষে তাদের মতামতের ভিত্তিতে সিটি করপোরেশন হোল্ডিং ট্যাক্স নির্ধারণ করা হবে। হোল্ডিং ট্যাক্স সেক্টরকে সকল প্রকার দুর্নীতিমুক্ত করা হবে।‘

ইশরাক বলেন, ‘নাগরিকদের নিকট থেকে আদায় করা ট্যাক্সের টাকা কোন কোন খাতে ব্যয় করা হবে, তা বছরে কমপক্ষে দুইবার করদাতাদের সামনে উপস্থাপন করা হবে। নগরের আয়-ব্যয়ের হিসাবরক্ষণে স্বচ্ছতা প্রণয়ন করা হবে। মেয়র নির্বাচিত হলে  আমার সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ সার্বক্ষণিক উন্মুক্ত থাকবে।’

বিজ্ঞাপন

এ ছাড়া যাত্রাবাড়ি-ড্যামরা এলাকায় ‘ডিএনডি’ বাঁধের কারণে সৃষ্ট জলাবদ্ধতা দূর, নগরবাসীকে সস্তাদামে ভেজাল ও বিষমুক্ত খাবার, আধুনিক শিশু দিবাযত্নকেন্দ্র, অধিক সংখ্যক কমিউনিটি সেন্টার তৈরি, কবরস্থান ও শ্মশান ঘাটের উন্নয়ন, দৃষ্টিনন্দন ও আধুনিক সড়ক বাতি, সর্বোপরি প্রতিটি নাগরিকসেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার অঙ্গীকার করেন ইশরাক হোসেন।

যানজট নিরসন:

ঢাকা শহরের যানজট দূর করার জন্য বেশ কয়েকটি উদ্যোগের প্রতিশ্রুতি রয়েছে ইশরাক হোসেনের ইশতেহারে। তিনি বলেন, ‘ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও ওয়ার্ডের অলিগলির উন্নয়ন নিশ্চিত করা হবে। রাস্তা পারাপারে প্রয়োজনীয়য় স্থানে অধিক সংখ্যক আধুনিক ও দৃষ্টিনন্দন ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ করা হবে। ব্রিজে পর্যায়ক্রমে এলিভেটর/এস্কেলেটর স্থাপন ও সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা জোরদার করা হবে। নগরীতে ওয়ান স্টপ বাস সার্ভিস চালু করা হবে। যাত্রী বিশ্রামাগার এবং পরিচ্ছন্ন বাস টার্মিনাল উপহার দেওয়া হবে।

নাগরিক বিনোদন:

বিজ্ঞাপন

নাগরিক বিনোদন নিশ্চিত করে বুড়িগঙ্গা দূষণমুক্ত করা, নদীর তীর রক্ষা ও ওয়াকওয়ে নির্মাণ, সৌন্দর্য বর্ধন প্রকল্প গ্রহণ এবং নদীভিত্তিক বিনোদন কেন্দ্র, ওয়াটার ট্যুরিজম গড়ে তোলার  অঙ্গীকার করেন ইশরাক হোসেন। তিনি বলেন, ‘শিশু পার্কসহ বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্রের উন্নয়ন, আধুনিকায়ন ও দুর্নীতিমুক্ত দক্ষ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা হবে। পুরান ঢাকার ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলোর ঐতিহ্য স্থাপত্যশৈলি অক্ষুন্ন রেখে সংস্কার ও আধুনিক পর্যটন সুবিধা নিশ্চিত করা হবে।

সিটি করপোরেশনের অধীনে থাকা উন্মুক্ত উদ্যানগুলোর পরিছন্নতা নিশ্চিত করা এবং যে সকল উন্মুক্ত উদ্যান, নদী  ও খাল বেদখলে আছে সেগুলো দখলমুক্ত করা হবে। ঢাকার ঐতিহ্যের সাথে মিল রেখে সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে বিভিন্ন নাগরিক উৎসব- যেমন ঘোড়ার গাড়ির উৎসব, সাকরাইন (ঘুড়ি উৎসব), পিঠা উৎসব, নৌকা বাইচ ইত্যাদি আয়োজন করা হবে এবং বেসরকারি পর্যায়ে এসব উৎসব আয়োজনকে উৎসাহিত করা হবে।

স্বাস্থ্যসেবা:

পার্ক ও ব্যায়ামাগারে অত্যাধুনিক ‘প্রাইমারি হেলথ চেকআপ সেন্টার’ স্থাপনের অঙ্গীকার করে ইশরাক হোসেন বলেন, ‘প্রাত ও সান্ধ্যকালীন ওয়াকারদের সুবিধার্থে পার্ক ও উন্মুক্ত স্থানে অধিকতর পরিকল্পিত, আধুনিক ও পরিছন্ন ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা হবে। বিষ ও ফরমালিনমুক্ত খাদ্য সামগ্রী নিশ্চিত করতে প্রতিটি বাজারে পরীক্ষাকেন্দ্র স্থাপন করা হবে। সিটি হেলথ ডাটাবেজ গঠন ও সেবার মান নিশ্চিত করা হবে। নগর স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলো যুগোপযোগী ও আধুনিকায়ন করা হবে।

ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়াসহ মশার সংক্রমণ থেকে নগরবাসীকে বাঁচাতে নিয়মিত মশক নিধনে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করে তিনি বলেন, ‘দেশব্যাপী মশক নিধন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হবে। যুবসমাজকে বাঁচাতে ধর্মীয় মূল্যবোধের চর্চা, নৈতিকতা ও মূল্যবোধের অবক্ষয় প্রতিরোধে ইতিবাচক সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলাসহ কার্যকর মাদক নির্মূল কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হবে। কোনো পক্ষকে ক্ষতিগ্রস্ত না করে জনবহুল এলাকার রাসায়নিক কারখানাগুলো নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হবে।’

নগর পরিকল্পনা ও প্রশাসন:

নগরীর সমস্যার গুরুত্ব অনুসারে স্বল্প, মধ্যম এবং দীর্ঘমেয়াদী কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ  করে তা বাস্তবায়ন করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন ইশরাক হোসেন। তিনি বলেন, ‘পরিকল্পিত নগর গড়ে তুলতে বিশ্বের বিশিষ্ট নগর পরিকল্পনাবিদসহ দেশে বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশি নগর পরিকল্পনাবিদদের পরামর্শ গ্রহণ করা হবে। নগরের সমস্যা চিহ্নিত করতে এবং কার্যকর সমাধানে পরিকল্পনাবিদদের কাজের পরিধি বৃদ্ধি এবং অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হবে। বিশেষজ্ঞ অর্থনীতিবিদদের মতামতের ভিত্তিতে ওয়ার্ডভিত্তিক বাজেট প্রণয়ন করা হবে। যাতে এই বিকেন্দ্রীকরণের সুফল দ্রুত তৃণমূল পর্যায়ে পৌঁছানো যায়।’

নগর ব্যবস্থাপনায় সুশাসন নিশ্চিত করে সেবার মান উন্নয়নেরও অঙ্গীকার করেন ইশরাক হোসেন। তিনি বলেন, ‘মন্বিত ও কার্যকর ‘নগর সরকার’ ধারণার বাস্তবায়নে সক্রিয় উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। নাগরিক সুবিধা বৃদ্ধির জন্য অঞ্চলভিত্তিক  ‘অ্যাকশন এরিয়া প্ল্যান’ গ্রহণ করে রাজউকের মাস্টার প্ল্যানের সাথে সমন্বয় করা হবে।’

প্রথম ১০০ দিনের কর্মসূচি:

নির্বাচিত হলে স্বল্প মেয়াদে প্রথম ১০০ দিনের অগ্রাধিকার কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে বলে জানান ইশরাক হোসেন। তিনি বলেন, ‘জরুরি জনগুরুত্বপূর্ণ অগ্রাধিকার বিষয়গুলো চিহ্নিত করে সমন্বিত কার্যক্রমের মাধ্যমে ত্বরিৎ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা হবে।’

দুর্নীতিমুক্ত ঢাকা সিটি কর্পোরেশন:

ইশরাক বলেন, ‘দুর্নীতি সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রবেশ করে আমাদের নৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করছে। আমি প্রতিজ্ঞা করছি আপনাদের সকলের আন্তরিক সহযোগিতায় আমরা ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের সর্বস্তরে দুর্নীতিমুক্ত সেবা প্রদান নিশ্চিত করব। যাবতীয় সেবাপ্রাপ্তির জন্য এবং সকল অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ কর্তৃপক্ষকে সরাসরি অবহিত করার সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে মহানগর ও আঞ্চলিক কার্যালয়ে হট-লাইন চালু করা হবে। অভিযোগ পাওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সমস্যার সমাধানে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

ইশতেহার ঘোষণা মঞ্চে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বরচন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, ইকবাল হাসান মাহমুদ চৌধুরী, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সভাপতি আ স ম আব্দুর রব, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক ডা. রেজা কিবরিয়া, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক ড. মাহবুব উল্লাহ, জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবীব-উন-নবী খান সোহেল, মহানগর নেতা নবী উল্লাহ নবী প্রমুখ।

দর্শক সারিতে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান, এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরী, মেজর জেনারেল (অব.) রুহুল আলম চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, শামা ওবায়েদ, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানী, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, ওলামা দলের সভাপতি মাওলানা নেছারুল হক প্রমুখ।

সারাবাংলা/এজেড/এমও

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন