বিজ্ঞাপন

৯ দিনে চীন থেকে ফিরেছে ৫,৫০০ নাগরিক, বাড়ছে শঙ্কা

January 30, 2020 | 5:31 pm

শেখ জাহিদুজ্জামান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: চীনের হুবেই প্রদেশের রাজধানী ‍উহান থেকে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর এতে আক্রান্ত হওয়ার প্রকোপ ক্রমেই বাড়ছে। সেইসঙ্গে বাড়ছে শঙ্কাও। এই ভাইরাস বর্তমানে বিশ্বের কয়েকটি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে; যার ঝুঁকিতে রয়েছে বাংলাদেশও। তবে এটি মোকাবিলায় প্রস্তুত রয়েছে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য অধিদফতর। সংস্থাটি জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কাউকে পাওয়া যায়নি। তবে বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) করোনাভাইরাস আক্রান্ত সন্দেহে চীন ফেরত এক বাংলাদেশিকে রাজধানীর কুর্মিটোলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

এদিকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সূত্রে জানা গেছে, গত নয়দিনে চীন থেকে বাংলাদেশে এসেছে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার নাগরিক। তবে বিমানবন্দরে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তারা দেশে প্রবেশ করেছে।

শাহজালাল বিমানবন্দর সূত্রে যায়, সেখানে এ পর্যন্ত তিনটি থার্মাল স্ক্যানার বসানো হয়েছে। চীন থেকে প্রতিদিন চারটি ফ্লাইট বাংলাদেশে আসছে। আর এই ফ্লাইটগুলোতে আসা প্রত্যেক যাত্রীকে এই স্ক্যানারগুলোতে স্ক্রিনিং করা হচ্ছে। বিমানবন্দরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের নিয়মিত ১৪ জন স্বাস্থ্যকর্মী ছাড়াও অতিরিক্ত ১০ জনকে নিয়োজিত করা হয়েছে। স্ক্যানারে যাত্রীর শরীরের তাপমাত্রা ৯৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি হলে স্ক্রিনে লাল চিহ্ন দেখাবে।

বিজ্ঞাপন

এদিকে বাইরে থেকে আসা প্রত্যেক যাত্রীকে থার্মাল স্ক্যানারে স্ক্রিনিং ছাড়া দেশে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। যেসব দেশে রোগটি ছড়িয়ে পড়েছে বিশেষ করে চীনসহ থাইল্যান্ড, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান, হংকং, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া ও আমেরিকা থেকে আগত যাত্রীরা স্ক্রিনিংয়ের পর বিমানবন্দর থেকে বের হতে পারছেন।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছে, একজন মানুষের শরীরে করোনাভাইরাসের জীবাণু ১৪দিন অবস্থান করে। আর এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণগুলো হচ্ছে- জ্বর ,ঠান্ডা, কাশি, শ্বাসকষ্ট।

চীন থেকে আসা নাগরিকদের এমন কোনো সমস্যা দেখা দিলে দ্রুত স্বাস্থ্য অধিদফতরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে। এছাড়া হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রস্তুত রয়েছে কোয়ারেন্টাইন ওয়ার্ড। বিমানবন্দরের ভেতরে যাত্রীদের শনাক্তকরণের জন্য ক্রুদের মাধ্যমে হেলথ ডিক্লারেশন ফর্ম ও প্যাসেঞ্জার লোকেটর ফরম দেওয়া হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

তবে শাহজালালে নিয়োজিত স্বাস্থ্যকর্মীরা বলছেন, ‘শঙ্কার বিষয় হচ্ছে, ভাইরাসটি ১৪দিন শরীরে থাকে; কোনো নাগরিক যদি আক্রান্ত হওয়ার পর স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের না জানান তাহলে এটি মারাত্মক আকার ধারণ করবে। চীন থেকে আসা যাত্রীদের ফরম দেওয়া হচ্ছে। সেই ফর্মে তারা তাদের যাবতীয় তথ্য লিপিবদ্ধ করছেন। কিন্তু কোনো যাত্রী বিমানবন্দর ত্যাগ করার কয়েকদিন পর যদি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ দেখা দেয় তবে সেটি জানা কঠিন হয়ে যাবে। এক্ষেত্রে আক্রান্ত ব্যক্তি যদি নিজে থেকেই জানান তাহলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। সবকিছুর পরও চীন থেকে যেসব নাগরিক বাংলাদেশে আসছে তাদের নিয়ে শঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।

অপরদিকে চীন থেকে আসা নাগরিকদের সঙ্গে সব সময় যোগাযোগ রাখছে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। তবে এই যোগাযোগ কতদিন রাখা সম্ভব হবে তা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে। এদিকে করোনোভাইরাস মোকাবিলার আগাম প্রস্তুতি হিসেবে সারাদেশের হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজগুলোতে আইসোলেশন ইউনিট খোলার নির্দেশনা জারি করেছে মন্ত্রণালয়।

তবে শাহজালালের নিরাপত্তা ও করোনাভাইরাসের বিষয়ে প্রস্তুতি বিষয়ে বুধবার (২৯ জানুয়ারি) রাতে সারাবাংলার সঙ্গে কথা হয় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক উইং কমান্ডার তৌহিদ উল আহসানের সঙ্গে। তিনি জানান, প্রতিদিন প্রায় ছয় শতাধিক যাত্রী চীন থেকে বাংলাদেশে আসছে। প্রত্যেক যাত্রীকে থার্মাল স্ক্যানারের মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে এবং তাদের স্ক্রিনিং করা হচ্ছে। ২১ তারিখ থেকে করোনাভাইরাসের বিষয়ে শাহজালালে প্রস্তুতি নেওয়া হয়। গত নয় দিনে শাহজালাল দিয়ে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার যাত্রী চীন থেকে এসেছে।

বিজ্ঞাপন

কোনো যাত্রীর শরীরে করোনাভাইরাস তাৎক্ষণিক শনাক্ত না হলে এ বিষয়ে কি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা যাত্রীদের বিভিন্নভাবে চেকআপ করছি। তাদের যাবতীয় তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে রাখছি। কোনো যাত্রীর শরীরের তাপমাত্রা ১০০ ডিগ্রি হলে আমরা বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছি। তবে এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কোন নাগরিক পাওয়া যায়নি। এই ভাইরাস যেহেতু ১৪দিন মানুষের শরীরে অবস্থান করে সেহেতু ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে। আমাদের চেকআপে তাৎক্ষণিক ধরা না পড়লেও যাত্রীদের করোনাভাইরাসের কোনো লক্ষণ দেখা দিলে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হচ্ছে।’

তৌহিদ উল আহসান বলেন, ‘চীন থেকে আসা যাত্রীদের মাস্ক ব্যবহার করা ও বেশি লোক সমাগমে না যাওয়াসহ বিভিন্ন পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু এরপরও শঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। কোনো নাগরিক করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর যদি আমাদের না জানায়, তাহলে সেটি মারাত্মক আকার ধারণ করবে। তখন এটি সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। কেননা কার মাধ্যমে এই ভাইরাসটি ছড়ালো কিংবা কীভাবে এলো সেটি জানা সম্ভব হবে না। সুতরাং শঙ্কা যে নেই সেটি আমরা বলতে পারি না।’

এদিকে ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত চীনে করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭০ জন। এছাড়া মোট আক্রান্ত হয়েছে ৭ হাজার ৭০০ জন। চীনের স্বাস্থ্য কমিশনের সূত্র দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে দ্য নিউইয়র্ক টাইমস।

সারাবাংলা/এসজে/পিটিএম

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন