বিজ্ঞাপন

মনজুরের মতো আর কোনো ‘চমকের প্রার্থী’ চায় না বিএনপি

February 17, 2020 | 9:15 pm

রমেন দাশগুপ্ত, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: দশ বছর আগে ‘চমকের’ ঘোষণা দিয়ে আওয়ামী লীগ থেকে ভাগিয়ে নিয়ে এম মনজুর আলমকে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র প্রার্থী করেছিল বিএনপি। আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট প্রার্থী এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীকে হারিয়ে সত্যিই চমক তৈরি করেছিলেন মনজুর। পরেরবারও বিএনপি তাকেই প্রার্থী করেছিল। হেরে গিয়ে নিজের দল আওয়ামী লীগে ফেরত যান মনজুর। এবার তিনি আওয়ামী লীগ থেকে মেয়র হবার স্বপ্ন দেখেছিলেন।

বিজ্ঞাপন

চট্টগ্রামের বিএনপি নেতারা বলছেন, চমকের নামে তারা আর মনজুরের মতো কোনো প্রার্থী চান না। ভাগিয়ে নেওয়া নেতা কিংবা ব্যবসায়ী- কেন্দ্র থেকে এমন কাউকে চাপিয়ে দিলে মানবেন না বলে জানিয়েছেন তারা।

চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সভাপতি শাহাদাত হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের নেতাকর্মীরা যারা গত ১৩ বছর ধরে রাজপথে লড়াই-সংগ্রাম করে আসছেন, তারা খুবই চিন্তিত। একেকজন নেতাকর্মী ২০-৫০টা কিংবা তার চেয়েও বেশি মামলার আসামি। পুলিশের নির্যাতনের কারণে বাসায় থাকতে পারেন না। স্বাভাবিকভাবেই লড়াই-সংগ্রামে তাদের পাশে যারা আছেন, তাদেরকেই মেয়র প্রার্থী তারা প্রত্যাশা করবেন, এটা খুবই স্বাভাবিক। মাঠে সক্রিয় নন কিংবা দলের সঙ্গে সম্পর্কহীন এমন কাউকে চাপিয়ে দেওয়া হলে তারা মানবে কেন?’

প্রবীণ বিএনপি নেতা মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন আওয়ামী লীগ নেতা এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর সঙ্গে দুবার মেয়র পদে নির্বাচন করে হেরে যান। ২০১০ সালে অনুষ্ঠিত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি নিজ দলের বাইরেও সর্বজন গ্রহণযোগ্যতা আছে এমন একজন প্রার্থী খুঁজে এম মনজুর আলমকে হাজির করে। মনজুর ছিলেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত তিনবারের কাউন্সিলর এবং মহিউদ্দিনের ভাবশিষ্য। ওয়ান-ইলভেনের পর জরুরি অবস্থার সময় তৎকালীন মেয়র মহিউদ্দিনকে গ্রেফতার করা হলে মনজুর ভারপ্রাপ্ত মেয়র হন। এসময় সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রেসক্রিপশন মেনে মনজুরের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড মেনে নিতে পারেননি মহিউদ্দিন। দুজনের সম্পর্কের অবনতি ঘটে।

বিজ্ঞাপন

মহিউদ্দিনের সঙ্গে দূরত্বের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ধনাঢ্য ব্যবসায়ী ও কাউন্সিলর এম মনজুর আলমকে নিজেদের দলে ভিড়িয়ে নেয় বিএনপি। এই কৌশলে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে প্রথমবার জয়ের স্বাদ পায় বিএনপি। বিএনপি নেতাদের অভিযোগ, নির্বাচিত হওয়ার পর মেয়র মনজুরকে চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা করা হলেও তিনি বিএনপিতে সক্রিয় হননি। বরং মহিউদ্দিনের আবারও সম্পর্ক গড়ে তোলেন। শেষ পর্যন্ত কার্যত চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেন মহিউদ্দিনের পরামর্শেই।

এরপরও ২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল অনুষ্ঠিত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মনজুরকেই আবারও প্রার্থী করে বিএনপি। ব্যাপক ভোট কারচুপি ও কেন্দ্র দখলের অভিযোগপূর্ণ ওই নির্বাচনে মনজুরকে প্রায় ২ লাখ ভোটে হারিয়ে মেয়র নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের আ জ ম নাছির উদ্দীন। ভোটগ্রহণের মধ্যেই মনজুর ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন এবং রাজনীতি থেকেও অবসরের ঘোষণা দেন। কিছুদিন নীরব থাকার পর মনজুর সক্রিয় হন আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার সহধর্মিণীর নামে গড়া ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠান থেকে বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কাজ করতে থাকেন। ২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচনে তিনি চট্টগ্রাম-১০ (ডবলমুরিং, হালিশহর) আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়ে ব্যর্থ হন। এবার অনুষ্ঠিতব্য সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন। তবে সাক্ষাৎকারে হাজির ছিলেন না।

বিজ্ঞাপন

চট্টগ্রামের বিএনপি নেতাদের আশঙ্কা, ভোটে জেতার কৌশল করতে গিয়ে এবারও কেন্দ্র থেকে মনজুরের মতো কোনো প্রার্থী অথবা দলের ভেতর নিষ্ক্রিয় থাকা কোনো ব্যবসায়ীকে প্রার্থী হিসেবে চাপিয়ে দেওয়া হতে পারে। সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) থেকে বিএনপি মেয়র ও কাউন্সিলর পদে মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু করেছে। ২-৩ দিনের মধ্যে তাদের প্রার্থী চূড়ান্ত হওয়ার আভাস মিলেছে। এই অবস্থায় বিএনপি কাকে চট্টগ্রামের মেয়র প্রার্থী করছে, তা নিয়ে চলছে জল্পনা-কল্পনা।

মেয়র পদের প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় আছেন- নগর বিএনপির সভাপতি শাহাদাত হোসেন, সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর ও সহ-সভাপতি সৈয়দ আজম, দীর্ঘদিন বিএনপির রাজনীতিতে জড়িত পোশাক ব্যবসায়ী মো. এরশাদউল্লাহ এবং সাবেক কাউন্সিলর নিয়াজ মোহাম্মদ খান।

শাহাদাত হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমি রাজনীতি করি, নির্বাচন করার এবং জয়ী হওয়ার আকাঙ্ক্ষা আমার অবশ্যই আছে। সেই আকাঙক্ষা থেকেই আমি প্রার্থী হতে চাই। আমি এটাও চাই যে, আমি শাহাদাতকে যদি কোনো কারণে কেন্দ্র মনোনয়ন দিতে না পারে, তাহলে রাজপথের আরেকজন কর্মীকে দিক। মাঠে সক্রিয় এমন কাউকে দিক। কিন্তু কোনোভাবেই যেন মনজুর আলমের মতো কোনো চমক যেন আমাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া না হয়।’

আবুল হাশেম বক্কর সারাবাংলাকে বলেন, ‘যাকে আমাদের দল দুইবার নমিনেশন দিয়েছে, একবার জিতিয়ে এনেছে, তিনি এখন আবার আওয়ামী লীগার হয়ে গেছেন। এই ধরনের চমকের প্রার্থী দিয়ে তাহলে বিএনপির লাভ কি? তার চেয়ে বরং মাঠে-ময়দানে যারা আছেন, তাদের কাউকে প্রার্থী করা হোক। আমি নমিনেশন অবশ্যই চাই। আমাকে দেওয়া হোক অথবা শাহাদাত সাহেবকে দেওয়া হোক। মাঠের কাউকে দিলে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। যিনি-ই পান, আমরা কাজ করব। প্রশাসন যদি নিরপেক্ষ থাকে, আমরা অবশ্যই জিতব।’

বিজ্ঞাপন

নগর বিএনপির সহদফতর সম্পাদক সম্ভাব্য কাউন্সিলর প্রার্থী ইদ্রিস আলী সারাবাংলাকে বলেন, ‘যেকোনো বিচারেই বিএনপি এখন একটা সংকটকাল অতিক্রম করছে। আমাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে জেলে বন্দি করে রাখা হয়েছে। ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় সাজা দিয়ে আমাদের নেতা তারেক রহমানকে দেশে আসতে দিচ্ছে না সরকার। এই সংকটের মধ্যেও যারা নেতাকর্মীদের নিয়ে লড়াই-সংগ্রামের মাধ্যমে চট্টগ্রামে বিএনপিকে এগিয়ে নিচ্ছেন, মেয়র হওয়ার দাবিদার তো অবশ্যই তারাই হবেন। সেক্ষেত্রে শাহাদাত হোসেন এবং আবুল হাশেম বক্কর ভাইয়ের তো কোনো বিকল্প দেখি না। আমি চাই, এই দুজনের একজনকে মনোনয়ন দেওয়া হোক। এতে নেতাকর্মীরা অনেক বেশি অনুপ্রাণিত হবেন।’

ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আগামী ২৯ মার্চ চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাচন হবে। আওয়ামী লীগ ইতোমধ্যে মেয়র পদে প্রার্থী ঘোষণা করেছে। দলটি বর্তমান মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের পরিবর্তে এবার চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক রেজাউল করিম চৌধুরীকে মনোনয়ন দিয়েছে।

সারাবাংলা/আরডি/এমআই

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন