বিজ্ঞাপন

‘করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে অবশ্যই আবদ্ধ ঘরে রাখতে হবে’

January 28, 2020 | 7:03 pm

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কোনো রোগী পাওয়া গেলে তাকে অবশ্যই আবদ্ধ ঘরে বা অন্যদের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা (আইসোলেটেড) রেখে চিকিৎসা দিতে হবে বলে পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। এই ভাইরাস প্রতিরোধে সম্প্রতি চীন থেকে যারা ফিরে এসেছেন তাদের কারও জ্বর-সর্দি বা এ ধরনের লক্ষণ থাকলে তাদের নিয়ে বেশি সতর্ক থাকতে হবে বলেও জানান তারা।

বিজ্ঞাপন

মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) ‘নতুন করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ও করণীয় (2019-n COV: Emergency of a New Corona Virus)’ শীর্ষক এক সেমিনারে এসব কথা বলেন বিশেষজ্ঞরা।

বিএসএমএমইউ’র বিভিন্ন বিভাগের বিশেষজ্ঞ ও অধ্যাপকরা করোনাভাইরাস নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। সেমিনারে করোনা ভাইরাইসের বিস্তার, রোগটি কীভাবে ছড়ায়, কারা আক্রান্ত হয় এবং ভাইরাসটি কীভাবে রোগ তৈরি করে, তা নিয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ভাইরোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. মুনীরা জাহান। সেমিনার সঞ্চালনা করেন সেমিনার উপকমিটির সদস্য সচিব সহযোগী অধ্যাপক ডা. চঞ্চল কুমার ঘোষ।

সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএসএমএমইউ উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া বলেন, বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত করোনা ভাইরাসে কেউ আক্রান্ত না হলেও এর আশঙ্কা একদম উড়িয়ে দেওয়া যায় না। এক্ষেত্রে যেহেতু এই ভাইরাসের এখনো কোনো সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা আবিষ্কার হয়নি, সে কারণে এর বিস্তার প্রতিরোধেই গুরুত্ব দিতে হবে। বিএসএমএমইউ’র পক্ষ থেকে জনসচেতনতা তৈরিতে এবং চিকিৎসক ও নার্সদের এই ভাইরাস সম্পর্কে অবহিত করতেই এই বৈজ্ঞানিক সেমিনার আয়োজন করা হয়েছে। এর মূল উদ্দেশ্য, এ বিষয়ে একটি সুনির্দিষ্ট গাইডলাইন তৈরি।

বিজ্ঞাপন

সেমিনারে বক্তব্য রাখছেন বিএসএমএমইউ উপাচার্য

বিএসএমএমইউ উপাচার্য আরও বলেন, শুধু সচেতনতা নয়, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেলে তাদের চিকিৎসা ও সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আমাদের প্রস্তুতি রয়েছে। এই ভাইরাস প্রতিরোধে এখন পর্যন্ত সরকার যেসব উদ্যোগ নিয়েছে, তার জন্য সরকারকেও ধন্যবাদ জানাই।

সেমিনারে করোনাভাইরাসের লক্ষণ, উপসর্গ, জটিলতা ও চিকিৎসা নিয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিএসএমএমইউয়ের বক্ষব্যাধি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. শামীম আহমেদ।

তিনি বলেন, চীনের উহান শহরের সি-ফুড (সামুদ্রিক খাবার) মার্কেটে পশু-পাখি থেকে এ ভাইরাসের উৎপত্তি বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই ভাইরাসে আক্রান্তদের লক্ষণ হচ্ছে জ্বর, সর্দি, শরীরে দুর্বলতা, ডায়রিয়া ইত্যাদি। এসব লক্ষণ দেখা দিলে সবাইকে সতর্ক হতে হবে এবং যত দ্রুতসম্ভব চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। এ ভাইরাসে নিউমোনিয়া হয়ে ফুসফুস অকেজো হয়ে যায়। পরে কিডনি-লিভারও কর্মক্ষমতা হারায়। এতে রোগীর মৃত্যুও হতে পারে।

বিজ্ঞাপন

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর নির্দিষ্ট চিকিৎসা না থাকলেও জ্বরের জন্য প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ সেবন করা যেতে পারে বলে পরামর্শ দেন ডা. শামীম আহমেদ। তিনি বলেন, আক্রান্তদের অবশ্যই আইসোলেটেড (অন্যদের থেকে আলাদা) রাখতে হবে। পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। সম্প্রতি চীন থেকে যারা ফিরে এসেছেন, তাদের কারও যদি এমন লক্ষণ থাকে, তাহলে তাদের কাছ থেকে বেশি সতর্ক থাকতে হবে।

এই ভাইরাস মানুষ থেকে মানুষে হাঁচি-কাশি ও শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ছে বলে এই ভাইরাস প্রতিরোধে সবসময় হাত ধুয়ে পরিষ্কার রাখা ও নাকে মাস্ক পরার পরামর্শ দেন এই চিকিৎসক।

বিএসএমএমইউ রেসপিরেটরি মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এ কে এম মোশাররফ হোসেন বলেন, এই রোগের প্রতিরোধ হিসেবে চীন থেকে কেউ এলে তাকে ১৪ দিন আইসোলেটেডে রাখতে হবে। এছাড়া কারও সঙ্গে দেখা হলে হ্যান্ডশেক বা কোলাকুলির বদলে দূরত্বে থেকে হাই-হ্যালো বলতে হবে। সবসময় হাত ধুতে হবে, এমনকি নাকে হাত দেওয়ার সময়ও হাত ধুয়ে নিতে হবে।

সেমিনারে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়া থেকে রক্ষা পাওয়া, প্রতিরোধ, প্রতিকার ও প্রস্তুতি নিয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিএসএমএমইউয়ের অভ্যন্তরীণ মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. নাজমুল হাসান।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, এই ভাইরাস প্রতিরোধে নিয়মিত হাত পরিষ্কার রাখতে হবে। মুখ ঢেকে হাঁচি, কাশি দিতে হবে ও মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। দেশের বাইরে থেকে কেউ এলে প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে যাওয়া যাবে না। পোষা প্রাণীদের সঙ্গে থাকার ক্ষেত্রেও সাবধান থাকতে হবে। রোগের লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। কাঁচা বাজারে গেলে পশু-পাখির মাংস ধরা থেকে বিরত থাকতে হবে। মাংস ধরলে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে ফেলতে হবে। মাংস ধরে হাত না ধুয়ে মুখমণ্ডল স্পর্শ করা যাবে না। মাংস ও ডিম ভালো করে সেদ্ধ ও রান্না করে খেতে হবে।

করোনাভাইরাস মোকাবিলার প্রস্তুতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এরই মধ্যে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দেশের বাইরে থেকে আসা মানুষদের থার্মাল স্ক্যানারের মাধ্যমে স্ক্রিনিং করা হচ্ছে। জাতীয় বক্ষব্যাধি হাসপাতাল ও কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে দুইটি আইসোলেশন ওয়ার্ড খোলা হয়েছে। বিএসএমএমইউয়ের বক্ষব্যাধি ও ভাইরোলজি বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগের চিকিৎসক ও নার্সরাও এই ভাইরাস নিয়ে প্রস্তুত ও সতর্ক রয়েছেন।

সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএসএমইউ উপউপাচার্য (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মো. শহীদুল্লাহ সিকদার, উপউপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. সাহানা আখতার রহমান, উপউপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. মুহাম্মদ রফিকুল আলম, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান।

সেমিনারে আরও উপস্থিত ছিলেন মেডিসিন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. মো. জিলন মিঞা সরকার, শিশু অনুষদের ডিন ও সেমিনার উপকমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. চৌধুরী ইয়াকুব জামাল, রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল হান্নান, ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডা. মো. আবদুর রহিম, ভাইরোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সাইফ উল্লাহ মুন্সী, অধ্যাপক ডা. শাহিনা তাবাসসুম, মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. চন্দন কুমার রায়সহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, চিকিৎসক, শিক্ষার্থী ও নার্সরা।

সারাবাংলা/এসবি/টিএস/টিআর

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন