বিজ্ঞাপন

সালমান শাহর মৃত্যু: হত্যার প্রমাণ মেলেনি পিবিআইয়ের তদন্তে

February 11, 2020 | 12:48 pm

সাদ্দাম হোসাইন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: চিত্রনায়ক সালমান শাহর মৃত্যু হত্যা না আত্মহত্যা এ রহস্য উদঘাটনে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) তদন্তেও হত্যার কোনো প্রমান মেলেনি। সবশেষ তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছিল সংস্থাটি। কিন্তু তদন্তে নেমে পিবিআইও হত্যার কোনো তথ্য পায়নি। গত তিন বছর ধরে প্রায় ১০ জন স্বাক্ষীর কাছ থেকে পাওয়া তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে পিবিআইয়ের তদন্ত বলছে, ঘটনাটি হত্যা নয়, আত্মহত্যা। পিবিআইয়ের একাধিক তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে এমন তথ্য।

বিজ্ঞাপন

কিন্তু হত্যা না হলেও কেনো আত্মহত্যা করেছিল নায়ক সালমান শাহ সেসব বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কিছু কারণও উদঘাটন করেছে বলে দাবি পিবিআইয়ের। যদিও এখনই সে বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাচ্ছেন না তদন্ত কর্মকর্তারা।

মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক মো. সিরাজুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘যেহেতু মামলাটির এখনো তদন্ত চলছে, তাই এ বিষয়ে কোনো কিছু বলা সম্ভব নয়। তদন্ত শেষে জানতে পারবেন বিস্তারিত।’

পিবিআইয়ের একটি সূত্রে জানা গেছে, সালমান শাহর মৃত্যু নিয়ে চলমান তদন্তটি প্রায় শেষ পর্যায়ে। এখন চলছে প্রতিবেদন প্রস্তুতের কাজ। আর প্রতিবেদন প্রস্তুত হলে আগামী এক মাস কিংবা তারও কম সময়ের মধ্যে আদালতে জমা দেওয়া হতে পারে। তবে সালমান শাহর আত্মহত্যার খবরে ফের যাতে ভক্তদের আত্মহত্যার মতো ঘটনা না ঘটে সেজন্য কিছুটা সময় নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করতে চাইছে সংস্থাটি। অর্থাৎ সালমান শাহর ভক্তদেরকে কিভাবে এ সত্যটা সহজে অনুধাবন করানো যায় সে বিষয়ে কি ধরণের ব্যবস্থা নেওয়া যায় সেজন্যও কাজ করছে পিবিআই।

বিজ্ঞাপন

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মকর্তা সারাবাংলাকে জানান, সালমান শাহর মৃত্যুর ঘটনায় যারা স্বাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দিয়েছে তাদের কারও কাছ থেকে সালমান শাহকে হত্যার কোনো ক্লু পাওয়া যায়নি। এমনকি তাদের কাছ থেকে তথ্য উপাত্ত পর্যালোচনা করে একাধিক সন্দেহভাজনদের ওপরেও অনুসন্ধান চালিয়েছিল সংস্থাটি। কিন্তু তাতেও কোনো ক্লু পাওয়া যায়নি। উল্টো আত্মহত্যার মতো ঘটনাটি আরও পরিষ্কার হয়েছে। এমনটাই দাবি কর্মকর্তাদের।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পিবিআইয়ের প্রধান ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার সারাবাংলাকে বলেন, ‘মামলাটির এখনো তদন্ত চলছে। তদন্তে শেষে জানাতে পারব ঘটনাটি কি ছিল। তবে আমরা আশা করছি আদালতের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে পারব।’

যেহেতু এর আগেও একাধিক সংস্থার তদন্ত প্রতিবেদনে আত্মহত্যা উল্লেখ করা হয়েছে, সেক্ষেত্রে আপনারা কি নতুন কোনো ক্লু পেয়েছেন, নাকি আগের মতই? এমন প্রশ্নের জবাবে পিবিআই প্রধান বলেন, ‘দেখুন তদন্তে আমরা কি পেয়েছি সেটি এখন বড় বিষয় নয়। তদন্ত চলছে। কিন্তু আমরা চাই সালমান শাহর মৃত্যুর খবরে যেভাবে বহু ভক্ত আত্মহত্যা করেছিল, সেভাবে যাতে তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার সময় না ঘটে। তাই সে বিষয়টিও আমরা খেয়াল রেখে তদন্ত কাজে এগুচ্ছি।’

বিজ্ঞাপন

প্রসঙ্গত, ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর মারা যান চলচ্চিত্র নায়ক চৌধুরী মোহাম্মদ শাহরিয়ার ইমন ওরফে সালমান শাহ। সে সময় এ বিষয়ে অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করেছিলেন তার বাবা প্রয়াত কমরউদ্দিন আহমদ চৌধুরী।

এরপর ১৯৯৭ সালের ২৪ জুলাই ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে অভিযোগ এনে মামলাটিকে হত্যা মামলায় রূপান্তরিত করার আবেদন জানান তিনি। ওই সময় অপমৃত্যুর মামলার সঙ্গে হত্যাকাণ্ডের অভিযোগের বিষয়টি একসঙ্গে তদন্ত করতে থানা পুলিশের পরিবর্তে সিআইডিকে নির্দেশ দেন আদালত।

তদন্তের পর ১৯৯৭ সালের ৩ নভেম্বর আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয় সিআইডি। চূড়ান্ত প্রতিবেদনে সালমান শাহের মৃত্যুকে আত্মহত্যা বলে উল্লেখ করে সংস্থাটি। ওই মাসের ২৫ নভেম্বর ঢাকার সিএমএম আদালতে প্রতিবেদনটি গৃহীত হয়। কিন্তু সিআইডির প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে তার বাবা কমরউদ্দিন আহমদ চৌধুরী রিভিশন মামলা দায়ের করেন। এর ফলে ২০০৩ সালের ১৯ মে মামলাটি বিচার বিভাগীয় তদন্তে পাঠায় আদালত। এরপর প্রায় ১৫ বছরে মামলাটি বিচার বিভাগীয় তদন্তে ছিল।

পরে ২০১৪ সালের ৩ আগস্ট ঢাকার সিএমএম আদালতের বিচারক বিকাশ কুমার সাহার কাছে বিচার বিভাগীয় তদন্তের প্রতিবেদন দাখিল করেন মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ইমদাদুল হক। ওই প্রতিবেদনেও সালমান শাহ’র মৃত্যুকে আত্মহত্যা হিসেবে উল্লেখ করা হয়। আবারও ২০১৪ সালের ২১ ডিসেম্বর সালমান শাহর মা নীলা চৌধুরী ছেলের মৃত্যুতে বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করেন এবং বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে নারাজি দেবেন বলে আবেদন করেন।

বিজ্ঞাপন

২০১৫ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি নীলা চৌধুরী ঢাকা মহানগর হাকিম জাহাঙ্গীর হোসেনের আদালতে বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদনের নারাজির আবেদন দাখিল করেন। নারাজি আবেদনে উল্লেখ করা হয়, আজিজ মোহাম্মদ ভাইসহ ১১ জন তার ছেলে সালমান শাহর হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারেন।

পরে মামলার তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় র‍্যাবকে। কিন্তু র‍্যাবের তদন্ত চলাকালে বেশ কয়েকবার শুনানি নিয়ে ২০১৬ সালের ১৯ মে মহানগর দায়রা জজ কামরুল হোসেন মোল্লা বিব্রত বোধ করে ঢাকার ৬ নম্বর বিশেষ জজ আদালতে মামলার নথি পাঠিয়ে দেন। এ আদালতের বিচারক মো. ইমরুল কায়েস ওই বছরেরই ২১ আগস্ট র‍্যাবের মাধ্যমে পুনঃতদন্তের (অধিকতর) আদেশ আইনসম্মত হয়নি উল্লেখ করে বিষয়টি আবারও শুনানি নেওয়ার জন্য ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমকে দায়িত্ব দেন।

এর ধারাবাহিকতায় মহানগর হাকিম লস্কর সোহেল রানা নারাজি আবেদনের ওপর আবারও শুনানি নেন। পরে ৭ ডিসেম্বর শুনানির পর সালমান শাহর মৃত্যুর ঘটনা হত্যা না আত্মহত্যা— তা নির্ধারণের জন্য র‍্যাবের বদলে পিবিআইকে দায়িত্ব দেন।

এরপর সবশেষ গত ২ ফেব্রুয়ারি আদালতে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার সময় নির্ধারণ ছিল। কিন্তু ওই দিন প্রতিবেদন দাখিল না করে পিবিআইয়ের তদন্ত কর্মকর্তা পুনরায় সময় চেয়ে আবেদন করেন। আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত আগামী ৩০ মার্চ তারিখে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।

সারাবাংলা/এসএইচ/এমআই

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন