বিজ্ঞাপন

‘দৌড়াতে ভীষণ কষ্ট হচ্ছিল, তবুও মনকে বলেছি পারতেই হবে’

February 10, 2020 | 6:16 pm

স্পোর্টস ডেস্ক

বিশ্বকাপ জয়ে অধিনায়ক আকবর আলীর দৃঢ়তা যখন সবার মুখে মুখে ঠিক তখনই পাশ থেকে পারভেজ হোসেন ইমনের হার না মানা ইনিংসটাও গর্জে ওঠে সজোরে। পচেফস্ট্রুমে যখন মনে হচ্ছিলো ইমনের ইনিংসের সমাধি ঘটেছে। ঠিক তখনই ব্যথাকে যেন বুড়ো আঙুল দেখিয়ে উঠে দাঁড়ালেন তিনি। ব্যথার ওষুধ খেয়ে নেমে পড়লেন ব্যাড প্যাড নিয়ে। সঙ্গ দিলেন অধিনায়ককে। ভেঙে পড়া টাইগার ব্যাটিং লাইন আপকে আবারও দাঁড় করালেন ইমন। বাংলাদেশের ইনিংসের সর্বোচ্চ রানও এসেছে তারই ব্যাট থেকে। জয়ের ভিত্তি গড়তে বড় ভূমিকা রেখেছেন এই ওপেনারও।

বিজ্ঞাপন

ভারতের দেওয়া ১৭৮ রানের জয়ের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ঝড়ো শুরু করেন দুই টাইগার ওপেনার পারভেজ হোসেন ইমন আর তানজিদ হাসান তামিম। তবে এরপরেই বিষ্ণুর ঘুর্ণিতে কুপোকাত টাইগার ব্যাটসম্যানরা। বিষ্ণুর শিকার হয়ে যখন তানজিদ হাসান ফিরলেন তখনই টিভি ক্যামেরায় দেখা মিলল মাঠে শুয়ে পড়েছেন আরেক ওপেনার পারভেজ হোসেন ইমন। হঠাৎই পায়ের পেশিতে টান অনুভব করেন ইমন, আর সে সময় সোজা হয়েও দাঁড়াতে পারছিলেন না তিনি। তাই তো ব্যাটিং ইনিংস অসম্পূর্ণ রেখেই উঠে যেতে হয় মাঠ থেকে।

তবে দলের বিপর্যয়ের সময় নিজেকে আর ধরে রাখতে পারেননি ইমন। ১০২ রানে যখন অভিষেক দাস আউট হয়ে ফিরে যান তখন বাংলাদেশের ষষ্ঠ উইকেটের পতন ঘটে। আর দলে নেই কোনো স্বীকৃত ব্যাটসম্যানও। আর দলের জয়ের জন্য তখনও প্র্যোজন আরও ৭৬ রান। তখনই ব্যথার ওষুধ খেয়ে বুক ফুলিয়ে সদর্পে মাঠে নেমে পড়লেন অধিনায়কের পাশে দাঁড়িয়ে যুদ্ধ করতে। আর শেষ পর্যন্ত প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ জয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে তার ৪৭ রানের ইনিংসও। আর এই ইনিংসের ব্যাপারেই ভারতের এক সংবাদমাধ্যমকে ইমন জানিয়েছেন, ‘এটাই আমার জীবনের সেরা ইনিংস। পঞ্চাশ করতে পারিনি। তবে তাতে কোনো আক্ষেপ নেই। দেশকে বিশ্বকাপ জেতানোর পিছনে আমারও যে অবদান রয়েছে, তা ভেবে খুব ভাল লাগছে।‘

বিজ্ঞাপন

নামের পাশে যুব বিশ্বকাপে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের তকমা। আর ফাইনালে টাইগারদের হয়ে সর্বোচ্চ রানের ইনিংস। দেখা পাননি অর্ধশতকেরও, তবুও ইমনের কাছে তার ক্যারিয়ারের সেরা ইনিংস এটিই। পরিস্থিতির বিচারে যে সময়ে ইমন এই ইনিংসটি খেলেছেন তা অন্য যেকোনো ম্যাচে শতক হাঁকানোর থেকেও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। রবি বিষ্ণইর ঘূর্ণি জাদুতে যখন আগুন ঝরছে তখন পায়ের পেশির টান নিয়েও বিষ্ণইকে মোকাবিলা করেন ইমনই।

পায়ের পেশিতে টান লাগার পর ব্যথা বিষয়ে ইমন বলেন, ‘আমি যখন ১৫ রানে ব্যাট করছিলাম তখন থেকে পায়ের ব্যথার বিষয়টা বুঝতে পারছিলাম। তবে ২৫ রান করার পরে আর সহ্য করতে পারছিলাম না তাই মাঠেই শুয়ে পড়ি। ভাবলাম আধা ঘণ্টা যদি বিশ্রাম নিই, তা হলে হয়তো পরে ব্যাট করতে পারব। আর তারপরেই একের পর এক উইকেট যাওয়া শুরু করল তখন আর ডাগ আউটে বসে থাকতে পারলাম না। নেমেই পড়লাম ব্যাট হাতে।‘

পায়ের পেশিতে ব্যথা নিয়ে ক্রিকেট খেলাটা সহজ কোনো বিষয় নয়। যেখানে প্রত্যেকটা বলেই ফুটওয়ার্ক করতে হয় সেখানে পাটাই নড়াতে পারছিলেন না ইমন। তবে যে কেবল বিষ্ণইর ঘূর্ণি আর সুশান্তের পেস ঠেকাতে হচ্ছিল ইমনকে তা নয়। সেই সঙ্গে বিষ্ণইর স্লেজিং থেকেও নিজেকে ঠান্ডা রাখতে হচ্ছিল তাকে। ইমন বলেন, ‘বিষ্ণই দারুণ বল করছিল। তবে ও আমাকে বিরক্তও করছিল অনেক। আমি কিন্তু কোনো জবাব দিইনি। আমি ভাগ্যবান। ওই সময়ে বেঁচে গিয়েছি। পায়ে ক্র্যাম্প থাকায় ঠিক মতো শট খেলতে পারছিলাম না। দৌড়তেও ভীষণ কষ্ট হচ্ছিল। কিন্তু মনকে বলছিলাম, আমাকে পারতেই হবে। এ রকম সুযোগ বার বার পাওয়া যাবে না।‘

বিজ্ঞাপন

শেষ পর্যন্ত ৪৭ রানের লড়াকু ইনিংস খেলে যখন মাঠ ছাড়েন ইমন তখন বাংলাদেশের প্রয়োজন আরও ৪৫ রান। শেষ পর্যন্ত অবশ্য দলকে জিতিয়েছিলেন অধিনায়ক আকবর আলী। তবে ইমনের লড়াকু ইনিংসটাও প্রশংসা কুড়িয়েছে সকলের। বিশেষত জয়সওয়ালের বলে যখন আউট হয়ে মাঠ ছাড়ছিলেন তখন যেন হাটতেই পারছিলেন না ইমন। খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে ড্রেসিংরুমের কাছ পর্যন্ত পৌছেই যেন হাফ ছেড়ে বাঁচলেন তিনি।

আকবর আলীর লৌহমানবের মতো দৃঢ়তায় শেষ পর্যন্ত ৩ উইকেটের জয় পায় বাংলাদেশ। জয়ের উৎসবে অন্যদের মতো মাঠে দৌড়ে যোগ দিতে পারেননি ইমন। এ ব্যাপারে জানালেন, ’সবাই মাঠে ছুটে চলে গেল। আমি তখনও যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছি। ড্রেসিং রুমে বসেছিলাম। সারা রাত সবাই জয়ের উৎসব করেছে। পায়ের ক্র্যাম্পের জন্য আমি খুব বেশি কিছু করে উঠতে পারিনি।‘

সারাবাংলা/এসএস

Tags: , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন