বিজ্ঞাপন

ভোটের দিন অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার ঠেকানোই বড় ‘চ্যালেঞ্জ’

January 29, 2020 | 2:41 pm

উজ্জল জিসান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ভোটগ্রহণের সময় কমে আসছে। নির্বাচনি প্রচারণায় এখন পর্যন্ত প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ও রাজনেতিক দলগুলোর মধ্যে তেমন বড় ধরনের সংঘর্ষের ঘটনা না ঘটলেও নির্বাচনে অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার নিয়ে আশঙ্কা রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। সেই আশঙ্কা থেকে তারা অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার ঠেকাতে মাঠেও নেমেছে। শুরু করেছে নজরদারি। অব্যাহত রয়েছে অভিযান। পুলিশ বলছে, ভোটের আগে, ভোট গ্রহণের দিন ও পরের কয়েকদিন অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার ঠেকানোটাই এখন তাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। আর এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে পারলেই সুস্থ ও সুন্দর ভোটের পরিবেশ বজায় থাকবে।

বিজ্ঞাপন

মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) একাধিক সূত্রের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

গত ২৬ জানুয়ারি রাজধানীর টিকাটুলী এলাকায় বিএনপি প্রার্থী ইশরাক হোসেন ও আওয়ামী লীগের প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপসের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ ঘটে। এসময় বেশ কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলির শব্দ শোনা যায়। গোয়েন্দা পুলিশ সূত্র বলছে, সংঘর্ষের সময় অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার ভাবিয়ে তুলেছে পুলিশকে। কারা কী কারণে গুলি চালিয়েছে, তাদের শনাক্ত করতে এরই মধ্যে পুলিশ কাজ শুরু করেছে। ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার শফিকুল ইসলামও অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে আলোচনা করেছেন।

গোয়েন্দা পুলিশ জানায়, নিরবচ্ছিন্নভাবে ভোটগ্রহণে অবৈধ অস্ত্র দিয়ে যেন কেউ বাধা তৈরি করতে না পারে, সেজন্য মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সব ধরনের পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে। সারাদেশে ৮০ জন বৈধ অস্ত্র ব্যবসায়ী ছাড়াও কারা অবৈধ অস্ত্রের কেনাবেচা করে, তাদের তালিকা করে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। এমনকি দেশের কোন কোন পয়েন্ট দিয়ে অবৈধ অস্ত্রের চালান আসে, সেগুলোও শনাক্ত করা হয়েছে। গোয়েন্দা পুলিশের একাধিক টিম অভিযান অব্যাহত রেখেছে।

বিজ্ঞাপন

ডিবি পুলিশ জানায়, নির্বাচনকে ঘিরে দেশে অস্ত্র প্রবেশ করতে পারে— এমন ৩০টি পয়েন্ট শনাক্ত করেছে ডিবি পুলিশ। পয়েন্টগুলো হচ্ছে— চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, হিলি, যশোরের বেনাপোল, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা, উখিয়া, রামু, টেকনাফ, মহেশখালী, কুতুবদিয়া, রাউজান, সেন্টমার্টিন, সন্দ্বীপ, সীতাকুণ্ড, রাঙ্গুনিয়া, বান্দরবান, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ির রামগড় ও সুদারামপুর, ফেনী নোয়াখালী, চাঁদপুর, আখাউড়া, খুলনা, সাতক্ষীরা, কুষ্টিয়া, পটুয়াখালী, পিরোজপুর ও সিলেট।

এসব পয়েন্টের মধ্যে রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, বেনাপোল ও সিলেট সীমান্ত দিয়ে বেশি অস্ত্র দেশে প্রবেশ করে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা এসব পয়েন্টগুলো নিয়ে আলাদাভাবে কাজ করছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের এক কর্মকর্তা সারাবাংলাকে বলেন, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রভাবশালী অনেকেই নিজ প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য সন্ত্রাসীদের ভাড়া করতে পারেন। এমনকি তারা ঢাকার বাইরের কোনো কোনো সন্ত্রাসীকে ঢাকায় এনে ভোটের দিন প্রভাব বিস্তার করাতে পারেন। কোনো কোনো প্রভাবশালী কারাগারে থেকেও নিজ প্রার্থীর পক্ষে প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করছেন বলে তথ্য রয়েছে।

বিজ্ঞাপন

ভোটগ্রহণ সুষ্ঠ ও সুন্দর পরিবেশে রাখতে গোয়েন্দা পুলিশের অনুসন্ধানে দক্ষিণ ও উত্তরের অভিযুক্ত কাউন্সিলরদের অনুগত সন্দেহভাজন সন্ত্রাসীদের নামের তালিকা নিয়ে কাজ করছেন গোয়েন্দা পুলিশের সদস্যরা। তালিকায় রয়েছেন— সোহরাব হোসেন স্বপন, সরোয়ার হোসেন মনা, জাকির হোসেন, খায়রুল, উজ্জল ও রিমন, স্বপন, মুরসালিন, মনির হোসেন, মনা, রানা, মোল্লা মো. আবু কাউসার, সারওয়ার হোসেন বাবু, জামান, মাকসুদ, আনিসুর রহমান, ওমর ফারুক, গোফরান গাজীসহ শতাধিক সদস্য।

এছাড়া, মতিঝিলের শাহজাহানপুরের অংকুর, রিভি, রাজু, আজাহার, বাবু, জহির; পল্টনের হাবিবুল্লাহ, সুমন, সৈকত, আলাউদ্দিন, লিটন, ইরামিন ও কাজি, তুহিন মুন্সি, নবীর হোসেন শিকদার ও সাইফুল ইসলাম; বিএম ফরহাদ অংকুর, আরিফুল ইসলাম লাবলু, রামপুরার আলোচিত ট্রিপল মার্ডার মামলার আসামী রইছ, শাহাদত হোসেন ও কবির হোসেন; শাজাহানপুরের পোল্ট্রি রিপন, সেলিম, রিভি; রামপুরার রনি; মগবাজারের সজীব, আজহার বাবুসহ আরও অনেক সন্ত্রাসীকেই গোয়েন্দা পুলিশ নজরদারিতে রেখেছে।

এদিকে, গত ২৭ জানুয়ারি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ৩০ জানুয়ারি রাত ১২টা থেকে ৩ ফেব্রুয়ারি রাত ১২টা পর্যন্ত কেউ বৈধ অস্ত্র বহন ও প্রদর্শন করতে পারবেন না। আদেশ লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের অস্ত্র উদ্ধার টিমের অতিরিক্ত উপকমিশনার জাহাঙ্গীর আলম সারাবাংলাকে বলেন, ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড যারা নিয়ন্ত্রণ করত, তাদের বেশিরভাগই কারাগারে রয়েছে। যারা বাইরে ছিল, তারাও এখন পলাতক। এরপরও অনেকে অবৈধ অস্ত্র নিয়ে প্রভাব খাটানোর চেষ্টা চালাচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে আমরা কাজ করছি। এর আগে আমরা একে-২২ জব্দ করেছি। অবৈধ অস্ত্র ব্যবসায়ীদের গ্রেফতার করেছি। তারাও কিছু তথ্য দিয়েছে। সেই অনুযায়ী আমরা অভিযান অব্যাহত রেখেছি।

বিজ্ঞাপন

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার  মাহবুব আলম সারাবাংলাকে বলেন, অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার ঠেকাতে গোয়েন্দা পুলিশের বেশ কয়েকটি টিম কাজ করছে। সন্দেহভাজনদের তালিকা করে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া ঢাকা ও ঢাকার বাইরে কয়েকটি টিম অভিযান অব্যাহত রেখেছে।

যুগ্ম কমিশনার মাহবুব আরও বলেন, বাইরে থেকে এসে যেন কেউ ভোটে প্রভাব বিস্তার করতে না পারে, সেজন্য হোটেল, মোটেলসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোতে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া ৩০ জানুয়ারি রাত থেকেই আবাসিক হোটেলগুলোতে বাইরের কাউকে অবস্থান করতে দেওয়া হবে না। এরই মধ্যে হোটেল কর্তৃপক্ষকে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

এর আগে, গত ২৫ জানুয়ারি রাতে রাজধানীর লালবাগ থানাধীন শেখ সাহেব বাজার রোড থেকে আগ্নেয়াস্ত্র ও গুলিসহ আশিকুর রহমান নামে এক সন্ত্রাসীকে গ্রেফতার করে ডিবি পুলিশ। পরে এক সংবাদ সম্মেলনে ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার আবদুল বাতেন বলেন, সিটি নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের জন্য ঢাকার বিভিন্ন সন্ত্রাসীর কাছে বেনাপোল সীমান্ত থেকে অবৈধ অস্ত্র এনে সরবরাহ করছিল। ওইসব অস্ত্র সন্ত্রাসীদের কাছে পৌঁছানোর আগেই ডিবি তাদের গ্রেফতার ও অস্ত্র উদ্ধার করেছে।

সারাবাংলা/ইউজে/টিআর

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন