বিজ্ঞাপন

পরিত্যক্ত পোস্টার নিয়ে বিপাকে দুই সিটি করপোরেশন

February 7, 2020 | 9:04 pm

সাদ্দাম হোসাইন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: দুই সিটি নির্বাচনে ব্যবহৃত পলিথিন মোড়ানো পোস্টার নিয়ে বিপাকে পড়েছে ঢাকা দক্ষিণ (ডিএসসিসি) ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। এরইমধ্যে দুই সিটি থেকে ৯০ শতাংশ পোস্টার অপসারণ করা হয়েছে। কিন্তু সরিয়ে নেওয়া এসব পোস্টারে ব্যবহৃত পলিথিন কী প্রক্রিয়ায় ধ্বংস করা হবে তা এখনও অনিশ্চিত।

বিজ্ঞাপন

পরিবেশবিদরা বলছেন, এসব পোস্টারে থাকা পলিথিন মাটিতে পুঁতে ফেললে মাটির ক্ষতি হবে, আবার আগুনে পোড়ালেও বায়ু দূষণের পাশাপাশি ক্যান্সার রোগের মতো নানা রোগের ঝুঁকি বাড়বে। আবার যদি বৃষ্টির মাধ্যমে তা ড্রেনে পড়ে তাহলেও নগরীর ড্রেনেজ ব্যবস্থা অচল করে দিয়ে নগরীকে পানিতে ডুবাবে। এছাড়া পানিতে ভেসে গিয়ে যদি তা নদীতে পড়ে তবে নদী দূষণের মাধ্যমে মাছের ক্ষতি করবে। এ কারণে দুই সিটি করপোরেশন এসব লেমেনিটেড পোস্টারগুলো অপসারণ করলেও এখন পর্যন্ত কোনো প্রক্রিয়াজাত করেনি। শুধুমাত্র অপসারণ করে ল্যান্ডফিল্ডে রাখা হয়েছে। এটি স্থায়ী কোনো সমাধান নয়।

পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) চেয়ারম্যান আবু নাসের খান সারাবাংলাকে বলেন, ‘পরিবেশের কথা বিবেচনা করে প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রচারণার অনুমতি দেওয়া উচিত কমিশনের। কারণ শুধু প্লাস্টিকে মোড়ানো পোস্টারই নয়, ছাপানো পোস্টারে যে কালি ব্যবহার করা হচ্ছে তাতেও মাত্রাতিরিক্ত সীসা থাকে। ফলে যে শহরে এমনিতেই সীসার অবস্থা সর্বোচ্চ পরিমাণ সে শহরে কেনো সীসাযুক্ত উপাদান ব্যবহার করতে দেওয়া হবে? এখন আবার যেসব পোস্টার পলিথিন মুড়িয়ে টাঙানো হয়েছে সেসব পলিথিন এখন পরিবেশের আরও ভয়াবহ ক্ষতি করবে। তাই সংশ্লিষ্টদের উচিত পরিবেশের জন্য ক্ষতির দিক বিবেচনা করে পোস্টার থেকে পলিথিন পৃথক করে সেটি রিসাইকেলের মাধ্যমে ধ্বংস করা। তা না হলে পরিবেশ চরম হুমকিতে পড়বে।’

বিজ্ঞাপন

সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, পলিথিন মোড়ানো পোস্টারগুলোকে প্রক্রিয়াজতকরণের মাধ্যমে ধ্বংস করতে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। তবে এখনও কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে সাড়া মেলেনি। তাই করপোরেশন থেকে চেষ্টা চালানো হচ্ছে যাতে সঠিক পদ্ধতিতে পলিথিনগুলো ধ্বংস করা যায়।

ডিএসসিসির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের উপদেষ্টা খন্দকার মিল্লাতুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘দুই সিটির প্রায় ৩ হাজার পরিচ্ছন্নতাকর্মীর সহায়তায় এরইমধ্যে প্রায় ৯০ থেকে ৯৫ ভাগ পোস্টার অপসারণ করে ল্যান্ডফিল্ডে ফেলা হয়েছে। কিন্তু এসব পোস্টারে পলিথিন থাকায় সেটি নিয়ে পড়েছি দুঃচিন্তায়। কোন প্রক্রিয়ায় এগুলো ধ্বংস করা হবে তার কোনো সঠিক নিয়ম এখনও মেলেনি।’

বিজ্ঞাপন

ডিএসসিসির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘পরিবেশবিদরা বলছেন এসব পলিথিন পোড়ানো কিংবা মাটিতে পুঁতে ফেলা যাবে না। তাই আমরা এখন চেষ্টা করছি কীভাবে পরিবেশের মান বজায় রেখে এগুলোকে নিঃশেষ করা যায়। তবে ভবিষ্যতে এসব বিষয়ে পরিবেশ অধিদফতরকে আরও সজাগ দৃষ্টি দিতে হবে যেন কেউ এসব পলিথিন ব্যবহার করতে না পারেন।’

ধারণা করা হচ্ছে, এবারের নির্বাচনে দুই সিটির মেয়র ও কাউন্সিল পদপ্রার্থীরা প্রায় ৩০ কোটি পোস্টার টাঙিয়েছেন রাজধানীতে। এসব পোস্টারের বেশির ভাগই পলিথিনে মোড়ানো। নির্বাচনের প্রচার চলাকালীন শুধু পলিথিন বা প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপন্ন হয়েছে ২ হাজার ৫০০ টনের মতো। আর এসব প্লাস্টিকে মোড়ানো পোস্টার খোলা অবস্থায় বা ল্যান্ডফিল স্টেশনে না ফেলার অনুরোধ করেছেন পরিবেশবিদরা। কিন্তু পরিবেশবিদরা নিষেধ করলেও এসব বর্জ্য অপসারণ করে ফেলা হয়েছে ল্যান্ডফিল্ডে।

জানতে চাইলে ডিএনসিসির প্রধান বর্জ্য কর্মকর্তা কমডোর মো. মঞ্জুর হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘এসব বর্জ্য কোনোভাবেই ধ্বংস করা সম্ভব নয়। তাই কীভাবে রিসাইকেলিং করা যায় সে বিষয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করছি। পোস্টার থেকে পলিথিন আলাদা করে এমন কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে এরইমধ্যে যোগাযোগ শুরু হয়েছে। আশা করছি, যে কোনো প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এসব পরিবেশের ক্ষতিক্ষর পলিথিন রিসাইকেলিং করে পরিবেশকে রক্ষা করা সম্ভব হবে।’

বিজ্ঞাপন

একই কথা বললেন ডিএসসিসির প্রধান বর্জ্য কর্মকর্তা কমোডর জাহিদ হোসেন। তিনি বলেন, ‘আমরাও চেষ্টা চালাচ্ছি এসব পলিথিন রিসাইকেলিং করার। বিষয়টি বেশ জটিল।’

সারাবাংলা/এসএইচ/একে

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন