বিজ্ঞাপন

পাঠাওচালক শামীম হত্যা: লোমহর্ষক বর্ণনা ৩ ছিনতাইকারীর

February 17, 2020 | 6:56 pm

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: ঢাকার আশুলিয়ায় পাঠাওচালক শামীম ব্যাপারী বাবুকে হত্যাকাণ্ডের লোমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছেন র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটানিয়নের (র‌্যাব) হাতে গ্রেফতার হওয়া তিন ছিনতাইকারী। কৌশলে পাঠাওচালক শামীমকে বাঁশঝাড়ে ডেকে নেওয়ার পর গলা কেটে হত্যা করেন তারা। ওই ছিনতাই চক্রের উদ্দেশ্য ছিল পাঠাওচালক শামীমের নতুন মোটরসাইকেলটি ছিনতাই করা।

বিজ্ঞাপন

সোমবার (১৭ ফ্রেবুয়ারি) পাঠাওচালক শামীম হত্যার লোমহর্ষক বর্ণনার কথা সারাবাংলাকে জানান র‌্যাব-১ এর অধিনায়ক (সিও) লেফটেন্যান্ট কর্নেল শাফী উল্লাহ বুলবুল। তিনি জানান, সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) ভোরের দিকে এক বিশেষ অভিযানের মাধ্যমে ঢাকার আশুলিয়ার জামগড়া থেকে শামীম হত্যায় জড়িত তিন আসামি মামুনুর রশিদ, মাহবুব ও মোমিনকে গ্রেফতার করা হয়।

র‌্যাব জানায়, হত্যাকাণ্ডের আগের দিন গাবতলী থেকে শামীমের মোটরসাইকেল ভাড়ায় নিয়ে আশুলিয়ায় গিয়েছিলেন খুনিদের একজন মামুনুর রশিদ। সেদিন শামীমের নতুন মোটরসাইকেলটির দিকে নজর দেন তারা এবং শামীমকে টার্গেট করেন। পরদিন মামুন আবারও শামীমকে ফোন করে বলেন, আজকেও তাকে আশুলিয়ায় পৌঁছে দিতে হবে। মামুনের কল পেয়ে ঘটনার দিন রাত ৮টার দিকে মামুনকে নিয়ে গাবতলী থেকে আশুলিয়ার দিকে রওয়ানা হন শামীম। রাত সাড়ে ৯টার দিকে আশুলিয়ায় পৌঁছালে শামীমকে সিগারেট খাওয়ার কথা বলে থামান এবং কৌশলে তাকে রাস্তার পাশে বাঁশঝাড়ে নিয়ে যান। সেখানে আগে থেকে লুকিয়ে থাকা মাহবুব ও মোমিন পাঠাওচালক শামীমের ওপর আক্রমণ করেন। এরপর শামীমকে গলা কেটে হত্যা করেন পেশাদার তিন ছিনতাইকারী।

র‌্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে মামুনুর রশিদ জানান, তিনি পাঁচবছর ধরে গার্মেন্টকর্মী হিসেবে কর্মরত। পাশাপাশি সন্ত্রাসী কার্যকলাপের সঙ্গে জড়িত। তিনি এই চক্রটির নেতৃত্ব দিতেন।

বিজ্ঞাপন

মামুনুর রশিদের গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলায়।

অপর আসামি মাহবুবুর রহমান জানান, জামগড়া এলাকায় তার একটি চায়ের দোকান আছে। তার চায়ের দোকানে বসেই তারা সবধরনের পরিকল্পনা করে থাকেন। ঘটনার দিন ভিকটিমকে তিনি প্রথম ছুরি দিয়ে আঘাত করেন। এ সময় অপর আসামিরা ভিকটিমের হাত-পা চেপে ধরেন। এরপর শামীমের গলায় ছুরি চালান মাহবুবুর রহমান।

মাহবুবুরের গ্রামের বাড়ি ভোলার বোরহান উদ্দিন উপজেলায়।

বিজ্ঞাপন

আসামি মোমিন মিয়া জানান, তিনি পেশায় একজন গার্মেন্টকর্মী। প্রায় ১১ বছর ধরে তিনি আশুলিয়া এলাকায় অবস্থান করছেন। তিনি এই চক্রের হয়ে ছিনতাইকৃত গাড়ি বিক্রয়ের কাজ করেন। কাজের সুবিধার জন্য তারা তাদের চক্রের সদস্য তিনজনের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখেন।

ঘটনার দিন ভিকটিমের দুই হাত-পা চেপে ধরে হত্যাকাণ্ডে সহায়তা করেছিলেন বলে তিনি স্বীকার করেন।

মোমিন মিয়ার গ্রামের বাড়ি লালমনিরহাট সদরে।

র‌্যাবের সিও শাফী উল্লাহ বুলবুল জানান, এই তিন ছিনতাইকারী চক্র এতটাই পরিকল্পিতভাবে কাজ করেন যে, এর আগে তারা একাধিক ছিনতাই করে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দৃষ্টি এড়াতে সক্ষম হয়েছেন। এবারও তারা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিতে চেয়েছিলেন। যে কারণে তারা শামীমকে হত্যার পর আলামত ধ্বংস করতে তার মোবাইল ফোনটি ভেঙে ফেলেন এবং নিজেদের মোবাইল ফোনও বন্ধ করে দেন।

বিজ্ঞাপন

শামীমকে হত্যার সময় জ্যাকেটে রক্ত লেগে যাওয়া মাহবুবুর রহমান সেটি খুলে ফেলে দেন। এছাড়া হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছুরিটিও ঘটনাস্থলে ফেলে যান। ভিকটিমকে হত্যার সময় ধস্তাধস্তির কারণে চাবি হারিয়ে যাওয়ায় আসামিরা মোটরসাইকেলটি নিতে পারেন। কোনো উপায় না পেয়ে ঘটনাস্থলের পাশে রাস্তার ওপর মোটরসাইকেলটিও তারা ফেলে যান।

র‌্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা আরও জানান, তারা সংঘবদ্ধ পেশাদার ছিনতাইকারী চক্রের সদস্য। তারা অন্য ছিনতাইকারীর মতো টাকা-পয়সা, মোবাইল ফোন, স্বর্ণালঙ্কার ছিনতাই করেন না। তারা শুধু মোটরসাইকেল, প্রাইভেটকার, সিএনজিচালিত অটোরিকশার মতো যানবাহন ছিনতাই করে থাকেন। ছিনতাই করা এসব যানবাহন তারা চোরাই মার্কেটে বিক্রি করে দিতেন।

র‌্যাব জানায়, আসামিরা ছিনতাইয়ে সুবিধার জন্য বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করতেন। কখনও তারা সাধারণ যাত্রীবেশে আবার কখনও বিয়ের জন্য গাড়িভাড়ার কথা বলে ছিনতাই করতেন।

শামীমের পরিবার সূত্রে জানা যায়, শামীম ব্যাপারী বাবুর (২৮) গ্রামের বাড়ি রাজশাহীর বাঘা উপজেলার চৌমুধিয়া গ্রামে। তার বাবার নাম শাহিন ব্যাপারী। শামীমরা এক ভাই ও চার বোন। শামীম ছিলেন সবার ছোট। তিনি রাজধানীর বনশ্রী মেরাদিয়া মধ্যপাড়া এলাকায় স্ত্রীকে নিয়ে ভাড়ায় থাকতেন। তার স্ত্রী সাতমাসের অন্তঃসত্ত্বা।

পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি হিসেবে শামীম দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিগত গাড়ির ড্রাইভার হিসেবে কাজ করে আসছিলেন। সম্প্রতি তিনি মোটরসাইকেল কিনে পাঠাও অ্যাপের মাধ্যমে যাত্রী পরিবহনের কাজ শুরু করেন।

গত ১৩ ফেব্রুয়ারি বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে রামপুরা ফরাজি হাসপাতালের সামনে থেকে একজন যাত্রী নিয়ে মোহাম্মদপুরে যাওয়ার কথা বলে মোটরসাইকেল নিয়ে বাসা থেকে বের হন শামীম। গভীর রাতে তিনি বাসায় না ফেরায় পরিবার সদস্যরা মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। পরদিন ১৪ ফেব্রুয়ারি সকাল ১১টার দিকে টেলিভিশনে সংবাদ দেখে হত্যার বিষয়টি জানতে পারেন এবং ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহ শনাক্ত করেন।

এ ঘটনায় ১৫ ফেব্রুয়ারি আশুলিয়া থানায় শামীমের বাবা শাহীন ব্যাপারী বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা করেন।

সারাবাংলা/ইউজে/একে

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন