বিজ্ঞাপন

ভোট হচ্ছে ইভিএমে, অসুবিধা হচ্ছে না, ভোটাররা খুশি, অখুশিও কেউ কেউ

February 1, 2020 | 8:46 am

সারাবাংলা টিম

ঢাকা: ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) এর মাধ্যমে দেওয়া হচ্ছে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের ভোট। ১ ফেব্রয়ারি (শনিবার) সকাল ৮টায় এই ভোট নেওয়া শুরু হয়। এবং ভোটাররা ভোট দেওয়ার পর বাইরে এসে বলছেন, নতুন পদ্ধতিতে ভোট দিতে পেরে তারা খুশি এবং তাদের কারো কোনও অসুবিধা হচ্ছে না।

বিজ্ঞাপন

রাজধানীর গোপীবাগে শহীদ শাহজাহান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দিয়েছেন অজয় সাহা। ভোটের পর তিনি বললেন, জীবনে প্রথম ইভিএমে ভোট দিলাম। চমৎকার ব্যবস্থা। সব মিলিয়ে ৬-৭ সেকেন্ড সময় লেগেছে। আমি আমার ভোটটি কনফার্ম করতে সবুজ বাটনে চাপ দিয়েছি। যাকে ভোট দিতে চেয়েছি তাকেই দিতে পেরেছি কিনা সেটাও নিশ্চিত হয়ে আসতে পেরেছি। এতে ভোট কারচুপির কোনও সুযোগ দেখছি না।

একই কেন্দ্রের অপর ভোটার আমজাদ হোসেন বলেন, কেন্দ্রে ঢুকে কক্ষ খুঁজে পেতে একটু সমস্যা হলেও একজনের সহায়তায় পেয়ে গেলাম। সেখানে খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে ভোট দিলাম। ইভিএম মেশিনে ভোট দিতে পেরে আমি খুশি। আমি কোনও দল করি না… নিজের ভোটটি দিতে পেরে খুশি।

ঢাকা উত্তরের মেয়র প্রার্থী আতিকুল ইসলাম তার ভোট পরবর্তী প্রতিক্রিয়ায়ও ইভিএম-এ ভোট দেওয়ার সুযোগ পেয়ে খুশি হওয়ার কথা বলেন। তিনি বলেন, ইভিএম-এ ভোট দিতে পেরে আমি খুশি।

বিজ্ঞাপন

সিভিল এভিয়েশন স্কুল এন্ড কলেজে প্রথমবারের মতো ইভিএমএ ভোট দিয়েছেন মো. আব্দুল হান্নান। সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ইভিএমএ ভোট দেওয়ার অভিজ্ঞতা ভালো। তবে প্রতীকে ভোট চেপে কনফার্ম করার পরও কোথায় ভোট দিয়েছি তা দেখা যাচ্ছে। কিন্তু কনফার্ম হওয়ার সাথে সাথেই ছবিটি মুছে যাওয়ার কথা। এটি যদি সাথে সাথে না মুছে না যায় তাতে আমি কাকে ভোট দিয়েছি তা অন্য কেউ বুঝে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। এতে আমার নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে।

একই কেন্দ্রে নাখালপাড়ার বাসিন্দা শফিকুল ইসলাম মিলন বলেন, প্রথমবারের মতো ইভিএমএ ভোট দেওয়ার অভিজ্ঞতা খুবই ভালো। ভোট দেওয়া খুবই সহজ। একেবারেই সজহ। যে কেউ এই যন্ত্রের মাধ্যমে সহজেই ভোট দিতে পারছেন। আঙ্গুল চেপে সমাজের প্রান্তিক লেভেলের মানুষও এতে সহজেই ভোট দিতে পারার কথা।

তবে বিপরীত চিত্রও রয়েছে। রাজধানীর গেন্ডারিয়ায় পলি ইসলাম নামে এক ভোটার ভোট দিতে গোপন কক্ষে ঢোকার পর ১০ মিনিট সময় নেন। সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার বাইরে থেকে বারবার বলার পরও ভোট শেষ করতে পারছিলেন না তিনি। ১০ মিনিট পর ভোট শেষ করেন। পরে পলি বেগম সারাবাংলাকে বলেন, এটি একটি জটিল প্রক্রিয়া। এরপরেও ভালো লেগেছে। তবে এটিতে সবাই ভোট দিতে পারবেন না। বয়স্ক ও অল্প শিক্ষিতরা বিড়ম্বনায় পড়বেন। এই কেন্দ্রের অনেকেই বুথ থেকে বের হয়ে এসে কিভাবে ভোট দেবেন ছবিতে তার নমুনা দেখে আবার ভোট দিতে যাচ্ছেন।

বিজ্ঞাপন

সিভিল এভিয়েশন স্কুল এন্ড কলেজে প্রথমবারের মতো ইভিএমএ ভোট দিয়েছেন মো. আব্দুল হান্নান। সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ইভিএমএ ভোট দেওয়ার অভিজ্ঞতা ভালো। তবে প্রতীকে ভোট চেপে কনফার্ম করার পরও কোথায় ভোট দিয়েছি তা দেখা যাচ্ছে। কিন্তু কনফার্ম হওয়ার সাথে সাথেই ছবিটি মুছে যাওয়ার কথা। এটি যদি সাথে সাথে না মুছে আমি কাকে ভোট দিয়েছি তা অন্য কেউ বুঝে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। এতে আমার নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে।

তবে এই কেন্দ্রের (০৪) প্রিজাইডিং অফিসার সারাবাংলাকে বলেন, এটা এমন হওয়ার কথা না। ভোট কনফার্মড না হলে বা দেওয়া সম্পন্ন না হলে গোপন কক্ষে কেউ ঢুকতে পারছে না। ফলে কে কাকে ভোট দিয়েছে তাও দেখার সুযোগ নেই।

রাজধানীর সেগুনবাগিচা হাইস্কুলে একজন ভোটার ইভিএমে ভোট দিতে না পারার সমস্যার কথা জানান । পরে বিষয়টি নিয়ে কথা বললে এখানকার প্রিজাইডিং অফিসার আবু বকর সারাবাংলাকে বলেন, যারা জাতীয় পরিচয়পত্রের মূল কপি না এনে ফটোকপি এনেছেন তাদের কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। এক্ষেত্রে তাদের ভোটার আইডি নম্বর সঠিকভাবে মেশিনে লিখে দিলে সকল তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। তবে যে ভোটার যেখানকার, সেখানে উপস্থিত হলে ভোট দিতে কোনও সমস্যা হওয়ার কথা নয় বলে জানান এই কর্মকর্তা।

বিজ্ঞাপন

বাদশা ফয়সাল ইনস্টিটিউট (স্কুল এন্ড কলেজ) জহুরী মহল্লা, রিং রোড, শ্যামলী, মোহাম্মদপুর ভোট কেন্দ্র। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরশন এলাকা। ওয়ার্ড ২৯। সকাল আটটা থেকে ভোটাররা লাইনে দাড়িয়ে ভোট দেওয়া শুরু করে। ভোট শুরুর প্রায় ২০ মিনিট পরে ৫ নং কক্ষে ইভিএম মেশিন যান্ত্রিক ক্রটি দেখা দেয়। এরপর সেনাবাহিনীর কতর্ব্যরতরা মেশিনের যান্ত্রিক ক্রটি সরানোর জন্য চেষ্টা করে। তারাও ব্যর্থ হলে ইসির লোকজন এসে যান্ত্রিক ক্রুটি দূর করে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ঝুড়ি মার্কার পোলিং এজেন্ট এস আর আহমেদ। তিনি জানান, মেশিন নষ্ট ছিল। কিছুক্ষণ আগে ঠিক হয়েছে।

এসময় ভোটের লাইনে দাড়িয়ে থাকা ভোটাররা নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। কেউ বলেন, ভোট দেয়া শুরু হতেই মেশিন নষ্ট। আগেই তো ভাল ছিল। খালি টিপসই দিতাম। দুই একজন লাইনে থেকে চলে যেতে চাইলে পাশে দাড়িয়ে থাকা ভোটাররা বলেন, আমাদের কপালটাই নষ্ট, টাকা খরচ কইরা নষ্ট মেশিন আনা হয়েছে।

এক মিনিটেই ভোট!

ইভিএম সহজে এবং এক মিনিটে ভোট দেয়া যায় বলে মন্তব্য করেছেন একাধিক নারী ভোটার। ভোটের দিন শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ৪০, ৪২, ৪৪ নম্বর ওয়ার্ডের একাধিক ভোট কেন্দ্র ঘুরে এই ভোটারদের সঙ্গে কথা হয় সারাবাংলার।

৪২ নম্বর ওয়ার্ডের রুকুনপুর বালিকা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নারী ভোটার সাহিদা আক্তার (৪৫ বছর) সারাবাংলা কে বলেন, অনেকবার ভোট দিছি কিন্তু আজকের ভোট টা ভালো লাগছে। কারণ নিরাপত্তা আছে পরিবেশ ভালো।

কিভাবে ভোট দিলেন জানতে চাইলে সাহিদা আক্তার বলেন, প্রথমে সাদা বুতামে টিপ দিয়েছি, পরে সবুজ বাটনে চাপ দিয়েছি।

আপনি কি নিজে নিজে দিতে পেরেছেন নাকি কেউ সহায়তা করেছে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, না, একজন আমাকে দেখিয়ে দিয়েছেন, তারপর আমি বুটামগুলোতে টিপ দিয়েছি।

কে দেখিয়ে দিয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওইখানে যারা ছিল, তাদের মধ্যে একজন মহিলা দেখিয়ে দিয়েছেন।

সারাবাংলার এই প্রতিবেদক সরেজমিন এই কেন্দ্রে উপস্থিত থেকে দেখেছেন, তার ভোট দেয়ার সময় গোপন কক্ষে একজন পোলিং এজেন্ট তার সঙ্গে গোপন কক্ষে ঢুকে তাকে সহায়তা করেন।

এই কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার রাশেদুল হাসান খান সারাবাংলা কে বলেন, এই কেন্দ্রে এখনো (সকাল ৯ টা) সবগুলো প্রার্থীর পক্ষের পোলিং এজেন্ট উপস্থিত হননি। এই কেন্দ্রে ১৬০৩ জন মহিলা ভোটার রয়েছে। আমরা সকাল সাড়ে সাতটায় প্রস্তুতি নিয়েছি, আটটার সময় থেকে দু একজন করে ভোটার আসছেন। এখন পর্যন্ত যারা ভোট দিয়ে গেছেন, ইভিএমে ভোট দিতে তাদের কোনো সমস্যা হয়নি।

৪৪ নম্বর ওয়ার্ডের একজন নারী ভোটার রেশমা আক্তার মিশু ভোট দেয়া শেষে সারাবাংলা কে বলেন, ইভিএমে খুব সহজে এবং কম সময়ে ভোট দিয়েছি। এটা আমার ভালো লেগেছে।

ইভিএমে ভোট দিলাম আরামে: রাজধানীর কাফরুলে রোটারি স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে ভোট দিতে আসেন ৮০ বছরের আব্দুল জলিল মোল্লা। এই প্রথম তিনি ইভিএমে ভোট দিয়েছেন। সকাল সকাল আট বছর বয়সী নাতিকে নিয়ে ভোট দিতে আসেন তিনি।

ভোট শেষে ইভিএমে ভোটের অভিজ্ঞতা জানতে চাইলে ওই ভোটার সারাবাংলাকে বলেন, ‘মেশিনে ভোট দেওয়া তো খুবই আরাম। খুব সহজেই ভোট হয়ে গেল। গোড়ায় কোনো ঝামেলা না হলে মেশিনেই ভোট সহজ। ছিল-ছাপ্পরের কোনো ঝামেলা নেই।’

রাজধানীর মিরপুরের মনিপুর স্কুল কেন্দ্রে ভোট দিয়ে দারুন খুশি পারুল আক্তার (৪৮)। তিনি জানান, এই মেশিনে ভোট দেওয়া ভালো। যে মার্কা পছন্দ তার নিচে বাটনে টিপে সহজেই ভোট দিলাম। খুব তাড়াতাড়ি ভোট হয়ে গেল।

অধিকাংশ ভোটারের কাছে একই জবাব, ইভিএমে ভোট দেওয়া সহজ, তবে কিছু কিছ মেশিনে সমস্যা থাকায় অনেক সময় দেরি হয়। তাছাড়া মেশিনে ভোট দিয়ে স্বস্তি প্রকাশ করছেন ভোটাররা।

দ্যা নর্দার্ন ক্রস ইন্টারন্যাশনাল স্কুল কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার আক্তারুল ইসলাম সারাবাংলাকে জানান, শান্তিপূর্ণভাবে ভোট গ্রহণ হচ্ছে। কোনো ঝামেলা হচ্ছে না। ভোটারদের ভোট দিতে বেশি সময় লাগবে না। কাগজপত্রের তেমন কোনো ঝামেলা নেই। ভোটের সঙ্গে সঙ্গে ভোট গণনা হয়ে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে বলতে পারি ইভিএমে ভোট গ্রহণ শান্তিদায়ক।

সারাবাংলা/এমএম

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন