বিজ্ঞাপন

৪৭ বছরের সম্পর্কচ্ছেদ, ইতিহাসের নতুন পাতায় যুক্তরাজ্য

February 1, 2020 | 5:34 am

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

তিন বছরের অনিশ্চয়তা, বহুপাক্ষিক রাজনৈতিক ‘কলহ’ ও নানা মতভেদ পেছনে ফেলে অবশেষে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে বিচ্ছেদ নিল যুক্তরাজ্য। ইউরোপ ও যুক্তরাজ্যের ইতিহাসে এ দিনটি বিশেষভাবে লেখা হয়ে থাকবে।

বিজ্ঞাপন

স্থানীয় সময় শুক্রবার (৩১ ডিসেম্বর) রাত ১১টায় আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যকর হয় এই ব্রেক্সিট। আগামী এক বছর নতুন সম্পর্ক বাস্তবায়নে ইইউ ও যুক্তরাজ্য একে অপরকে সাহায্য করে যাবে।

ঘড়ির কাঁটা যখন ১১টায়…

বিজ্ঞাপন

যুক্তরাজ্যের ইইউ-বিচ্ছেদকে কেন্দ্র করে বেশ কিছু সূচি তৈরি করা হয়েছিল। সে অনুযায়ী, মধ্যরাতে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন, ইইউ পার্লামেন্ট থেকে খুলে ফেলা হয়েছে যুক্তরাজ্যের পতাকা। এছাড়া, বাজারে আসছে বিশেষ ব্রেক্সিট মুদ্রা।

প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ, ‘শেষ নয় বরং শুরু’

ব্রেক্সিটকে ঘিরে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন জাতির উদ্দেশে বক্তব্য রেখেছেন। তার মতে, ব্রেক্সিট কোনো ‘শেষ নয় বরং শুরু’। ইইউ ও যুক্তরাজ্যের ‘সম্পর্ক বদলের সময়সীমা’ বা ‘ট্রানজিশন পিরিয়ড’ ২০২০ সালের পর আর বর্ধিত করা হবে না বলেও ইঙ্গিত করেছেন তিনি। এছাড়া ইইউ’র সঙ্গে বাণিজ্যচুক্তি নিয়েও কথা বলেন বরিস।

বিজ্ঞাপন

সরিয়ে ফেলা হয়েছে যুক্তরাজ্যের পতাকা

এদিকে বিদায়ের ক্ষণ ঘনিয়ে এলে শেষবারের মতো যুক্তরাজ্যকে ‘শুভকামনা’ জানান ইইউ কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসলা বন ডার লিয়েন। খুব স্বাভাবিকভাবেই ইউরোপিয়ান কাউন্সিল থেকে সরিয়ে ফেলা হয়েছে যুক্তরাজ্যের পতাকা। রাত ১১টার পর ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের বাইরেও আর দেখা যায়নি ‘দ্য ইউনিয়ন জ্যাক’। এই ফ্ল্যাগ চলে গেছে ইউরোপিয়ান হিস্টোরি মিউজিয়ামে।

বাজারে আসছে স্মারক ফিফটি পেন্স (ব্রিটিশ মুদ্রা)

প্রায় ৩০ লাখ ব্রেক্সিট স্মারক ৫০ পেন্স সমমূল্যের ব্রিটিশ মুদ্রা অবমুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে যুক্তরাজ্যে। যেখানে লেখা আছে, ‘শান্তি, সমৃদ্ধি ও বন্ধুত্ব সকল জাতির সঙ্গে’। এই মুদ্রাগুলো তৈরি করা হয়েছিল গত বছরের ৩১ অক্টোবর ‘ব্রেক্সিট ডে’ কে সামনে রেখে। যদিও পরবর্তীতে তা পিছিয়ে যায়। তাই পুরনো মুদ্রাগুলো গলিয়ে ফেলা ছাড়া উপায় ছিল না। ব্যাংকগুলোতে শুক্রবারই ব্রেক্সিট কয়েন পৌঁছে গেছে।

বিজ্ঞাপন

যুক্তরাজ্যে বসবাসরত ইইউ নাগরিকদের ভাগ্যে যা ঘটছে

কাগজে-কলমে যুক্তরাজ্য ইইউ ছাড়লেও সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীরা এখনই তেমন কোনো ব্রেক্সিট জটিলতায় পড়বেন না। আগামী একবছর অর্থাৎ ৩১ ডিসেম্বর ২০২০ পর্যন্ত ইইউ নাগরিকরা আগের মতোই যুক্তরাজ্যে কাজ বা পড়াশোনার জন্য আসতে পারবেন। তারা ‘স্থায়ী বসবাসের’ জন্যও এ সময় পর্যন্ত আবেদন করতে পারবেন। তবে যুক্তরাজ্যের নাগরিকরা অন্য কোনো ইইউ দেশে কী ধরনের সুবিধা পাবেন তা দুদেশের সম্পর্কের ওপর নির্ভর করছে।

কেন ও কীভাবে এল এই ব্রেক্সিট?

১৯৭৩ সালের ১ জানুয়ারি ইউরোপিয়ান কমিউনিটির সদস্য হয় যুক্তরাজ্য। প্রায় বিচ্ছিন্ন ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জের ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগ দেওয়া নিয়ে যুক্তরাজ্যের অভ্যন্তরীণ প্রতিক্রিয়া ছিল সবসময় মিশ্র ও সন্দেহের। ইইউয়ের ভার যুক্তরাজ্যকে বইতে হচ্ছে এমন অভিযোগ ব্রিটিশ নাগরিকদের পুরনো।

তাই ইইউতে ব্রিটিশরা সুখী নয়— এমন বিতর্ক নিরসনে কনজারভেটিভ পার্টির নেতা, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন ২০১৫ তার দ্বিতীয় মেয়াদের নির্বাচনি ইশতেহারে ব্রেক্সিট প্রশ্নে গণভোট ডাকার প্রতিশ্রুতি দেন। তিনি নিজে ব্রেক্সিটের বিপক্ষে থাকলেও প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ২০১৬ সালের ২৩ জুনে ব্রেক্সিট প্রস্তাবে গণভোটের আয়োজন করেন। ওই গণভোটে দেশটির ৫২ ভাগ লোক ইইউ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পক্ষে রায় দেন। যা ছিল বেশ অবাক করার মতো।

ধারণা করা হয়, ব্রেক্সিটের বিপক্ষে থাকলেও অনেকে ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার প্রয়োজন বোধ করেননি। নিজের অবস্থানের পক্ষে গণভোটের রায় না আনতে পারায় পদত্যাগ করেন ক্যামেরন। তবে যুক্তরাজ্যের সরকারি ও বিরোধী দল ব্রিটিশদের চাওয়াকে প্রাধান্য দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করে। ২০১৬ সালে প্রধানমন্ত্রী পদে ক্যামেরনের স্থলাভিষিক্ত হন টেরিজা মে।

যুক্তরাজ্যের ইতিহাসে দ্বিতীয় নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেও ব্রেক্সিট চুক্তি বাস্তবায়নে নিজ দলের এমপিদের মন গলাতে পারেননি টেরিজা। ব্রেক্সিট কার্যকর করতে না পারায় তিনি ২০১৯ সালের ৭ জুন পদত্যাগ করেন। তার স্থলে দায়িত্ব গ্রহণ করেন সাবেক লন্ডন মেয়র বরিস জনসন।

বরিসও পার্লামেন্টে সুবিধা করতে পারেননি। তার প্রস্তাবিত ব্রেক্সিট চুক্তি একের পর এক নাকচ করতে থাকেন পার্লামেন্ট সদস্যরা। অনেকটা বাধ্য হয়ে ২০১৯ সালের ১২ ডিসেম্বর সাধারণ নির্বাচনের ঘোষণা দেন বরিস। নির্বাচনে বড় ব্যবধানে লেবার পার্টিকে হারায় বরিসের কনজারভেটিভ পার্টি। ফলে তার পক্ষে ব্রেক্সিট প্রস্তাব পাশ সহজ হয়।

এরপর সে বছরই ২০ ডিসেম্বর এক ভোটে বরিসের ব্রেক্সিট পরিকল্পনা পার্লামেন্টে উতরে যায় ৩৫৮-২৩৪ ভোটে। সুগম হয় যুক্তরাজ্যের ইইউ ছাড়ার প্রক্রিয়া। ইইউ পার্লামেন্ট ২০২০ সালের ২৯ জানুয়ারি ব্রেক্সিট চুক্তি অনুমোদন করলে নিশ্চিত হয়ে যায় ৩১ জানুয়ারি ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ছাড়ছে যুক্তরাজ্য।

 

তথ্যসমূহ আল-জাজিরা, বিবিসি, দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস ও উকিপিডিয়া থেকে নেওয়া।

সারাবাংলা/এনএইচ

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন